somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কান্ডারি অথর্ব
আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূণ্যতা থেকে শূণ্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

কান্ডারী অথর্ব ও রেশমির প্রেমের উপাখ্যান - ২য় পর্ব

১৪ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সেদিন দুপুরের খড় রোদে দেখলাম একটি নীল রঙের শাড়ি পরে রেশমি তাদের ছাদে বসে কাঁদছে। সেদিন রেশমিকে আমি প্রথমবারের মত শাড়ি পরতে দেখেছিলাম। কিশোরী মেয়েরা যখন জীবনের প্রথম শাড়ি পরে তখন তাদের মনে হয় যেন বাঁশের তৈরি মাচা বেয়ে লাউ গাছের সদ্য গজানো কচি পাতাগুলো জড়িয়ে রয়েছে। আমি আমার বারান্দায় দাড়িয়ে ইশারা করলাম কি হয়েছে ? আমাকে ও ওদের ছাদে যেতে বলল। আমিও এক দৌড়ে ওদের বাড়ির ছাদে যেয়ে উপস্থিত হলাম। আমাকে সিঁড়ি ঘরে নিয়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরে অনেক ক্ষণ কাঁদল রেশমি। আমিও কিছু না বুঝেই কেঁদে ফেললাম। আহারে দুজন মিলে সেকি কান্না ! আমার একবারের জন্যও মনে হলনা আমি ওকে জিজ্ঞাসা করি কেন কাঁদছে ? কি হয়েছে ? আমি শুধু আমার বুকের সাথে ওকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম আর ওর হৃদয়ের স্পন্দনগুলো বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেইদিনের সেই আমার কিশোর মন কিছু বুঝতে না পারলেও আজ ঠিকই বোঝে যে রেশমি সেইদিন কেন কাঁদছিল। এরই নাম প্রেম এরই নাম হৃদয়ের অনুভূতি। যাকে খুব ভালোবাসি তাকে সারাক্ষন খুব কাছে চেয়েও না পাওয়ার যে যন্ত্রণা সেটা এড়ানো খুব কষ্টের। রেশমি আমাকে বলল যে আজ তার জন্মদিন এবং আমার কাছে এমন একটি উপহার চায় যে সে যেন তার সারাজীবন সেই উপহার মনের মাঝে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে। আমি কিছুতেই ভেবে পেলাম না ওকে কি দেয়া যেতে পারে। রেশমিকে শুধু বললাম আমি এখন যাই তুমি সন্ধ্যায় ছাদে থেক আমি আসব তোমার সেই উপহার নিয়ে। রেশমি আমাকে খুব করুন দৃষ্টি নিয়ে বিদায় দিল। আমি বাসায় এসে একটি কবিতা লিখে ঠিক করলাম এই কবিতাই ওকে দিব আর এটাই রেশমি সারা জীবন মনের মাঝে রেখে দিতে পারবে। শুরু হল আমার জীবনে কবিতা চর্চা বা লেখা লেখির অধ্যায়।

সৃষ্টিশীল ভালোবাসা
-----------------------------------------------------

জীবনের সব রং যখন মুছে যায়;
হৃদয় তখন সব হারানো স্মৃতি খুঁজে পায়।
হয়তবা এই স্মৃতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে,
নতুন জীবনের স্বপ্নিল আকাঙ্ক্ষা;
তখনি যেন ভালোবাসার ইচ্ছাগুলো মনে জাগতে থাকে।

নতুন প্রভাতের ন্যায় জেগে উঠে মন,
ভালোলাগে কাউকে অযথা তখন।
শেষ হতে চায়না যেন অনন্ত পথ;
পেয়ে যায় কখনোবা জীবন রথ;
ভালোবাসা সৃষ্টি করে হৃদয়ে ক্ষত।


এই অথর্বের জন্য রেশমি একটি ছোট কেক নিয়ে ছাদে অপেক্ষা করছিল। আর আমি বোকার মত একটি লাল গোলাপ ফুল আর আমার লেখা এই কবিতাটি নিয়ে হাজির হলাম বললাম রেশমি আমি তোমাকে কবিতাটি পড়ে শুনাচ্ছি। দেখবে আজীবন এই কবিতাটি তোমার মনের মাঝে আবৃত্ত হতে থাকবে আর চাইলে গোলাপটিকে রেখে দিত পার যদিও সেটি মরে যাবে একসময় কিন্তু দেখ আমার কথা তোমাকে ঠিকই মনে করিয়ে দেবে এই মরে যাওয়া ঘ্রাণহীন ফুলটি। আমাকে খুব অবাক করে দিয়ে রেশমি বলল তুমি কখনো আমাকে ভালোবাসতে পারবেনা। কারন আমাকে বোঝার সেই মন তোমার নেই। আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন কি বলে মেয়েটি ! আমি ওকে এত ভালোবাসি অথচ আমি ওর মন কেন বুঝতে পারবনা। আমাকে কিছু না বলেই খুব অভিমান করে নীচে নেমে গেল রেশমি। আমি টের পেলাম রেশমি কাঁদছে, ওর চোখে অশ্রু। রেশমি যখন কাঁদে তখন শুধু ওর চোখ হতে নোনা জলের ধারা নেমে আসে গাল বেয়ে । ওকে আমি কখনো উচ্চ স্বরে কাঁদতে দেখিনি। এ যেন বুকের ক্ষত হতে নীরবে ক্ষয়ে যাওয়া রক্তের বিসর্জন। আমি কিছুক্ষন বোকার মত ওদের ছাদে দাড়িয়ে থেকে খুব কাঁদলাম। তারপর বাসায় চলে এলাম। সেই রাতে রেশমি একটি বারের জন্যও আর বারান্দায় এলো না আমার সাথে দেখা করতে। কিন্তু আমি সারা রাত বারান্দায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করে গেলাম যদি একবার একবার বারান্দায় এসে দাড়ায় আর আমি ওকে দেখে আমার বুকের ভেতর জমে থাকা কান্নাগুলো মুছে ফেলতে পারি।

তারপর বহুদিন আমি রেশমির আর কোন দেখা পাইনি। বুহুবার ওদের বাসায় গিয়েছি কিন্তু দেখা করতে পারিনি। ওর মায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কিন্তু ঠিক সাহস করে তেমন কিছু বলতেও পারিনি। আমার আর রেশমির মাঝে অনেকটা দুরুত্ত তৈরি হয়ে গেল। আমার কি করা উচিৎ আমি ভেবে পেলাম না। বন্ধুরা সাজেশন দিল আরে এইরকম কত রেশমি আছে, সবকিছু ভুলে যেয়ে আমি যেন নতুন করে কারো সাথে প্রেম শুরু করি। কিন্তু তাই কি আর হয় ? যাকে জীবনে প্রথমবার ভালোবেসেছি তাকে কি আর কখনো ভোলা যাবে ! কথায় আছে জীবনের প্রথম প্রেম নাকি ভোলা যায় না। নাহ কিছুতেই ভোলা যাবে না। আমি রেশমিকে একটি চিঠি লিখলাম। সেই চিঠি ওর এক বান্ধবীর কাছে দিয়ে বললাম যেন চিঠিটি পৌঁছে দেয়। তখনত আর ইন্টারনেট অথবা মোবাইল ফোন পাইনি যে শুধু ছোট ছোট ম্যাসেজ পাঠিয়েই প্রেমিকার মন জয় করে ফেলব। তাই এই চিঠিই ছিল একমাত্র ভরসা। তখনকার দিনে খুব সুন্দর সুন্দর ফুলের, ভালোবাসার সাইন সহ গোলাপি, নীল, হলুদ আরও নানা রঙের চিঠি লেখার প্যাড পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় কিনা জানিনা। তেমনি একটি গোলাপি রঙের প্যাডের পাতায় লিখলাম আমার সেই চিঠি। তারপর নীল রঙের একটি খামে ভরে ওর বান্ধবীর কাছে সেটি দিয়ে বললাম যেন রেশমির কাছে পৌঁছে দেয়। আমার চিঠির সেই কথাগুলো আজ আর পুরোপুরি মনে নেই তবে আংশিক যা মনে করতে পারছি অনেকটা এইরকম ছিল সেই চিঠির ভাষাগুলো;

আমার মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে এসেছে ও আমার জান,
আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত কল্পনা করতে পারিনা। আমার বেঁচে থাকার প্রেরনা শুধু তুমি। তোমাকে আমি এই পৃথিবীতে না পেলেও তুমি জেনে রেখ তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে যেদিন আমার লাশ যাবে তুমি একটু হলেও কাঁদবে, তারপর হয়ত জানি তুমি পৃথিবীতে সংসার করবে নিত্য আনন্দে কিন্তু জেনে রাখ আমি এক বিন্দু পরিমান রাগ করব না কারন তোমার আনন্দ আমার আনন্দ, তোমার আনন্দে আমি মিশে আছি, আমি যে সত্যিকারের শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।

Rainless Earth

------------------------------------------------

My love is like a Rainless Earth
I love you aimlessly
You can never tell me that
You don’t love me
Oh! My dearest love
Please, don’t break my youngest heart
Touch my chest with your hand and
Promise me that
You will love me
Forever and ever and ever
None but I can love you so much
One day I will die
Then you will recognize that
How much I loved you
You will shed your tears and
To lament for me but
If you come to my grave and
Touch on it
I will kiss your hand because
My love is ever grateful to you


সুখে থেকো ইতি তোমাকে ভালোবাসতে অপারগ এই আমি


(চলবে..................)

কান্ডারী অথর্ব ও রেশমির প্রেমের উপাখ্যান
কান্ডারী অথর্ব ও রেশমির প্রেমের উপাখ্যান - ১ম পর্ব


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:১৪
৫২টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×