somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবপাচার থেকে মানবিক বিপর্যয়

০১ লা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাড্ডিসার মানুষদের জীবন বাঁচানোর করুণ আকুতি হৃদয়ে শিহরণ জাগায়। মিডিয়ায় প্রবল অমানবিকতার সচিত্র প্রতিবেদনগুলো দেখে মানবিক বোধ সম্পন্ন যেকোন মানুষই স্বাভাবিক থাকতে পারেন না। দালালচক্রের প্ররোচনায় নানা প্রলোভনের মুখে ভালোভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে যারা ঘর ছেড়েছিল তাদের অনেকেই স্বজনদের কাঁদিয়ে চির বিদায় নিয়েছে। ঘটেছে মানবিকতার চরম বিপর্যয়। যারা প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছিল তাদের স্বজনরা আজ অশ্রুসজল। নি:স্ব, অসহায় মানুষেরা দালালদের খপ্পরে পরে সর্বশান্ত হয়ে সাগরে ভাসছে। বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই সংকটের সুষ্ঠু সমাধান হওয়া দরকার।

মানবপাচার সমস্যাটা এখন মানবিক বিপর্যয়ের রূপ নিয়েছে। থাইল্যান্ডে গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের অর্থলোভী অমানুষরা নিরীহ মানুষদের সাথে প্রতারণা করেছে। চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে; অথবা পতিতাপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এইসব অমানুষ দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। যখন ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে ৭৪৭ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা উদ্ধার হয় তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়। তীরে ফেরার প্রতীক্ষায় হাজার হাজার অভিবাসীর অবর্ণনীয় কষ্ট সন্দেহাতীতভাবে বর্বরতার ঘৃণিত দৃষ্টান্ত। ক্ষুধার কষ্ট, পানির পিপাসা, অসুখ-বিসুখ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

খাবার নিয়ে সংঘর্ষে ১০৪ জন নিহত হলেও কি এই সভ্য (!) সমাজের লজ্জা হয়না? জাতিসংঘ মহাসচিব এই অসহায় মানব সন্তানদের রক্ষায় মানবিক বোধের পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আহ্বান জানানের মধ্যে দায়িত্বকে সীমাবদ্ধ না রেখে জাতিসংঘের সহায়তায় হতভাগ্যদের স্বদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করাটাই অনেক বেশি কাম্য। সাগরে ভাসমান মৃত্যুপথযাত্রী অসহায় মানুষগুলোকে আগে প্রাণে বাঁচাতে উপকূলে উঠতে দিতে হবে।

২০০২ সালের বালি প্রসেস অনুযায়ী, মানব পাচার ও অভিবাসীদের অবৈধ আনাগোনা বন্ধে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালয়েশিয়াসহ ৪৫টি দেশের একসাথে কাজ করার কথা। কিন্তু মানব পাচার বন্ধে কোন আঞ্চলিক উদ্যোগ এখনো পর্যসন্ত দেখা যায়নি। তাইতো আমাদেরকে এই সময়েও পত্রিকায় দেখতে হয় ‘এক সপ্তাহে উদ্ধার ২৮০০’। ততদিন এই সংকটের সমাধান হবেনা যতদিন আমাদেরকে দূর্ভাগ্যজনকভাবে সংবাদপত্রের শিরোনাম দেখতে হবে ‘পাচারকারীরা রাতারাতি কোটিপতি!’

এখন কেউ অস্বীকার করবে না যে, মানবপাচারের ব্যাপকতা বাংলাদেশকে ভাবমূর্তির সংকটে ফেলেছে। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে একের পর এক মানব পাচার শিবির ও মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুরো জাতি ব্যথিত হয়েছে। আমরা চাই সাগরপথে অবৈধভাবে মানবপাচার রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া হোক। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জনশক্তি রপ্তানি ঝুঁকির মুখে পড়বে । সমুদ্র পথে অবৈধভাবে মানবপাচার বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো খারাপের দিকে যাবে। তাই মানব পাচার রোধে সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হবে। কারণ সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে পারলে পাচারকারীদের খপ্পর থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষও অধিক সতর্কতার পরিচয় দিবে।

কোনো ব্যক্তিকে তার দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে বিক্রি বা পাচারের উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখবে, আশ্রয় দিবে বা অন্য কোনোভাবে সহায়তা করবে এটা কাম্য নয়। আমরা চাই মানবপাচার আইন ২০১২-এর সঠিক প্রয়োগ এবং দেশে পর্যাভপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। মানবপাচারের ঘটনায় জনশক্তি রপ্তানিতে ভয়ানক নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে। তাই যারা সাগরে ভাসছে তাদের তীরে আনা, জরুরি সহায়তা দেওয়া, দেশে ফিরিয়ে আনা বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। আর মানবপাচারের সাথে জড়িতদেরও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা দরকার। বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভবিষ্যতে মানব পাচারকারীরা যাতে জনসাধারণের কাছ থেকে আর অর্থ হাতিয়ে নিতে না পারে।

মানবপাচারের মতো এমন একটি জঘন্য অপরাধ রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হেবে। অবৈধ অভিবাসনের নামে মানবপাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি । আর বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে উদ্ধার কয়েক হাজার অভিবাসীর স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনতে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ কোন সমাধানের পথ নয়। একটি ব্যাপার আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, কেন ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার অভিবাসনের আশায় আন্দামান সাগর পাড়ি দিচ্ছে? দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতা থেকে বের হয়ে এসে মানব পাচার বন্ধে একটা সম্বন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, আঞ্চলিক উদ্যোগ সবই প্রয়োজনীয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×