কুদ্দুস সাহেব একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং সমাজসেবী । তার মাথার ভেতর মাঝে মাঝে এক ধরনের বিশেষ ক্যারা উদিত হয়। আর যার উন্মাদনায় উনি মাঝে মাঝে কিছু পাগলামির আয়োজন করেন যাকে তিনি সমাজসেবা মনে করেন । অনেকে আবার এগুলোকে বলে থাকেন মানবের অধিকার । এজন্য অবশ্য তিনি মনে মনে নোবেল পুরষ্কার দাবী করেন না । তবে উনাকে সুশীল সমাজ আসস্থ করেছে যে একটা অস্কার এ্যাওয়ার্ড দেবে। উনি অবশ্য তাতে কিছু মনে করেন নাই। কিছুদিন আগেরই কথা উনার জন্মদিনে উনি ভেবে দেখলেন সমাজের সর্ব স্তরের মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়াবেন বিশেষ করে সমাজে যারা গরীব শ্রেণীর মানুষ আছেন। এতে করে উনার অনেক নাম ডাক হবে। এই নিয়ে চলল অনেক দিন ধরে পুরো দেশ জুড়ে বেশ ঘটা করে হাক - ডাক , দেয়ালে – দেয়ালে চিকা মেরে দেয়া হল , পোস্টার আর ব্যানারে ভরে গেল সারা দেশ। এলাকা এলাকায় মাইকিং, “ এক বিশাল কাঙালি ভোজের আয়োজন করা হয়েছে, আপনারা সবাই আমন্ত্রিত “ সেই অনুষ্ঠানে সমাজের অনেক গন্য মান্য ব্যাক্তি থেকে শুরু করে সমাজের অনেক নিচু শ্রেণীর মানুষ উপস্থিত হন। পোলাও – কোর্মার কোন কমতি ছিলনা। কুদ্দুস সাহেব আবেগে আপ্লুত হলেন । তার ব্যাপক সুনাম হল । কত সংবাদ পত্র , ব্লগ আর মিডিয়াতে তার সুনাম প্রচারিত হল তার হিসাব নাই। রাতারাতি কুদ্দুস সাহেব হিট হয়ে গেলেন। আমিও গিয়ে ছিলাম সেই অনুষ্ঠানে। একদম পেট ভরে খেয়ে এসেছিলাম। তাতে করে আমার তারপর দুই দিন আর কোন খাবার খাওয়া লাগেনি।
হায় কুদ্দুস সাহেব ! তার অল্প কিছুদিন পর তার জীবনে নেমে এলো দুঃখের কালো রাত। তার এক সুন্দরী কন্যা আছে নাম অপরাজিতা। যে সমাজের জন্য তিনি ঘুম হারাম করে টাকাকে অর্থ না মনে করে অক্লান্ত পরিসরে সেবা করে যাচ্ছেন সেই সমাজেরই কিছু হায়না রুপী মানুষ তার নিরীহ মেয়েটিকে পাশবিক ভাবে ধর্ষণ করল। তার মেয়েটির মরদেহ দেখার মত কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারলেন না। তাই ধর্ষকের ফাঁসি দাবী করে তিনি বিশাল এক জনসভার আয়োজন করলেন। আবার দেশ জুড়ে শুরু হল ব্যাপক হাক - ডাক । দেয়ালে – দেয়ালে চিকা মেরে দেয়া হল , পোস্টার আর ব্যানারে ভরে গেল সারা দেশ। এলাকা এলাকায় মাইকিং, “ এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়েছে ধর্ষকের ফাঁসি দাবী করে “ কিন্তু আফসোস যারা এর প্রচার এবং প্রসারে কাজ করেছেন এবং পাশাপাশি সমাজের কোন স্তরের এবং শ্রেণীর মানুষই তেমন উপস্থিত হলেন না । বিশেষ করে কোন মেয়েরাই সেখানে উপস্থিত হলেন না। আমিও যাইনি। আমি তখন বাসায় বসে বসে টেলিভিশনে মুন্নির বদনাম গানটি দেখছিলাম আর তাক ধিন না ধিন নাচ্ছিলাম। সাথে আমার কন্যাও ছিল। অথচ একটি বারও আমি ভেবে দেখিনি কাল আমার মেয়েটিও ধর্ষণের শিকার হতে পারে।
তাই বলি, কোথায় আজ আমার নারীবাদী পক্ষ ?
কোথায় আজ আমার তসলিমা নাসরিন ?
কোথায় আজ আমার দুই দেশ নেত্রী ?
তাই অনেকটা আফসোস করেই বলি আমি কিন্তু ধর্ষকের পক্ষে কারন আজ আমি রাজপথে ধর্ষকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরি করতে যাইনি অথচ এতদিন শুধু কিবোর্ড ফাটিয়েই বাহ ! বাহ !! বাহ !!! কুড়িয়েছি। আরে ভার্চুয়ালই কি আর ধর্ষণ হয় ধর্ষণ হয় মাঠে – ঘাটে – রাজপথে । তাই একে রুখে দিতে ভার্চুয়ালই সচেতনতা তৈরি করার পাশাপাশি রাজপথেও নামতে হবে। নতুবা ধর্ষণ একের পর এক হতেই থাকবে আর আমরা শুধু কিবোর্ড ফাটিয়ে আঙ্গুলই চুষে যাব কারন আমরা যে সুশীল সমাজভুক্ত আঙ্গুল চোষা সুশীল । আর তোমরা ধর্ষণ হতে চাইলে ধর্ষিত হও তাতে আমার কিছু যায় আসেনা !
তাই অনেকটা আক্ষেপ করেই বলি, “ আমি আমার নিজের মৃত্যুদণ্ডের দাবী তুলতে চাই “
আর ছেপ দেই, থু ! থু !! থু !!!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




