somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কান্ডারি অথর্ব
আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূণ্যতা থেকে শূণ্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

শান্তির শেষ স্বপ্ন কবর ভূমিতে

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




পূর্ণিমা আর অমাবস্যা অথবা যদি বলি অমাবস্যা আর পূর্ণিমা; এর কোনটাই আজ আর আমার দৃষ্টিতে তেমন কোন প্রভাব ফেলেনা। প্রতিটা রাত আমার দৃষ্টিতে একই রকম। নির্ঘুম প্রতিটা রাতই আমার জীবনে বয়ে আনে একাকীত্বের কষ্ট। জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসাব কখনো মেলাইনি, মেলাবনা। তবে জীবনে পেয়েছি প্রায় সবই তবু কিছু অতৃপ্তি রয়েই গেছে। জীবনের সব পাওয়ার মাঝেই কোন এক না পাওয়ার বেদনা লুকিয়ে থাকে। হয়ত এরই নাম জীবন। কতক্ষন এখানে বসে আছি খেয়াল নেই তবে মনে হচ্ছে যেন অনন্তকাল ধরে এখানেই এভাবে বসে আছি। এটা একটা কবস্থান। পৃথিবীর মানুষগুলো বড় বোকা ! তারা রাতে কবরস্থান আসতে ভয় পায়। কিন্তু আমি জানিনা কেন এই ভয়। আমিত আমার ভবিষ্যৎ ঠিকানাতেই আছি। হয়ত এই মুহূর্তেই কবর হবে আমার অন্তিম ঠিকানা। এইত জীবনের স্বাভাবিক অমোঘ নিয়তি। আমি প্রায় রাতেই এখানে আসি কিন্তু কেন আসি তা জানিনা !

চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বথের কাছে
এক গাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা – একা;
শোনা গেলো লাশ কাঁটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে – ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হ’ল তার সাধ।
বধু শুয়ে ছিলো পাশে – শিশুটিও ছিলো;
প্রেম ছিলো, আশা ছিলো জোসনায়, তবু সে দেখিল
কোন ভূত ? ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার ?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল – লাশকাঁটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।


জীবনানন্দ দাশ, আজ হতে প্রায় ৬৩ বছর পূর্বে লিখে যাওয়া আপনার এই কবিতা বাস্তব হয়ে নেমে এলো হাতিমের জীবনে ৬৩ বছর পর। বুধবার গভীর রাতে কটিয়াদি উপজেলার বীর নোয়াকান্দি গ্রামে দীর্ঘ দিন ঘুমাতে না পারার যন্ত্রণায় ফাল্গুনের রাতের আঁধারে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ গ্রামের মৃত হোসেন আলীর পুত্র হাতিম পরিবারের সদস্যগণের অগোচরে ফাসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে। সত্যিইত হে কবি;

হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার ?
আমিও তোমার মতো বুড়ো হবো – বুড়ি চাঁদটারে আমি
ক’রে দেবো কালীদহে বেনোজলে পার;
আমরা দ’জনে মিলে শূন্য ক’রে চ’লে যাবো জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার।


আধুনিক মনো বিজ্ঞানীদের অনেকে বলছেন,- জীবন যত জটিল হচ্ছে ততই বাড়ছে আত্মহত্যার সংখ্যা। এ হচ্ছে প্রতিনিয়ত নির্মম বাস্তবতার একটি পরিনাম। এ এক ধরনের মনো বিকলন। সেচ্ছা মৃত্যু একজন মানুষের মৃত্যু চিন্তা থেকেও উৎসারিত হতে পারে ক্রমাগত সে পরিনত হতে পারে আত্মহত্যা প্রবণ প্রাণীতে। আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার চেষ্টা দুইয়ের পেছনে কাজ করে একই প্রবনতা।

ডঃ এন্টোনি আর মে’র মতে,- মানুষের এ প্রবনতা চরম রূপ নেয় যখন স্থুল বস্তুজগৎ তার মানসিক যন্ত্রণা লাঘব করতে অসমর্থ হয়। কিন্তু মানুষ যখন মরণকে বরন করার সময় মৃত্যু যন্ত্রণা অনুভব করে তখন তার আবার বাঁচতে ইচ্ছা করে।

বিষপান করে অনেক কে দেখা যায় সে চিৎকার করে বলছে আমাকে বাঁচাও। এমনও নজির আছে বিষপানের পর সে নিজেই ছুটে গেছে ডাক্তারের কাছে। মানুষ মরে বাঁচতে চায় আবার মৃত্যুর মুখে গিয়ে জীবনকে আঁকড়ে ধরতে চায়। দুইয়ের মাঝে প্রবল জীবন বাদিতার লক্ষন স্পষ্ট।
ডঃ মে’র ভাষায়,- মৃত্যু সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসার জন্য শেষ চিৎকার। স্বেচ্ছা মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একজন যেন জাগান দিয়ে যায় পৃথিবী আমাকে চায় না। আমি অবাঞ্চিত আগন্তুক এখানে।

তবু পৃথিবীর সকল ধর্মমতে,- জীবনের ভাল মন্দ ঈশ্বরের দান। যেহেতু ঈশ্বরের দান অতএব তাঁকে উপেক্ষা করা যাবেনা। মৃত্যু আসবে তার নিজের নিয়মে। মানুষ শুধু বাচার চেষ্টা করবে মরার নয়।

তবু বাস্তবতা মানুষকে এ অতল স্পর্ধায় অবিচল থাকতে দেয়না সবসময় সবার বেলায়। আত্মহত্যা কোনভাবে ব্যাক্তির স্বাধীনতায় পর্যবসিত হতে পারেনা।

এডউইন শনিডম্যান মনে করেন,- মানুষ যখন নিজেই নিজের শত্রু হয়ে উঠে যখন নিজেকে পুরোপুরি ব্যর্থ বলে শনাক্ত করে সব চিন্তা চেতনা যখন জড় হয় এক সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর মাঝে এবং যখন তার সমস্যার ভাল মন্দ বা মাঝামাঝি কোন সমাধান না পাওয়ার মত অবস্থার সৃষ্টি হয় শারীরিক ও মানসিক চরম যন্ত্রণা উপশমের জন্য নিরুপায় তখনই মানুষ আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে উঠে। তাই বলে আত্মহত্যাকে প্রশ্রয় দেয়া চলবে না।

তাইত আইনের বন্তব্য,- মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। জীবন মানুষের নিজস্ব সম্পদ। সে সম্পদকে ধ্বংস করার অধিকার আইন মানুষকে দেয়নি। আত্মহত্যা আইনত অপরাধ এক অমোঘ পাপ।

তবুত পৃথিবীর শোণিত সৌরভে চির ইতিহাস হয়েই রয়ে যায় এক বিপন্ন বিস্ময়। একদা কিছু নাগা পরিবার জুম চাষের জন্য জাটিঙ্গা আসে। এটি ভারতের আসামের একটি গ্রাম। একদিন তারা বুনো প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আগুন জ্বালালে দেখতে পায় আগুন লক্ষ্য করে ঝাঁক বেঁধে নেমে আসছে একই জাতের পাখি। তখন ওরা ভেবেছিল এটা শয়তানের কাজ। পর পর কয়েক রাত এ ঘটনার পুনরাবৃতি হোলে নাগারা সেখান থেকে চলে যায়। আসামের জাটিঙ্গা গ্রামে প্রতি বছর আগস্ট থেকে অক্টেবর এর মাঝে ঘনঘোর অন্ধকারের রাতে মেঘাচ্ছন্ন আকাস ঝির ঝির বৃষ্টি এবং কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় যখন বাতাস বয়ে চলে দক্ষিন পশ্চিম থেকে উত্তর পূর্ব দিকে তাপমাত্রা বিশ ডিগ্রী থেকে পঁচিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস আদ্রতার পরিমান আসি থেকে নব্বই শতাংশ তখনই পাখিদের স্বেচ্ছামৃত্যু ঘটে। যদি কোন খোলা জায়গায় আগুন জলতে থাকে তাহলে সেখানে ঝাঁপিয়ে পরে ঝাঁকে ঝাঁকে। বিষয়টি যেন জাটিঙ্গার ঘন বন এবং পাহাড়ি ঝরনার মতই রহস্যাবৃত। এর কারন হতে পারে বিশেষ পরিবেশের যা সহজে অনুভব করা যায় না। বিজ্ঞানীদের মতে,- বর্ষাকালে বৃষ্টির ফলে মাটির নীচে পানি জমে বলে চৌম্বক শক্তি জনিত হেরফেরের জন্য পাখির মাঝে অজ্ঞাত স্বেচ্ছামৃত্যুর স্পৃহা জন্মে। আত্মহত্যার প্রবনতা আছে সাগরের এক বিশেষ প্রজাতির তিমির মাঝেও। এর নেপথ্যে হয়ত প্রাকৃতিক কারন আছে।

তবুত চলে যেতেছি আমরা এই মরন প্রভাতে,
তবুত চলে যেতেই হয় মানুষকে কোন এক মরন প্রভাতে,
মানুষের শান্তির শেষ স্বপ্ন কবর ভূমিতে।
তবুত চলে যেতেছি বেঁচে থাকার শেষ আর্তি আত্মহত্যাতে,
তবুত চলে যেতেই হয় মানুষকে শান্তির শেষ স্বপ্ন কবর ভূমিতে।




১৬ ই চৈত্র, ১৪০৭



উৎসর্গঃ


ব্লগার আমিনুর রহমান
ব্লগার আশিক মাসুম
ব্লগার একজন আরমান
ব্লগার মনিরা সুলতানা
ব্লগার ফারজানা শিরিন

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:০৪
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×