somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~ নির্মম বাস্তবতা ~

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই গল্পের সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক। তবে গল্পের পটভূমি আমার খুব কাছের এক বড় ভাইয়ের জীবন থেকে নেয়া। তার অনুমতি নিয়েই গল্পটা লিখেছি। তবে অন্য কারো সাথে আমার গল্পের ঘটনা মিলে গেলে আমি দায়ী নই।

ঢাকা ভার্সিটির বিবিএ ডিপার্টমেন্ট এর সব থেকে চঞ্চল প্রানবন্ত সদা হাস্যজ্জল ছেলেটির নাম আকাশ। হাসি ই যেন তার ট্রেডমার্ক। সব সময় মেতে থাকে বন্ধু আড্ডা আর গান নিয়ে। এমনিভাবে চলতে থাকে সময়। একদিন জাতীয় গ্রন্থাগারের সামনে আকাশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খেতে থাকে। এমন সময় তার চোখ আটকে যায় একটি মেয়ের দিকে। তার মনে হয় এমন সুন্দর মেয়ে সে এর আগে কখনো দেখেনি। কি মায়া ভরা তার চেহারা। আকাশ যেন কিছুক্ষনের জন্য হারিয়ে যায় অজানা কোন স্বপ্নালোকে। মেয়েটি যখন চলে যায় তখন আকাশের ধ্যান ভাঙে মোবাইলের রিং টোনে। সে হেঁটে হেঁটে চলে যায় টিএসসি’র দিকে। হাঁটছে আর মেয়েটির কথা ভাবছে। আচ্ছা কোন স্বপ্ন দেখলাম না তো? মেয়েটি কি করে? কোথায় থাকে? আরও কতো শত প্রশ্ন আকাশের মাথায় খেলা করে। সব সময় এখন কেবল তার মেয়েটির কথা মনে হতে থাকে। কেমন যেন উদাস হয়ে গেছে আকাশ আজকাল। বড় বেশী আনমনা। আকাশ ভাবে যদি কখনো সে আবার মেয়েটির দেখা পায় তবে সে মেয়েটির সাথে কথা বলবে। কারণ এর আগে কোন মেয়েকে দেখে আকাশের মন এরকম ছটফট করেনি।

কিছুদিন পর আকাশ আজিজ সুপার মার্কেটে যায় টি –শার্ট কিনতে। হঠাৎ ই সে দেখতে পায় সেদিনের সেই মেয়েটিকে। গায়ে সাদা আপ্রোন। তার মানে সে মেডিক্যালের স্টুডেন্ট। আকাশ ভাবে যে মেয়েটির কাছে গিয়ে তার নাম জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু তার ভয় করে আবার কেমন যেন ইচ্ছেও করে। অবশেষে সে ভয়কে জয় করে মেয়েটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এক্সকিউজ মি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?” মেয়েটি বলে, “জি, বলুন”।
আকাশ বলে, “আপনার নামটা জানতে পারি?” মেয়েটি খানিকটা অবাক হয়ে বলে, “আমার নাম বর্ষা। আপনার আর কিছু জিজ্ঞেস করার আছে?”।
আকাশ খানিকটা থমকে গিয়ে বলে, “জি না। ধন্যবাদ। আসি।”


একদিন আকাশ বাসে করে গুলশান যাচ্ছে তার রিলেটিভ এর বাসায়। বাসে বসে সে গান শুনছিল। হঠাৎ তার পাশে একটি মেয়ে বসে। সে মেয়েটির দিকে খেয়াল করে দেখে যে বর্ষা। বর্ষা এবার নিজে থেকেই অনেক কথা বলে। বর্ষা বলে, “আরে আপনি? কেমন আছেন? কোথায় যাচ্ছেন? আপনার বাসা কোথায়? কি করেন?” একসাথে এতগুলো প্রশ্ন শুনে আকাশ খানিকটা অবাক আর হতভম্ব হয়ে যায়। এরপর সে জিজ্ঞেস করে, “আপনার কোন প্রশ্নের উত্তরটা আগে দিবো?” বর্ষা খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায়। বলে আপনার যেটা খুশী। আকাশ বলে, “আমি ডিইউ এ বিবিএ তে পড়ছি। এখন গুলশানে আমার রিলেটিভ এর বাসায় যাচ্ছি”।
বর্ষা বলে, “ও আচ্ছা। আমার বাসা গুলশানে। আমি ঢাকা মেডিক্যালে পড়ি। ও আপনাকে তো আপনার নামটাই জিজ্ঞেস করা হয় নি। আপনার নাম কি?” আকাশ তার নাম বলে। এভাবে প্রায়ই তাদের দেখা হতে থাকে। আর ঘনিষ্ঠতাও বাড়তে থাকে। একসময় ঘনিষ্ঠতা ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়।

এভাবে বছরখানেক পার হয়ে যায়। আকাশ এখন বিবিএ শেষ করে কেবল ছোটো খাটো একটা চাকরি করছে। আর ওদিকে বর্ষাও ফাইনাল ইয়ারে উঠে গেছে। দুজনই দুজনার বাসায় তাদের সম্পর্কের কথা জানায়। সবাই মেনে নেয়। তাদের বিয়ের দিন তারিখও ঠিক হয়ে যায়। দুজনেই খুব খুশী। তাদের সম্পর্ক এখন স্থায়ী রূপ নিতে যাচ্ছে। শুরু হয় তাদের দিন অপেক্ষার গোনার।
আকাশের বাবা-মা এদিকে হজ্জে যাবেন তাই আগেই এঙ্গেজমেন্ট করে রেখে যায়। তারা হজ্জ করে এসে ছেলের বিয়ে দিবেন।

আকাশের বাবা হজ্জ থেকে ফিরে এসে ছেলের বিয়ের আয়োজন করতে থাকেন। হঠাৎ বর্ষা’র বাবা এসে বলেন যে তিনি তার মেয়ের বিয়ে দিবেন না। আকাশের বাবা অবাক হয়ে জানতে চাইলেন কেন? বর্ষা’র বাবা বলেন, “দেখুন আমার মেয়ে ডাক্তারি পড়ছে। আর আপনার ছেলে একটা সামান্য গ্র্যাজুয়েট। যে কটা টাকা বেতন পায় তাতে আমার মেয়ের হাত খরচের টাকাও হবে না। তাছাড়া আপনাদের ঢাকাতে কোন বাড়ি নেই, একটা গাড়ি পর্যন্ত নেই। আমি আমার রিলেটিভদের মুখ দেখাবো কি করে? কি বলবো তাদের? কোন ঘরে মেয়ে বিয়ে দিয়েছি? দেখুন আমায় মাফ করবেন, আমি মেয়ে দিবো না আপনার ছেলের সাথে।” মুখের উপর এতগুলো কথা শুনে আকাশের বাবা শুধু চুপ করে থাকে। কিছু বলে না। তিনি একজন সম্মানিত ব্যাক্তি। উচ্চবাচ্য কখনোই পছন্দ করেন না। শুধু সবাইকে জানিয়ে দেন যে এই বিয়ে হচ্ছে না। শুধু আকাশ না তার পুরো পরিবারের উপর একটা কালো মেঘ ছেয়ে আসে। আকাশ গিয়েছিল বর্ষা’র বাবা’র কাছে। কিন্তু শুধু অপমান ছাড়া কিছুই পায় নি আকাশ। এমন কি বর্ষা’র সাথে একটু দেখাও করতে দেন নি বর্ষা’র বাবা। কিছুদিন পর আকাশ শুনতে পায় যে বর্ষা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। আকাশ তখন নিজেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

সময় বয়ে চলে তার আপন গতিতে। আকাশ ফিরে আসে তার স্বাভাবিক জীবনে। তবে এখন সে আর চঞ্চল নেই সেই আগের মতো। কাজের মধ্যে ডুব দেয় সে। এমবিএ শেষ করে। একটা এমএনসি তে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে যোগ দেয়। এখন আকাশের একটা নিজের গার্মেন্টস ও আছে। তার মাসে ইনকাম এখন লাখ টাকার উপরে। ঢাকায় তার এখন নিজের ফ্ল্যাট আছে, গাড়িও আছে! তবুও আকাশের কি যেন একটা অপূর্ণতা এখনও রয়ে গেছে। তাই বুঝি এখনও মাঝে মাঝে তার গিটারে বেজে ওঠে একটি গানের সুর-

এখনও বিবর্ণ স্বপ্ন আমার...
নীরবে একে যায় ধূসর রঙে আমায়...
এখনও বিবর্ণ স্বপ্ন আমার...
নীরবে একে যায় ধূসর রঙে আমায়...
শূন্যতা...
বড় একা লাগে আমার...
কখনো কোন অলস ক্ষণে...
ছুটে চলা তবু কেন সব ভুলে ???


এই রকম বর্ষা'র বাবা'র কাছে আমার কিছু প্রশ্নঃ
০১. আপনার মেয়ে এখন কিভাবে ডাক্তার হবে?
০২. আপনার এতো টাকা দিয়ে এখন আপনি কি আপনার মেয়ের সুখ ফিরিয়ে দিতে পারবেন?
০৩. মাত্র কয়েক বছরের মাঝে সেই কয়েক হাজার টাকা বেতন পাওয়া আকাশরা কিন্তু কয়েক লাখ টাকা আয় করছে!
০৪. আপনি কি টাকা দিয়ে নিজের মেয়ের জীবনের মূল্য নির্ধারণ করবেন?


উৎসর্গঃ রাইসুল সাগর ভাইয়াকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:০৭
৭০টি মন্তব্য ৭০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×