somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিচার্ড ডকিন্সের গড ডিলিউসান বইয়ের সমালোচনা পর্ব ২

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্বে আমরা দেখেছিলাম ঈশ্বরের সপক্ষে দেয়া যুক্তিগুলি খন্ডন করতে কিভাবে ডকিন্স ব্যর্থ হয়েছেন | এই পর্বে আমরা দেখব যে ঈশ্বরের বিপক্ষে দেয়া যুক্তিগুলি কতটা সত্যি বা মিথ্যা |

ঈশ্বরের বিপক্ষে একটিমাত্রই যুক্তি আছে যার নাম প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ | বইটিতে ডকিন্স একটা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছেন | সমস্যাটা হলো : কিভাবে এত জটিল দুনিয়া তৈরী হলো ? বিশ্বের বিভিন্ন বস্তুগুলির মধ্যেকার জটিল গড়ন কিভাবে তৈরী হলো ? তিনটি বিকল্প উত্তর আছে :

১] চান্স বা কাকতালীয়ভাবে বা হঠাত করে
২] ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বা ঈশ্বর
৩] প্রাকৃতিক নির্বাচন


ডকিন্স এবার উত্তরগুলি পরীক্ষা করে দেখছেন , কোনটি ঠিক উত্তর | চান্সকে উনি বাতিল করেছেন | আমিও বাতিল করলাম | এত বড় জটিল একটা জগত কাকতালীয় ভাবে বা হঠাত করে সৃষ্টি হয় না |

ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনকে ডকিন্স আক্রমন করেছেন তার দুটো যুক্তি নিয়ে | প্রথমটি হলো হ্রাসের অযোগ্য জটিলতা (ইররিদিউসিবল কমপ্লেক্সিটি )| দ্বিতীয়টি হলো ফাঁকের পুজো | আমি একে একে দুটোকেই দেখব |

ক] হ্রাসের অযোগ্য জটিলতা

মোদ্দা কথা হলো এই যে জগত আছে তার জটিলতা কখনো কমানো যায় না | এটা এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যে এর কোনো একটা অংশ সরিয়ে নিলে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটা ভেঙ্গে পড়ে | উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে | সম্পূর্ণ চোখ হয় দেখে নয়তো দেখে না | অর্ধেকটা চোখের কোনো দামই নেই | অর্থাত (সম্পূর্ণ)চোখের কোনো একটা অংশ অপারেসন করে বাদ দিলে (অর্ধেক)চোখটা অন্ধ হয়ে যায় | এই যুক্তিটা অবাস্তব | ডকিন্স দেখিয়েছেন যে ছানির রুগীরা চোখের একটি অংশ অর্থাত লেন্স সরিয়ে নিলেও মোটামুটি দেখতে পায় | অর্থাত চোখের যে জটিলতা তা কমানো যায় এবং চোখ কাজ করতে থাকে | সুতরাং জগতে হ্রাসের অযোগ্য জটিলতা বলে কিছু নেই |সব জটিলতায় কমানো যায় | সুতরাং জগত ঈশ্বরের সৃষ্ট নয় |

আমার মতে জগতে যে হ্রাসের অযোগ্য জটিলতা নেই : এইটাই ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রকৃষ্ট প্রমান | দেখুন ঈশ্বর কত বুদ্ধিমান | তিনি ভালো করেই জানেন যে ভবিষ্যতে যদি কখনো পরিস্থিতির চাপে তার সৃষ্টির কোনো অংশ ধ্বংস হয়ে যায় আর তিনি যদি জগতটাকে হ্রাসের অযোগ্য জটিল করে বানান , তাহলে বাকি জগতটা অকেজো হয়ে যাবে | অর্থাত ধ্বংস হয়ে যাবে | যে কোনো যন্ত্রবিদ জানেন যে যন্ত্র এমনভাবে বানানো উচিত যে ভবিষ্যতে তার কোনো একটা অংশ বাদ দিলেও যাতে সেই যন্ত্র কাজ করতে থাকে | ঈশ্বরও তা ভালো করে জানেন | তাই তিনি জগতটাকে এমনভাবে বানিয়েছেন যাতে একটা অংশ গেলেও বাকি অংশগুলি কাজ করে | তার এই তত্বের উপরেই আজ পুরো মেডিকেল সাইন্স টিকে আছে | হার্টের বাইপাস সার্জারী, কিডনি দান, অঙ্গদান ইত্যাদি সম্ভব হয়েছে শুধু ঈশ্বরের এই দূরদৃষ্টি তথা বুদ্ধিমত্তার জন্য | কল্পনা করুন যদি জগতটাকে ঈশ্বর হ্রাসের অযোগ্য জটিল করে বানাতেন, তাহলে একটা আঙ্গুল হানি ঘটলেই আমরা মারা যেতাম | ঈশ্বর দয়াময় | তিনি আমাদের তেমন করে বানাননি |

খ] ফাঁকের পুজো

এর অর্থ হলো বিজ্ঞান জগতের যে রহস্য বুঝতে পারে না তা ঈশ্বরে বানিয়েছে | এখানে এই না বোঝা রহস্যগুলিই হলো ফাঁক বা গ্যাপ | কিন্তু এই যুক্তিটিও দুর্বল | ডকিন্স দেখিয়েছেন যে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে এইসব ফাঁক বুজে গেল | অতএব ঈশ্বর নেই | আসলে ইশ্বরতত্ববাদিরা যুক্তিগুলি দিয়েছেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমানের জন্য কিন্তু যুক্তিগুলি উল্টো কাজটাই করছে |

এই যুক্তিটাকেও পরীক্ষা করে দেখা যাক | বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে আমরা জগতের রহস্য বুঝছি মানে ঈশ্বর নেই : কথাটা এমন শোনাচ্ছে যে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের অগ্রগতির সাথে সাথে আমরা মেশিনের নানা রহস্য বুঝছি মানে এই মেশিনের কোনো নির্মাতা নেই | শুনে কি খুব হাসি পাচ্ছে ? কিচ্ছু করার নেই বন্ধু | ডকিন্স এমনি যুক্তিসব দিয়েছেন |

এই জগতের অস্তিত্বই জগতের স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমান | এমনটা যদি না হয় তাহলে দেখান যে ডিজাইনার ছাড়াই ডিজাইন সম্ভব | একটা ক্রিকেট ব্যাটও বিনা ডিজাইনার আপনা আপনি তৈরী হয় না , জগতের কথা তো ছেড়েই দিন |

ফিরে আসি আমাদের মূল প্রশ্নে | এই জটিল জগত কিভাবে তৈরী হলো ? ডকিন্সের মতে প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার দ্বারা জগত সৃষ্টি হয়েছে | আচ্ছা এই কথাটাকে একটু পরীক্ষা করা যাক | ডকিন্সের মতে প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার যথেষ্ট প্রমান রয়েছে | প্রমানগুলি জীবাশ্ম থেকে জিন পর্যন্ত বিস্তৃত | তা থাকুক | কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়া একটা প্রক্রিয়া বা প্রসেস মাত্র | এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত থাকবে না নিশ্চই | আমরা দেখি যে বাস্তবে সমস্ত প্রসেসেরই একজন ডিজাইনার আছে | ইঞ্জিনিয়ারিং বা এমবিএ পড়ার সময় আমরা প্রসেস সম্বন্ধে অনেক কিছু পড়ি | অনেক প্রসেস আছে যেমন বিজনেস প্রসেস, ফুড প্রসেস ইত্যাদি এবং এদের আবিষ্কর্তা বা নির্মাতাও আছে |

প্রসেস ডিজাইনার, প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার , প্রসেস কনসালটেন্ট ইত্যাদি গালভরা পদ আর পদধারী লোকেদের অস্তিত্বই প্রমান করে যে প্রসেস বা প্রক্রিয়ার একজন নির্মাতা আছে | তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বা প্রসেসের একজন নির্মাতা বা ডিজাইনার কেন থাকবে না ? তাই যদি থাকে তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বা বিবর্তনবাদ ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের একটা অংশমাত্র | এ থেকে আলাদা বস্তু নয় |

কিন্তু এখানেও একটা সমস্যা আছে | কে ডিজাইনারকে ডিজাইন করলো ? এই প্রশ্ন অনেক সময়ই নাস্তিকেরা করে থাকেন | ডকিন্সও করেছেন | কিন্তু এই প্রশ্ন করলে একটা বিপদ আছে | সেটা হলো এই প্রশ্ন করলে অনন্ত পশ্চাদপসরণ (ইনফাইনাইট রিগ্রেশন) নামক দোষ হয় | এটি একটি লজিকাল ফ্যালাসি | এই দোষ অনুযায়ী ডিজাইনার আর ডিজাইন চলতেই থাকে তার শেষ হয় না | যে লজিকাল ফ্যালাসিতে একটি প্রতিজ্ঞা সিদ্ধ হবার জন্য অন্য প্রতিজ্ঞার ওপর নির্ভর করে তাকেই অনন্ত পশ্চাদপসরণ দোষ বলা যায় | এই দোষ থেকে মুক্ত হতে গেলে এই প্রশ্নটাই করা বন্ধ করে দিতে হবে | সুতরাং ডিজাইনার একজন আছে আর তার কোনো ডিজাইনার নেই : এইটি হলো লজিকাল ফ্যালাসিমুক্ত চিন্তা | ডকিন্স এখানেও ভুল করেছেন |

সুতরাং আমাদের প্রশ্নের উত্তর হলো : এই জটিল জগত একজন ডিজাইনার বানিয়েছে | সেই ডিজাইনারকে কেউ ডিজাইন করে নি | অর্থাত ঈশ্বর আছে |
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×