somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কান্ডারি অথর্ব
আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূণ্যতা থেকে শূণ্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

এপিটাফ

২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আমি যেখানে এখন বসে আছি এটি একটি কবরস্থান। প্রায় প্রতিদিনই আমার এখানে আসতে হয়। আমার মা এখানে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। পৃথিবীতে মাই ছিলেন আমার একমাত্র আপনজন। একমাত্র সঙ্গী। কিন্তু মা মারা যাবার পর এই পৃথিবীতে আমি সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ হয়ে পরি। তাইত মায়ের আঁচলের ঘ্রাণ, মায়ের মমতা আমাকে বারবার এই কবরের কাছেই টেনে আনে। আমি নীরবে অশ্রু সিক্ত চোখে মায়ের কবর জড়িয়ে ধরে বসে থাকি যেন মাকে জড়িয়ে ধরেই নরম বিছানায় শুয়ে থাকার শান্তিটুকু অনুভব করি। মায়ের কফিনটি সেদিন আমাকে নিজ হাতে এখানে মাটি চাপা দিয়ে রাখতে হয়েছিলো। ফিরে আসার সময় মা যেন পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরে বলেছিলেন তোকে ছাড়া খোকা আমি ভীষণ একা হয়ে গেলামরে। মাঝে মাঝে তোর এই মাকে দেখতে আসিস। আর নিজের প্রতি অবহেলা করিস না কখনও। ঠিক কতক্ষন এভাবে মাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি টের পাইনি। হঠাত আমার কর্নিয়ায় আগত একটি ম্যাসেজে চৈতন্য ফিরে পেলাম। প্রেসিডেন্ট তার কর্নিয়ায় ধারণকৃত কিছু দৃশ্য থেকে মস্তিষ্কে ইন্সটলকৃত প্রোগ্রামের সাহায্যে এডিট করে বাইনারী ডিজিটে এনকোড করে ওয়েভে সিগন্যাল পাঠিয়েছেন। আমার কর্নিয়া সেই বাইনারী আকারে পাঠানো ভিডিও ম্যাসেজটি ডিকোড করে দেখছে। আমাকে এখনই প্রেসিডেন্টের বাড়িতে উপস্থিত হতে হবে। বিষয়টা ভীষণ জরুরী। আমি আর বিলম্ব না করে মায়ের কবরে শেষবারের মতো চুমু খেয়ে প্রেসিডেন্টের বাড়ির পথে রওনা হোলাম।

প্রেসিডেন্ট হোরাস মরগ্যান। নামটি যদিও মিশরের সেই এক চোখের দেবতা হোরাসের কথাই মনে করিয়ে দেয় তথাপি মার্কিনীদের বর্তমান এই প্রেসিডেন্টের সাথে তাঁর কোন রূপ মিল নেই। যদিও চেহারায় পুরোপুরি তৎকালীন মিশরীয় ফারাওদের মতোই আভিজাত্যের প্রভাব রয়েছে কিন্তু তারপরেও সাদা চামড়ার কারনেই হয়ত তামাটে সেই ছাপটা বিদ্যমান নয়। পুরো পৃথিবী আজ তার নিয়ন্ত্রনে শাসিত হয়। বর্তমান পৃথিবীবাসী তাকে নিজেদের ঈশ্বরের মতোই মান্য করে। আজকে প্রেসিডেন্টের একমাত্র মেয়ে জেসিকা মরগ্যানের জন্মদিন। এই দিনটিতে প্রেসিডেন্ট তার নিজ বাসভবনেই মেয়ের সাথে সারাদিন সময় কাটান। একটি উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে কাঠের তৈরি এই বাড়িটি প্রেসিডেন্ট হোরাস খুব শখ করে করিয়েছেন। তার স্ত্রীর মৃত্যুর আগে ভীষণ শখ ছিলো এমন একটি বাড়িতে থাকার। কিন্তু তার সেই শখ পূর্ণ না হলেও প্রেসিডেন্ট ঠিকই বাড়ির পেছনের লনে স্ত্রীর কবর দিয়েছেন। যেন তার স্ত্রীর মৃত আত্মা অন্তত এতটুকু শান্তিতে থাকতে পারে যে সে তার শখের বাড়িতেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন। সাগরের ঢেউ মুহূর্তে মুহূর্তে এসে আছড়ে পরে বাড়ির প্রাচীরের উপর। সাগরের সেই গর্জনে কোন কৃত্রিমতা নেই। বয়ে আনে অনাবিল প্রশান্তি। এমন একটি পরিবেশে জেসিকার অনাড়ম্বর এই জন্মদিন উদযাপিত হয়। তবে আমাকে অফিসিয়াল কারণে এই দিন প্রেসিডেন্টের সাথে থাকতেই হয়। জেসিকা তার পালক মেয়ে হলেও একেবারে নিজের আপন সন্তানের স্নেহেই তিনি মেয়েকে মানুষ করেছেন। দিয়েছেন নিজ পিতৃপরিচয়। জেসিকাকে তিনি কোথায় পেয়েছেন এই নিয়ে মানুষের মাঝে নানা ধরনের সমালোচনা থাকলেও তিনি সেসবের প্রতি বিন্দু মাত্র কর্ণপাত করেন না। কোন এক রহস্যের ধুম্রজাল যেন অনেকটা ইচ্ছে করেই মানুষের মাঝে তিনি রেখে দিয়েছেন তার এই পালক মেয়েটিকে ঘিরে। জেসিকার গায়ের রং নিগ্রোদের মতো কালো হলেও চেহারায় এক ধরনের আকর্ষণ রয়েছে। যে কেউ মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পরবে জেসিকার কৃষ্ণাঙ্গ এই রূপে তবে এটাকে প্রেম বলা যাবেনা। চোখের মনি লাল রঙের যেন সর্বদাই চোখ থেকে অগ্ন্যুৎপাতের মতো লাভা নির্গত হয়ে সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিতে চায়। কেক কাটার পর্ব শেষ হয়েছে। জেসিকা তার বাবার মুখে তুলে এক টুকরো কেক খাইয়ে দিচ্ছে। এমন সময় একটি সাদা রঙের জীপ এসে গেটের কাছে থামল। রক্ষীরা জীপটিকে ভেতরে আসার অনুমতি দিচ্ছেনা। হোরাস দূর থেকে রক্ষীদের ইশারা করলেন যেন গাড়িটিকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। জীপ থেকে একজন বেটে আকৃতির সুদর্শন চেহারার চাইনিজ ভদ্রলোক নেমে এসে প্রেসিডেন্টের সাথে হাত মেলালেন। প্রেসিডেন্ট আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ইনি হচ্ছেন ড. ইয়াং হো জিন। আমি তার সাথে হাত মেলালাম।

ড. ইয়াং হো জিন মানুষের মৃত্যুর দিনক্ষণ বের করার জন্য একটি বিশেষ ধরনের টাইম স্কেল তৈরি করেছেন। স্কেলটির গঠন অনেকটা থার্মোমিটারের মতোই। জিহবার নিচে এর একপ্রান্ত তিন মিনিট সময় নিয়ে ধরে রাখলেই স্কেলের মাঝের ডিজিটাল স্ক্রিনটি একেবারে মৃত্যুর তারিখ সহ সময় পর্যন্ত দেখিয়ে দেয়। যেহেতু মানুষের জ্বর হলে জিহবার মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নির্ণীত হয় এবং ঠাণ্ডা অথবা গরম এমনকি যে কোন ধরনের স্বাদ এই জিহবার মাধ্যমেই মানুষ গ্রহন করতে পারে সেই ধারনাকেই কাজে লাগিয়ে ড. ইয়াং গবেষণা করে আবিষ্কার করেছেন তার এই মৃত্যুর দিনক্ষণ মাপক থার্মোমিটারটি। থার্মোমিটারটির যে প্রান্তে পারদের পাত সংযুক্ত রয়েছে সেখানে জিহবার লালা মিশ্রিত হলেই কেবলমাত্র এটি মৃত্যুর সঠিক তারিখ ও সময় জানিয়ে দেয়। প্রেসিডেন্ট আমাকে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে বললেন যেখানে তিনি পুরো পৃথিবীবাসীর জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী এক নিয়ম প্রচলনের ঘোষণা দেবেন। নির্ধারিত দিনে প্রেসিডেন্ট হোরাস মরগ্যান পৃথিবীবাসীর প্রতি ঘোষণা করছেন। পুরো ঘোষণাটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে একযোগে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে পৃথিবী ব্যাপী।

প্রিয় পৃথিবীবাসী আমি প্রেসিডেন্ট হোরাস বলছি। আপনাদের সুখ দুঃখ বিবেচনা করে দেখার একমাত্র দায়িত্ব আমারই। এই পৃথিবীর জন্য যা কিছু কল্যাণকর এবং যা কিছু অকল্যাণকর তার সবকিছুর জন্য আমি সবসময় নিজেকে নিবেদিত রাখতে সচেষ্ট। আপনারা আজ তাকিয়ে দেখুন চারদিকে পুরো পৃথিবীটা যেন কবরস্থানে রূপ নিয়েছে। আমাদের স্বজনদের কবর আমরা দেখতে পাই বলেই অতীত স্মৃতিগুলো বারবার আমাদের অশ্রু সিক্ত করে। এমনকি এই কবরস্থানের দূষিত মাটির কারণে কিংবা শ্মশানের অগ্নিদগ্ধ ধোঁয়ায় পুরো পৃথিবীতে বিরাজ করে শোকের মাতম। আমি আমার স্ত্রীকে ভীষণ ভালোবাসতাম। আজও সেই ভালোবাসায় এতটুকু ভাটা পরেনি। তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ঘটনা নিশ্চয় এর মধ্যে আপনারা ভুলে যান নি। কতটা বীভৎসময় ছিলো সেই দিনগুলো। চারিদিকে শুধু মানুষের রক্তাক্ত লাশের উপর লাশ পরে থাকতে দেখেছি। পুরো পৃথিবীটা যেন কবর ভূমিতে পরিনত হয়েছিলো। প্রতিটা কবরের পাশে স্বজন হারা মানুষের আহাজারি আজও আমাকে ব্যথিত করে। নিশ্চয় আপনারাও এর ব্যতিক্রম নন। আমি সেই যুদ্ধে আমার প্রাণ প্রিয়া স্ত্রীকে হারিয়েছি। তার কবরের সামনে যখনই যাই আমি আর নিজেকে সংবরণ করতে পারিনা। মনে হয়, কেন ঈশ্বর আমাকেও এখনও কবরে শায়িত করছেন না। অন্তত আমার স্ত্রীর সাথে অনন্ত কাল সুখে কাটিয়ে দিতে পারতাম। জানি আপনাদের মৃত স্বজনদের প্রতিও আপনাদের হৃদয় তাড়নের অনুভূতিগুলো একই রকম। তাই আমি পৃথিবীতে আজ হতে আর কোন শোকের মাতম চাইনা। চাইনা শোক বিহবল স্মৃতির মায়ায় অশ্রু সিক্ত দুটি চোখ। তাই আপনাদের জন্য এখন থেকে মৃত্যু শুমারির প্রচলন শুরু করছি। প্রতি বছর আপনাদের মাঝে মৃত্যু শুমারির মাধ্যমে যাদের মৃত্যুর দিনক্ষণ একমাসের কম তালিকায় নিবন্ধিত হবে তাদেরকে মৃত্যুর কিছুকাল আগে নিয়ে গিয়ে অন্যান্য গ্রহে রেখে আসা হবে। সেখানেই আপনারা আপনাদের জীবনের শেষ সময়গুলো কাটাবেন। সেখানেই আপনাদের শেষকৃত্য পালিত হবে।

ঘোষণা পত্র পাঠের সময় প্রেসিডেন্টের মেয়েটি পাশেই দাড়িয়ে ছিলো। সাদা রঙের গাউন পরিহিত জেসিকার সরু শরীর আমাকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখলো পুরোটা সময় ধরে। বুকের নিচ থেকে তলপেট পর্যন্ত গাউনের অনাবৃত অংশ দিয়ে মেদহীন পেটে চোখ পরতেই নজরে এলো নাভিতে আঁকা পিরামিডের উল্কি। মুহূর্তেই অনেক দিনের জমে থাকা রহস্য নতুন করে মনের মাঝে জট পাকাতে শুরু করে দিলো। আমি মেয়েটির চোখে তৃপ্তির হাসি দেখতে পেলাম। মায়ানদের নিয়ে লেখা একটি বইতে পড়েছিলাম যে সাধারনত নরবলির সময় মায়ান পুরোহিত ও রাজাদের চোখে তৃপ্তির এমন হাসি ফুটে উঠত। ঈশ্বর তাদের সেই নরবলিতে সন্তুষ্ট হলে তাদের কল্যানের জন্য সূর্যকে অন্ধকার মেঘ হতে প্রচ্ছন্ন মুক্তি প্রদান করত। জেসিকার চোখের রক্তিম আভায় যেন মুহূর্তে সূর্য তার সেই হারানো অতীত ফিরে পেলো।

পুরো পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়েছে মৃত্যু শুমারি। ঘরে ঘরে যেয়ে প্রতিটা মানুষের মৃত্যুর দিন জেনে নেয়া হচ্ছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। একমাসের মধ্যে যাদের মৃত্যু হবে তাদেরকে তালিকার শীর্ষ সারিতে রাখা হয়েছে। তারপর ক্রমান্নয়ে রাখা হয়েছে বাকিদের নাম তারিখ ও সময়ের ক্রম অনুসারে। ঈশ্বরের বিধান না যায় খন্ডন। এই তালিকা থেকে শত চেষ্টা করেও আমার নিজের নামটি বাদ রাখতে পারিনি। শুধু মাত্র প্রেসিডেন্ট ও তার মেয়ে জেসিকার মৃত্যু টাইম স্কেলে দেখা হলোনা। প্রেসিডেন্ট যদিও স্বয়ং নিজেই আইন প্রণয়ন করেছেন কিন্তু তার জন্য সেই আইন মান্য করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অনেক কিছুতেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার জন্য ছাড় রয়েছে। রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। স্পেস শীপ হেক্সা-০৯ কিছুক্ষনের মাঝেই নেপচুন গ্রহের পথে ছেড়ে যাবার জন্য প্রস্তুত। যাত্রা পথে তালিকা অনুসারে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিন করে মানুষদের তুলে নিয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট হোরাস ছুটে আসছেন হেক্সা-০৯ এর দিকে। পেছনে রয়েছে তার মেয়ে জেসিকা। দুজনের হাটার মধ্যে ব্যাস্ততার ছাপ যেন এই স্পেস শীপ আজকে কিছুতেই মিস করা যাবেনা। জেসিকা তার বাবার কপালে চুমু খেয়ে স্পেস শীপে চড়ার জন্য এলিভেটরে উঠে দাঁড়াল। আমি সম্পূর্ণ বাক রুদ্ধ হয়ে পরলাম ঘটনার আকস্মিকতায়। এলিভেটরটি জেসিকাকে নিয়ে স্পেস শীপের ভেতর মিলিয়ে যেতেই প্রেসিডেন্ট হাত নেড়ে বিদায় জানালেন তার মেয়েকে। তার চোখে আমি এই প্রথমবারের মতো অশ্রু দেখতে পেলাম। নেপচুনের পথে আকাশে উড়ে চলেছে হেক্সা-০৯। আমি প্রেসিডেন্টের সাথে দাঁড়িয়ে আছি স্পেস শীপ কন্ট্রোল রুমের বিশাল স্ক্রীনের সামনে। মনিটরে হেক্সা-০৯ এর গতিপথের উপর নজর রাখা হচ্ছে। হেক্সা-০৯ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের আকাশে অবস্থান করছে। মনিটরে হঠাত লাল রঙের একটি সিগন্যাল দেখা দিলো, সেই সাথে একটি ম্যাসেজ, রাকিব ফ্রম বাংলাদেশ ইজ মিসিং, টাইমঃ ১৩.১৫.১৭ ( অর্থাৎ রাকিবের মৃত্যুর জন্য আর মাত্র সময় বাকি রয়েছে ১৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট ১৭ সেকেন্ড )

প্রেসিডেন্ট নির্দেশ করলেন যেন যেভাবেই হোক রাকিবকে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই খুঁজে বের করে স্পেস শীপে তুলে নেয়া হয়। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে রাকিবকে অনুসন্ধান করা শুরু হয়েছে। পুরোটা মনিটরে দেখা যাচ্ছে। যখন যেখানে জুম করার প্রয়োজন হচ্ছে জুম করে দেখা হচ্ছে। এক এক করে মনিটরে রাকিবের মৃত্যুর সেকেন্ড কমছে ১৩.১৫.১৬.......১২.০৯.০২.........১১.০৩.৫০........ রাকিবের অনুসন্ধান চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলার জন্য প্রেসিডেন্ট হোরাস বলতে লাগলেন তার পরিবারের কিছু অতীত স্মৃতির কথা। আমার মেয়ে জেসিকার পূর্ব পুরুষরা ছিলেন মিশরের আদিবাসী। তারা সেসময় মানুষ মারা যাওয়ার পর মৃত দেহের মমি করে রাখতেন। মৃত স্বজনদের স্মৃতি ধরে রাখার এক অভিনব ও অনন্য পন্থা তারা বের করেছিলেন। ফারাও রাজাদের মমি তৈরী করে পিরামিডে রাখা হতো। এসব পিরামিড আধ্যাত্মিক জায়গা হিসেবে স্বীকৃত। এগুলো হলো সেই পিরামিড যা নিয়ে খোড়াখুড়ি করা গবেষক, নিরাপত্তা পর্যবেহ্মকের অনেকেই কেউ দুর্ঘটনায়, কেউ অনারোগ্য কঠিন রোগ, কেউবা খুন হয়ে এমনকি আত্মহত্যা করে, কেউ হার্ট এ্যাটাকে মারা গিয়েছেন। এক কথায় অস্বাভাবিক মৃত্যু কেড়ে নিয়েছে তাঁদের জীবন। তেমনই এক ফারাও বংশোদ্ভূত এতিম একটি মেয়েকে আমি একদিন মিশরের একটি এতিমখানায় ভিজিট করতে গিয়ে পাই। দেখলাম একটি নিষ্পাপ ফুটফুটে শিশু মাঠের এক কোনায় বসে কাঁদছে। তখন সবে মাত্র আমার স্ত্রী মারা গেছেন। মনের ভেতরটায় কেমন যেন হাহাকার করে উঠল। আমি শিশুটিকে কোলে তুলে নিলাম। যেন সাক্ষাৎ একটি দেব শিশু আমার কোলে উঠেই হেসে দিলো। আমি সেই হাসির মাঝে লুকিয়ে থাকা মায়ার আকর্ষণে সেদিনের মতো আজও বিলীন হয়ে রয়েছি। বলতে বলতে প্রেসিডেন্ট হোরাস কেঁদে ফেললেন। একেবারে শিশু সুলভ সেই কান্না। আমি আমার স্ত্রীর কবর দেখে দেখে আজ বড় বেশি ক্লান্ত হয়ে পরেছি। এখন আমার এই একমাত্র মেয়ের কবর দেখা আমার পক্ষে আর সম্ভব হবেনা। ওর পূর্ব পুরুষদের মতো ওর জীবনেও অভিশাপ লেগেছে। ডাক্তাররা বলেছেন ওর শরীরে অজ্ঞাত এক ভাইরাস ধরা পরেছে। যা তাদের পক্ষে নিরাময় করা সম্ভব নয়। যেটা ক্রমাগত ওর জীবনকে মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মনিটরে রাকিবের সন্ধান পাওয়া গেছে। রাকিব তার স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে একটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। প্রেসিডেন্ট হোরাস মনিটরে রাকিবের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পূর্বের কিছু অতীত দেখতে চাইলেন। রাকিবের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছুদিন পূর্বের স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত অতীত ভিডিও মনিটরে রিউন্ড করা হলো।

লিটনের দোকানে বসে রাকিব চা খাচ্ছে। এই ভর দুপুরে তার তেমন কোন কাজ নেই। আসলে তার কখনওই কোন কাজ থাকেনা। বেকার বলে যে বাসা ছেড়ে দোকানে বসে এক কাপ চা সে খেতে পারবেনা তেমন কোন সংবিধান নিশ্চয় নেই। আর থাকলেও আমরা আইন ভাঙ্গতে বিশেষ ভাবে পারদর্শী। একটি পুলিশের জীপ এসে থামল। জীপ থেকে নেমে এলেন ওসি নিয়ামত আলী। নিয়ামত আলী লোকটি ভীষণ ভালো একজন মানুষ। পুলিশ হলেও এলাকাতে তার বেশ সুনাম রয়েছে। অন্তত যতবার রাকিবকে থানার হাজতে নিয়ে আঁটকে রেখেছেন কিন্তু পরদিন ঠিকই আবার ছেড়ে দিয়েছেন। এর জন্য কখনও তিনি রাকিবের কাছ থেকে ঘুষ পর্যন্ত নেননি। আজকেও হয়ত রাকিবকে ধরে নিয়ে যাবেন।

-কি রাকিব লিটনের দোকানের চায়ে কি মধু আছে নাকি ?
-জী না ওসি সাহেব। এই সময়টাতে আমি ঘুম থেকে উঠি। আর যেহেতু ম্যাসে থাকা হয় তাই চাইলেই এই দুপুর বেলা চা করে খেতে পারব তার কোন নিশ্চয়তা নেই বলেই আমি দোকানে এসে চা খাই।
-তা চায়ের সাথে আজকে অন্য কিছু খাওনি? এই লিটন রাকিব সাহেবের চায়ে কি আজকে চিনির পরিমান বাড়িয়ে দিছিস নাকিরে হারামজাদা ?
-জী না স্যার। রাকিব ভাই এখন আর দুধ চা খান না। দেখেন উনি রং চা খাচ্ছেন।
-ভালো বেশ ভালো। রং চা সাস্থের জন্য ভালো উপকারী। শুনেছি রং চা খেলে নাকি ক্যান্সার হবার ভয় থাকেনা।

নিয়ামত সাহেব ফিরে গিয়ে জীপে উঠলেন। রাকিবকে হাতে ইশারা করলেন। রাকিব উঠে গিয়ে তার কাছে গেলো। ওসি তাকে কানে কানে বললেন আজকে সন্ধায় যেন একবার সে থানায় যায়। রাকিব মাথা নেড়ে থানায় যাবার অঙ্গীকার করে ফেলল সাথে সাথে।

নিয়ামত আলী সাহেবের টেবিলের সামনে একটি মেয়ে বসে আছে। রাকিবকে দেখে তিনি বসতে বললেন। রাকিব মেয়েটির পাশে একটি চেয়ার টেনে নিয়ে বসল।

-দেখত রাকিব এই মেয়েটিকে চিনতে পার নাকি ?
-জী না। আমি চিনব কেমন করে ?
-হুম ! তোমার চেনার কথাও না।
-তাহলে আমার কাছে জানতে চাইছেন কেন ?
-কিন্তু মেয়েটি যে বলল সে তোমাকে চেনে ?

মেয়েটি রাকিবের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। মুখে কোন কথা নেই। ঠোঁট দুটি বাঁকিয়ে শুধু কাঁদছে। তার কান্না যেন বলতে চাইছে সে রাকিবকে চেনে।

-আমিত কিছুই বুঝতে পারছিনা স্যার। একটু পরিষ্কার করে বলবেন কি আসলে ঘটনাটা কি ?
-বরং তুমি নিজেই জিজ্ঞাস করে দেখনা ?

মেয়েটির নাম রোকেয়া। রাকিবের গ্রামের মেয়ে। মেয়েটির দাবি সে নাকি তার স্বামী। বিয়ের একবছরের মাথায় তাকে ছেড়ে তার স্বামী শহরে চলে এসেছিলো কাজের কথা বলে। কিন্তু তারপর আর গ্রামে তার কাছে ফিরে যায়নি। কখনও কোন যোগাযোগও আর রাখেনি। কি ভয়ংকর কাহিনী। ওসি সাহেবকে নানা ভাবে বুঝিয়েও কোন লাভ হলোনা। মেয়েটি বিয়ের কাবিন নামা পর্যন্ত দেখিয়ে প্রমান করে দিলো যে রাকিবই তার স্বামী। যাই হোক বিয়ে না করেই ফ্রিতে বউ পেয়ে ওসি সাহেবের আদেশে রাকিব তার বউকে ঘরে তুলে নিতে বাধ্য হলো। ম্যাসে বউ নিয়ে ফিরেছে। পাশের ঘর থেকে সেলিম দৌড়ে এলো। তার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। যেন সে বিরাট এক পুণ্যের কাজ করে ফেলেছে। সে হৈ চৈ বাধিয়ে দিলো পুরো ম্যাসের ভেতর। মুহূর্তের ভেতর রাতে খিচুড়ির আয়োজন করে ফেলা হলো। ম্যাসে সাধারনত বিশেষ কোন দিন ছাড়া কদাচিৎ খিচুড়ির আয়োজন করা হয়। সাধারনত আলু ভর্তা আর ভাত খেয়েই তাদের দিন চলে যায়। সেখানে খিচুড়ির আয়োজন তাদের জন্য একরকম বিলাসিতা। তাও যদি আবার সাথে গরুর গোশতের ব্যাবস্থা করা যায় তাহলেত আর কোন কথাই নেই। খেয়ে দেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আয়োজন করে শুরু হয়ে যায় তাস খেলা। রাতভর চলে সেই তাস খেলা। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। খিচুড়ি খেয়ে তার আজকে থানায় পাওয়া পুরাতন বিয়ে করা বউয়ের সাথে জীবনের প্রথম মধুচন্দ্রিমার রাত কাটাতে হবে।

রাকিব ইচ্ছে করেই তার বউকে জড়িয়ে ধরতে চাইল। কিন্তু রোকেয়া তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। বলল কোন কথা না বলে সে যেন চুপচাপ মেঝেতে শুয়ে পরে আর সে তার বিছানায় ঘুমাবে। রাকিব নেহায়েত ভদ্র লোকের মত মেঝেতে শুয়ে পরল। রাত যত গভীর হয় তার ভেতর টেনশন তত বাড়তে থাকে। একবার সে ভাবল ব্যাপারটা নিয়ে সেলিমের সাথে কথা বললে কেমন হয় ! হয়ত সে তাকে একটি ভালো সমাধান দিতে পারবে। আবার পরক্ষনেই মনে হলো কিন্তু লাভ কি মেয়েটির কাছে বিয়ের কাবিন নামা রয়েছে। সেলিম তাহলে আর তাকে বিশ্বাস নাও করতে পারে। কিন্তু সে ভাবছে মেয়েটি এই ভুয়া কাবিন নামা পেলো কোথা হতে ? আবার তার সাক্ষর হুবাহু মিল রয়েছে। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। যদিও সে জানে এই স্বাক্ষর তার করা নয় কিন্তু মিথ্যা প্রমান করার মতো তার কাছে এই মুহূর্তে যথেষ্ট কোন প্রমান নেই। ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে এলো। কিন্তু সমস্যা একটা হলো এখন থেকে ঘরে আর হিরোইনের প্যাকেট রাখা যাবেনা। এতদিন মহা সুখেই লোকচক্ষুর আড়ালে অনেক কিছুই করে আসছিলো সে। কিন্তু বউ নামক এই ঝামেলা জোটার পর থেকে তার ব্যবসায় ভাটা পরতে শুরু করবে। সকালে উঠে বাইরে বেরুচ্ছে। এমন সময় রোকেয়া দরজার কাছে এসে তাকে বাইরে যেতে বাঁধা দিলো।

-কোথায় যাচ্ছেন ?
-কোথায় যাচ্ছি মানে কাজে বেরুচ্ছি। আমি কাজ না করলে তুই খাবি কি ?
-কি কাজে যাচ্ছেন ?
-আমি যে কাজ করি সেই কাজেই যাচ্ছি ।
-কি কাজ করেন আপনি?
-আমি সি এন জি চালাই। সি এন জির ড্রাইভার।

বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে পরল রাকিব। আজকে একবার বড় ভাইয়ের আড্ডায় যাবে সে। তার কাছে পুরো বিষয়টি খুলে বলবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। একমাত্র তিনিই তাকে বাঁচাতে পারেন এই সমস্যা থেকে। বড় ভাই মাদুর বিছিয়ে উদোম শরীরে মেঝেতে শুয়ে আছেন উপুর হয়ে। তার পিঠে তেল মালিশ করছে সুলতানা। সুলতানা বড় ভাইয়ের রক্ষিতা। ভীষণ ভালো একটি মেয়ে। কিন্তু একটাই সমস্যা মেয়েটি বোবা। এই নিয়ে তার ভেতর অবশ্য কোন কষ্ট বোধ নেই। বড় ভাই তাকে বেশ যত্নেই রেখেছেন। বড় ভাই রাকিবের দিকে তাকিয়ে হাসছেন। এই হাসির রহস্য ভীষণ ভয়ংকর। যখনই তিনি এভাবে হাসেন বুঝে নিতে হবে যার দিকে তাকিয়ে হাসছেন তার জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাহলে কি রাকিবেরও শেষ সময় ঘনিয়ে এলো !

-বড় ভাই একটা ঝামেলায় পরে গেছি।
-হুম! আমি জানি। মেয়েটি কে তালাক দিয়ে দে। তাহলেই ঝামেলা চুকে যাবে।
-কিন্তু মুখে বললেই কি আর সে মেনে নেবে। আবার দেখা যাবে থানা পুলিশের কাছে দৌড়াচ্ছে।
-তুইও দৌড়া তবে আদালতে। কি বোকার মতো এখনও দাড়িয়ে আছিস কেন ?
-কিন্তু আমারত কোন উকিলের সাথে পরিচয় নেই।
-আমি ফোন করে দিচ্ছি। তুই বসে থাক। একটু পর উকিল এলে সেই তোর সব ব্যবস্থা করে দেবে।

রাকিব যেন নিশ্বাস ছেড়ে বাঁচল। এই সামান্য বুদ্ধিটাই তার মাথায় এলোনা ! তবে বড় ভাই তার সব খবরই রাখেন। কোন কিছুই তার কাছে গোপন থাকেনা। আর তার অজ্ঞাতে থাকলেই বা কেমন করে তিনি তার ব্যবসা চালাবেন। ঘণ্টা খানেকের ভেতর উকিল চলে এলেন। তিনি রাকিবকে একটি তালাক নামা দিয়ে বললেন যেন সে যে কোন উপায় তাতে তার বউয়ের একটি স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। আর একবার স্বাক্ষর নিয়ে নিতেই পারলেই হয়ে যাবে তার সকল সমস্যার সমাধান। রাকিব খুশি মনে কাগজটি পকেটে ভরে ম্যাসে ফিরছে।

প্রচন্ড গরম পরেছে। রাস্তায় নেমে এসেই রাকিব সেটা টের পেলো। রাস্তার পাশেই একটি ভ্যান গাড়িতে করে লেবুর শরবত বিক্রি হচ্ছে। লেবুর শরবত পরিবেশনের প্রক্রিয়াটা পছন্দ হবার মতো। একটি ফিল্টারের ভেতরের উপরের অংশে বরফ রাখা হয়েছে। নিচের অংশে পানি। কেউ চাইলেই গ্লাসে ফিল্টার থেকে ঠাণ্ডা পানি ভরে তাতে শুধু লেবু আর চিনি মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। লেবু চেপার মেশিনটি কাঠের তৈরি। এই আধুনিক যুগেও এমন আদিকেলে পন্থা দেখে রাকিব কিছুটা অবাক হলো। কি চমৎকার লেবু চেপার মেশিন বানিয়ে ফেলেছে। অথচ তার মাথায় সামান্য বুদ্ধিটা এলোনা কি করে একটি ভুয়া বউয়ের কাছ থেকে মুক্তি সে পেতে পারে। রাকিব দাড়িয়ে পরলো শরবত খাওয়ার জন্য।

দাড়িয়ে দাড়িয়ে সে শরবত খাচ্ছে। এর মধ্যে একটি মোটর সাইকেলে করে একটি ছেলে এসে তার পাশে দাঁড়াল। ছেলেটি হেলমেট পরে থাকার কারণে রাকিব তাকে চিনতে পারেনি। রাকিবকে কিছু ভাবার অবকাশ না দিয়েই তার বুকে গুলি করে মুহূর্তে মোটর সাইকেলে করে অনেক দূরে মিলিয়ে গেলো ছেলেটি। রাকিবের চোখের সামনে সব কিছু কেমন যেন সাদা রঙের হয়ে আসতে শুরু করল। তারপর আর কিছুই তার মনে নেই। শুধু মনে হচ্ছে সে পরে যাচ্ছে মাটিতে। আর তার কানে ধীরে ধীরে মানুষজনের এলোমেলো কথা ভেসে আসছে। যখন জ্ঞান ফিরলো চোখ খুলে সে নিজেকে দেখতে পেলো একটি হাসপাতালের বিছানায় সে শুয়ে আছে। তার মাথার কাছে বসে তার বউ কাঁদছে। রাকিবের চোখ খোলা দেখতে পেয়ে তার বউ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল পরম যত্ন নিয়ে। রোকেয়ার অশ্রু ভরা চোখে তার জন্য যে ভালোবাসা সে দেখতে পেলো তা কোন পুরুষ মানুষ হিমালয় পর্বতের চুড়ায় হাজার বার সাধনা করলে তবেই পাবে। রাকিব তার বউয়ের কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বলল, তোর বিবিধ ব্যস্ততা থেকে খানিকটা সময় জমিয়ে রাখিস। মনে রাখিস একদিন তোর সাথে রোদে ভিজবো। আমি কি সেদিনও তোর বকবক শুনেই কাটাবো ? অসহ্য তোর বকবকানি ! তারপরও তুই তোর মতোই থাকিস। তোর মতো মেয়েরা আছে বলেই এখনো রোদ ওঠে, একটা রিক্সা অপেক্ষা করে, একজন ফুচকাওয়ালা অপেক্ষা করে, একটা ছটফটে স্ত্রী তার স্বামীর পাশে বসে অপেক্ষা করে জঘন্য স্বাদের চা খাবার জন্য। শোন ভালো থাকিস নইলে তো জানিস মরে গিয়েও ভূত হয়ে ফিরে আসবে কেউ। বলবে, মনে রাখিস। তুই বলবি , মনেই রাখি। তুই মাঝে মাঝে বুদ্ধিমানের মতোই কথা বলিস, ভালো থাকিস, ভালো থাকতে হয় নইলে রোদগুলো মন খারাপ করে বৃষ্টি হয়ে যায়। আমার কবরে একসময় তুই এসে কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে দাড়িয়ে থাকবি। আমি পরম শান্তিতে সেদিন ঘুমাবো আমার শান্তির শেষ স্বপ্ন কবর ভূমিতে।

মনিটরে দেখা যাচ্ছে হাসপাতালের কাছেই স্পেস শীপ হেক্সা-০৯ রাকিবের জন্য অপেক্ষা করছে। ভেতরের মৃত্যু গ্রহের গন্তব্যের যাত্রীরা আর এক মুহূর্ত দেরী করতে চাইছেননা। প্রেসিডেন্ট হোরাস কাঁদছেন। তিনি চিৎকার করে তার স্ত্রী ফেদেরাকে একবার ডাকলেন। এক এক করে মনিটরে রাকিবের মৃত্যুর সেকেন্ড কমছে ০০.০৫.৫৫.........০০.০২.০১..........০০.০০.০৭..........



নিশ্বাসে তোমার শরীরের বিষাক্ত গন্ধ,
নিপীড়িত মনে চন্দ্রালোকের অলীক গল্প,
বেহুলার বাসর আজও খোঁজে আমার রন্ধ্র রন্ধ্র;
সূর্য কোষে তারপর নিশ্চুপ ঘুম ক্লান্ত ক্লান্ত করে,
এই ঘুম চেয়েছিলাম বুঝি !
স্বর্গের চাদর শরীরে জড়ায়ে।

নোনা স্রোতে স্নান শেষে
বালুর মতো ঝর ঝরে মন নিয়ে,
খুঁজেছি তোমাকে ঈশ্বর !
পরম যতনে গোবরে লেপেছি আমার ঘরের মেঝে,
দরজার চৌকাঠে জোড়া তালি দিয়ে চলছে;
বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টাটুকু,
আঁকড়ে ধরে থাকা আকাশের তারাদের মিছিলেও সূর্য হাসে,
শুধু আমি আজও জ্যামিতিক নিয়মে;
উপপাদ্য প্রমাণের নিমিত্তে ঘুমন্ত।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৪৪
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×