somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু জনপ্রিয়তা নয় সাহিত্যিক বিচারেও হুমায়ূন আহমেদ সেরা

২৯ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যক্তিগতভাবে অনেক কবির সাথেই আমার পরিচয় ছিল, আছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ কবি এবং কিছু কিছু লেখকও মনে করেন সাহিত্যিক বিচারে হুমায়ূন আহমেদ তেমন কেউ নন। ঐ নিন্দুকেরা এতদিন হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা স্বীকার করতেও কার্পণ্য করতেন। তবে তার মৃত্যুর পর যখন জানা গেল হুমায়ূন আহমেদ এপার ও ওপার দু'বাংলারই জনপ্রিয় লেখক এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক তাদের মুখে কথা তো কিছু আটকেছেই।
তাদের একটি দল মনে করেন, যেসব লেখা বহুদিন মানুষকে ভাবায় না সেগুলো উৎকৃষ্ট সাহিত্য নয়। যেমন - হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য কর্ম। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন - মনে করার চেষ্টা করুন তো কটি হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়েছেন। হুমায়ূন আহমেদের মধ্যাহ্ন পড়েছেন? বা জোছনা ও জননীর গল্প? কিংবা অচিনপুর? এ প্রসঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “আমি কিন্তু ওর বইগুলো পড়ে দেখেছি অনেক বিষয়ে ওর গভীর প্রশ্ন ছিল।”
জীবনের জটিল হিসেবগুলো হুমায়ূন আহমেদ তাঁর লেখায় যত সহজ করে তুলে এনেছেন আর কেউ তা পারেনি। কেউ কেউ এ নিয়ে কথা বলতেও ছাড়েন না। এতে নাকি সাহিত্য হয় না। হায় রে সাহিত্য সমালোচক। যেসব সাহিত্য বুঝতে বুঝতেই অর্ধেক জীবন চলে যায় সেগুলোই তাদের কাছে উত্তম সাহিত্য। কবিদের দেখি অভিধান থেকে খুঁজে খুঁজে কঠিন কঠিন শব্দ দিয়ে উৎকৃষ্ট কবিতা লেখেন। তাদের কাছে তো এমন মনে হতেই পারে। সাহিত্য ধরা ছোঁয়ার বাইরের বিষয় নয়। তবে আমার মনে হল, প্রমথ চৌধুরীর কথা। তিনি একটি আন্দোলন করেছিলেন। সফল আন্দোলন। তিনি বলেছিলেন, যে সাহিত্য সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে অভিজাত লোকদের রস যোগায়, তাদের জন্য যে সাহিত্য রচনা করা হয় সে সাহিত্য যত উৎকৃষ্টই হোক, সেটা সাহিত্য নয়। সে সাহিত্যে প্রাণের ছোঁয়া নেই। আপনাদের জন্য আর একটি দুঃখকর কথা হল হুমায়ূনের খুব সহজে জীবনের জটিল কথাগুলোকে তুলে আনার প্রসঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “হুমায়ূন আহমেদের সহজ ও সাবলীল লেখার ভঙ্গি তাঁকে ঔপন্যাসিক হিসাবে এই বিশাল জনপ্রিয়তা দিয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদের বুদ্ধিদীপ্ত গদ্য এবং রোমাঞ্চকর গল্প লেখায় ছিল অদ্ভুত রকমের জাদু। হুমায়ূনের মতো ‘রসসিক্ত’ লেখা বাংলা ভাষায় ‘খুব একটা কেউ’ পারেন না বলেও মন্তব্য করেন ওপার বাংলার এই সাহিত্যিক। এটা ভাষাজ্ঞানের ওপর নির্ভর করে। যাদের ভাষাজ্ঞান কম তারা নিজের লেখাকে জটিল করে তুলে। যারা ভাষার আদ্যোপান্ত জানেন তাদের লেখা কিন্তু জটিল হয় না। সহজবোধ্য হয়। রসসিক্ত হয়। কিন্তু সহজভাবে যারা লেখেন-ওটা মোটেই সহজ কাজ নয়। বাংলা সাহিত্যে আমি হুমায়ূনকে বেশ একটা উঁচু জায়গায় রাখব। আশা করব, ভবিষ্যতের পাঠক এবং গবেষকরাও তার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারবে।”
এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে হুমায়ূন আহমেদই ছিলেন সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। এ বিষয়ে লেখক মনিশংকর মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তায় হুমায়ূন আহমেদ সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। তিনিই দুই দেশের বাংলা সাহিত্যে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।” সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা তো শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কেও ছাড়িয়ে গেছে। আমার তো মনে হয়, শরৎচন্দ্রের কয়েক গুণ বেশি চলেছে হুমায়ূনের উপন্যাস। হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা কতো ছিল তার সবই আমি জানি। আমাদের দেশে এক সময় শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয়তা ছিল। তাকেও হুমায়ূন ছাড়িয়ে গেছে।”
তবে কেউ কেউ তাঁর অবদান শুধু পাঠক তৈরির কারিগর বা শুধু পাঠক নন্দিত লেখক হিসেবেই তাকে বিবেচনা করেন। অতীতের নিন্দুকেরা বর্তমানে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তাকে স্বীকার করে নিলেও সাহিত্যিক বিচারেও যে হুমায়ূন আহমেদ সেরা এটি তারা কখনোই স্বীকার করেননি। আসলে এ বিষয়টি হুমায়ূন আহমেদের জন্য একটু কঠিনই হয়ে গেছে কারণ হুমায়ূন আহমেদের আগে এমন কোন লেখকের উদাহরণ নেই যিনি একই সাথে সাহিত্যিক বিচারেও সেরা এবং এতটা জনপ্রিয়। এ বিষয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “হুমায়ূন একজন জনপ্রিয় লেখক ছিলেন। আমাদের মধ্যে একটা ঝোঁক রয়েছে যে, আমরা ভাবি লেখক যখন জনপ্রিয় হয়ে যান তখন তার লেখার মধ্যে কোন গভীরতা থাকে না। এটা মোটেই ঠিক নয়। একই সঙ্গে জনপ্রিয় হওয়া যায় আবার উন্নত মানের সাহিত্য রচনা করা যায়। সব সাহিত্যেই এটা হয়েছে। হুমায়ূনের ক্ষেত্রেও এটা সত্যি ছিল।”
এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে একটি কথা মনে পড়ে গেল। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আজ কিন্তু কোন বিতর্ক নেই কারণ আজ তিনি নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক। কিন্তু নিন্দুক সকল আপনাদের কি জানা আছে, রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় তাকেও একই ভাবে নিন্দা করা হতো। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকেও সাহিত্যের মর্যাদা দেওয়া হত না। একবার হল কি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রশ্ন পত্রে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির একটি অংশ হুবহু তুলে দেওয়া হল। আর বলা হল এটিকে শুদ্ধ করে লিখ। সব নিন্দুকেরাই কিন্তু এক সময় হারিয়ে যায়। শুধু তারাই বেচে থাকেন।
হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্যে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। নতুনদের পথে অনেক বাধা। পুরাতনকে ঘিরে থাকা কিছু মৌলবাদী নতুনকে ভয় পায়। স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম নতুনদের এ বিষয়ে সঠিক বার্তা দিয়ে গিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মনিশংকর মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “বাংলার এক হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিক হলেন হুমায়ূন আহমেদ। সাহিত্য সৃষ্টিতে তাঁর জাদু গোটা উপমহাদেশে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আর আজ তাই তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে গবেষণার সময় এসেছে।”
অনেক নিন্দুক রয়েছেন যারা তাকে সাহিত্য/পুস্তক ব্যবসায়ী বলতেন পিছপা হননি। তাদের উদ্দেশ্যে হুমায়ূন আহমেদ নিজেই বলে গেছেন। খুব আবেগি সাহিত্যিকও কিন্তু চাঁদের আলো খেয়ে জীবন ধারণ করেন না। অর্থ সবার সরকার। নিন্দুকেরা না জেনেই নিন্দা করেন তাই তারা নিন্দুক। অন্যের সাফল্যেও ঈর্ষান্বিত কিছু লোক খুঁজে পাওয়া যাবে। আবার নতুন নতুন কিছু কবি সাহিত্যিকও আছেন যারা নিজেদের প্রচার করার জন্য বা হাইলাইট হওয়ার জন্য তাঁর নিন্দা করে থাকেন। কেউ কেউ শুনে শুনে আবার কেউ কেউ পড়ে পড়ে তাকে নিন্দা করেন। তবে একটি বিষয় তারা জানেন কিনা, হুমায়ূন আহমেদ বই লিখে লিখে যে টাকা পেতেন তা দিয়ে সিনেমা বানাতেন। তাঁর শেষ বয়সের যে সিনেমাগুলো দেখার জন্য দর্শকরা সিনেমা হলে হুমড়ি খেয়ে পরত আর নাটক দেখে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি বন্ধের জন্য রাস্তায় মিছিল করত। বাংলাদেশের মানুষদের সিনেমা মুখি করায় তাঁর অবদান নিয়ে কি নিন্দুকেরা কোন পোষ্ট লিখেছেন।
আরিফ হোসেন সাঈদ, ২৯ জুলাই, ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:২৪
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×