somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কান্ডারি অথর্ব
আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূণ্যতা থেকে শূণ্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

নীলাঞ্জনা...

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





বাঙালি স্বভাবতই আড্ডা প্রিয় জাতি। বাসা, অফিস, আদালত, টং দোকান এমনকি ফেসবুক কিংবা ব্লগ যেখানেই সুযোগ পাওয়া যায়; কয়েকজন একসঙ্গে হলেই শুরু হয়ে যায় আড্ডা দেয়া। বন্ধু মহলে আড্ডাবাজ হিসেবে আমারও বেশ সুনাম আছে। আমাদের এক বন্ধু কবির। একটা সময়ছিলো যখন সকাল হলেই ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা না করেই ওর বাসায় গিয়ে কার্ড খেলা শুরু করতাম। সেই কার্ড খেলা চলত সন্ধ্যা পর্যন্ত। মাঝে মাঝে রাতেও থাকা হতো ওর বাসায় কার্ড খেলতে খেলতে। তবে খালাম্মার হাতের রান্নার কোন তুলনা ছিলোনা। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে রাতের খাবারটা খাওয়াতে পর্যন্ত খালাম্মা কোন কার্পণ্যতা করতেন না। এমনই একদিন কবিরের বাসায় বসে কার্ড খেলছি। হঠাৎ কবির বলল দোস্ত তোরা আজ চলে যা। আমার আজকে পরীক্ষা আছে। মেজাজটা প্রথমে প্রচন্ড রকম খারাপ হলো কিন্তু কি আর করার আমরা বের হয়ে এলাম। বের হয়ে মোস্তফা মামার টং দোকানে এলাম আড্ডা দিতে।

মোস্তফা মামার দোকানটা ছিলো আমাদের আড্ডার স্পট। মামার কথা বিশেষ ভাবে না বললেই নয়। মামা ছিলেন আমাদের মতন বেকারদের জন্য অভিবাবকের মতো। মাসের পর মাস বাকী খেলেও রাগ করতেন না। বরং মাঝে মাঝে নগদ টাকা ধার চাইলেও দিয়ে দিতেন। মামার সাথে আসলে আমাদের সম্পর্কটা ছিলো নিজের আপন মামার মতো সম্পর্ক। কোথাও ঘুরতে গেলে কিংবা বাসায় কোন অনুষ্ঠান হলে মামা ছাড়া আমরা কোন কিছুই কল্পনা করতে পারতাম না। তাই বলে মামার টাকা অবশ্য বাকী রাখতাম না। হাতে টাকা এলেই পরিশোধ করে দিতাম। মামার বিয়ের সব খরচ আমরা বন্ধুরা মিলেই দিয়েছিলাম। যাই হোক মোস্তফা মামার দোকানে আড্ডা দিতে দিতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। শীতের সন্ধ্যা। হঠাৎ সোহেল বলল দোস্ত চল আজকে রাতে চট্টগ্রাম যাই। সোহেলের প্রস্তাবে একমাত্র আমি ছাড়া আর কেউ রাজী হলোনা। কিন্তু আমার আর সোহেলের কাছে কোন টাকা নেই। শেষে মোস্তফা মামার কাছ থেকে এক প্যাকেট সিগারেট আর নগদ পাঁচশত টাকা নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম কমলাপুর রেলস্টেশনের পথে। গন্তব্য চট্টগ্রাম।

টিকেট না কেটেই ট্রেনে উঠে বসলাম। ঘন্টা দুই পর টিটি এলো টিকেট চেক করতে। সোহেল আমাকে দেখিয়ে বলল ওর কাছে টিকেট। আমি পুরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। আমি বললাম আরে ব্যাটা টিকেট আমার কাছে কোথা থেকে আসবে। টিকেট তোর কাছে দিয়েছি দেখ। সোহেল কিছুক্ষণ পকেট হাতিয়ে বলে আশ্চর্য তাহলে টিকেট গেল কোথায় ! পাচ্ছিনা কেন? আমি বললাম তোর মানিব্যাগে রাখছিস দেখ। সোহেল পকেটে হাত দিয়ে বলে সর্বনাশ মানিব্যাগ নাই। পকেট মার কি নিয়ে গেল নাকি? যাই হোক আমাদের এমন অভিনয় শৈলী দেখে টিটির মনে বেশ দয়া হলো বলেই মনে হলো। সে আমাদের বলল ভাইজানেরা আপনারা কষ্ট করে ভৈরব নেমে যাইয়েন। পরের ট্রেনে আইসেন। এইটা আন্তঃনগর। এইটাতে করে আপনাদের নেয়া যাবেনা। আপনারা লোকালে করে আসেন প্লীজ। আমরাও অগ্যতা মান সন্মান হারাবার ভয়ে রাতের বেলায় ভৈরব নেমে গেলাম। ভাগ্য ভাল কিছুক্ষণ পর একটা লোকাল ট্রেন এলো। নতুবা ঘন অন্ধকারময় কুয়াশার রাতে দুইজনের জংশনে বসে মশা মারা ছাড়া আর কিছুই করার থাকতনা। এত রাতে আমাদের কোথাও যাওয়ার উপায়ও ভেবে পাওয়া যাচ্ছিলনা। যাই হোক শেষে সেটাতে করে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছলাম সকাল বেলা। কিন্তু ভাগ্যটা খারাপ ছিলো লোকাল ট্রেন হলেও সেখানে আমাদের দুইজনের চল্লিশ টাকার আক্কেল স্যালামী গুনতে হলো।

সকাল বেলা চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের একটি বেঞ্চ দখল করে বসে আছি আমরা দুই বন্ধু। শীতের সকালের সেই স্নিগ্ধতা ছিলো ভীষণ মুগ্ধ করার মতো। কুয়াশা আস্তে আস্তে সরে গিয়ে সকালের মিস্টি রোদ একটু একটু করে আমাদের গায়ে লাগছিলো। চারাদিকে মানুষের কোলাহল বাড়তে শুরু করেছে এর মধ্যেই। হকার আর কুলীদের পদচারনায় মুখরিত পুরো স্টেশন। পাশে চায়ের দোকানে কাপের ভেতর চামচ নাড়ানোর শব্দটা বেশ মূর্ছনা সৃষ্টি করছিলো। কেউ কেউ লাগেজ হাতে নিয়ে ছুটছে রিক্সা কিংবা বেবীর খোঁজে। এখন যেটা সি এন জি এক সময় সেটাই ছিলো বেবী নামে পরিচিত। মাঝে আরও একটা ট্রেন এসে থামল তার হুইসেল বাজিয়ে। মাইক থেকে শোনা যাচ্ছে ট্রেনের আগমনী বার্তা। আমি একটা সিগারেট টানছি। পাশে বসে সোহেল সারারাত অনিদ্রার কারণে ঝিমাচ্ছিলো। পাঁচ কি ছয় বছরের একটা মেয়ে এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলল স্যার দুইটা টাকা দিবেন? এই তীব্র শীতের মধ্যেও মেয়েটা খালি গায়ে স্টেশনে হেটে ভিক্ষা করছে দেখে খুব খারাপ লাগল। দশটা টাকা দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম তোমার শীত করেনা ? মেয়েটা মাথা নাড়ালো। সোহেলের গায়ে একটা শাল ছিলো; মেয়েটার হাতে দিয়ে বলল যা ভাগ! শালটা পেয়ে খালি পায়ের মেয়েটার দৌড়ে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সোহেল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল দোস্তরে আজকে খুব ইচ্ছা করছে নীলাকে একবার খুব কাছে পেতে। নীলা বলত আমার নাকি ভেতরে কোন ফিলিংস নেই। অথচ সে বুঝলনারে দোস্ত; এই সোহেল নীলাকে কত বেশি ভালোবাসে। দোস্তরে আমি ওরে কিছুতেই বুঝাতে পারিনি যে, আমি নীলাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকি কি করে রে দোস্ত! এই কথা শুধু আমার আল্লাহই জানে যে আমার বুকের ভেতর নীলার প্রতি কতটা মায়া, কতটা ফিলিংস কাজ করে। জানিস কাল নীলা আমাকে জানিয়ে দিয়েছে সে এখন অন্যকাউকে ভালোবাসে। আমাকে না।

সোহেলের কথা শুনে আমি প্রায় কেঁদেই দিলাম। কারণ আমারও বুকের ভেতরটায় যে হাহাকার একদিন সেটা আমিও বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলাম রেশমীকে। তারপর দুইজনে মিলে চা খেয়ে ঠিক করলাম পতেঙ্গা যাবো। শীতের সকালে স্টেশনে বসে চা খাওয়ার মাঝে যে অমৃত সুধার মতো একটা ভাব আছে সেটা টের পেলাম খুব। চা খেয়ে রওনা হোলাম পতেঙ্গার উদ্দেশ্যে। পুরো পতেঙ্গার বীচ ধরে হাটলাম কিছুক্ষণ দুইজনে। দূরে সাগরের উপর নোঙর ফেলে রাখা সারি সারি জাহাজগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো যেন কোন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী তার মনের মাধুরী মিশিয়ে অদ্ভুত সুন্দর ছবি এঁকে রেখেছে। একটা জিনিস খুব মজা পেলাম। আমাদের দুইজনের গায়ের রঙ হঠাত করেই লাল হয়ে গেল। পতেঙ্গা থেকে চলে আসার পরেও কিছুক্ষণ লাল ছিলো; তারপর আবার স্বাভাবিক হয়ে এলো। স্টেশনে এসে খোঁজ নিলাম নেক্সট ঢাকার ট্রেন কখন? ঘোরাঘুরি করার কারণে বেশ ক্ষুধার্ত দুই বন্ধু। স্টেশনের পাশেই ছাপড়া একটা হোটেল। হোটেলে ঢুকে গরম গরম পরোটা দিয়ে ডাল, সবজী আর ডিম ভাঁজি খেয়ে এক কাপ চায়ের সাথে সিগারেট ধরালাম। সোহেল অবশ্য চা খেয়ে একটা ভাল করে মশলা ওয়ালা পান মুখে দিয়ে সিগারেট ধরালো। তারপর আবার বীনা টিকেটে ট্রেনে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম দুই বন্ধু। সোহেল দরাজ কণ্ঠে গান ধরল নীলাঞ্জনা ঐ নীল নীল চোখে চেয়ে দেখনা.... সাথে আমিও সুর মেলালাম..... তোমার ঐ দুটি চোখে আমি হারিয়ে গেছি, আমি বোঝাতেত কিছুই পারি নাই....নীলাঞ্জনা.....



উৎসর্গঃ শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় ব্লগার গোঁফওয়ালা ভাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩২
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×