somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতিগত সংঘাত: কেমন আছে ভারত?

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। দীর্ঘ প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল, এবং ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে। ভারতের দক্ষিণে আরব সাগর এবং পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এছাড়া পশ্চিমে পাকিস্তানে, উত্তরে চীন, নেপাল এবং ভূটান। পূর্বে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার এবং ভারত মহাসাগরের পাশেই রয়েছে শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপ। ভারতের রাজধানী- নয়াদিল্লী, আয়তন-৩২৮৭২৪০ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা-১০২৮৬১০৩২৮ জন, স্বাধীনতা অর্জন- ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, প্রদেশ- ২৮টি, রাষ্ট্রীয় ভাষা হিন্দি ছাড়াও প্রায় ২২টি ভাষা, আইনসভা- দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। ভারত স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে খুব এগিয়ে যায়। তবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক এক্ষং জাতিগত সমস্যা বিদ্যমান। যেমন, কাশ্মির ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সমস্যা। উত্তর পূর্বাঞ্চলে মোট সাতটি রাজ্য রয়েছে যাদেরকে একত্রে সেভেন সিস্টারস কলা হয়। ৭টি রাজ্য হলো:-১.অরুনাচল ২.আসাম ৩.নাগাল্যাণ্ড ৪.মেঘালয় ৫.মিজোরাম ৬.ত্রিপুরা ৭.মনিপুর। এবং এই সেভেন সিস্টারস মূলত ভারত থেকে শিলিগুড়ি করিডোর দ্বারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন যা চারদিকে চীন, তিব্বত, ভূটান, মায়ানমার এবং বাংলাদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত।

১৯৪৭ সালে ভারত যখন স্বাধীন হয় তখন এই পূর্বাঞ্চলে মোট ৩টি রাজ্য (মনিপুর, ত্রিপুরা ও আসাম)। পরবর্তীকালে আসাম আবার চারভাগে বিভক্ত হয়। ১৯৬৩ সালে নাগাল্যাণ্ড, ১৯৭২ সালে মিজোরাম, ১৯৭২ সালে মেঘালয়, ১৯৮৭ সালে অরুনাচল প্রদেশ। এই অঞ্চল প্রায় পুরোটাই পাহাড় ঘেরা এবং মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত। এখানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর বসবাস। এদের মধ্যে রয়েছে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং মুসলমান। এছাড়াও রয়েছে Indigunous ধর্ম। এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৮.৬ মিলিয়ন যা সমস্ত ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩.৮ শতাংশ। এই অঞ্চলে রয়েছে জাতিগত বিভিন্নতা। আনুমানিকভাবে বলা যায় প্রায় অর্ধশতাধিক জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এই অঞ্চলে। ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে কখনোই পরাধীন ছিলনা। যে কারণে ভারতের স্বাধীনতাকে তারা ব্রিটিশদের পরে ভারতের উপনিবেশ হিসেবেই মনে করে যার ফলে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা, আত্ম পরিচয় এবং বৃহত্তর জাতিত্ত্বের পরিসরে একটি উপজাতীয় সহিংসতার প্রেরনায় তারা উজ্জীবিত হয়।

যে সমস্ত কারণে সেভেন সিস্টারস অঞ্চলের আদিবাসীরা সহিংসতার পথ বেছে নেয় তা হলো-অঙ্গরাজ্যগুলোর সাথে সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধ, নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগত বিভিন্নতা, আলাদা রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষা, স্বায়ত্তশাসনের দাবী। তবে অভিবাসী এবং আদিবাসী দ্বন্দ্ব- এটি হলো মূল ও প্রধান কারন। ভারত সরকার ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভারতীয়দের এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করাচ্ছে এবং তাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে। এক্ষেত্রে ভূমির বন্টন, ধর্মগত, গোত্রগত ভিন্নতা এবং মতাদর্শগত ভিন্নতাও সমস্যার সৃষ্টি করে। উপরিউক্ত কারনে এই অঞ্চলের আদিবাসীরা সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে অগ্রসর হয় এবং এক্ষেত্রে পাকিস্তান ও চীন তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করছে।

১. ত্রিপুরা
ত্রিপুরা ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের একটি প্রদেশ। এর আয়তন ৪,০৫১ বর্গমাইল বা ১০,৪৯১.৬৯ কিলোমিটার। রাজধানী:- আগরতলা।ভাষা:- বাংলা। স্বাধীনতা লাভ:- ১৯৪৯ সালের ১৫ অক্টোবর। জনসংখ্যা:- ৩ মিলিয়ন। শিক্ষার হার:-৭৩.২%।অবস্থান:ত্রিপুরা বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। এটি ২২০৫৬” সমাক্ষরেখা, ২৪০৩২’’ অক্ষাংশে এবং ৯১০২১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি:- ত্রিপুরা নাম সম্পর্কে বিভিন্ন ধারনা প্রচলিত আছে। ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে ২টি Kok Borok (স্থানীয় ভাষা ) শব্দ tw যার অর্থ পানিও Pra যার অর্থ ‘নদীর প্রবাহ’। এর পুরো অর্থ দুই নদীর মিলিত হবার স্থান। প্রাচীন:- ত্রিপুরার সাথে ৩ হাজার বছর পূর্বের Limar রাজবংশের সংযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি সমুদ্রগুপ্তের পিলারে ত্রিপুরা রাজ্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মহাভারত, পুরাণ ও সম্রাট অশোকের প্রস্তর লিপিতে ত্রিপুরার উল্লেখ পাওয়া যায়। এর প্রাচীন যুগ বলা যেতে পারে ৭ম শতকে উত্তর ত্রিপুরায় বাঙালি ত্রিপুরা রাজা কৈলাশহর এর রাজত্বকালে। ১৪ শতকে গোমতি নদীর তীরে উদয়পুরে ত্রিপুরার রাজধানী স্থাপন করা হয়। এ সময় তাদের ক্ষমতা ও সুখ্যাতি ছিল যা মুঘলরা স্বীকার করে।

মুঘলদের ত্রিপুরা দখল ও ব্রিটিশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এর আধুনিক যুগের শুরু হয়। ১৮৭১ সালে ব্রিটিশ ভারত সরকার ত্রিপুরা মহারাজার প্রশাসনের সাহায্যের জন্য একজন প্রতিনিদি প্রেরন করেন। এসময়েই বর্তমান রাজধানী আগরতলাকে রাজধানী করা হয়। ১৯৪৯ সালের বাংলার গণমুক্তি পরিষদ আন্দোলনের ফলে এ রাজ্য ভারতের সাথে একীভূত হয়। দেশ বিভাগের ফলে ত্রিপুরা প্রভাবিত হয় এবং এর সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ হিন্দু বাঙালি। ১৯৬২ সালে ত্রিপুরা একীভূত অঞ্চল হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে আসে এবং ১৯৭২ সালের জানুয়ারীতে প্রদেশের মর্যাদা লাব করে। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ফলাফল হিনেবে ১৯৭০ এর শেষের দিকে ত্রিপুরায় সশস্ত্র সংগ্রাম দেখা দেয়। উপজাতীয় বিদ্রোহীরা স্থানীয় বাঙালি জনগণকে তাড়ানোর জন্য অনেকগুলো বিদ্রোহী গ্র“প এখানে গড়ে উঠেছে। এগুলো হলো:- Tripura National Volunteers, National Liberation Front of Tripura, All Tripura Tiger Force.

উত্তর-পূর্ব ভারতে আসামের পরে ত্রিপুরা সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ। ত্রিপুরার জনগণের মধ্যে বিভিন্ন পার্বত্য গোষ্ঠী আছে উদাহরণস্বরূপ- Tripura Reang, Jamatia, Kepeng, Noatia, Koloi, Hala ইত্যাদি। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ত্রিপুরায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৫৫ জন বাস করে, যা ভারতের রাজ্যগুলোর জনসংখ্যার মধ্যে ২২তম। ২০০১ সালে আদমশুমারী অনুযাীয় স্থানীয় বাঙালি ৭০%, অভিবাসী উপজাতি ৩০%। ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অভিবাসী উপজাতিরা বিভিন্নতে বিভক্ত। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উপজাতীয় গোষ্ঠী হল, Kok borok ভাষী ত্রিপুরা, Jamatia, Reang, Noatia. বাঙালি ও উপজাতীয় গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
ত্রিপুরা রাজ্যে ভাষাভিত্তিক বিভিন্নতা রয়েছে। ১৯৪১ সালে ৭০৫ হিন্দু, মুসলমান ২৩%, উপজাতীয় ধর্ম ৬% ছিল। ধর্ম:-সংখ্যাগরিষ্ট ধর্ম হিন্দু যারা মোট জনসংখ্যার ৮৫.৬%। মুসলমান ৮%, খ্রিস্টান ৩.২% বেীদ্ধ ৩.১%। সংস্কৃতি:-ত্রিপুরার জনগোষ্ঠীর আলাদা ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। যা ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা। তাদের সংস্কতৃতির ভিত্তি হল মঙ্গোলীয যা তাদের পোষাক, খাবার, সাম্প্রদায়িক ব্যবস্থা, অনুষ্ঠান, নাচ, গাণে প্রতিফলিত হয়। ত্রিপুরায় ১২টি ভাষা গোষ্ঠীর Linguafranca kok borok এবং অন্যান্য তিব্বতি-ধর্মী থেকে উদ্ভূত উপভাষায় কথা বলে যা ভারতীয় ভাষা থেকে আলাদা।

ত্রিপুরার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বিদ্রোহী দল:
All Tripura Tiger Force:কার্যকাল ১৯৯০ –বর্তমান, আদর্শ-ত্রিপুরা জাতীয়তাবাদী, নেতা-রনজিৎ দেববার্মা, কাজের ক্ষেত্র-ত্রিপুরা, বিরোধী ত্রিপুরা সরকার।এটি ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী দল। ১৯৯০ সালের ১১ জুলাই এ দল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ দল পূর্বে রণজিৎ দেববার্মার নেতৃত্বে ত্রিপুরা ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার মেম্বারস নামে সংগঠন ছিল। ভারত এ দলকে ATTFকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করে। এটিতে হিন্দু সদস্যের সংখ্যা বেশি।
Natinal Liberation Front of Tripura:কার্যকাল ১৯৮৯–বর্তমান, আদর্শ-ত্রিপুরা জাতীয়তাবাদী, নেতা-বিশ্বমোহর দেববার্মা, মুকুর দেববার্মা, Vtpanna Tripura। Strength প্রায় ৫৫০-৮৫০,বিরোধী-ত্রিপুরা সরকার।
NLFT স্বাধীন ত্রিপুরা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ দলকে ভারতে সন্ত্রাসবাদী দল বলা হচ্ছে। এটি খ্রিস্টান সমর্থিত দল। ২০০০ সাল থেকে কয়েকশত বিদ্রোহী ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। ATTF ও NLFT সুবিধাবঞ্চিত ত্রিপুরীদের প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯৮৯ সালে NLFT প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের স্বাধীনতার জন্য। ATTFঋ মূলত দেববার্ম কেন্দ্রীক দল।
অন্যান্য দল: 1.All Tripura Liberation Organisation (ATLO) 2.Bangla Mukti Sena (BMS)3.Borok National Council of Tripyra (BNCT) 4. Tripura Armed Tripal Commands Force (TATCF) 5. Tribal Commando Front (TLOF) 6. Tripura National Army (TNA)

ত্রিপুরার মূল সমস্যা অনেক বেশি অভিাসীদের আগমন বিশেষত হিন্দু বাঙালি। ফলে স্থানীয় ত্রিপুরাদের অস্তিত্বের সংকট দেখা দিচ্ছে। একসময় স্থানীয় ত্রিপুরী মোট জনসংখ্যার ৮৫% যা বর্তমানে ২৯%। যাতে তারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে। স্থানীয়রা বলে যে শহর পুরোপুরি বিদেশীদের/ অভিবাসীদের দখলে গিয়েছে। শহরে ৫০% ত্রিপুরা আছে। এভাবে ছোট ত্রিপুরী গোস্ঠীগুলোর অস্তিত্ত্ব হুমকির সম্মুখীন।সাংস্কৃতিক দিক থেকে অগ্রগতির কারণে নতুন অভিাসীগণ অর্থনীতির নিযন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া সব উর্বর জমি তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। অর্থনিিতর নিয়ন্থ্রণের কারনে রাজনৈতিক শরনার্থীরা এখন সর্বশক্তি নিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে চাচ্ছে। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৪০ বছরে পৃথিবীতে অনেক ছোট উপজাতি হারিয়ে যাবে।বর্তমানে রাষ্ট্রযন্ত্র বিশেষ করে রাজ্য পুলিশ এবং প্যারামিলিটারী বাহিনী অভিাসীদের নিয়ন্ত্রনে। তারা স্থানীয় ত্রিপুরী জনগণের মধ্যে সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।

১৯৪৯ সালে ভারত ত্রিপুরা অধিকারে করার পূর্বে এটি আলাদা রাজ্য ছিল। গত কয়েক শতকে বাংলার সাথে ত্রিপুরার সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে। ঐতিহাসিকগতভাবেই ত্রিপুরা ভারতের অংশ ছিলনা। ১৯৪৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাজার এক সংকটপন্ন অবস্থায় Queen of Tripura মার্জার চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। ভারতের সাথে একত্রিত হওয়ার পর ত্রিপুরী জনগণ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে অনেক লোকের অভিবাসনের ফলে তখন তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সকল দিক থেকে বহিরাগতদের কর্তৃত্বের অধীন। Tripura Peoples Democratic Front এবং National Liberation Front of Tripura ভারতীয় উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুর করে। তারা ত্রিপুরাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

১৯৯০ সালে অনেক বেশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখা যায়। এক্ষেত্রে নয়া দিল্লী বাংলাদেশকে এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার নিরাপদ এলাকা বলে দায়ী করে। এসংঘাত নিয়ন্ত্রনে রয়েছে নয়াদিল্লী, ত্রিপুরা রাজ্য সরকার এবং কাউন্সিলের মধ্যে ত্রিপাক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে। সরকার এ বিদ্রোহ দমন করলেও কিছু বিদ্রোহী কার্যক্রম এখনও আছে। ২০০২ সালে ত্রিপুরার গভর্নর বিদ্রোহ দমনে যেসকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা এখনও চালু রয়েছে। ২০০০ সাল থেকে অনেক জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে।
সরকার ভারতের মূল স্রোতের সাথে তাদের সংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

২.মিজোরাম:
মিজোরাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলে অবস্থিত। ত্রিপুরা, আসাম, মনিপুর, বাংলাদেশ, চীন ও মায়ানমারের সাথে এর সীমান্ত রয়েছে। আয়তন: ২১,০৮১ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা:৮,৮৮,৫৭৩ জন। স্বাধীনতা লাভ: ১৯৮৭ সালে ২০ফেব্র“য়ারী। শিক্ষার হার: ৮৮.৪৯%।ধর্ম: খ্রিস্টান।ভাষা: Dulien। সংখ্যাগরিষ্ট উপজাতি: লুসাই।মিজো অর্থ পাহাড়ে বসবাসকারী যা একটি আলাদা জাতিকে নির্দেশ করে। বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠী: ১৮ শতকের শুরুতে মিজোরা বার্মার পাহাড়ি অঞ্চল থেকে আসে। এদের মধ্যে লুসাই সবচেয়ে সংখ্যাগরিষ্ট গোষ্ঠী। এরাই প্রথম এ অঞ্চলে আসে। তারপর আসে Hmars, Pawis, Raltes, Thadour, Lakhers এবং সবশেষে চট্টগ্রাম থেকে চাকমরা আসে। প্রথমদিকে গোষ্ঠীগুলো স্বতন্ত্র পরিচয় রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে মিজো হিসেবে সাধারণ পরিচয় গড়ে ওঠে। মিজোরাম আসামের সাথে থাকাকালীন আসামের রাজধানী ছিল। বেশিরভাগ উপজাতি নিজস্ব ভাষা ও লিপি রক্ষা করতে চাইলেও কিছু গোষ্ঠী লুসাই লিপি Dulien কে গ্রহণ করেছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে লুসাই সকল গোষ্ঠীই লুসাইদেরকে অনুসরন করেছে। খ্রিস্টান ধর্মের প্রসার ও শিক্ষার উচ্চহারের কারনে মিজো সমাজ আধুনিকতার পথে এগিয়ে যাচ্ছে যদিও তারা সনাতনী ব্যবস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করে।

মিজোরামের জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক ক্ষুদ্র গোষ্ঠী রয়েছে। যারা সাংস্কৃতিগত ও ভাষাগত দিক থেকে একে অন্যের সাথে সম্পর্কিত। এসব গোষ্ঠীকে একত্রে লুসাই বলা হয় যার অর্থ প্রধান ব্যক্তি। বাংলাদেশ, মায়ানমার উপস্থিতিও এখানে দেখা যায়।
মিজোরামের প্রধান ধর্ম খ্রিস্টান। বিভিন্ন ধর্মের লোকের শতকরা হার :-খ্রিস্টান-৯০.৫%, হিন্দু-৩.৬%, বৌদ্ধ-৪.৮%, মুসলমান-১.১%।ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য উপজাতির মত মিজোদের উৎপত্তি সম্পর্কেও বিভিন্ন ধারনা প্রচলিত আছে। অনেকের ধারনা তারার চীন থেকে এদেশে এসেছে। চীনের Yalung নদীর তীরবর্তী Sinlung থেকে তারা এসেছে। প্রথমে Shin প্রদেশে বসতি স্থাপন করে তারপর Kabaw ভ্যালিতে আসে। অনেরেকর বিশ্বাস তারা মঙ্গোলীয় যদিও এর লিখিত প্রমাণ নেই।

প্রথমে যে সকল মিজো ভারতে আসে তাদের কুকিস বলা হত। তারপর যারা আসে তাদের নব্য কুকিস বলা হত। ১৮ ও ১৯ শতকে অনেক জাতিগত দাঙ্গা হয়। যার ফলে সরকার তাদের স্বায়ত্তশাসন মেনে নিতে বাধ্য হয়। ১৯৫২ সালে Tushai Hills Autonomous District Council গঠিত হয় যার ফলে মিজো সমাজে মুখিয়া প্রথা বিলুপ্ত হয়। এক্ষেত্রে মিজোরা আংশিকভাবে স্বায়ত্তশাসন অর্জন করে। Reorganisation Commission, Representatives of District Council ও Mizo Unionকে তাদের সাথে একত্রিত করতে চায়। SRC ১৯৫৪ সালে আসামের District Council এর সাথে ত্রিপুরা ও মরিপুরের মিজো অধ্যুষিত এলাকা একত্রিত করার প্রস্তাব করে। উপজাতীয় নেতারা States Reoganisation Commission এর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ছিল। ১৯৫৫ সালে Aizwal এর মিটিংএ Eastrn Indian Union নামে একটি রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে। তারা আসামের পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে আলাদা প্রদেশের দাবি করে। মিজো ইউনিয়ন ভেঙ্গে যায় ও বিরোধীর ETU এ যোগ দেয়। UMFO এ সময় ETU এ যোগ দেয় Chuhila Ministry । তাদের সমস্যা বুঝতে পারলেও পৃথক প্রদেশের দাবি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখে।

মিজোরামের বাঁশের দুটি প্রজাতি রয়েছে। যাতে ৫০ বছর পর পর ফুল ধরার সময় ইঁদুরের বংশবৃদ্ধি হওয়ায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৯৫৯ সালেও এরকম দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন আসামের District Council এর কর্মচারী Laldenga Mizo Famine Front (MFF) গঠিত হয়। তখন এটি দুর্ভিক্ষ দুর করার জন্য গঠিত হলেও পরে famine শব্দটি বাদ দিয়ে মিজোরামের স্বাধীনতার জন্য গেরিলা সংগঠন Mizo National Front (MNF) গঠন করা হয়। ১৯৬৬ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারী Aizwal, Toofani, Chawngte, Chhimlhang এবং অন্যান্য স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়। এসময় Aizwal, Toofani ও Hunter যুদ্ধ বিমান দ্বারা বোমা ফেলা হয়। ভারেতে এটাই প্রথম দেশের নাগরিকদের বিদ্রোহ দমনের জন্য বিমানবাহিনী ব্যবহার করে। এসময় MNF সার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য সহিংসতার পথ বেছে নেয়। আসামের পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। ১৯৬৭ সালে ভারতে MNFএকটি অবৈধ দল ছিল। ১৯৭১ সালের মে মাসে আলাদা রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য Mizo District Council সদস্যগণ ইন্দিরাগান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। যৌথ সরকার মিজো পার্বত্য অঞ্চলকে Union territoryতে পরিণত করার প্রস্তাব করে ১৯৭১ সালে। শিঘ্রই মিজোরামকে আলাদা রাজ্যের মর্যাদা দেযার শর্তে মিজো নেতারা এ প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি হয়। ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারী মিজোরাম ইউনিয়ন territory গঠিত হয়। মিজোরাম লোকসভা ও রাজ্যসভায় একটি করে মোট দুইট আসন পায়।

ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুও পর রাজীব গান্ধী ক্ষমতায় এলে ভারতের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা ঘটে। ১৯৮৫ সারের ১৫ ফেব্র“য়ারী Legenga প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। পূর্বের আলোচনায় যে সব বিতর্কিত বিষয় আলোচিত হয়েছিল তা এবারেও সমাধান করা সম্ভব হয়নি।পাকিস্তান বাংলাদেশকে হারানোয় MNF পাকিস্তানের সমর্থন হারায়। সেজন্য তারা তাদের সমস্যা ভারত সরকারের কাছে উপস্থাপন করে। এসময় MNF বুঝতে পারল যে অস্ত্র ছেড়ে দিলেই শান্তি ও উন্নতি নিশ্চিত করা যাবে। ভারত সরকারও বুঝতে পারল মিজো সমস্যা অনেক দিন ধরে চলছে এর সমাধান প্রয়োজন। ১৯৮৬ সালের ৩০ জুন স্বপ্রনোদিত হয়ে MNF ও যৌথ সরকার চুক্তি স্বাক্ষর করে। যার শর্ত ছিল মিজোরামকে প্রদেশের মর্যাদা প্রদান। এতে স্বাক্ষর করেন MNF এর পক্ষে Legenga এবং সরকারের পক্ষে সরাষ্ট্র সচিব R D Pradhan । মিজোরামের চিফ সেক্রেটারী Lal Khamaও এ চুক্তির স্বাক্ষর করেন। Lal Khama, Aizwal এর প্যারেড় গ্রাউণ্ডে এক জনসভায় মিজোরামের প্রদেশের মর্যাদা পাওয়ার ঘোষণা দেন। রাজীব গান্ধী ও নতুন প্রদেশের উদ্ধোধন করতে Aizwal এ উপস্থিত ছিলেন। মিজোরামের গভর্নর করা হয় Hitshwar Saikia কে। মিজোরামের বিদ্রোহী দল হচ্ছে, Hmar People’s Convention (HPC), Bru National Liberation Front (BNLF), Hmar Revolutionary Front , Mizo National Front (MNF)

৩.মনিপুর:
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মনিপুর অন্যতম একটি রাজ্য। মনিপুরের রাজথধানী (Imphal) ইমপাল। এর উত্তরে নাগাল্যাণ্ড, দক্ষিণে মিজোরাম এবং পশ্চিমে আসাম। এর পূর্বে রয়েছে মিয়ানমার সীমান্ত। মিটি রা হল মনিপুরের আদি অধিবাসী। তাদের ভাষা মনিপুরী ভাষা নামে পরিচিত। মনিপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা। মনিপুরের মোট জনসংখ্যা ২৩,৮০,০০০ জন। (২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)। পাহাড়ী অঞ্চলে ৪১.১% লোক বসবাস করে। এদের অধিকাংশই হল নাগা, কুকী এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র আদিবাসী। উপত্যকায় বাস করে ৫৮.৯% যারা মিটি জনগোষ্ঠী। এদের মধ্যে অধিকাংশই হল মুসলমান। মনিপুরের অফিসিয়াল ভাষা হল মনিপুরী ও ইংরেজি। মনিপুরেও ৩৯টি আলাদা ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি প্রধান ভাষা উপজাতিদের জন্য সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত। যার নির্দেশনা অনুযায়ী ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা যায়। এ ভাষাগুলো হল: Tangkhul Language, Hmar Language, Paite Language, Lushai Language, Kukill Language, Mao Language.

মনিপুরে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর লোক বসবাস করে। যারা তাদের অতীত ঐতিহ্যকে ধারন করে। ২০০১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী-
হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগণ ৪৭%। সানামাহি সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম। যা হিন্দু ধর্ম থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর জনগণ ৩৪%। যারা অধিকাংশই পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাস করে। মুসলমান জনগোষ্ঠী ৮%। যাদের অধিকাংশই বাঙালি বংশধর। ১৮৯১ সালের পূর্বে মনিপুরে রাজার শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। ১৮৯১ সালের পর দেখা যায় মনিপুর ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভূক্ত হয়। যার ফলে তাদের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও সময় মনিপুর জাপান এবং যৌথবাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। এই যুদ্ধেও একবটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো রাজধানী ইমাপলে প্রবেশের পূর্বেই জাপান বাহিনী নিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ বাহিনী মনিপুর বাহিনীদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়।

১৯৪৭ সালের মনিপুর সংবিধান একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত করে। সেখানে মহারাজা এক নির্বাচিত আইনসভা ছিল। মহারাজা ছিলেন নির্বাহী প্রধান। এখানে লক্ষণীয় যে, ১৯৪৭ সালে যে সরকার কাঠামো প্রতিষ্ঠিত করা হয় তা ১৯৪৯ সালে ভারত সরকারের সাথে মহারাজা বিরোধ জড়িয়ে পড়ায় আইনসভা ভেঙ্গে যায়। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত মনিপুর একক জাতি গোষ্ঠী হিসেবে ছিল। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ভারত সরকার ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে মনিপুরের অনেক জনগণের অভিবাসন ঘটায়। এবং ১৯৭০ সালের দিকে মনিপুরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। বিভিন্ন আদিবাসীরা ভারত সরকারের অধীনে থেকে মুক্তি লাভের জন্য অর্থাৎ স্বাধীণ মনিপুর রাষ্ট্র গঠন করার জন্য তারা সংগ্রাম শুরু করে।

মনিপুর মূলতঃ সম্পূর্ণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংস্কৃতি থেকে আলাদা ও স্বতন্ত্র। তাদের জীবন যাত্রার মান স্বতন্ত্র এবং অন্যদের থেকে আলাদা। তাদের নাচের ধরণ ও চিত্রকর্ম উন্নত। পোলো নামে তাদের একধরনের খেলা রয়েছে যা তাদের ঐতিহ্য এবং স্বতন্ত্রতাকে সংরক্ষণ করে। মনিপুরের রাষ্ট্র বার্মা সীমান্তের কাছাকাছি নিচু এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটা ভারতের অংশ নয়। ব্রিটিশ সরকার মূলত একে জোরপূর্বক ভারতের সাথে অন্তর্ভূক্ত করে। ১৯৪৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মনিপুরের রাজাকে জোরপূর্বক Marger Agreement এ স্বাক্ষর করতে বাধ্য করানো হয়। আর এ চুক্তি রোধ করার জন্য প্রতিবছর মনিপুরের অধিবাসীরা আন্দোলন করে। তারা ভারত সরকারের অধিনতা থেকে বের হয়ে নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে থাকে। তাদের এই আন্দোলনে মিটি, নাগা, কুকী এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী গুলোর মধ্যে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে।

মনিপুরের যে তিনটি প্রধান উপজাতি হলো: নাগা, কুকী এবং মিটি। এদের মধ্যে মিটিরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হয়ে আসছে। মনিপুর মূলত সমৃদ্ধ তাদের চাষাবাদের কারণে। উপজাতীরা জমি চাষাবাদের নানা কৌশল জানে। কিন্তু দুঃখজনক ব্যপার হলো ভারত সরকারর ভারতীয় অন্যান্য অঞ্চল থেকে মনিপুরে চাষাবাদের জন্য প্রচুর মানুষের অভিবাসন ঘটাচ্ছে। যার ফলে মনিপুরের আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি লোপ পাচ্ছে। আদিবাসীরা নিজ নিজ ভাষা যোগাযোগ করত। কিন্তু তাদের ভাষাগত সংস্কৃতিতে অপসংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। তাদের এইখানে যে সংস্কৃতির উৎপত্তি ঘটেছিল তা বর্তমানে রাজনৈতিক উন্নয়ন এবং ভারতীয় উপনিবেশবাদের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

১৯৯৩ সালে নাগা এবং কুকি উপজাতীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এই যুদ্ধে প্রচুর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে রাজধানীতে কারফিউ জারী করা হয়। বিদ্রোহী গ্র“প:মনিপুরে জাতিগত সংঘাতের কারণে যে সমস্ত বিদ্রোহী গ্র“প গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে অন্যতম। RPF (Revolutionary Peoples Front) এটি ১৯৭৮ সালে গঠন করা হয়। এর অধীনে একটি মিলিটারী গ্র“প PLA (Peoples Liberation Army) গঠন করা হয়। RPF এর উদ্দেশ্য ছিল মিটি, নাগা, কুকী ইত্যাদি উপজাতীদের নিয়ে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা।

UNLF (United National Liberation Front) ১৯৬৪ সালে গঠন করা হয়। এটি সমাজতান্ত্রিক বিদ্রোহী গ্র“প। এর প্রেসিডেন্ট Kalulung, সেক্রেটারী হল Anamban । উদ্দেশ্য হল এটি স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা। MPA (Monipur Peoples Army) হচ্ছে মিলিটারী গ্র“প। যারা একটি স্বাধীন মনিপুর রাষ্ট্র গঠনকরার জন্য সংগ্রাম করছে। এছাড়াও Peoples Revulationary Party of Kanguipak একটি স্বতন্ত্র বিদ্রোহী গ্র“প যারা একটি স্বাধীন বাসস্থান চাচ্ছে।

১৯৯৯ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারয় ৯ জন ইণ্ডিয়ান সিকুরিটি ফোর্স এর সদস্য কে হত্যা করা হয়। ২০০০ সালের ১০ জুন এর প্রতিষ্ঠাতাকে হত্যা করা হয়। যার নাম Arambam Sumarendra । ২০০১এর অক্টোবর মাসে ৫ জন সিকিুরিটি ফোর্সের সদস্যকে হত্যা করা হয়। তাছাড়া বর্তমান সময়ে টিপাইমুখী বাধ বিরোধী আন্দোলনের জন্য তারা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করছে। বরাক নদীর উপর বারতের টিপাইমুখ পানিবিদ্যুৎ প্রচলন নিয়ে বাংলাদেশ ও মনিপুরের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বেড়ে চলছে। এই প্রকল্পের বিরূপ প্রভাবে এখানকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল মরুময়তা, লবনাক্ততা, বন্যা, জলাবদ্ধতা ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ নানা বিপর্যয়ের শিকার হবে আশঙ্কা করেছেন বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞরা।

টুইভাই ও টুইরয়ং নদীর মিলনস্থল থেকে উৎপত্তি হয়েছে বরাক নদী। এই নদীর ৫০০ মিটার পশ্চিমে যা বাংলাদেশের সিলেট সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে টিপাইনামক স্থানে ৬ হাজার কোটি রূপির বেশি অর্থব্যয় করে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বহুমুখী বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারত। এ বাঁধের উচ্চতা হবে ১৬২ দশমিক ৮০ মিটার। বর্তমানে জমি নির্বাচনের পর্যায়ে রয়েছে। ২০১০ সালের মধ্যে এর নির্মান কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ভারত।

ভারতের ভেতর দিয়ে আসা বরাক নদী একটি আন্তর্জাতিক নদী এবং আন্তর্জাতিক কনভেনাল অনুযায়ী ভাটির দেশ হিসেবে বরাক নদীর পানির উপর বাংলাদেশের সমান অধিকার রয়েছে। এই নদী সিলেট অঞ্চলে প্রবেশ করে সুরমা এবং কুশিয়ারায় বিভক্ত হয়ে মেঘনায় এসে পড়েছে। এই বাধ নির্মান করলে এই ৩টি নদী প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়বে। আন্তর্জাতিক নীতি ও ভারত বাংলাদেশ পানি চুক্তিতে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, অভিন্ন নদীর উপর কোনরূপ স্থাপনা নির্মান করতে গেলে ভারত বাংলাদেশের অনুমতি নিবে। কিন্তু এসব কিছু না মেনে ভারত একতরফাভাবে বরাক নদীর উপর বাঁধ নির্মান শুরু করেছে। এতে মনিপুর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ৪০-৫০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।

পরিবেশগত মারাত্মক প্রভাবের কথা চিন্তা করে স্বয়ং ভারতের আসাম, মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্যের অধিবাসীরা বেশ সোচ্চার। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ২০টি রাজনৈতিক সংগঠনের আহ্বানে মনিপুরের রাজধানী ইমপালে হরতাল পালিত হয়। তাছাড়া আদালতে মামলা হয়েছে এবং মনিপুরে নিয়মিত প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাছাড়া ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে এই প্রকল্পের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে অভিন্ন বক্তব্য রাখেন।

৪.মেঘালয়
মেঘালয় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থাৎ সেভেন সিস্টারসের অন্যতম একটি ক্ষুদ্র রাজ্য। মেঘালয়ের আয়তন ২২৭২০ বর্গ কিলোমিটার। যার পূর্ব পশ্চিমে ৩০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০০ কিলোমিটার প্রস্থ। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী এর জনসংখ্যা প্রায় ২১৭৫০০০ জন। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। যা প্রাচ্যের স্কটল্যাণ্ড নামে পরিচিত। বর্তমানে শিলং এর জনসংখ্যা ২৬০০০০ জন। মেঘালয়ের উত্তরে আসাম ও দক্ষিণে রয়েছে বাংলাদেশ। এবং এই রাজ্যের প্রায় এক তৃতীয়াংশ অরন্যময়। মেঘালয়ের বনাঞ্চলগুলো স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এক্ষং বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছপালায় পূর্ণ। মেঘালয়ের অফিসিয়াল ভাষা ইংরেজি হলেও প্রধান ভাষা গাড়ো এবং খাশি। খাশি ভাষা মূলতঃ Austroasiatic ভাষার অন্তর্গত। খাশি ভাষায় এই অঞ্চলের প্রায় ৪৯% লোক কথা বলে। এছাড়া গাড়ো ভাষাটি বোদে ভাষার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই ভাষার অনেক শব্দ অসমীয় এবং বাংলা ভাষা থেকে গৃহীত। এছাড়াও মালামে আরো যে ভাষা রয়েছে Awe Chisak, A’beng, Ganching, kamrup, A’chik, Dacca and Jaintia ভাষা। মেঘালয়ে বিভিন্ন জাতির বসবাস। এদের মধ্যে অন্যতম হলো: গাড়ো ভাষা-৩৪%, খাশি ভাষা-৪৯%, বাংলা ভাষা-২.৫%, নেপালী ৪%, হাজং, কচ্ (Koch) , ভই (Bhoi), নার (Pnar) ইত্যাদি।

ধর্ম ও সংস্কৃতি: এখানকার অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠীয় মাতৃতান্ত্রিক পরিবার কেন্দ্রীক। এখানে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী মায়েরা। এবং পুরুষরা বিশেষত মায়ের ভাই সম্পত্তির দেখা শোনা করে। এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের প্রাধান্যই বেশী। এবং ভারতের জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য জরিপ অনুযায়ী মেঘালয় হলো এমন একটি রাজ্য যেখানে জাতীয় হিসাবের বিপরীতে শতকরা ৭৩ শতাংশ পিতামাতাই ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করে। ব্রিটিশ মিশনারীদের প্রভাবের কারণে খৃস্ট ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বেশী। এছাড়াও রয়েছে হিন্দু ও মুসলমান। খৃস্টান-৭০.৩৫, এ্যানিমিজ-১১.৫%, হিন্দু-১৩.৩%, মুসলমান-৪.৯%।

সেভেন সিস্টারসের অন্যান্য রাজ্যগুলো থেকে মেঘালয়ের পার্থক্য রয়েছে। মেঘালয়ের ভূখণ্ড উচু খাড়া শক্ত পাহাড় দ্বারা গঠিত। সর্বত্র পাইন বাগান এবং নয়নাভিরাম প্রচুর জলপ্রপাত রয়েছে। মেঘালয় হলো গতানুগতিক এবং আধুনিকতার মিশ্র একক। ব্রিটিশদের প্রভাব সম্পূর্ণভাবে দৃশ্যমান হলেও তারা তাদের অতীত ঐতিহ্যের প্রতি গর্ববোধ করে। ১৯৭২ সালে আসাম হতে বেরিয়ে আসার পর মেঘালয় ভারতের অন্যতম ক্ষুদ্রতম রাজ্যে পরিণত হয়। যা বাংলাদেশ দ্বারা বেষ্টিত। মেঘালয়ের বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি ভাষা প্রচলিত। ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং নৃ-তাতত্ত্বিক ভাবে খাশি এবং গারোরা ভারতীয় না। এবং সম্প্রতি মেঘালয় এর উপজাতীরা ভারতীয় উপরিবেশিক অধিকারের বিরূদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছে।শিলং ব্রিটিশদের জন্য অবসর কাটানোর অন্যতম এরকটি জায়গা ছিল। এবং ১৮৭৪ সালে শিলংকে আসামের রাজধানী করে। যে কারনেই শিলংকে প্রাচ্যের স্কটল্যাণ্ড বলা হয়। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা এবং মেঘালয়ের জাতিগত ও ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা শিলং এর স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করছে। এই অঞ্চলের ঐতিহ্য পোলো ও গলফ মাঠ কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও উপনিবেশিক উত্তর শিলংএ বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং পরিকল্পনার অভাব উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বিঘিœত করছে।

মেঘালয়ের জাতীগত সমস্যার মূল কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে Tribal এবং Non tribal settelerদের মধ্যে ভূমি বণ্টন এবং পরিচয়গত সমস্যা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো বনাঞ্চল ধ্বংস করে এবং পাহাড় কেটে ভারত সরকার প্রচুর ভারতীয়দের এই অঞ্চলে অবৈধভাবে অভিবাসন ঘটাচ্ছে। যার ফলে এই অভিবাসী এবং আদিবাসীদের ভূমির বণ্টন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈষমের কারনেই জাতীগত সমস্যার সৃষ্টি। এখানে অভিবাসী সমস্যার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রচুর বাঙালি মেঘালয়ে অভিবাসী হচ্ছে। এই অভিবাসী সমস্যা খাশি এবং গাড়ো জনগণের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে।এই সমস্ত সমস্যা নিয়ে এই অঞ্চলের আদিবাসীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যের মত ভারত সরকারের বিরূদ্ধে নিজেদের দাবী আদায়ের লক্ষ্যে বিদ্রোহী গ্র“প গড়ে তোলে। এবং এই গ্র“পগুলো হলো: ANVC (Achik National Volunteer Council) এটা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে। তারা মূলতঃ Achik land প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে গাড়ো পাহাড় কেন্দ্রীক। Gara National Council এটি একটি রাজনৈতিক দল যারা মেঘালয়ের ৩টি জেলা নিয়ে গাড়ো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। HNLC (Hynnicwtrep National Liberation Council) ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় তারা গাড়োদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়ে আলাদা রাজ্য গঠন করতে চায়।

উনিশ শতকে মেঘালয় ব্রিটিশদের অধীনে আসার পূর্ব পর্যন্ত গারো, খাশিয়া উপজাতিরা নিজস্ব রাজ্যে বসবাস করত। ১৮৩৫ সালে মেঘালয়কে আসামের সাথে সংযুক্ত করে। ব্রিটিশদের সাথে চুক্তি সম্পর্কের কারণে অঞ্চলটি অর্ধস্বাধীনতার মর্যাদা লাভ করে। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর লর্ড কার্জন যখন বাংলাকে বিভক্ত করেন থখন মেঘালয় আলাদা হয় এবং আসাম বাংলার সাথে যুক্ত হয়। ১৯১২ সালে যখন বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় তখন মেঘালয় আবার আসাম প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীনতার সময়ে মেঘালয়কে আসামের অন্তর্ভূক্ত করা হয় এবং তারা আংশিক স্বায়তশাসন পায় যা সীমিত আকারে। আসাম পূর্ণগঠন আইন ১৯৬৯, মেঘালয়কে স্বায়ত্বশাসিত মর্যাদা দেয়। ১৯৭০ সালের ২ এপ্রিল আইন কার্যকর হয়। সংবিধানের ১৬ ধারা অনুযায়ী আসামের অধীনে স্বায়ত্বশাসিত অঙ্গরাজ্য মেঘালয়ে একটি আইন প্রণয়নকারী সংস্থা ছিল যার সদস্য ছিল ৩৭ জন। ১৯৭১ সালে আইনসভা উত্তর-পূর্বাঞ্চল পূর্ণগঠন আইনানুযায়ী মেঘালয়কে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসিত অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা প্রদান করে। ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারী মেঘালয়ঢ একটি স্বায়ত্বশাসিত অঙ্গরাজের মর্যাদা লাভ করে।

৫.নাগাল্যাণ্ড
নাগাল্যাণ্ড ভারতের অদূরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি পাহাড়ি রাজ্য। এর পশ্চিমে আসাম, উত্তরে অরুনাচল প্রদেশ এবং পশ্চিমে মনিপুর অবস্থিত। এর রাজধানীর নাম কোহিমা এবং সবচেয়ে বড় শহরটির নাম দিমাপুর। আনুমানিক ২০ লক্ষ জনসংখ্যা আর ১৬৫৭৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নাগাল্যাণ্ডকে ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্যে পরিণত করেছে। নাগাল্যাণ্ডের আদিবাসীগুলো (১৪) হচ্ছে- এ্যাংগামীনাগা, অও, চাখেস্যাং, চ্যাং, খিয়ামনিয়াঙ্গান, কোনিয়াক, লোথা, ফোম, পচুরি, র্যাং মা, সাাংটাম, সুমি, জিমচুংড়– এবং জেলিয়াং। এদের মধ্যে কোনিয়াক, এ্যাংগামী, অও, লোথা এবং সুমি হচ্ছে সবচেয়ে বৃহৎ নাগা আদিবাসী গোষ্ঠী। বুনন নাগ্যাাণ্ডের একটি এতিহ্যবাহী শিল্প যা প্রজন্মান্তরে চলে আসছে। প্রত্যেক বৃহৎ আদিবাসী গোষ্ঠীর নিজস্ব নক্র এবং রং (নির্দিষ্ট) আছে। খ্রিস্টধর্ম হচ্ছে নাগাল্যাণ্ডের প্রধান ধর্ম। এর ৯০.০২% খ্রিস্টান, ৭.৭% হিন্দু এবং ১.৮% মুসলমান। একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী যা ০.৩% এর থেকেও কম তারা বংশ পরম্পরায় তাদের পূর্ব পুরুষের ধর্ম পালন করছে।

নাগাল্যাণ্ডের ইতিহাস বলতে গেলে বলা যায় নাগা আদিবাসীদের রীতিনীতি ও তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বার্মিজ ভাষায় এই অঞ্চলের সানুষদের ‘নাকা’ বলে অভিহিত করা হয়। নাগা আদিবাসীদের আসাম ও মায়ামারের আদিবাসীদের সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিদক যোগাযোগ ছিল, এমনকি আজও অনেক নাগা আসামে বসবাস করে। ১৮১৬ সালে বার্মা এক আক্রমনের মাধ্যমে আসামের পার্শ্ববর্তী নাগাল্যাণ্ডের অংশটুকু দখল করে নেয়। ১৮২৬ সালে যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি আসামের ক্ষমতা দখল করে তখন আধুনিক নাগাল্যাণ্ড ও তাদের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। মিশনাািরগণ নাগাল্যাণ্ডের নাগা উপজাতি সমূহগণকে খ্রিস্ট্রিয় ধর্মে রুপান্তরিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও সময় ব্রিটিশরা শতাধিক নাগা সৈন্যকে ফ্রান্সে যুদ্থেধ অংশগ্রহণের জন্য পাঠিয়ে ছিল। ইউরোপে থাকাকালীন সময় নাগারা বুঝতে পারে যে তাদের মধ্যে যে জাতিগত ভিন্নতা তাকে মুখ্য না করে তাদের নিওজেদের মধ্যকার অভিন্ন স্বার্থগুলো আদায় করার জন্য একসাথে কাজ করতে হবে। ১৯১৮ সালে স্বদেশে ফেরার পর তারা সংঘবদ্ধ হয় এবং এভাবেই নাগা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। ইণ্ডিয়ার স্বাধীনতার পর এই অঞ্চলটি ছিল আসামের প্রদেশ। ‘নাগা’ শব্দটি ঐ অঞ্চলের সকল আদিবাসী গোষ্ঠীর ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়। নাগা স্বায়ত্ত্বশাসনের ধারনাটি শুরু হয় ১৯১৮ সালে একদল পাশ্চাত্য শিক্ষিত নাগাদের মাধ্যমে। তারা এমনকি সিমন কমিশনে এনিয়ে একটি স্বারক লিপি পেশ করেছিল। আঞ্জামি জাপু ফিজো আসার পর এই আন্দোলন নতুন রূপ পায়। ফিজো ছিলেন নাগা স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের অন্যতম নেতা। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট NNC ফিজোর প্ররোচনায় নাগাল্যাণ্ডকে ইণ্ডিয়া থেকে স্বাধীন ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইণ্ডিয়া সরকার দ্রুত ঐ বিদ্রোহ দমন করে। ফিজোকে ১৯৪৮ সালে গ্রেপ্তার করা হয়। ছাড়া পাওয়ার তাকে NNC এর প্রেসিডেণ্ট করা হয়।

নাগাল্যাণ্ডের বিদ্রোহী সংগঠনগুলো হলো; Naga National Council (NNC): এটি একটি রাজনৈতিক সংগঠন যা গত শতাব্দির ৪০ দশক শেষে এবং ৫০ দশকের শুরুর দিকে সক্রিয় ছিল। এই দলটি আঞ্জামি জাপু ফিজোর নেতৃত্বে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন শুরু করে। National Socialist Council of Nagaland (NSCN) (Lsak-Muivah) এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালের ৩১ জানুয়ারীতে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিল ইসাক চিসি সু, থুইংগালেঙ্গ মুইডা ও এস. এস খাপলাং। তারা মাও জেডং এর আদলে বৃহৎ নাগাল্যাণ্ড প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। National Socialist Council of Nagaland (NSCN) (Khaplang): নাগা আদিবাসীদের বিরোধের কারনে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালের ৩০ এপ্রিল। Naga National Council (Adino) (NNC): এই সংগঠনটি নাগাল্যাণ্ডের সবচেয়ে আদি রাজনৈতিক সংগঠন। এর নেতৃত্ব প্রদান করছে ফিজোর কন্যা। Naga Federal Government (NFG) : ১৯৭০ সালে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন শুরু করেছিল। কিন্তু এর নেতাকে গ্রেপ্তার ও সদর দপ্তর ধ্বংস করে দেওয়ার পর এর কার্যক্রম কমে যায়। Naga Federal Army (NFA): এটি একটি গেরিলা সংগঠন যা ১৯৮০ এর দিকে সক্রিয় ছিল। এর শতাধিক সদস্য চীনে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত।

নাগাল্যাণ্ডের অধিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি রীতিনীতি রয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গীত ও রংয়ের ব্যাপারে সহজাত কিছু ধারনা দেখা যায়। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ জমিই গ্রামাঞ্চল এবং ব্যক্তিগতম মালিকানাধীন। তাই জমি নিয়ে তাদের মধ্যে কোন বিরোধ হয়না। এমনকি গ্রামের বাড়িগুলোর প্রধান ফটক বলতে কিছু দেখা যায়না। নাগাল্যাণ্ডে প্রচুর কমলা ও আনারস উৎপাদন করে। খ্রিস্ট্রধর্ম এই অঞ্চলে গভীর প্রভার বিস্তার করে আছে এবং এখানকার চার্চগুলো খুব ভালভাবে পরিচালিত হয়। নাগাল্যাণ্ডকে এই উপমহাদেশের একটি সঙ্কটাপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই অঞ্চলটি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে খুবই স্পর্শকাতর এবং বিদেশীদের এাই এলাকায় আগমন নিষেধ। নাগাল্যাণ্ডের রাজধানী কোহিমা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮ শতকে ব্রিটিশদের দ্বরা। এটা কখনই একটি পাহাড়ি স্টেশন ছিলনা এবং এখানে বাগানবাড়ি ও উন্মুক্ত বাগানের পর্যাপ্ততা ছিলনা। কিছুদিন আগ পর্যন্তও নাগার অধিবাসীগণ উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে আতঙ্কের কারণ ছিল্ যদিও সত্যিকার অর্থে তারা উন্মুক্ত ও অতিথিপরায়ন মানুষ। তাদেরকে প্রকৃতপক্ষে তিব্বরেতর উত্তর-পূর্বাংশে বসবাস করতে দেখা যায়। অতঃপর স্থানান্তরিত হয় চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মধ্য তিদয়ে বার্মা মালয় এবং ইন্দোনেশিয়ায় এবং আসামের মাধ্যমে।

নাগাল্যাণ্ডে তারা ১৬টি প্রধান দলে বিভক্ত হয়েছিল। যাদের মধ্যে এ্যাঙ্গামিজদের দ্বারার অধিকৃত কোহিমা, কোনিয়াকস্, অও, রৈাথাস, সেমাস, ওয়াংচুচ। দাদের হিংস্র খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও, এরা সকলেই কৃষক যারা সমতলে ভূমি চাষ করে এবং গবাদিপশু পালন করে। কিছু আদিবাসী তাদের হিংস্রতার সাফল্য চিহ্নিত করতে তাদের মুখে পেচানো শিয়ের উলকি আঁকত। আটার শতকের শেষের দিকে নাগাাল্যাণ্ডের ব্রিটিশ কর্মকর্তারা নাগাদের সাথে একটি সাময়িক যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে আসে এবং ততাদেরকে নির্দিষ্ট সীমনার বাইরে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাই তাদের মানচিত্রে অসংখ্যা ফাঁকা স্থান রয়ে যায়। কোহিমার এ্যাঙ্গামি গ্রামের উপর ভিত্তি করে সহকারী কমিশনার মাঝে মাঝেই সমগ্র রাজ্যে কর আদায় এবং এভাবেই বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর উপর কতৃত্ব ধরে রাখতেন। কারো কারো মাঝে ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য ছিল এবং অন্য তাদেরকে অনধিকার প্রবেশকারী ভাবতো।

১৮৭৯ সালে কোহিমার ব্রিটিশ অনুগত এ্যাঙ্গামিরা যারা কিনা ব্রিটিশ লাইনের মাধ্যমে আসাম উপত্যকায় তথ্য পাচারর করত এবং এভাবেই সহযোগিতার মাধ্যমে কোনোমা এ্যাঙগামিদের কোহিমার ািবরূদ্ধে বিদ্রোহী করে তোলে। ১৯৪৭ সালে যখন ইউনিয়নের (বর্তমান যুক্তরাজ্য) পতাকা ইণ্ডিয়ান পতাকা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় নাগারা তখন তা খুব দ্রুত সরিয়ে ফেলেছিল। তারা চেয়েছিল ব্রিটিশদের উপস্থিতি থাকুক। ইণ্ডিয়ার সাথে তারা যোগ দিতে আগ্রহী ছিলনা।

বহুবছর ধরে Naga National Council (NNC) ফিজোর নেতৃত্বে চীন ও অবিভক্ত পাকিস্তানের সহায়তায় নাগাদের স্বাধীঅনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল। ১৯৭৪ সালে এর একটি অংশ বিভক্ত হয়ে যায় এবং যখন রাজ্যের নির্বাচনে জয়লাভ করে তারা শিলিং সন্ধি স্বাক্ষর করে এবং অস্ত্রসমর্পন করে। কিন্তু United Democratic Front এর অবশিষ্ট অংশ যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিল। ১৯৮০ সালে ফিজোর অধঃস্তন মুইভা, ইসাক, এম. এস খাপলাং বিভক্ত হয়ে National Socialist Council of Nagaland (NSCN) প্রতিষ্ঠা করে। আবার ১৯৮৮ সালে তারা দুইটি ভাগে ভাগ হয়ে যায় যথা (NSCN) (Khaplang) ও NSCN (ইসাক ও মুইভা)। এম. এস খাপলাং এর দল আজও যুদ্ধ করে যাচ্ছে। কিন্তু এক বছর হল, ইসাক ও মুইভার গ্র“প অস্ত্র বিরতি দিয়ে ইণ্ডিয়ান সরকারের সাথে আলোচনায় এসেছে। ১৯৯৩ সালে নাগাল্যাণ্ড একটি মর্মান্তিক সংঘাতের সম্মুখিন হয় যা নাগা ও কুকিস জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংগঠিত হয়। এই অঞ্চলে ইণ্ডিয়ান আভ্যন্তরীণ সহিংসতা যুক্ত হওয়ার ফলে আসামের বোডো বিদ্রোহী এবং NSCN এর মধ্যে সংঘাত দেখা দেয়। যা পরবর্তীকালে অপর একটি সক্রিয় বিদ্রোহী দলের সাথে সংযুক্ত হয় এবং এটা নাগাল্যাণ্ড হতে নিয়ন্ত্রিত হত বলে অভিযোগ করা হয়।

১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট সরকার এবং (NSCN) (Isac- Muivah) গ্র“পের সাথে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি হয়। পরবর্তীকালে সাগ্রিকভাবে সরকার এবং রাজ্যের সকল বিদ্রোহী দলগুলোর দ্বারা পর্যবেক্ষণ চলতে থাকে। যদিও অস্ত্র বিরতি চলাকালীন সময় প্রত্যন্ত নাগা বিদ্রোহী দলগুলোর মাঝে জাতিগত সংঘাত চলছিল এবং একটি জরিপে দেখা যায় অস্ত্র বিরতির প্রথম তিন মাসে ১২০ জনের প্রাণহানী ঘটে। নভেম্বরের তারিখ হতে সরকার অস্ত বিরতির সময়সীমা আরো তিন মাস বর্ধিত করে। তখন একতরফাভাবে নাগাল্যাণ্ডের ঐ সমস্ত সশস্ত্র দল গুলোকেও এই অস্ত বিরতীর আওদায় আনা হয়। বছরের শেষ দিকে অস্ত্র বিরতীর সময়সীমা জুলাই ৩১, ২০০০ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ১৯৯৯ সালের মে মাসে NSCN(IM) এর আণ্ডারগ্রাাউণ্ড দলনেতা ইসাক চিছি সু ও থুইঙ্গালেং মুইভা চেযারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদক ৩৩ বছর পর প্রথম বারের মত নাগাল্যাণ্ড সফরে আসে। অতঃপর সরকার NSCN(IM) কে ‘নাগালিম’ এর ভৌগোলিক সীমানা চিহ্নিত করতে বলে, যাতে ঐ অঞ্চলে অস্ত্রবিরতি প্রক্রিয়াটি কার্যকর করা যায়। আগস্টের ১৮ তারিখে NSCN (IM), NSCN (K) এর সাধারণ সম্পাদক ডালি মুংরো ও তার দুই সহযোগ কে হত্যা করে।

অস্ত্রবিরতির সময়সীমা জানুয়ারী ২০০০ হতে জুলাই ৩১, ২০০১ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এপ্রিলে অপর নাগা বিদ্রোহী দল NSCN (K) এবং NSCN(IM) উভয়েই একটি আনুষ্ঠানিক অস্ত্রবিরতি ঘোষণা দেয়। প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে ঘঝঈঘ এর বিদ্রোহী দুই দলের উপর কোন টাপ প্রয়োগ করেনি এবং উভয় দলই প্রতিরক্ষাবাহিনীর সাথে অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। ২০০১ সালের এপ্রিলে NSCN এর দুই দলের মাঝে সপ্তাহব্যাপি সংঘর্ষের ফলে ৪৫ জনের উপরে মারা যায় এবং মোন জেলার ১৫ টি গ্রামের ৪৫০০ জন মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ২০০১ সালের জানুয়ারী হতে মে এর মধ্যে নাগাল্যাণ্ডে বিদ্রোহ সংক্রান্ত ঘটনারর ফলে ৪ জন সাধারণ মানুষ, ১৭ জন সৈন্য মারা যায়। সরকারের সাথে নাগার স্বায়ত্তশাসন কামীদের অস্ত্র বিরতী আলোচনার কারণে নাগাল্যাণ্ড এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যে রাজনৈতিক অসšেতাষ দেখা দেয়। জুনে একটি ঘটনা ঘটে যেখানে ১০ হাজারের বা এর চেয়েে বেশি আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ কাঁদানো গ্যাস নিক্ষেপ করে। এই বিক্ষোভকারীরা মনিপুর জেলার বিষ্ণুপরের নাম্বলে যেখানে নাগাল্যাণ্ড সীমান্তের পিছনে এই অস্ত্রবিরতী বর্ধিত সময়সীমার বিপরীতে একত্রিত হয়েছিল। এমনকি পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়।


৬. অরুনাচল প্রদেশ
ভারতের সর্বপূর্বে অবস্থিত প্রদেশ হলো অরুনাচল প্রদেশ। যার দক্ষিণে রয়েছে সেভেন সিস্টারসের অন্যতম রাজ্য আসাম, দক্ষিণপূর্বে নাগাল্যাণ্ড। পূর্বে বার্মা এবং পশ্চিমে রয়েছে ভুটান। এবং উত্তরে রয়েছে চীন শাসিত তিব্বত। অরুনাচলকে বলা হয় The Land of the Rising Sun (হিমালয়ের প্রভাত)। অরুনাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের সাথে বিরোধ রয়েছে। চীন মূলতঃ অরুনাচলের কিছু অংশ দাবী করে যা ম্যাকমোহন লাইন দ্বারা আলাদা করা হয়েছিল। অরুনাচলের অধিকাংশ জনগণই Tibeto Barman গোত্রভুক্ত। এছাড়াও প্রচুর সংখ্যক লোক ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অভিবাসিত হয়ে আসা।

এক নজরে অরুনাচলঃ জেলা-১৬টি। প্রতিষ্ঠিত হয়-১৯৮৭ সালের ২০ ফেব্র“য়ারী। রাজধানী- ইতানগর।গভর্নর- জগিন্দর জাসওয়াত সিংহ ।আইনসভা- এক কক্ষ বিশিষ্ট , আসন সংখ্যা-৬০।আয়তন- ৮৩৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা- ১০ লক্ষ ৯১ হাজার ১২০ জন। (২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)।ভাষা-হিন্দি, ডিওরী, অসমীয়, ইংরেজি ও অন্যান্য। অরুনাচলের অধিকাংশ আদিবাসীরাই হলো Tibeto-Barman গোত্রীয় এবং তুলনামূলকভাবে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ধনী। অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠীগুলো বার্মার পার্বত্য অঞ্চল থেকে আগত এবং বার্মার পশ্চিমাঞ্চলের সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। অরুনাচলের প্রকৃত দেশীয় আদিবাসী বা উপজাতিরা হলো মূলতঃ Puroik / Sunlung ।

খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অরুনাচল Morpa Kingdom এর অধীনে ছিল। এবং ১৮৫৮ পর্যন্ত তিব্বত ও ভুটানের অধীনে ছিল। ১৮৫৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় সকল জাতিগোষ্ঠীগুলো মূলতঃ নিজেদের শাসন ব্যবস্থা দ্বারা স্বায়ত্তশাসিত ছিল। কিন্তু ১৮৫৮ সালে এই অঞ্চলের স্বাধীনতা নস্যাৎ হয়ে যায় এবং ব্রিটিশ অধীনে চলে যায়। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই ব্রিটিশ ভারতের সাথে চীনের তিব্বত এর সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ শুরু হয়। ১৯১৩-১৪ সালে চীন এবং ব্রিটেনের সাথে সিমলায় একটি সমঝোতা মূলক চুক্তি সাক্ষরিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল চীন এবং ব্রিটিশ ভারতের সাথে তিব্বতের সীমারেখা ঠিক করা। এই সময় স্যার হেনরী ম্যাকমোহন ভারত এবং চীনের মধ্যকার ৮৯০ কিলোমিটার সীমান্ত রেখা অংকন করে। যাতে Tawang সহ তিব্বতের কিছু অংশ ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়। এবং এই Tawang কে কেন্দ্র করে ব্রিটেনের সাথে চীনের আলোচনা ভেঙ্গে যায়। যার ফলে সিমলা সমঝোতা চুক্তি বাতিল হয়ে যায়।

১৯৩৭ সালে ম্যাকমোহন লাইন অনুযায়ী ব্রিটেন একটি খসড়া ম্যাপ তৈরী করে এবং ১৯৩৮ সালে চুড়ান্তভাবে তা প্রকাশ করে। এবং ১৯৪৪ সালে এই অঞ্চলে অর্থাৎ পশ্চিমের Dirang Dzong থেকে পূর্বের Walong পর্যন্ত ব্রিটিশ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৪৭ সালে তিব্বত সরকার ভারতের নতুন সরকারকে একটি নোট প্রদান করে (Ministry of External Affairs) Tawang প্রদেশ দাবী করে। বলপ্রয়োগপূর্বক Tawang প্রদেশসহ ভারত এককভাবে সিদ্ধান্ত দেয় যে ১৯৫০ সালের নভেম্বর থেকে ম্যাকমোহন লাইন কার্যকর হবে, এবং চীন ঘোষণা দেয় যে The People Republic China has never recognized the McMohan Line ।

১৯৫৯ সালে দালাইলামা ঘোষণা দেয় যে তিব্বত চীন আলাদা স্বায়ত্তশাসিত স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। যার নেতৃত্ব দিবে দালাইলামা নিজে। যার ফলে তিব্বত সরকার (চীন সরকার) তাকে নির্বাসিত করে এবং তিনি অরুনাচলে ভারত সরকারের অধীন রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করে। ১৯৫৪ সালে North Eastern frontier gency গঠন করা হয়েছিল। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত চীনের সাথে ভারতের সম্পর্ক শান্ত থাকলেও ১৯৬২ চীন ভারত আক্রমন করে, এবং NEFA দখল করে নিয়ে চীন তাদের জয় ঘোষণা করে এবং তিব্বতের সাথে Better trade গঠনের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

পরবর্তীকালে অরুনাচলে কিছু বিদ্রোহী গ্র“পের জন্ম হয়। যার দ্বারা অরুনাচল হুমকির সম্মুখীন হয়। এই সমস্ত বিদ্রোহী গ্র“পগুলো মূলতঃ নিজেদের কিছু দাবী দাওয়া বিশেষ করে স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। যাদেরকে চীন অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দ্বারা সহায়তা করে। বিদ্রোহী গ্র“পগুলো মূলতঃ Chang lang এবং Tirap এ তাদের ভিত্তিভূমি বা নিজস্ব এলাকা গড়ে তোলে। তারা পাহাড়ী অঞ্চল এবং অন্যান্য এলাকায় লোকজনদের কাছ থেকে জোরর্পর্বক অর্থ সংগ্রহ করে নিজেদের বিদ্রোহ চালিয়ে যাবার জন্য।অরুনাচলে যে সমস্ত বিদ্রোহী গ্র“প রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এবং প্রধান হলো অরুনাচল ড্রাগন ফোর্স বা ADF পূর্বাঞ্চলীয় স্বাধীনতাকামী দল হিসেবে পরিচিত। তারা মূলতঃ অরুনাচলকে ব্রিটিশ পূর্ব সময়ের মত স্বাধীন করার লক্ষ্যে তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এখানকার আদিবাসীরা রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আর্থিক সহায়তা করে।

Arnnachal Dragon Force (ADF) মূলতঃ বিভিন্ন অঞ্চলের এবং দেশের বাহিরেও তাদের যোগাযোগ রক্ষা করে। যে সমস্ত সংগঠন এর সাথে ADF এর যোগাযোগ রয়েছে তা হলো- নাগাল্যাণ্ডের National Socialist Council of Nagaland (NSCN) এবং United Liberation Front of Asan । এই সংগঠনের সাথে ADF এর অস্ত্র আদান প্রদান এবং আশ্রয় প্রদানসহ নানা প্রকারে সহযোগিতা মূলক কর্মকাণ্ড চলে। এছাড়াও চীন ADF কে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছে বলে ভারতের অভিযোগ রয়েছে। এবং ADF চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে। এছাড়াও আরো যে সমস্ত বিদ্রোহী সংগঠন রয়েছে তা হলো NLFA (National Liberation Front of Arunachal এবং United Peoples Volunteers of Arunachal ।

এই সমস্ত বিদ্রোহী গ্র“প বিশেষ করে ADF এর বিদ্রোহের মূল কারণ হলো সরকারর কর্তৃক সেটেলারদের সাথে ভূমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব এবং ব্রিটিশ পূর্ব স্বাধীন Taeo country প্রতিষ্ঠা করা। যারা Tai Khamtis People । তারা Lohit Dibang এবং আসামের Sadiya অঞ্চল ( প্রস্তাবিত Taeo country এর Map এর অধীনে পরে) নিয়ে আলাদা একটি স্বাধীন গঠন করতে চায়। এখানে নানা ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর বসবাস ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুসারে- হিন্দু-৩৭৯৯৩৫ জন (৩৪%),খ্রিস্টান-২০৫৫৪৮ জন (১৮.৭%),বৌদ্ধ-১৪৩০২৮ জন (১৩%),মুসলমান-২০৬৭৫ জন ( ১.৯%),শিখ-১৯৬৫ জন (০.১%),জৈন- ২১৬ জন।অন্যান্য ( বিশেষত ) ৩৩৭৩৯৯ জন (৩০.৭%)। অরুনাচলে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর বসবাস এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- Puroik / Sunlung যারা অরুনাচলের আদি অধিবাসী।Lisu People এরা মূলতঃ Burman cthnic group যারা South East China, Burma, Thailand থেকে অভিবাসিত হয়ে এসেছে। Monpa এরা হলো অরুনাচলের বড় বা বৃহৎ জাতিগোষ্ঠী।

৭. আসাম
ভারতের উত্তরপূর্বান্চল অর্থাৎ সেভেন সিস্টারসের অন্যতম প্রধান এবং বৃহত্তম রাজ্য আসাম। ১৯৪৭ সালে ভারত সাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে ১৯৬৩,৭২এবং ৮৭ সালে যথাক্রমে নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মিজোরাম, অরুণাচল সায়ত্ত্বশাসন এবং সাধীনতার দাবীতে আসাম থেকে বিভক্ত হয়। যার রাজধানী হল গোহাটি শহরের দেশপুর। আসামের চারপাশে উত্তরে ভুটান।উত্তরপশ্চিমে অরুণাচল প্রদেশ, পশ্চিমে নাগাল্যান্ড এবং দক্ষীন এবং দক্ষীনপশ্চিমে ত্রিপুরা মিজোরাম ও মনিপুর প্রদেশ পূর্বে রয়েছে মেঘালয় এবং বাংলাদেশ। পাহাড় ও নদী বেষ্টিত এ বিশাল আসাম হল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লিলাভূমি। যা সেভেন সিস্টারসের কেন্দ্রভূমিতে অবস্থিত।

বৃটিশরা এদেশে আসার পর আসাম ভারতের অন্তভূক্ত হয়। প্রথমদিকে আসাম বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তভূক্ত ছিল পরবর্তীতে ১৯০৬ সালে এটি পূর্ব বাংলা এর অন্তভূক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে আসাম ভারতের একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৪৭ পর থেকেই অর্থনৈতিক সমস্যা এ অঞ্চলে দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করতে থাকে যার কারণে ১৯৭০ পরবর্তী সময়ে সায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে জন্ম হয় ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম ( উলফা ) এবং ন্যাশানাল ডেমোক্রেটিক ফ্র ন্ট অব বদোল্যান্ড (এন, ডি, এফ, বি)। ১৯৯০ সালে ভারত সরকার আসামে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে বিদ্রোহ দমন করার জন্য। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলমান এ সমস্যা আসাম কে নিয়ে যাচ্ছে এক মহা সংকটের দিকে।

আসামের শতকরা ৬৪.৯ ভাগ হিন্দু, ৩০.৯ ভাগ মুসলমান এবং ৩.৭ ভাগ খ্রীষ্টান এছাড়া আরও রয়েছে শিখ, বুদ্ধ ও অন্যান্যরা। আসামের রয়েছে একটি মিশ্র সাংস্কৃতি যা পূর্বের নৃ তাত্বিক জন গোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতির একটি পরিবর্ধিত রুপ।আসামী এবং বোদো হল আসামের দেশীয় ভাষা এছাড়া বাংলা অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। বোদো হল আসামের সর্ব প্রাচীন ভাষা। আসামের দ্বিতীয় সব্বোর্চ্চ কথিত ভাষা হল বাংলা (ঝুষযবঃর ষধহমঁধমব)।২৪% লোক বাংলায় কথা বলে। বরাক ভ্যালীর তিনটি জেলায় বাংলা অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। আসামে ছোট বড় মিলে প্রায় ১২ টি জাতিগোষ্ঠির বসবাস। প্রত্যেকটি নৃ তাত্বিক জন গোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতির আলাদা পরিবর্ধিত রুপ রয়েছে। এক্ষেত্রে আসামের উল্লেখযোগ্য জাতি সমূহ হলো- TAI-AHOMS, হচ্ছে তারা যারা ঐতিহাসিক ভাবে আসামে নেতৃত্বদানকারী জাতিগোষ্ঠী। সাম্প্রতিক সময়ে যারা অসমীয়া ভাষায় কথা বলে এমন আসামী জনগন একত্রিত হচ্ছে।বাংলা হচ্ছে আসামের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জাতি গোষ্ঠিী, যারা বরাক নদীর তীরে বসবাস করে।অধিকাংশ বাঙালীই বিজেপি কে সমর্থন দিচ্ছে।বোদো হলো আসামের তৃতীয় নেতৃত্বদানকাবী জাতিগোষ্ঠী। তারা মূলত: ঃরনবঃড়-নঁৎসধহ গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত। তারা বোদো ভাষায় কথা বলে।অধিকাংশ বোদোরাই চায় বোদোকে আলাদা স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যে পরিনত করতে চায়।

১৮৮৬ সালের মায়ানমার এবং ব্রিটিশ রাজের মধ্যে স্বাক্ষরিত ইয়ানদাবো চুক্তির মাধ্যমে আসাম ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। আসাম সবসময় চেয়েছিল একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে কিন্তু নানা মুখী সমস্যা ও ষড়যন্ত্র এখন ও আসামকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণিত হতে দেয়নি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে দীর্ঘ এক দশক ধরে আসাম এক রক্তাত্ত্ব পথে হাটছে। এখানে জন্ম নিয়েছে উলফা, এনডিএফবি, ডি এইচ ডি, ইউপি ডি এস, এন এস সি এন, এর মত বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর। এদের মধ্যে উলফাই মূলত প্রধান এবং সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন।ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা ) ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে জন্ম নিয়েছিল একটি স্বাধীন আসাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এর বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দকে ভারত সরকার গ্রেফতার করেছে।সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া এবং মিলিটারী কমান্ডার ইন চীফ পড়েশ বড়–য়া সহ শশধর চৌধুরী ও চিত্রবন হাজারিকাকে আটক করে ভারতের বিএস এফ এর কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় থেকে অস্বিকার করা হলেও ভারতীয় পত্রপত্রিকা এবং আটককৃতদের স্বীকারোক্তিই এর সত্যতা প্রমান করে।

উলফা তাদের স্বাধীনতার দাবীতে সসস্ত্র আন্দোলন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রশিক্ষন ক্যাম্প এবং আস্তানা গড়ে তোলে। ্উল্লেখযোগ্য ক্যাম্প সমূহ হলো।মায়ানমার সীমান্তে নাগাল্যান্ডের মন জেলায় তাদের একটি ক্যাম্প আছে। এছাড়াও মেঘালয়ের টিরাপ ও চ্যাংল্যাং জেলায় এবং অরুনাচলেও তাদের ক্যাম্প রয়েছে।আসামের নালবাড়ী জেলার ভূটান সীমান্তে এবং ভূটানে উলফার ক্যাম্প ছিল। ২০০৩ সালে এক সামরিক অভিযান চালিয়ে ভূটান সরকার এসকল ক্যাম্প ধ্বংস করে ফেলে।এছাড়াও বাংলাদেশের সিলেটের উলফার ক্যাম্প রয়েছে।

উলফাকে সর্বোতভাবে সহায়তা করে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা Inter Service Intelligence (ISI) এবং আফগান মুজাহিদীনদের সাথেও তাদের যোগাযোগ রয়েছে। এক রিপোর্টে বলা হয় ২০০ উলফা ক্যাডার আফগানস্তানে প্রশিক্ষন নিচ্ছে। পড়েশ বড়–য়ার সাথে ওঝও এর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ওঝও উলফা ক্যাডারদের পাকিস্তান নিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে যে সমস্ত উলফা নেতা রয়েছে তারা বাংলাদেশে পাকিস্তানী হাইাকমিশনারের মাধ্যমে পাসপোর্টে বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে করাচী যাতায়াত করে।পরেশ বড়–য়ার বিরুদ্ধে থাইল্যান্ড থেকেও অস্ত্র আনার অভিযোগ রয়েছে।বার্মা কমিউনিষ্টপার্টির সাথে উলফা এবং নাগাবিদ্রোহী গ্রুপ এর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অস্ত্র দিয়েও সহায়তা করছে, এসমস্ত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে চীন নির্মিত গ১০ রাইফেল। এছাড়াও বাংলাদেশে যে দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার হয় ধারনা করা হয় এই অস্ত্র গুলো ছিল উলফার অস্ত্র। যা চীন থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসামে প্রবেশ করার কথা ছিল।

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অফ বদোল্যান্ড ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বদো কে কেন্দ্র করে একটি স্বাধীন বদোল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করার জন্য।আসাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের তথ্য মতে, এপ্রিল ১৯৯৬ হতে মার্চ ১৯৯৭ আসামে ২০১ টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে উলফা ২০১ টি, এনডিএফবি ১৭৪ টি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত । হত্যা, অপহরণ, থেকে শুরু করে সব কিছুই এখানে খুবই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনি এ যাবত কালে অসংখ্য উলফা, এনডিএফবি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পরিসংখ্যানে দেখা যায় ০১-০১-২০০০ থেকে ৩০-১১-২০০০ এর মধ্যে পুলিশ ৯১৮ উলফা, এবং ২২২ এনডিএফবি সদস্য গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করেছে অসংখ্য অস্ত্র।আসামের এই হত্যার কোন সুনিদ্দিষ্ট কারণ পাওয়া না গেলেও বিদ্রোহ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর অবস্থানকেই মূলত দায়ী করা হয়।

আসাম ইস্যু আরেকটা নতুন মাত্রা পায় যখন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা উদ্ধার কওে উলফা এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্খার ( আই, এস, আই) মধ্যকার যোগসাজস। উলফা ও আই এস আই এর মধ্যকার ঢাকা বৈঠকের কথা প্রকাশিত হওয়ার পর চারিদিক থেকে সমালোচনার ঝড় উঠে।২০০৩ সালের নভেম্বরে এক সপ্তাহব্যাপী সংঘর্ষে আসামে ৩৩ জন মানুষের প্রাণহানী ঘটে। আসামের মূখ্যমন্ত্রী সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে ২ হাজারের ও বেশী সেনা সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×