somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

What 1973 - Roman Polanski

২৩ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

’নাইফ ইন দ্য ওয়াটার’ যারা দেখেছেন, তারা নিশ্চয় দু’টো ব্যাপারে একমত হবেন, এক. ছবিটির গুণগত মান, দুই. এর নির্দেশকের ক্ষমতা সম্পর্কে। রোমান পোলানস্কির প্রথম ছবি আমি যেটা দেখি, সেটা ’নাইফ ইন দ্য ওয়াটার’, এবং ছবিটা দেখা শেষ হলে স্বভাবতই অস্থির হয়ে উঠেছিলাম উনার অন্যান্য ছবিগুলো দেখতে। যদিও জানি, একটা ভাল ছবি মানেই যে সেই নির্দেশকের অন্যান্য ছবিগুলোও ভাল, তেমন কোন কথা নেই। কিন্তু এ বিশ্বাসটা অন্তত ছিল, ’নাইফ ইন দ্য ওয়াটার’ যে বানাতে পারে, সে নিশ্চয় ততটা খারাপ ছবি বানাবেনা।

একটা সেন্ট পার্সেন্ট ইন্টারেস্টিং ও ইন্টারটেইনিং ছবি বলতে আমি যা বুঝি তা হল, পোলানস্কির ’হোয়াট’। ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, ’জেরার্দ ব্র্যাচ ও রোমান পোলানস্কি’র নিজের লেখায় ১১৪ মিনিটের এই ছবিটিকে ’হাস্যরসাত্নক’ ধরনের ছবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও, আমি একে শুধুমাত্র হাস্যরসাত্নক ধরনে আটকে না রেখে বলতে চাই, ছবিটি একাধারে পরীক্ষামূলক, সাইকাডেলিক, ইন্টেলেকচুয়াল এবং ইন্টারটেইনিং। এই ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হয়েছে, পুরো ছবি জুড়ে দর্শক হিসেবে আমি কোথাও না কোথাও একটা যোগসূত্র খুঁজতে চেষ্টা করছি, অথচ পাচ্ছিনা; বুঝতে চেষ্টা করছি কোথা থেকে কিভাবে এগুচ্ছে কাহিনী, চরিত্রগুলো, পারছিনা, ফলে ভেতরে ভেতরে বেশ অস্থির হয়ে পড়ছি, অথচ কোনভাবেই পারছিনা স্ক্রিনের সামনে থেকে সরতে। এমনকি ছবিটি যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং ’ন্যান্সি’ নামে ’সিডনি রোম’, ’অ্যালেক্স’ তথা ’মার্সেলো মাস্ট্রিয়ান্নি’-কে বিদায় জানাচ্ছে, এবং বলে চলেছে, ’আমাদের দেখা হয়েছিল একটা ছবিতে’, আর মার্সেলো মাস্ট্রিয়ান্নি চিল্লিয়ে সেটার নাম জানতে চাইলে, কেবলমাত্র তখুনি, যখন সিডনি রোম উত্তরটা দিল, দর্শক হিসেবে ফিরে আসি বাস্তবে এবং বুঝতে পারি, একটা ছবি দেখছিলাম এতক্ষণ, যার নাম ’হোয়াট’।

হয়ত পোলানস্কি চেয়েছিলেন ছবিটা সেভাবেই বানাতে, যেমন করে হঠাৎ একটা স্বপ্ন শুরু হয় এবং খাপছাড়াভাবে এগিয়ে যেতে থাকে। যার চরিত্রগুলো অবশ্যই অদ্ভুত এবং সামঞ্জস্যহীন। তাতে তিনি কতটা সফল হয়েছেন বা হননি, তার বিচার আমি করতে চাইনা, বরং দর্শক হিসেবে আপনারাই তা ভাল বলতে পারবেন। তবে আমার নিজস্ব মতানুযায়ী তৎকালীন ইটালিয়ান ছবিতে, যখন শুরু হয়েছে সব বেড়াজাল ভেঙে নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জোয়ার, ঠিক তখন এ ধরনের প্রয়াস এতটা সার্থকভাবে হয়ত রোমান পোলানস্কি-ই প্রথম করেছেন।

ছবিতে সিডনি রোম ’ন্যান্সি’ নামের একজন আমেরিকান তরুণী, যে ইটালি ঘুরতে এলে তিনজন লোক তাকে লিফট দেয় এবং পথিমধ্যে তাকে রেপ করার চেষ্টা করে। কিন্তু পারেনা, কারণ তিনজনের মধ্যে একজন লোক তার চশমা হারিয়ে ফেলে, এবং যখন অপর একজন সিডনি রোমকে রেপ করার জন্য প্যান্ট খুলে তার উপর চড়াও হয়, তখন চশমা হারানো লোকটি তার সঙ্গীর উলঙ্গ নিতম্বকে সিডনী রোমের ভেবে তার উপরে চড়াও হলে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়, আর সেই সুযোগে সিডনী রোম পালাতে সক্ষম হয়। কিছুদুর এগিয়েই সে অযাচিতভাবে একটা রজ্জুরেল পায়, যেটা তাকে তাহরেনিয়ান সমুদ্রের তীরবর্তী একটা সাদা ভিলাতে পৌঁছে দেয়। বস্তুত আমার কাছে মনে হয়েছে ছবিটিরি প্রকৃত শুরু তারপর থেকেই, এবং এরপর একের পর এক যেসব চরিত্র আমাদের সামনে হাজির হয়, তাকে স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না। যেন সবগুলো ঘটনা ও চরিত্র কেবল স্বপ্নেই সম্ভব, যার কোন মানে নেই, অদ্ভুত ও ব্যাখাহীন।

’মার্সেলো মাস্ট্রিয়ান্নি’-র সাথে আমার পরিচয় ফেলিনির মাধ্যমে এবং এই পুরুষ চরিত্রটি স্ক্রিনে আমার প্রিয় চরিত্রগুলোর অন্যতম। উনার অভিনয় দক্ষতায় আমি এত বেশি মুগ্ধ, যে মাঝে মাঝেই কনফিউজড হয়ে পড়ি, তিনি অভিনয় করছেন নাকি বাস্তবের একটা চরিত্র। আর সিডনি রোম, তাকে আমার স্বপ্নকন্যা বলেই মনে হয়েছে পুরো ছবি জুড়ে। এতসব খাপছাড়া চরিত্রের মধ্যে একমাত্র তাকেই মনে হয়েছে যতকিঞ্চিত স্বাভাবিক, যে চাইছে কি ঘটছে তা বুঝতে, অথচ পরক্ষণেই সে নিজেও হয়ে পড়ছে স্বপ্নটার অংশ, যেনবা সে নিজেই স্বপ্নটা দেখছে এবং দর্শক সারিতে ১১৪ মিনিট বসে থেকে আমরাও। ছবিটি সম্পর্কে সিডনি রোম নিজে একটা ইন্টারভিউয়ে বলেছেন, ’হোয়াট হল একটা ইরোটিক ড্রিম, আর ছবিটি সম্পর্কে আমি ঠিক এটাই ভাবি’।

ছবিতে বেশিরভাগ সময়েই সিডনি রোমকে দেখা গেছে আধা নগ্ন অবস্থায়। কিছু কিছু সময় সম্পূর্ণ নগ্ন। অথচ কখনো একটিবারের জন্যও মনে হয়নি বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। এমনকি মার্সেলোর সাথে মিলন দৃশ্য অথবা ছবির অন্য এক কাপলের মিলন দৃশ্য এমনভাবে পোলানস্কি চিত্রায়িত করেছেন, যে সেগুলো আমার কাছে সাধারণ খোলামেলা যৌনদৃশ্য থেকে অনেক বেশি শিল্পিত মনে হয়েছে। বিশেষ করে মার্সেলো ও সিডনির হাস্যকর যৌনমিলনপূর্বক বাঘ ও শিকারী খেলাটা দেখে ’বিটার মুন’ ছবিটার কথা মনে পড়লেও, এটা ছিল অবশ্যই আলাদা এবং আকর্ষণীয়।

ছবির প্রতিটি চরিত্র যেমন ’পাদ্রী’-যে সব কিছুকেই অগ্রহণযোগ্য দৃষ্টিতে দেখে থাকে, ’জার্মান নার্স’-কর্কশ দৃষ্টিতে হাতে একটা বই নিয়ে কি যেন পড়তে থাকে; ’লেসবিয়ান কাপল’-যারা রোজ সকালে নগ্ন শরীরে একসাথে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়; ’অন্য একজোড়া দম্পতি’-যারা কিছুক্ষণ পর পরই উন্মত্ত ও শব্দবহুল যৌন মিলনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, এমনকি ঘুমের মধ্যেও তাদের যৌনমিলনকালিন শব্দগুলো উচ্চারণ করতে থাকে; ’পিম্প’ নামের একজন যুবক-ঠিক বোঝা যায়না আসলেই সে কি করে; এবং পোলানস্কি নিজেই ’মাস্কিটো’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যার অ্যালেক্স তথা মার্সেলোর প্রতি কোনরুপ সহানুভূতি বা ভালবাসা অবশিষ্ট নেই, এবং এই নিয়ে সবসময় পিম্পের সাথে তর্ক করে। এছাড়া আছে বাড়ির কর্তা প্যারালাইজড বুড়ো, যে কিনা সিডনিকে দেখে আপ্লুত হয় এবং সিডনি তার ঘরে এলে তার কানে কানে তার যৌনাঙ্গ দেখার অনুরোধ জানায়। যদিও সিডনি তাতে আপত্তি জানায়, এবং শেষ পর্যন্ত বিছানায় উঠে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধকে তার যৌনাঙ্গ দেখালে তার মৃত্যু হয়। এতো গেল ছবির বাকি সব চরিত্রের কথা, কিন্তু ছবির সব চরিত্রের মধ্যে যে চরিত্রটা সবসময়ই দর্শককে কনফিউজড করবে সেটা হল অ্যালেক্স তথা মার্সেলোর চরিত্র, যাকে কিনা একাধারে পাগল, উন্মাদ, রোগাক্রান্ত, বিকৃত রুচির, এমনকি সুস্থ-স্বাভাবিক পর্যন্ত মনে হবে। তাছাড়া ছোটখাট ঘটনা নিয়ে সিডনির ডায়রি লেখাটাও বেশ আলাদা রকমের, যেনবা মাঝে মাঝেই সে তার দেখা স্বপ্নের নোট নিচ্ছে। ছবিটার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার পর আমার এই বিশ্বাস এখনও অটুট আছে, ’নাইফ ইন দ্য ওয়াটার’ যে বানায়, সেই কেবল পারে ’হোয়াট’এর মত এমন একটা ছবি বানাতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১:১৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×