somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কান্ডারি অথর্ব
আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূণ্যতা থেকে শূণ্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

ডুরানড লাইন

১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উৎসর্গ
এটি একটি সামু ব্লগের আমার সকল সহ ব্লগারগনের জন্য আমার নিজের এই প্রথম একটা উপন্যাস লেখার প্রয়াস মাত্র ।




ডুরানড লাইন

আজ ভোর হতেই কুয়াশা কেটে গেছে। চারিদিকে ঝলমলে রোদ উঠেছে । আকাস পুরোপুরি নীল রঙের এক অপরূপ মায়ায় ছড়িয়ে রয়েছে । বাতাস বইছে মৃদু ছন্দ নিয়ে । ঘুম থেকে উঠেই আরিয়ানার মনটা ভীষণ রকম ভাল হয়ে গেলো । বিছানা ছেড়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল মেয়েটি । ভোরের আলো এসে মুখে পরতেই যেন এক নূর ছড়াল । যেন এই মাত্র স্বর্গ থেকে কোন এক হুর পরী পৃথিবীতে নেমে এসেছে । কেন যেন চুল মেলে দিয়ে আপন মনে আরিয়ানা তার মাকে ডেকে উঠল । চোখের কোনে পানি চলে এলো । মুহূর্তের মধ্যে সব ভাললাগা যেন হারিয়ে গেলো। বাইরে থেকে একজন চিৎকার করে তাকে ডাকছে। মাথার চুল বেঁধে নিয়ে চা বানানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে পরল কারন ওরা এই সময় চায়ের জন্য খুব তাড়া করে।

বাইরে লতিফ শেখ তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে বসেছে তাদের জিহাদের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে । আমাদের ভাগ্য নিয়ে আমরা মোটেও চিন্তা করিনা যদি এই যুদ্ধে পরাজিত হই তবে আমরা শহীদ হব নিজ ভূমির জন্য কিন্তু নিজ ভূমি আমাদের স্বাধীন করতেই হবে যে কোন মূল্যে । তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ এই জিহাদে মৃত্যুকে ভয় কর তবে এখনি আমাদের কাছ থেকে দূরে চলে যেতে পার কিন্তু জানবে যদি কেউ চলে যেতে চাও তবে যেন তোমরা জান্নাতের রাস্তা থেকেই চলে গেলে মনে রাখবে। সাবিত চিৎকার করে দাড়িয়ে গেলো না শেখ যতক্ষণ এই শরীরে এক ফোঁটা রক্ত বিন্দু উপস্থিত আছে আমরা লড়ে যাব আমাদের সকল শক্তি দিয়ে । ধন্যবাদ সাবিত । আমি চাই আমার বাকি জিহাদি ভাইয়েরা ঠিক এইভাবে পণ করুক।

এমন সময় চা নিয়ে এগিয়ে এলো আরিয়ানা । সাবিতের সে দিকে চোখ পরতেই অদ্ভুত এক ভাল লাগায় হারিয়ে গেলো মন । কিছুই আর যেন তার কানে আসছেনা শেখ কি বলছে। এই মেয়েটিকে সে অনেক ভালোবাসে কিন্তু শেখের ভয়ে কখনো বলা হয়ে উঠেনা। ভালোবাসা যেন দুমড়ে মুচড়ে তার হৃদয়টাকে ভেঙ্গে দেয় । তবে সে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে একদিন সে ঠিকই আরিয়ানাকে তার মনের সব না বলা কথাগুলো বলবে । সেদিন তাদের নিজ দেশ তারা ফিরে পাবে । জিহাদ শেষে বীরের বেসে ফিরবে সে । বিয়ে করে সংসার করবে । তাদের ছেলে মেয়ে হবে। সন্তানদের কোলে নিয়ে জিহাদের গল্প শুনাবে। ভাবতে ভাবতে কখন যে মেয়েটি চা রেখে চলে গেছে সাবিত তা খেয়াল করেনি। তার উৎসুক দৃষ্টি খুঁজে ফিরছে তার প্রিয়ার দেখা পাওয়া যায় কিনা আরেকবার।

আমেরিকান সৈন্যরা খইবার পাখতুনখয়া দখল করে রেখেছে চারিদিক থেকে। তাদের কাছে নির্দেশ আছে জঙ্গি দেখা মাত্রই গুলি করার। এরি মাঝে পাহাড়ের এক প্রান্তে লতিফ শেখের আস্তানা । খইবার পাখতুনখয়া জায়গাটা ছোটখাটো একটা পাহাড়ি এলাকা। মাঝে মাঝে মরুভূমি আছে। এখানে একটা সরু নদী আছে । কিন্তু পানির গভীরতা খুব অল্প । আছে কিছু খেজুর আর সুপারি গাছ। কোথাও কোথাও ছোট ছোট ঝোপ আছে । সব মিলিয়ে দারুন একটা জায়গা । কিন্তু এর আকাস বাতাস হঠাৎ হঠাতই প্রচণ্ড রকম গোলাগুলির শব্দে কেঁপে উঠে । আমেরিকান সৈন্যদের সাথে চলে লতিফ শেখদের যুদ্ধ। আরিয়ানার প্রথম প্রথম খুব ভয় হত এখানে । কিন্তু সময় তাকে করেছে সাহসী । মাঝে মাঝে সেও চিন্তা করে জিহাদে অংশ নেবে। হাতে তুলে নেবে অস্ত্র । মরে গিয়ে জীবনের সব গ্লানি দূর করে দেবে । তাহলেত আর সেটা কোন পাপ হবে না । কোন এক সময় সে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল । কিন্তু হতভাগিনীর কপালে তাও জোটেনি। এখন আর সেইসব তাকে তাড়া করে না। জীবন তাকে কঠিন হতে শিখিয়েছে। কিন্তু সে জানেনা কেন এই জিহাদ। একদিন ভেবে ছিল শেখের কাছে জানতে চাইবে । কিন্তু মন তাকে বাঁধা দেয় ।

জেনারেল ডিক্সন আর ক্যাপ্টেন হোপ কফির মগ নিয়ে বসে আছে । রাত প্রায় শেষের দিকে । ভোর হতে আর কিছু সময় বাকি আছে । বাকি সৈন্যরা যে যার তাবুতে ঘুমিয়ে আছে । ওরা সারাদিন যুদ্ধ করে ক্লান্ত । জেনারেল ডিক্সন এর রাতে ভাল ঘুম হয় না তাই জেগে থাকে। মাঝে মাঝে কাউকে পেলে বসে গল্প করে নাহলে একাই বসে থাকে । কখনো আবার হেটে হেটে সময় কাটায় । জীবনের মানে তার কাছে কেবলই যুদ্ধ। যুদ্ধের নেশায় সে আজ প্রায় উন্মাদ হয়ে গেছে । আজ ক্যাপ্টেনকে পেয়ে তার গল্প করতে খুব আনন্দ হচ্ছে । হোপ তুমিত এখনো বিয়ে করনি ধর যদি ওই জঙ্গিদের হাতে তোমার মৃত্যু হয় তবে তোমার কিন্তু জীবনের একটা দিক অপূর্ণ থেকে যাবে বলেই জেনারেল হেসে উঠল । হোপও সেই হাসির সাথে যোগ দিল। হোপ একটা সিগারেট ধরিয়েছে। হোপের শরীরের গঠন অনেকটা রোগাটে । চেহারায় সাদা চামড়াদের মত কোন প্রভাব নেই । অনেকটা নিগ্রোদের মতই কিছুটা শ্যামলা বর্ণের । অন্ধকারে সিগারেটের ধোঁয়ায় তাকে মনে হচ্ছে যেন কোন এক ভয়াবহ যুদ্ধ জয় করে এসে বসেছে একজন বীর । তার চোখে মুখে তারই তৃপ্তি লেগে আছে । কিন্তু জেনারেল ডিক্সন পুরোপুরি একজন সাদা চামড়ার আমেরিকান । হোপ কি যেন একটা বলতে গিয়ে আবার থেমে গেল । কিছুক্ষন চুপ থেকে জেনারেল আবার বলল কি ক্যাপ্টেন ভয় পেলে নাকি । না ভয় পাব কেন । আমি একজন যোদ্ধ্যা । আমি শুধু ভয় করি তাদের যারা যুদ্ধর সময় আমার পেছনে থাকে তাদের । কারন তারাই আমার শক্তি । না ক্যাপ্টেন তুমি ভুল করছ । মনে রাখবে যুদ্ধর ময়দানে তুমি একা । একাই তোমাকে লড়তে হবে । আর বাকিদের তোমাকে বাঁচাতে হবে প্রয়োজনে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে । তবেই তুমি একজন বীর বলে নিজেকে প্রমান করতে পারবে। হোপ যেন এই কথায় কিছুটা হতাশ হল ।

লতিফ শেখরা আজ তাদের আস্তানা বদল করছে । এটাই তাদের নিয়ম। এক জায়গায় নিজেদের বেশিদিন নিরাপদ মনে করেনা তারা। সবাই যে যার জিনিষপত্র গোছান নিয়ে ব্যাস্ত । আরিয়ানা জানতে চাইল শেখ আমরা কোথায় যাচ্ছি । এক ধমক দিয়ে শেখ তাকে চুপ করিয়ে দিল । মেয়েটি চুপ করে ওদের পিছনে চলতে লাগল । সাবিত কিছুটা পিছিয়ে এসে আরিয়ানার কাঁধের বোঝাটি নিয়ে নিল । না আমি পারব আপনার কষ্ট করা লাগবেনা । না আমার কোন কষ্ট হবে না দাও বলছি। আরিয়ানা আর মানা করতে পারলনা । ওরা নদীর পাড় ঘেঁষে হেটে চলল । নদীর এক কোনে এসে সাবিত থেমে গেল । শেখ আমার মনে হয় আমরা কিছুদিন এখানে থাকতে পারি । অন্যরাও সায় দিল । ঠিক আছে আমারও পছন্দ হয়েছে বলেই শেখ তার কাঁধের বোঝা নামিয়ে রাখল । শেখের বয়স প্রায় পঞ্চাশের উপরে কিন্তু এই বয়সেও যেন সে এক তরুন । শরীরে এখনো প্রচণ্ড তেজ । চেহারায় কাঠিন্য একটা ভাব আছে । কাঁচা পাকা দাঁড়ি । মাথায় চুল নেই তাই সবসময় পাগড়ী পরা থাকে । মনে হয় ঘুমাতে গেলেও সেটা খোলা হয়না। একটা বিয়ে করেছিল কিন্তু সে বিয়ে বেশি দিন টিকে নাই । তারপর থেকে একাই আছে। জিহাদের কারনে কখন যে বয়স বেড়ে গেছে টেরই পায়নি ।
মহা আনন্দে সবাই তাবু গাড়ল । আজ সাবিতের মনটা ভীষণ রোমাঞ্চকর । কারন তাবু গাড়ার ফাঁকে ফাঁকে সে আরিয়ানার কাছে যেতে পেরেছে । দু একটা কথাও হয়েছে । আরিয়ানাও যথেষ্ট তাকে হাসিয়েছে । এভাবেই মনে হয় একটা সম্পর্কের সূচনা হয় । সূচনা হয় দুটি হৃদয়ের ভাল লাগার । কাছে আসার । তারপর হয়ত শুরু হয় প্রেমের ভাবল সাবিত।

আজ আমেরিকানদের তাবুতে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে । চারিদিকে মদ্য পানের ধূম আর নেচে গেয়ে উল্লাস চলছে । খবর এসেছে লাদেন কে হত্যা করা হয়েছে । প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে সব সৈনিকদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে দেয়া হবে। যখন একদিকে চলছে আনন্দ উৎসব অন্যদিকে জিহাদি দের তাবুতে চলছে শোকের মাতম । প্রানের প্রিয় নেতাকে হারিয়ে ওরা আজ শোঁকে মৃত প্রায় । হোপ জানতে চাইল এই অঞ্চলের ইতিহাস। জেনারেল ডিক্সন একটা সিগারেট ধরাল । ১৮৯৩ সনে ব্রিটিশ রাজত্ত্য কালে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মাঝে সীমানা নির্ধারণের জন্য ব্রিটিশ ভারতীয় মরটিমার ডুরানড এবং তখনকার আফগান আমীর আব্দুর রহমান খানের মাঝে একটা চুক্তি হয় । সে চুক্তিতে একটি সীমানা নির্ধারণ করা হয় যা পাশ্তুন উপজাতীয় অঞ্চলকে দুটি ভাগে ভাগ করে দেয় । এটা পাশ্তুন এবং বালুচ কে দুই ভাগে বিভক্ত করে দেয় । কিন্তু উভয় জাতিই সীমানার দুই পাশে মিস্র ভাবে বাস করতে শুরু করে । পাকিস্তানের পশ্চিম পাশের এই অঞ্চলটি কে বলা হয় খইবার পাখতুনখয়া, বালুচিস্তান যা রয়েছে আফগানিস্তানের পূর্ব ও দক্ষিন প্রান্ত ঘেঁষে । আর আফগানিস্তানের ওপাশের অঞ্চলটিকে বলা হয় তরখাম,নাঙ্গারহার । এই সীমানার নাম করন করা হয় ডুরানড লাইন । মনে হয় এটি পৃথিবীর মানচিত্রে সবচাইতে বিপদজনক সীমান্ত অঞ্চল যা আফগানীরা কক্ষন মেনে নিতে পারেনি । এবং পরবর্তীতে বহুবার এটা নিয়ে দুই দেশের মাঝে সংঘাত হয়েছে । যা এখনো চলছে । কিন্তু যারা সীমান্ত অঞ্চলে বাস করে তারা এখনো স্বাধীন ভাবে থাকতে পারেনা আজ এখানে ত কাল অন্য কোথাও লুকিয়ে বেড়ায় । এরাই আবার একসময় লাদেনের সংস্পর্শে এসে জঙ্গি দল গঠন করে । আর স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে চালাতে থাকে জঙ্গি তৎপরতা । আর আমরা এখানে এসেছি এই সব জঙ্গিদের ধ্বংস করে দিয়ে দুই দেশের জনগণের মাঝে শান্তি ফেরাতে । যেভাবে আমরা আফগানিস্তানকে মুক্ত করেছি লাদেনের কাছ থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ হত্যা করা হল লাদেন কে। আর কিছু দিন পরে হয়ত আমরা ওদের বাকিদেরও শেষ করতে পারব যারা এখনো ওই পাহাড়ের আসে পাশে কোথাও লুকিয়ে থেকে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে । হোপ সব শুনে বেশ উৎসাহ পেল । ঠিক আছে জেনারেল দেখবেন আমি ওদের ঠিকই হত্যা করব যারা মানবতার নামে ধর্মের দোহাই দিয়ে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে । এই পৃথিবীর সব মানুষ সুখে যেন থাকতে পারে এটাই আমার কাম্য । খুব গর্ভ ভরা হাত নিয়ে ডিক্সন হোপের কাঁধে হাত রেখে এগিয়ে গেল আবার নাচের অনুষ্ঠানের কাছে । হোপ এক হাতে মদের একটি গ্লাস তুলে নিয়ে তাতে চুমুক দিল ।

দিন যতই যেতে লাগল আরিয়ানার মনে সাবিতের প্রতি একটু একটু করে ভাল লাগা জন্মাতে লাগল । হয়ত মনে মনে আরিয়ানা সাবিতকে ভালোবেসে ফেলেছে। এভাবেই প্রেমের সুত্রপাত হয় । কিন্তু আরিয়ানা জানে এর কোন পরিণতি নেই । এই প্রেম শুধু কষ্টই বাড়াবে । সুখ সেত কখনো তার জীবনে দেখা দেয়নি । সাবিত মনের আনন্দে নদীতে গোসল করছে । আর সে দূরে বসে দেখছে আর ভাবছে এই ছেলেটিকে কেন তার এত মায়া লাগছে । বুকের খুব কাছে টেনে নিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে আমি তোমাকে একটু শান্তি দিতে চাই ।তুমি আজ স্বাধীন হয়েছ সাবিত । এই দেখ আমরা আজ স্বাধীন হয়েছি । সাবিতের শরীরের গঠন মেদ হীন । চেহারায় সরলতা আছে। খুব ফর্সা চেহারায় কালো দাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগে এই ছেলেটিকে আরিয়ানার । কখন যে হেটে হেটে সাবিত তার খুব কাছে চলে এসেছে সে টের পায়নি । তাই হঠাৎ চমকে উঠল । কি ভাবছেন । কিছুনা । জানেনত আজ রাতে আমাদের একটা যুদ্ধ আছে । আজ আমরা সর্ব শক্তি দিয়ে লড়ব । ওরা আমাদের নেতাকে শহীদ করেছে । আমরা ওদের মৃত্যু চাই । আমার খুব ভয় হচ্ছে যদি এই বলে আরিয়ানা থেমে গেল। ভয় কিসের হয় শহীদ হব নতুবা জয় নিয়ে ফিরে আসব । আপনাকে একটা কথা বলি । বলুন। আপনি কি আমার জন্য পথ চেয়ে বসে থাকবেন । জানিনা শুধু দোয়া করি জয় নিয়ে ফিরে আসবেন । আরিয়ানার দুচোখে অশ্রু নেমে এলো।

রাতের বেলা চারিদিকে ভীষণ গোলাগুলি শুরু হয়েছে । আকাস বাতাস গোলাগুলির শব্দে যেন চিৎকার করে উঠছে বার বার । মাটিতে শুয়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলছে যুদ্ধ। সামনে এগিয়ে চলেছে লতিফ শেখ । পেছনে সাবিত । তাদের পেছনে অন্যরা এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। ক্যাপ্টেন হোপের নিশানা নিখুঁত যা ভেদ করে চলে গেল শেখের মাথা। এই অন্ধকার রাত যেন গোলাগুলি আর গ্রেনেডের আগুনে দিনের মত আলোকিত করে রেখেছে পুরা খইবার পাখতুনখয়ার ময়দানকে । মুহূর্তের মধ্যে রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেল লতিফ শেখের মুখ । সাবিত তাকে কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে পেছনের দিকে এগুলো । কিন্তু হোপের করা আরেকটি গুলি এসে সাবিতের পায়ে লাগল। সাবিত মাটিতে লুটিয়ে পড়ল । কিন্তু থেমে থাকার জন্য সে এখানে আসেনি। পাল্টা গুলি ছুড়ল সে । একটি গুলি এসে ভেধ করে গেল জেনারেল ডিক্সন এর হাতে । সে একজন সৈনিকের কাঁধে ভর করে পেছনে চলে যেতে লাগল । তাকে কাভার করল আরেকজন সৈনিক । একে একে কয়েকজন শহীদ হয়ে গেল জ্বিহাদী দলের । আমেরিকানদের মাঝেও কতক সৈনিক প্রান দিল ।
ভোর হতেই যুদ্ধ থেমে গেল । আরিয়ানা এক অজানা শঙ্কায় কষ্ট বুকে চেপে রেখে দাড়িয়ে রয়েছে । সাবিতকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে আসতে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পরল । দৌড়ে কাছে গিয়ে তাকে কাঁধে ভর করিয়ে নিয়ে এলো । আমরা পারিনি । তবে আমরা আবার ওদের দেখিয়ে দেব । খোদা আমাদের সহায় হবেন। শেখকে বাঁচাতে পারিনি । শেখের মৃত দেহ দেখে আরিয়ানা চিৎকার করে কেঁদে উঠল । তার সাথে যেন কাঁদছে পুরো খইবার এর মাটি । হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদছে সে। সাবিত তার মাথায় হাত রাখল। কান্না যেন এবার তার সীমা ছাড়িয়ে গেল । দাফন শেষ হল দুপুরে । সাবিত শুয়ে আছে মাটিতে তার পায়ের গুলি বের করার চেষ্টা করছে আরিয়ানা । এখন দলের দাইত্ত্য তাকে নিতে হবে । সবার মনে সাহস আনতে হবে তাকেই । তার এখন হতাশ হলে চলবে না । আরিয়ানা আপনি মনটাকে শক্ত করুন বিজয় আমাদের ইনশাল্লাহ হবে । আমার ভাইয়েরা কি খেয়েছে । জি না উনারা কেউ এখনো স্বাভাবিক হতে পারছেনা । হুম ! এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলল সাবিত।

এরই মধ্যে ডিক্সন এর সৈন্যরা এসে ঘেরাও করে ফেলল ওদের। বন্দী করা হল ওদের সবাইকে। আরিয়ানাকে নিয়ে জাওয়া হল বন্দী শিবিরে । আর সাবিত ও তার বাকি সাথীদের ডুরানড লাইন এর এক পাশে দাড় করিয়ে ফায়ার করা হল। আরিয়ানাকে নিয়ে যেখানে বন্দী করা হল সেটা ডুরানড লাইন এরই এক পাশে করা হয়েছে। এক অন্ধকার লোহার প্রকোষ্ঠে গলায় শিকল পরান হল আরিয়ানার । শরীর থেকে টেনে ছিঁড়ে ফেলা হল সব পোশাক । সারা রাত চলল তার উপর দিয়ে পাশবিক নির্যাতন । কখনোবা তার উপরে চড়িয়ে দেয়া হল কুকুর। ওরা হাসছে আর মজা দেখছে । যতটা আর্তনাদ বাড়ছে ওদের হাসি যেন ততই বাড়ছে। হোপ এগুলো কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলনা । একবার জেনারেলকে মানাও করল সে কিন্তু তাতে কোন কাজ হল না । এভাবেই নির্যাতন চলতে থাকল । আরিয়ানার তার মায়ের কথা মনে পরতে থাকে । ১৯৭১ সনে যখন পূর্ব পাকিস্তান তার স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়ে লড়ছে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে তখন কিছু পিশাচ রাজাকার তার মা সহ আরও অনেক সুন্দরী মেয়েদের তুলে দেয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে। ওদের থেকে কিছু মেয়েকে নিয়ে আসা হয় পাকিস্তানের করাচী , লাহোর আর ইসলামাবাদে উচ্চ পদের কিছু সেনা অফিসারের ক্ষুধা মেটাতে । তাদেরই একজন ছিলেন আরিয়ানার মা । পরে ওদের পুনর্বাসন হয় বিভিন্ন যৌন পল্লীতে । সেখানেই আরিয়ানার জন্ম আর বেড়ে উঠা । একদিন জীবনের প্রতি ঘৃণা এসে যায় তার। কিন্তু আত্মহত্যা করতে যেয়েও লতিফ শেখের কারনে পারেনি সে। এই লোকটা তাকে এক নতুন জীবন দিয়ে ছিল। তার মা মারা যাবার পর লতিফ শেখ তাকে পিতার পরিচয় দেয় । আজ শুধু মায়ের কথা মনে পরছে এভাবেই তার মাকেও নির্যাতন সইতে হয়েছিল । হায় পৃথিবীর মানুষ তোমরা বুঝি এভাবেই শান্তি খুঁজে ফিরছ এভাবেই চাও স্বাধীনতা । তবে নাও তোমাদের এই স্বাধীনতা; আজ আমিও স্বাধীন তবে তোমাদের মাঝে। ও মা তুমি আমাকে নিয়ে চল আজ তোমার স্বাধীন দেশে।

রাতের বেলা জেনারেল ডিক্সন আর ক্যাপ্টেন হোপ কফির মগ নিয়ে হাঁটছে ডুরানড লাইন এর এক পাশ দিয়ে । ভোর হতে আর কিছু বাকি। ক্যাপ্টেন হোপ জেনারেলকে বলল আচ্ছা জেনারেল ধরুন আমি যদি এখন আপনাকে গুলি করি তবে আপনি কি ভাববেন ? আপনাকে কেন গুলি করা হল ! জেনারেল উচ্চ স্বরে হেসে উঠল সেই হাসিতে যোগ দিল হোপ। হোপের নির্ভুল নিশানা ভেদ করে গেলো জেনারেল ডিক্সন এর কপাল । সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। হোপ একটা সিগারেট ধরাল । হোপের চেহারাটা দেখে মনে হচ্ছে যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোন এক দেব দূত ।



এই উপন্যাসের কাহিনী এবং প্রতিটি চরিত্র আমার নিতান্তই কল্পনা কেন্দ্রিক মাত্র। বাস্তবের সাথে কারো কিংবা কোনটারই কোন মিল নেই। আর কেউ যদি কোন মিল খুঁজে পান তবে তার জন্য আমি কিছুতেই দায়ী নই ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৩৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×