নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সহ সভাপতি, স্থানীয় গণ জাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা রফিউর রাব্বী কাঁদছে। অঝোর ধারায় তার দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। কাঁদছে আরো শত, হাজার, লক্ষ চোখ। সমন্বিত এ চোখের জল গড়িয়ে গিয়ে মিশছে শীতলক্ষ্যার হিমশীতল গভীর জলে।
যদিও এ অসময়ে তার কান্নার কথা নয়। এই মুহূর্তে তার চোখে থাকার কথা প্রতিবাদের অগ্নিঝরা স্ফুলিঙ্গ। কন্ঠে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃপ্ত শ্লোগান। তার ছেদ ঘটাতেই এক ঘৃন্য কৌশল বেছে নিয়েছে নর ঘাতকরা। কেড়ে নেয়া হয়েছে তার চোখের মণি তানভীর মুহাম্মদ ত্বকিকে।
খবরটা শুনে থ’ বনে গেলাম। আঁচ করতে চেষ্টা করলাম সেদিন চাদনী রাত ছিল কি না। কেননা চাঁদের আলোয় এ নিষ্পাপ মুখ দেখলে পাষানেরও থমকে যাওয়ার কথা। তাহলে এই অতি পাষান কিংবা পাষানগুলো কারা ? যাদের রাক্ষুসে আচরনে অসময়ে চলে যেতে হল এক শিশুকে। এ মেধাবীর কাছ থেকে এ জাতি হয়তো অনেক পেত। ত্বকির মাঝে বড় হত আরো একজন রাব্বী। যে প্রিয় এই নারায়ণগঞ্জে নানা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো। যে অতি সাধারনের গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে অসাধারন আন্দোলন করতো। মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে যার কন্ঠ থাকতো সোচ্চার। তা হতে দিল না ওরা। কাপুরুষের মত আড়ালে চালালো ঘৃন্য হত্যাকান্ড। কেড়ে নিল ত্বকির প্রাণ।
প্রিয় ত্বকি,আমি- আমরা ব্যথিত। তোমার সহপাঠিদের কাছে আমরা লজ্জিত। ওদের প্রিয় সহপাঠির নিরাপত্তা দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি এ জন্য। তরুণদের গণজাগরণে একদিন হয়ত এ অন্ধকারের অনামিশা কেটে যাবে। সেদিন ওরা যদি আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলে অভিযোগ করে ‘ ওই দেখ আমাদের আগের প্রজন্ম। যারা আমাদের বন্ধু ত্বকির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আমাদের মুখে তখন কোন রা’ থাকবে না। নীরবে মাথা নত করে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। তবে এ লজ্জার হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে প্রশাসন। যারা ত্বকি হত্যাকারীদের খুঁজে জন সমক্ষে হাজির করার ক্ষমতা রাখে বলে বিশ্বাস করি।
রফিউর রাব্বী আপনাকে দেয়ার মত কোন সান্তনার ভাষা আমার জানা নেই। বাবার কাধে সন্তানের লাশ খুব কষ্টের। তারপরেও বলব কান্না আপনার জন্য নয়। ত্বকির মত আরো অনেক শিশু আছে, যাদের জন্য এই দেশকে গড়তে হবে। শত্র“দের নখের আচড় থেকে রক্ষা করতে হবে প্রিয় মাতৃভূমিকে। আর বেগম রাব্বীকে বলবো, ত্বকিরা কোন দিন মরে না। এক ত্বকি লোকান্তরে গেলেও আরো হাজারো ত্বকি বার বার ফিরে আসে এই বাংলার কোন না কোন গাঁয়। কোন না কোন মমতাময়ী মায়ের কোলে। ম্যারি ফ্রে’র এর বিখ্যাত কবিতা ‘ডু নট স্ট্যান্ড এট মাই গ্রেভ এন্ড উইপ’ এর অবলম্বনে মোহাম্মদ জমির হায়দার বাবলার অনুবাদ তাই বলে-
“মরিলে কান্দিস না আমার দায়”
কবরের পাশে তোরা “কান্দিস না আমার দায়”
ঐখানে যে আমি নাই,চোখে ঘুম নাই।
আমারে পাবি তোরা “লিলুয়া বাতাসে”,
তুষারের ঝিলিকে বা শিশিরের পাশে ।
আমি রবো আলো হয়ে সোনালী শষ্যতে,
শরতে রবো আমি, ঝিরঝির বৃষ্টিতে।
ভোরে দেখিস মোরে সাদা ঘুঘুর দলে,
দেখিস রাতের তারা, সাথে মোর জ্বলে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




