somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুলাইলে জরা, ভুলালে মৃত্যু, অসুন্দরের ভয়

১০ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই- গানের ব্যাখ্যা:



আজ রবি ঠাকুরের এমন একটি গানের অর্থতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করব যে গানটি শুনলে আমি ভুলে যাই আমার সকল অন্তরগ্লানি ও জরা, ভুলে যাই মৃত্যু ও অসুন্দরের ভয়। আশা করি গানটি শোনে আপনাদেরও এমন হবে।

ইচ্ছে ছিল রবীন্দ্র জয়ন্তীতে রবি ঠাকুরের কিছু গান নিয়ে লিখব যেগুলো আমার খুবি প্রিয়। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি আমাদের এখানে ঝড় তুফানের কারণে বিদ্যুৎ না থাকায়। যাহোক, কথা না বাড়িয়ে এবার গানের ব্যাখ্যায় যাওয়া যাক। প্রথমে লিরিকটি দেখে নিই।

"তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি
ধাই
কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ
নাই।।
মৃত্যু সে ধরে মৃত্যুর রূপ, দুঃখ হয় হে দুঃখের
কূপ,
তোমা হতে যবে হইয়ে বিমুখ আপনার পানে
চাই।।
হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা-কিছু সব
আছে আছে আছে
নাই নাই ভয়, সে শুধু আমারই, নিশিদিন
কাঁদি তাই।
অন্তরগ্লানি সংসারভার পলক ফেলিতে
কোথা একাকার
জীবনের মাঝে স্বরূপ তোমার রাখিবারে
যদি পাই।।"


ব্যাখ্যা: (তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি
ধাই--
কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা
বিচ্ছেদ নাই।।)


প্রিয়জন হারালে মানুষ শোকাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।। জীবন হয়ে যায় কঠিন থেকে কঠিনতর। কিন্তু জীবন যতই কঠিক হোক না কেন সেখানে দুঃখ থাকেনা, বিচ্ছেদ থাকেনা, থাকেনা মৃত্যু ও অসুন্দরের ভয় যদি হৃদয় আসনে থাকে সুমহান স্রষ্টার স্থান।

(মৃত্যু সে ধরে মৃত্যুর রূপ, দুঃখ হয় হে
দুঃখের কূপ,
তোমা হতে যবে হইয়ে বিমুখ
আপনার পানে চাই॥)



আর যখন স্রষ্টা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আমরা আমাদের দিকে তাকাই, আমাদের ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে চিন্তা করি তখন ছোট ছোট দুঃখগুলোও খুব বড় হয়ে দাঁড়ায়, কুয়োর মতো অবিরাম দুঃখ হয়ে। তখন প্রিয়জন হারানোর কষ্টকেই পৃথিবীর সবচে বড় কষ্ট মনে হয়। এমন কষ্ট লাগে য্র মনে হয় প্রিয়জনের মৃত্যু হওয়া মানে যেন স্বয়ং নিজেরই মৃত্যু হওয়া।

(হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা-কিছু সব
আছে আছে আছে--
নাই নাই ভয়, সে শুধু আমারই, নিশিদিন
কাঁদি তাই।)


যেই সুমহান স্রষ্টা আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর পদতলে সবি আছে। সেখানে ভয়ের কোন চিহ্ন নেই। যত ভয় আছে সবি আমাদের অন্তরের ভিতরকার ভয়। সেই ভয় আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। আমাদের কাঁদায় প্রতিটি মুহুর্তে, প্রতিটি ক্ষণে।

(অন্তরগ্লানি সংসারভার পলক
ফেলিতে কোথা একাকার
জীবনের মাঝে স্বরূপ তোমার
রাখিবারে যদি পাই॥)


মানে হল আমাদের জিবনের কেন্দ্রে (হৃদয়াসনে) যদি আমাদের সুমহান স্রষ্টাকে স্থান দেই তাহলে আমাদের অন্তরের যত কষ্ট ও ভয়, সংসারের যত ভার সবি পলক ফেলতে না ফেলতেই এক নিমেষেই কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। তখন আমাদের পাহাড়তুল্য বিষাদে ভরা মনেও আপনা আপনি একটা প্রেরণাদায়ক ভাবনা সৃষ্টি হয় যে, ছোট খাটো দুঃখ ও কষ্টে জিবন ভেঙে পড়ার না, কখনোই ভেঙে পড়ার না। এইভাবে আমাদের শোক রূপান্তরিত হয় শক্তিতে।
.......

রবি ঠাকুর আমাদের শিখিয়েছেন শোককে কিভাবে শক্তিতে পরিণত করতে হয়, সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে কিভাবে আরোহণ করতে হয় স্বপ্নমঞ্চে।

পেরেছি কি হৃদয়ের আসনে স্রষ্টাকে জায়গা দিতে- এই ভেবে- কতবার যে চোখজোড়া থেকে জল ঝড়িয়েছি নিশিরাতে তার হিসেব নেই। গানটি শোনার পরে অবশ্যই মনে হবে যে রবি ঠাকুরকে নিয়ে আমার কাণ্ডারি আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছিলেন-

"ভুলাইলে জরা, ভুলালে মৃত্যু, অসুন্দরের ভয়"

বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর অর্থের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকলে তা শুধরে দিলে অবশ্যই কৃতজ্ঞ থাকবো।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:৫১
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×