somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯২৯ সালের মহামন্দা ও শেয়ার বাজার ধ্বস

২৭ শে মে, ২০১০ সকাল ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯২৯ সালে মার্কিন শেয়ারবাজারে ধস নামে। এর তিন-চার বছরের মধ্যে ওদের পুরো অর্থনীতিই মন্দাক্রান্ত হয়। সেই মন্দার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মহামন্দা’। আজও সেই মহামন্দাকে অন্য মন্দাগুলো ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। সেই মন্দা কেন হলো এ নিয়ে গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা হাজার হাজার পৃষ্ঠার রচনা-প্রতিবেদন লিখেছেন। মন্দা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে ব্যাপারে নীতি-নির্ধারকদেরকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। সেই মহামন্দার আগের অবস্থা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গেল, মন্দার আগের দশকে ব্যাংকগুলো অতি উদারভাবে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান করছিল। ঋণের অর্থে শেয়ার কিনতে গিয়ে অনেকে ঝুঁকির ব্যাপারটা একেবারেই ভুলে গিয়েছিল। শেয়ারবাজারে ধস নামার কারণে ব্যাংক ঋণের অর্থ আর পুরোটা ফেরত পায়নি। আর শেয়ারবাজারে ধসের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থায়ও ধস শুরু হয়ে গেল। তবে সে ধস প্রকৃত তথা উত্পাদনের অর্থনীতিতেও ছড়িয়ে পড়ল। আর সেই সঙ্গে শুরু হলো মহামন্দার শুরু। মন্দার মাঝামাঝি সময় গিয়ে আমেরিকানদের মনে হলো, তারা দুই ক্ষেত্রে ভুল করে ফেলেছে। এক. তারা শেয়ারবাজারের জন্য কোনো রেগুলেটর স্থাপন করেনি। তাই তারা ১৯৩৩ সালে শেয়ারবাজার রেগুলেটর এসইসিকে স্থাপন করল। দুই. তারা ব্যাংকগুলোকে অবাধে শেয়ারবাজারে ঋণ বেচার অনুমতি দিয়েছে। সেই ঋণপ্রবাহ শেয়ারের মূল্যকে আয়ের তুলনায় ৩৫ গুণ ওপরে নিয়ে গিয়েছিল। তাই তারাও হুকুম জারি করল, এখন থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আর শেয়ারবাজারে ঋণ বেচতে পারবে না। ঋণ বেচতে হলে আলাদা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা তাদের অর্থনীতিতে, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বা বিনিয়োগ ব্যাংক নামে পরিচিত, প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিনিয়োগ ব্যাংকের কাজগুলো আলাদা হয়ে গেল, যদিও অনেক ক্ষেত্রে প্রায় একই কাজ দুই ব্যাংকই করে আসছিল।
আমাদের অর্থনীতিতে মার্চেন্ট ব্যাংক স্থাপনের হুকুম জারি হয়েছে সত্যি, তবে তাদের অর্থের উৎস কী, এই ব্যাপারটা স্পষ্ট নয়। অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক তাদের প্রধান মালিক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সুদে ঋণ এনে আবার কিছু মার্জিন রেখে সেই ঋণ বিক্রয় করছে ওই হাজার হাজার শেয়ার ব্যবসায়ীর কাছে। আইএমএফ ইতিমধ্যে বলে দিয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত শেয়ারবাজারমুখিতা তাদেরকে বিপদে ফেলতে পারে। তবে ব্যাংকাররা এই ঋণ বেচার মধ্যে বিপদ দেখেন না। কারণ, তাঁরা ঋণ দিচ্ছেন এক লাখ টাকা, জামানত রাখছেন এক লাখ টাকার বা আরও বেশী মূল্যের শেয়ার। বাজার পড়তে শুরু করলে ব্যাংকার ঋণ ক্রেতার শেয়ার বেচে পাওনাকে অতি দ্রুত সমন্বয় করে নেবেন। আসলে বিপদটা ব্যাংকের জন্য নয়। বিপদটা বেশি হলো ঋণ ক্রেতার জন্য, যিনি উঠতি বাজারে অনেক লাভ করছেন ভাবেন। বিপদটা তো আসবে পড়তি বাজারে, যেমন করে ১৯২৯ সালে লাখ লাখ আমেরিকান তাদের পকেট থেকে দেয় অর্থের পুরোটাই হারিয়েছিল।
শেয়ারবাজারে ধস নামলে বা বড় রকমের সংশোধন হতে গেলে তখন সবাই হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। তখন কিন্তু শেয়ার সরবরাহের অভাব হবে না। ব্যাংকগুলো অন্য যে কাজটি করছে, সেটা হলো নিজেদের বিনিয়োগ হিসেবে শেয়ার বেচাকেনা। এটাও তারা রেগুলেশন মেনে করতে পারে। তবে ব্যাংকগুলোর জন্য এ ক্ষেত্রে বিপদ আছে। ৪০০ কোটি টাকার শেয়ার কিনতে গিয়ে যদি বাজার উত্থান-পতনে ২০০ কোটি টাকা হারিয়ে যায়, তাহলে লাভ-লোকসান হিসেবে ওই হারানোকে প্রভিশনিং করে শেয়ার মালিকদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। যে ব্যাংকের পুঁজি ৪০০ কোটি টাকা, সেই ব্যাংক যদি নিজের পোর্টফলিওতে শেয়ার বেচাকেনা করতে গিয়ে ২০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়ে দেয়, তাহলে শেয়ারপ্রতি আয় কতটা কমবে, সেটা ব্যাংকের মালিকেরাও সহজে হিসাব করে ফেলতে পারেন। আর এ ক্ষেত্রেই আইএমএফের বেশি উদ্বেগ।
বিশ্বের অনেক দেশেই ব্যাংকিং কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেছে শেয়ারবাজারে বেচাকেনা করতে গিয়ে। ঋণ বেচতে গিয়েও নিঃস্ব হয়েছে, তার নজিরও অনেক আছে। শেষ পর্যন্ত জামানত সম্পত্তির মূল্য কমে গিয়ে ব্যাংক আর তার ঋণকে তুলতে পারেনি। আমাদের অর্থনীতিতে শেয়ারবাজারের রমরমা অবস্থাকে সাময়িক মনে হয়। অতি দ্রুত অতি উঁচুতে এই বাজার পৌঁছে গেছে। কোনো বড় রকমের সংশোধন হলে তার মাসুল দিতে হবে কিন্তু লাখ লাখ ঋণ ক্রেতাকে, যে ঋণ তাঁদেরকে বিনিয়োগকারী না বানিয়ে শেয়ার ব্যবসায়ী বানিয়েছে। তাঁরা চলে গেলে ঋণ বেচা যেমন বন্ধ হবে, তেমনি অন্যত্রও শীতলতা নেমে আসবে।
আবু আহমেদ: অর্থনীতিবিদ; অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাবি।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×