গতকাল রাতে ওয়াজ-মাহ্ফিলে নারী বক্তা বিষয়ক একটি পোস্টে বিতর্কের একটি কমেন্টে থেকেই এই পোস্ট। যদিও ওই পোস্ট ছিল মুসলিম নারীদের বক্তা হওয়া যাবে কি, যাবে না এই নিয়ে, তবে আমাদের বাঙালীর যা স্বভাব, আলোচনা শেষে চলে গেল রাজনীতির কাছে, আমাদের যে কোন আলোচনার চূড়ান্ত গন্তব্য শেষ পর্যন্ত এটাই।
তাই এ সুযোগে একজন ইসলামী রাজনৈতিক নেতার কাছে আমরা কি চাই, সেটা বলারও একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম। তাই নিচের কথাগুলো সেখানে কমেন্ট আকারে দিলেও আবার আলাদা পোস্ট আকারে দিলাম। এর আগে আলোচনার ধারাবাহিকতা বোঝাতে আমার আরো কিছু কমেন্ট এখানে দিয়ে দিলাম।
_________________________________________
আজকের বাংলাদেশে বেশির ভাগ ইসলামী আলেমরাই নারী নেতৃত্বকে বিশেষ অবস্থায় সমর্থনযোগ্য বলেছেন। এ ব্যাপারে বুখারী শরীফের ২৬৬২ নং হাদীস এবং তার পরেই মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর ব্যাখ্যা পড়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। এ দেশে আলোচিত/সমালোচিত, সমাদৃত/ধিকৃত মাওলানা মওদুদীর আইয়ুবের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ফাতিমা জিন্নাহ্র সাথে নির্বাচন করার ইজতিহাদও একই ছিল। শেখ মুজিবুর রহমান ও মাওলানা ভাসানীও আইয়ুবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। তাদের ফাতিমা জিন্নাহ্র তার বাবার দলের নেতৃত্বের ব্যাপারে কোন আপত্তি ছিল কিনা, আমার ঠিক জানা নাই। কেউ জানলে বলবেন প্লীজ। যারা হাসিনা-খালেদার দুঃশাসনের উদাহরণ দেখাতে চান, তাদেরকে আমি একদিকে মার্গারেট থেচার, ইন্দিরা গান্ধী, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, অং সান সু কিকে দেখতে বলি, আরেকদিকে এই বাংলায় বিভিন্ন সময়ে যেসব দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তখন কারা নেতৃত্বে ছিল সেটাও দেখতে বলি। কেউ চাইলে পাকিস্তানী আমলের ২৪ বছরের দুঃশাসন দেখতে পারেন, কেউ চাইলে শেখ মুজিবের আমল। সব পুরুষেরাই কি সফল রাষ্ট্রনেতা ছিলেন???
এ ব্যাপারে ঐ পোস্টে করা আমার দুটি কমেন্টও এখানে দিয়ে দিচ্ছি।
@মামুন বিদ্রোহী, ইসলামের নারী নেতৃত্ব বাস্তবতার প্রেক্ষিতে হালালের ব্যাপারে বাংলাদেশের সকল আলেমরাই এখন একমত। যারা তাবলীগ বা খেলাফত বা অন্য কোন ইসলামী দল করে, তারাও শেষ পর্যন্ত ভোট হাসিনা বা খালেদারে বা তাদের দলকে দেয়। হাসিনা-খালিদা নেতৃত্বে আছে বলে ৮৫% ভাগ মুসলিমের দেশে কেউ ভোট দিতে যায় না, এমন কাহিনী এখনো পর্যন্ত শুনিনি।
@ লেখক (ইবনে হাবীব), আরে! লেখক কি খেলাফত মজলিস ও আরো একটা দলের সাথে হাসিনার চুক্তির কথা জানেন না?
চারজোটেও জামাত ছাড়াও ইসলামী ঐক্যজোট আছে, তারা তো সম্মিলিতভাবে খালেদারেই নেতা মানে।
আওয়ামী লীগ, বিএনপির অনেক নেতা কর্মীই তাব্লীগ করে, তাহলে ভুলটা কোথায়?
২০০৮-এর নির্বাচনও তো হলো মূলত দুই জোটের মধ্যে। চৌদ্দ দল আর চার দলের মধ্যে।
এর বাইরে যদি অল্প কিছু থেকেও থাকে, তারা কি গত ২০ বছরে এ দেশ থেকে হিজরত করেছে, নারী নেত্রীর অধীনে থাকবে না বলে? আমার এ ব্যাপারে জানা নেই। লেখকের জানা থাকলে বলতে পারেন। ধন্যবাদ।
এর জবাবে লেখক বলেছেন, "যতদুর জানি চরমোনাইয়ের পীর সাহেবের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অদ্যাবধি কোন নারীর সাথে জোট বা চুক্তি করেন নি,গত নির্বাচনে এককভাবে দশ লক্ষাধিক ভোট পেয়েছেন- আপনার অন্তত এই তথ্যগুলো জানা উচিত ছিল।"
এবার আমি তব্দা! এটা আসলেই আমার জানা ছিল না। খেয়াল করিনি। তার ফলেই আমার নিম্নোক্ত কমেন্টঃ
(এখানে আরো কিছু কথা যোগ করেছি)
_______________________________________
আসলেই তো, চরমোনাই-এর পীরের ব্যাপারে জানতাম না। আপনি কি উনার মুরীদ? আপনি কি উনার কাজকর্মের ব্যাপারে আরো জানেন?
যদি জানেন তাহলে আমার কিছু প্রশ্ন আছে, পারলে দয়া করে জানাবেন।
পীরসাহেবকে একজন রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি বলে মনে হয়েছে, তা না হলে তো নিশ্চয়ই নির্বাচন করতেন না।
১। বর্তমানে টিপাইমুখী বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ যে সমস্যার মুখে পড়তে যাচ্ছে, এটা নিয়ে পীরসাহেব বা তার মুরীদদের কোন এসেসমেন্ট আছে? কোন প্রতিবাদ বা আন্দোলন করছেন? শুধু ভারত দেশ নিয়ে গেল এ জাতীয় কথা না বলে আমাদের কি কি ক্ষতি হবে, কিভাবে এটা ঠেকানো যাবে.........এটা নিয়ে গবেষণা বা আলোচনা করছেন?
২। বর্তমানে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ এসব নিয়ে সারাদেশব্যাপী জনগণ যে দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছে, সেখানে থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়----- এটা নিয়ে উনার কি চিন্তা-ভাবনা?
৩। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কিভাবে ঢেলে সাজানো যায়, ইসলামমুখী এবং কর্মমুখী করা যায়, উৎপাদনমুখী করা যায় --- এ ব্যাপারে?
৪। উপরে সাইফ শেরিফ ইসলামী ব্যাংকিং-এর সমালোচনা করেছেন, আপনিও তাতে সায় দিলেন বলেই মনে হচ্ছে। তাহলে সত্যিকারের ইসলামী ব্যাংকিং কেমন হবার কথা -- এটা নিয়ে কোন স্টাডি কি পীরসাহেব করেছেন? সেরকম কোন ব্যাংকিং কি তিনি গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন?
৫। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দূর্নীতি, অনৈতিকতা শেকড় গেড়েছে -- এসব ব্যাপারে তিনি কি ভাবেন, কেমন করে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। তাক্ওয়ার কথা তো সবাই জানি, কিন্তু সেটা তো কেউ মানছে না, তাহলে কেমন করে মুক্তি মিলবে?
৬। আমাদের দেশে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও নানারকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে। এরপর ত্রাণ সংগ্রহ, বিতরণ এসব কাজে তিনি বা তার মুরীদরা কি অংশগ্রহণ করেন?
৭। আমাদের দেশে নারীরা নানারকমের নির্যাতনের স্বীকার। গ্রামের হুজুরেরা আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করেই হিল্লা বিয়ে, দোররা এসব ফতোয়া দেয়, তাও আবার নারীকেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী করা হয়, পুরুষদের ছেড়ে দেয়া হয়, এসব নিয়ে .........?
৮। নারীদের উত্তরাধিকার আইনে পুরুষের সমান পাবার ব্যাপারে কুরআন এবং সুন্নাহর যে অবমাননা হয়, সেটা নিয়ে সবার আন্দোলন দেখেছি। খুব ভাল। কিন্তু এদেশের অনেক মুসলিম নারীরা যে তার প্রাপ্যটুকুও পায় না, সেটা নিয়ে পীরসাহেবের কোন আন্দোলন আছে? অনেকে মোহরানা ঠিকভাবে শোধ করে না, যৌতুক নেয় --- এসব নিয়ে কোন সামাজিক আন্দোলন, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করার কাজ, সভা, সেমিনার, লেখালেখি.........?
৯। নারীদের পর্দার ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণার কোন কমতি দেখা যায় না কারোই, হাজারটা বাংলা বই পাওয়া যাবে এর উপরে। কিন্তু পুরুষদের পর্দার ব্যাপারে কোন লেখালেখি, ওয়াজ-মাহফিল.........? ইভটিজিং, এসিড সন্ত্রাস এসব প্রতিরোধে কোন কিছু.........?
১০। দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া, অনেক মুরীদ কিন্তু ধনী হয়, তাদেরকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন কর্মসংস্থান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা বা কুটির শিল্প গড়ে তোলা......এরকম কিছু।
১১। ঘরে ঘরে, পাড়ায় পাড়ায় ইসলামের জ্ঞান ছড়িয়ে দেবার জন্য প্রতিটি মসজিদে ইসলামি বই বিতরণ, ইসলামী পাঠচক্র গড়ে তোলা, সেখানে নারীদের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা, যুবক নারী-পুরুষদের ইসলামী জ্ঞানসমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ পরিসরে কোন কর্মপরিকল্পনা? মসজিদকে কিভাবে শুধু নামায পড়া ছাড়াও জ্ঞানঅর্জনের স্থান হিসেবে, সামাজিক/ পাড়াভিত্তিক নানা কর্মকান্ডের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়, মানে মসজিদের কর্মতৎপরতা কিভাবে আরো বাড়ানো যায়?
১২। এদেশের বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসার ইমাম, মোয়াজ্জিন, শিক্ষক সবার বেতন-ভাতা, চাকরি স্থায়ীকরণ, সামাজিক বিভিন্ন কাজে তাদেরকে অন্তর্ভুক্তকরণ.........কিভাবে এগুলো করা যায়?
১৩। নিজের দেশসহ সারা বিশ্বে ইসলামী জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন মিডিয়াতে লেখালেখি, সভা, সেমিনার, বই-প্রবন্ধ লেখা, ইন্টারনেটসহ নানা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইসলামকে মানুষের আরো কাছে নিয়ে আসা.........এসব ব্যাপারে কি ভাবছেন?
১৪। বিজ্ঞান শিক্ষা, আইটি, ব্যবসা, কৃষি, শিল্প, ------ বহু ব্যাপার আছে, যা একজন রাজনীতিবিদকে ভাবতে হয়, যদি সত্যি তিনি দেশের উন্নতির কথা ভাবতে চান।
১৫। এদেশে অন্য যেসব ধর্মাবলম্বী আছেন, তাদের জীবন, জীবিকা, নিরাপত্তা, প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কিভাবে, কেমন ধরণের অংশগ্রহণ করবেন, তথা তাদের যাবতীয় নাগরিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা কিভাবে রক্ষা করা হবে --- এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন চিন্তা-ভাবনা?
১৬। বাঙালী ছাড়াও অন্যান্য যেসব জনগোষ্ঠী আছে, তাদের বিভিন্ন অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার, অসুবিধার কথা কেমন ভাবছেন?
উপরোক্ত সব এবং আরো যা বলা বাদ রয়ে গেছে ---সব ব্যাপারে পীরসাহেবের চিন্তা-ভাবনা কিরকম এগুলো খুব আগ্রহের সাথেই জানতে চাচ্ছি।
এটা যে শুধু চরমোনাই-এর পীরসাহেবকে বলছি তা নয়, যত ইসলামী নেতা আমাদের আছেন, যারা এদেশে ইসলাম কায়েম করতে চায়, ইসলামী শাসন দেখতে চায় সবার কাছেই আমার এই উন্মুক্ত জিজ্ঞাসা।
আমরা দেখতে চাই আমাদের আলেম-মাওলানারা, পীরসাহেবেরা --- যারা ইসলামকে ভালবাসেন, ইসলামকে বিজয়ী দেখতে চান রাষ্ট্রে-সমাজে, তারা এ সমাজ, এ দেশ, এ পৃথিবী নিয়ে কতটা ভাবেন, কিভাবে কি করতে চান? কেন আমরা তাদের ভোট দিবো, সেটা তো আমাদের বুঝতে হবে, দুনিয়া এবং আখেরাতের (যদিও এটা শেষবিচারে আল্লাহ্রই হাতে, কিন্তু ইসলামী নেতাদেরও দায়িত্ব আছে এ ব্যাপারে, আমরা তো আল্লাহ্র খলীফাই) কি ধরণের কল্যাণ পাবো আমরা তাদেরকে জিতিয়ে?
পাঠক, আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারাও আপনাদের জিজ্ঞাসাগুলোকে জানাবেন কমেন্ট আকারে। ব্লগে যারা ইসলামী বিভিন্ন দলের সমর্থকরা আছেন, আশা করি তারা এখানে আলোচনায় অংশ নিবেন, যার যার দল বা মতের কি রকম ভাবনা আছে শেয়ার করবেন। যারা কোন দলের নয়, কিন্তু ইসলামকে ভালবাসেন, তারাও অংশ নিবেন। যারা ইসলামকে পছন্দ করেন না তাদেরকেও স্বাগতম, তাদের অভিযোগগুলো জানানোর ব্যাপারে।
একটা সুস্থ, সুন্দর আলোচনা চাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


