somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কান্ডারী অথর্ব ও রেশমির প্রেমের উপাখ্যান - ১ম পর্ব

১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অষ্টম শ্রেণীর একজন মেধাবী ছাত্র হারানো গিয়েছে যদি কোন হৃদয়বতী তার সন্ধান পান তবে যেন নিজ দায়িত্তে ফিরিয়ে দিয়ে যান। সে এতই ভাল ছেলে ছিল যে রোজ সকাল বেলা সূর্য মামা জাগার আগে নয় বরং ভর দুপুরে সূর্য যখন মাথার উপর এসে যেত তখন তার সুখের ঘুম ভাঙত। আর এমন হীরার টুকরো ছেলে আহারে অকালেই অকাল পক্ক হয়ে শেষে কিনা প্রেমের ফাঁদ বানিয়ে নিজেই সেই ফাঁদে পা দিল। পড়াশোনায় ভীষণ মনোযোগী ছিল। কখনো কোন পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় এর কোনটাই হতে না পারলেও কোন রকম পরীক্ষার পূর্বের রাতে পড়েই অন্তত নেহায়েত ফেলের হাত থেকে রেহাই পেত। পরীক্ষার পূর্বেই শুধু পড়াশোনার কথা বলছি কারন বছরের বাকি দিন গুলো কিশোর পত্রিকা, রহস্য পত্রিকা, বাটুল দি গ্রেট, চাচা চৌধুরী,পিঙ্কি, বিল্লু, ফেন্টম, তিন গোয়েন্দা, সেবার অনুবাদ, রোমান্টিক গল্প এমনকি রসময় গুপ্ত পড়েই দিন কেটে যেত।

এমন একটি ছেলের জীবনে হঠাৎ করেই প্রেমের দুর্যোগ নেমে এলো। হাতে তুলে নিল শরৎচন্দ্র, শির্ষেন্দু, সুনীল, বুদ্ধদেব আর হুমায়ূন আহমেদ ওহ জীবনানন্দ দাশের কথা না বললেই নয়। মন কেড়ে নিল পাশের বাড়ির একটি মেয়ে। তার চোখের চাহনি দেখলে কলিজার রক্ত শুকিয়ে পানি হয়ে যেত । ডাগর ডাগর চোখ দিয়ে ড্যাগারের মত যেন কলিজাটা ফালা ফালা করে ফেলত । উফ সেকি প্রেম জেগে উঠত হৃদয়ের গহীনে। এমন সময় গুলোতে সাথে ছিল কিছু অসাধারন রোম্যান্টিক প্রেম জাগানিয়া হিন্দি সিনেমা ও তার গান। সব মিলিয়ে প্রেমিক মন নিয়ে স্কুল ফাকি দিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা বখাটে ছেলেদের মত অথবা ছাদে উঠে ফিল্ডিং মারাই হয়ে উঠল দৈনন্দিন কাজের অংশ। সাথে যোগ দিল বস সালমান শাহ এর সব বিখ্যাত বিখ্যাত সিনেমা স্বপ্নের ঠিকানা , স্বপ্নের পৃথিবী, অন্তরে অন্তরে আরও কত কি । টেনশনে টেনশনে ছেলেটি শেষ পর্যন্ত সিগারেট ধরে ফেলল। দীঘল ঘন কালো চুলের সেই মেয়েটিকে ভালোবাসে কিন্তু কখনো সাহস করে বলতে না পারার যন্ত্রণা থেকেই তার এই ধূমপানের শুরু। যখনি বলতে যাবে তখনি শরীরে জ্বর চলে আসত। নাহ প্রেম বুঝি তার আর এই জীবনে হবেনা । কান্ডারী মনে হয় আজীবন অথর্বই থেকে যাবে।

অনেক ভেবে ভেবে আর দোকান থেকে বাকিতে সিগারেট কিনে খেয়ে খেয়ে পাহাড় সমান দেনায় ডুবে গেল ছেলেটি। এই সিগারেট খরচ বহন করার জন্য শুরু হল তার বাইরে কোচিং ক্লাসে পড়াশোনা যদিও কোন প্রকার কোচিং এ তার কখনো যাওয়া হয়নাই শুধু মাস শেষে বাবার কাছ থেকে কোচিং এর জন্য বেতন নিয়েই কোন রকম সিগারেটের খরচ চালিয়ে নেয়া হত। মনে মনে একটা পরিকল্পনা করে ফেলল কান্ডারী । আর কত কাল এভাবে চুপ করে থাকবে সে। দেখা যাবে ততদিনে তার প্রিয়ার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে বাচ্চা কাচ্চার চাচা হয়ে গেছে সে। না কিছুইতেই না । এই অপমান মেনে নেয়া যাবেনা । তাই সে তার প্রেয়সী রেশমির এক বান্ধবীকে খুঁজে বের করল। আপাতত পরিকল্পনা হল যে রেশমিকে কান্ডারী একটা চিঠি দেবে এবং তার প্রতিক্রিয়া জেনে নেবে তার বান্ধবীর কাছ থেকে। যেমন পরিকল্পনা তেমন কর্ম। দোকান থেকে পঁচিশ টাকা দিয়ে খুব দামী একটা কলম কিনল সে। তারপর একটা ছোট কাগজে লিখল শুধু আই লাভ ইউ। ব্যাস সেই কলম আর চিরকুট নিয়ে দাড়িয়ে রইল রাস্তায় । তার সামনে দিয়ে তার রেশমি হেটে চলে গেল কিন্তু তাকে আর কলম ও চিরকুট দেয়া হলনা। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই শরীরে জ্বর চলে এলো। সত্যি কান্ডারী একজন অথর্ব। ভাবছেন এই কান্ডারী আবার কে আরে সেই ছেলেটিই আপনাদের আজকের কান্ডারী অথর্ব এই আমি আর রেশমিকে নিয়ে আমার এই প্রেম কাহিনী।

একদিনের ঘটনা বলি। ঢাকা শহরে বর্ষা কাল মানেই ভাল রাস্তা কেটে জায়গায় জায়গায় গর্ত করে রেখে পরে আবার গর্ত ভরাট করে নতুন করে রাস্তা মেরামতের কাজ করা। এতে হয়ত কারো কারো পকেটে টাকায় ভরলেও আমি তাদের কাছে চির ঋণী । আরে তদের কারনেই যে আমার প্রেম এক নতুন পাখা পেল। একদম এক উড়াল দিয়ে সপ্তম আকাশে যেয়ে উপস্থিত হল। সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল সেই দিন । তাই রাস্তায় এমন ভাবে পানি জমে গেল যে কোথায় গর্ত আর কোথায় সমান বোঝার উপায় ছিল না। আমি সেই বৃষ্টিতে বের হয়েছি স্কুলে যাব বোলে । পথে দেখলাম আমার প্রিয়াও স্কুল থেকে ফিরছে। এর মাঝে বোলে রাখি আমি তখন আর কিন্তু অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র নই। সদ্য নবম শ্রেণীর ছাত্র আর আমার প্রিয়া অষ্টম শ্রেণীর। আমাদের স্কুলে মেয়েদের ক্লাস হত সকালে আর ছেলেদের বিকেলে। তাই প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার পথেই তার সাথে আমার চোখে চোখে ইশারা হত। যাই হোক এমনই সেই বৃষ্টি ভেজা দিনে চোখে চোখে তাকিয়ে হাটতে হাটতে আমরা দুইজন কখন যে গর্তে যেয়ে পড়লাম। ব্যাস দুইজন পানিতে ডুবে একাকার । অনেক ক্ষণ দুইজন পৃথক ভাবে গর্ত থেকে উঠার চেষ্টা করেও যখন উঠতে পারলাম না তখন আমি সেই কোমর পানিতে দাড়িয়ে থেকে রেশমিকে সাহস করে কোলে তুলে নিলাম । ওকে উঠানোর পর এবার ও আমার হাত ধরলে আমিও গর্ত থেকে উঠে এলাম। উফ সেই স্মৃতি আমি আজো ভুলতে পারিনা।

এরপর থেকেই আমার জীবনে নতুন বসন্ত এলো। আমি প্রতিদিন নতুন নতুন জামা পরে হ্যাভি মাঞ্জা মেরে বারান্দায় দাড়াই , ছাঁদে উঠি গলিতে নেমে বাচ্চাদের সাথে ক্রিকেট খেলি যদি একবার একবার সে এসে বারান্দায় দাড়ায় । রাত দিন ভুলে গেলাম শুধু ছট ফট করতে থাকি আর বারান্দায় যেয়ে দাড়াই। আমাদের স্কুল যেমন এক ছিল তেমনি বাড়ি ছিল গলির সামনা সামনি। তবু আমার ভিরু মনের কারনে প্রেম হতে বেশ সময় লেগে গেল। এর পর একদিন তাকে সাহস করে সেই পঁচিশ টাকা দামের দামী কলম আর চিরকুটে লেখা আই লাভ ইউ দিয়ে দিলাম। ব্যাস প্রেম আর ঠেকায় কে। তখন অবশ্য আজকের দিনের মত এমন ডেটিং করার সুযোগ ছিলনা অথবা মোবাইল ছিল না যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বোলে রাত পার করে দেয়া যেত। বাসায় একটা টি এন্ড টি ফোন ছিল সেটাও ছিল বাবার ঘরে তাই সেটা দিয়েও কথা বলতে পারতাম না। আমাদের প্রেম ছিল শুধু ছাদ আর বারান্দা কেন্দ্রিক। এর জন্য অবশ্য আমরা বিশেষ ধরনের সিগন্যাল ব্যাবহার করতাম। যদি আমি বা রেশমি আমাদের মধ্যে যেই বারান্দায় আসত দুইবার তালি বাজালেই বুঝে নিতাম বারান্দায় যাবার সময় হয়েছে।

শুরু হল আমার অমর প্রেম কাহিনী। আমি আর দুপুর বেলা ঘুম থেকে উঠি না। সূর্য মামা জাগার আগেই খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগে উঠা শুরু করলাম। মেয়েকে যখন পেয়েছি এবার তাহলে মেয়ের মাকে পেতে হবে নাহলে প্রেমের পরিপূর্ণ সাধ কি করে মিটবে । তাই খোঁজ নিয়ে দেখলাম আমার হবু শাশুড়ি রোজ ভোরে হাটতে বের হন ব্যাস আমিও সালাম দিয়ে নেমে গেলাম তার সাথে পথে হাটার জন্য। হাজার হোক আমার শরীরটাকেও ফিত রাখার প্রয়োজন রয়েছে। আমার শাশুড়ি একজন হাটার সঙ্গি পেয়ে খুব খুসি হলেন। এর পর আমাকে মাঝে মাঝেই দুপুরে, রাতে অথবা কখনো সকালে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়াতেন। খুব আদর করতেন তিনি আমাকে। আর আমিও পেয়ে গেলাম রেশমিদের বাসায় ঢোকার দরজা। এর পর কারনে অকারনে আমি আমার হবু শাশুড়ির খোঁজ খবর নেয়ার জন্য ওদের বাড়িতে যাতায়েত শুরু করি হাজার হোক খালা বোলে কথা আর খালা মায়ের সমান। অথচ নিজের মায়ের খোঁজ কতটা নিয়েছি আঙ্গুলের রেখা গুনে বোলে দিতে পারব। এই হল প্রেমের জন্য আমার বলিদান দুঃখিত মা বদল। ওদের বাসায় গেলে ওর মায়ের সাথে যখন গল্প করতাম তখন রেশমি পাসে এসে বসত ঈশ কি মধুর সেই চাহনি আমি আজো ভুলতে পারিনা তার সেই চুলের ঘ্রান। আমার দেখাদেখি রেশমিও তার মা বদল করে আমাদের বাসায় যাতায়েত শুরু করল। দেখতাম খুম সুন্দর করে সে আমার মাকে পটিয়ে ফেলেছে। আমার মায়ের সাথে বসে কি সুন্দর লুডু খেলে আমার বাবাকেও দেখি ওদের সাথে বসে লুডু খেলে । আমি যেন সেদিকে দেখেও না দেখার ভান করে থাকি। যেন এই মেয়ের আমার বাসায় আসাটা আমি মোটেও পছন্দ করছিনা। অথচ ও যতক্ষণ আমাদের বাসায় থাকত আমি শুধু স্বপ্ন দেখতাম কবে এই মেয়েকে আমি আমার বউ করে আমার ঘরে পাব। কবে আমার বিছানায় এসে বসবে আমাকে একটু ঠোঁটে চুমু খাবে। আমি ওকে আমার বিছানায় নিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকব। অথচ যেহেতু আমি অথর্ব তাই হয়ত খুব বেশী দিন সেই স্বপ্নকে লালন করতে পারলাম না আমার হৃদয়ের মাঝে।

(চলবে …………)





সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:১৪
৫৭টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×