এই গল্পের সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক। তবে অন্য কারো সাথে আমার গল্পের ঘটনা মিলে গেলে আমি একজন আরমান কোনভাবেই দায়ী নই।
সারাটা দিন অভি ঘুমিয়ে কাঁটালো। কিছুই ভালো লাগছে না তার। মন মেজাজ খুবই খারাপ। কাউকে কিছু বলতে পারে না। আসলে কাউকে কিছু বলারও নেই। কেউ এখন আর অভির কথা মনে রাখে না। না ওর পরিবার, না বন্ধু-বান্ধব না ভালোবাসার মানুষটি। কেউই অভিকে দেখতে পারে না। অভি যেই মানুষটির জন্য তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে সেই মানুষটির নাম ফারিয়া। ফারিয়াকে অভি ওর নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। ফারিয়াও অভিকে ভালোবাসে। না এখন আর ভালোবাসে বলা যাবে না। এখন বলতে হবে ভালোবাসতো।
অভি বুঝতে পারে না যদি ফারিয়া সত্যিই অভিকে ভালোবাসতো তবে কেন তাকে ছেড়ে চলে গেল? যার জন্য সে পুরো পৃথিবীর সঙ্গে যুদ্ধ করলো আর সেই কিনা তাকে ফেলে চলে গেলো? অভির মাথায় কিছুই ধরে না। আজকে অভির জন্মদিন। কিন্ত আজ সারাদিন সে সেলফোন অফ করে ঘুমিয়েছে। একা একটা রুমে কেউ পাশে নেই। অভির ঘুম ভাঙ্গে সন্ধ্যায়। কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। বুক চিরে কান্না বের হতে চায়। কিন্তু কান্নাও অভিকে ধোঁকা দেয়। কান্নাও আসে না। কি যে এক অসহ্য যন্ত্রণা।
রাস্তার ফুটপাত দিয়ে একা একা হেঁটে চলছে অভি। রাতে একা একা হাঁটার অভ্যাস অভির। ওর কেন জানি রাতের নগরীতে হেঁটে বেড়াতে খুব ভালো লাগে। নিয়ন বাতি, ফাঁকা রাস্তা, বেওয়ারিশ কুকুর সব মিলিয়ে খুব ভালো এক পরিবেশ হল রাতের নগরীর। আজকের সারাদিনের মন খারাপ একটু একটু করে কমতে শুরু করে মৃদু বাতাসে। বাতাসের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও পরে। এই পরিবেশে খুব গান গাইতে ইচ্ছে করে অভির। গুন গুন করে একা একাই হেরে গলায় সে গান ধরে –
আমি বৃষ্টি দেখেছি,
বৃষ্টির ছবি এঁকেছি,
আমি রোদে পুড়ে ঘুরে ঘুরে...
অনেক কেঁদেছি !
আমার আকাশ কুসুম স্বপ্ন-
দেখার খেলা থামেনি।
শুধু তুমি চলে যাবে,
আমি স্বপ্নেও ভাবিনি......
হঠাৎই অভির নাকে খুব মাতাল করা এক গন্ধ আসতে শুরু করে। গন্ধটার মধ্যে কেমন যেন একটা মাদকতা আছে। ঠিক যেমন রমণীর কেশের মতো মাতাল করা এক গন্ধ। প্রথম এই জিনিস খেয়েছিল হলের বড় ভাইদের সাথে কার্ড খেলার আড্ডায়। এরপর যখন বুঝতে পারে যে ওটা খারাপ জিনিস তখন থেকে অভি ওটা এড়িয়ে চলে। যদিও আজ ওটাই খুব টানছে অভিকে। সে একটা ঝুপড়ি দোকানের পেছনে চলে যায়, ওটার গন্ধে। পেছনে দেখে কয়েকজন একসাথে বসে টানছে সেই জিনিস। অভি চাইতেই তারাও এগিয়ে দেয়। অভির এই অপরিচিত মানুষগুলোকেই বড় বেশি আপন মনে হয়। কারো কাছে না চাইতেই ভালোবাসা পাওয়া যায় আর কারো কাছে চাইলেও পাওয়া যায় না। অভির মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগে। আরও কয়েক স্টিক টানতে না টানতেই খুব ঘুম পায়।
চিৎকার চেঁচামেচিতে অভির ঘুম ভাঙ্গে। রাস্তার উপর একটি বাস জ্বলছে। কিছু মানুষ বাস থেকে লাফিয়ে পড়ছে। কেউ বাসের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। পুলিশ কিছু মানুষকে ধাওয়া করছে। হঠাৎ অভির মনে পরে আগামিকাল হরতাল। সে দ্রুতপদে রুমের দিকে হাঁটা শুরু করে। হঠাৎই কে যেন তার কলার চেপে ধরে। এর সাথে আরও কিছু লাঠির আঘাতও তার গায়ে এসে পড়লো। পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে সে দেখতে পেল কয়েকজন পুলিশ তাকে পেটাচ্ছে আর একজন তাকে ধরে কাভারড ভ্যানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিল কিন্তু তার মুখ থেকে কোন প্রশ্ন না বেরিয়ে শুধু একটা গান বের হল-
কত দূর আর যাওয়ার আছে
কত পথ রয়েছে বাকি
কত মেঘ এই আকাশে ওড়ে
আজ রোদের হাসি কাল বৃষ্টি।।
তবুও এ পথ চলা স্বপ্নের নেশায়
এইযে বাজারে পসরা সাজানো
স্বপ্ন কিনতে।।
এই যে সুরম্ম কত অট্টালিকার গায়ে
জীবনের নানা প্রয়োজন স্বপ্নের তুলিতে
রাঙানো কথামালা, সেজে বিলাসী মোড়কে
বেচা হরেক স্বপ্নের আড়ালে
কেনা নিরব উপহাস।।
আমার কথাঃ
আমি খুব আলসে টাইপের একজন মানুষ। মাথায় অনেক গল্প ঘুরঘুর করে। কিন্তু টাইপ করতে কষ্ট হয় বলে শুধু কবিতাই লিখি। আর এই গল্পটা মূলত আমি দুজনের কথা মাথায় রেখে আর কিছু কল্পনা মিশিয়ে লিখেছি। একজন হলাম আমি আরেকজন হল স্বপনবাজ ভাই। ভাই কিছু মনে কইরেন না।
উৎসর্গঃ
একঝাক প্রিয় মানুষদেরঃ স্বপনবাজ , মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, না পারভীন, ফারজানা শিরিন, এরিস, আশিক মাসুম, অদ্বিতীয়া আমি, বনলতা মুনিয়া, ওয়াসিম আজাদ, সিয়ন খান, তারছেড়া লিমন ও বটবৃক্ষ~ কে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৫:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





