উত্তরাঞ্চলের হাইওয়েতে একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ ফুড-ভিলেজ’ । ঢোকবার মুখেই একটি চলমান বইয়ের প্রদর্শণ ও বিপনন কেন্দ্র। যাত্রীদের মনোযোগ ও কিনবার সুবিধার জন্য বইগুলো ডিসপ্লে করা । এর থেকে কি বাংলাদেশের মানুষের বই পড়বার রুচি বা জনপ্রিয়তার কোন পরিমাপ সম্ভব?
সাজানো তিন তাকের পাঁচ সারি বইয়ের চার সারিই ধর্মীয় বই- লজ্জাতুননেছা বা পর্দার হুকুম,নকশে সোলেমানী,খাবনামা বা কবর কি পহেলি রাত জাতীয় সব বই । আরওআছে 'চটজলদি নেকি লাভের উপায় সম্বলিত ডিজিটাল এবাদতের বই ।
উপরের তাকের শেষের টিতে কোনমতে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলা সাহিত্যর কিছু চির জনপ্রিয়-শরৎ সমগ্র,রবীন্দ্রনাথ, এ দুয়ের মাঝে জীবনানন্দের শ্রেষ্ঠ কবিতাও জায়গা করে নিয়েছেন,এটা ভাল লাগলো। তার ভক্তরা শ্লাঘা বোধ করতে পারেন । এর মধ্যে ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিটা চলতি হিসেবের বাইরে । কেননা সেই কবেকার ‘চিতা বহ্নিমান’ এখনও মানুষ পড়ছে-নারীদের স্বামীভক্তি,সংসার ইত্যাদি- নিয়ে ফাল্গুনি আজও জনপ্রিয় হয়ত সব ধর্মের মানুষে কাছেই।
২য় তাকের ৩য় সারিতে শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনি,নজরুলের সঞ্চিতা । হুমায়ুনের জন্য একটি আলাদা তাকই আছে, তার সাথে সমরেশ নিমাইও আছেন। তবে একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নীহাররঞ্জন গুপ্ত একটিও নেই দেখে অবাক লাগলো । সেই সময় ট্রেনে হকারদের হাতে সিংহভাগ বইই থাকতো নীহারঞ্জন গুপ্তের ।
তবে বেশি আশ্চর্য লাগলো সুনীল-শীর্ষেন্দু নাই দেখে। বাসযাত্রীরা কি সুনীল পড়েন না ? অথবা হয়ত এতই পড়েন যে শেষ হয়ে গেছে, তাই কি ? জানিনা- এ ছাড়াও আছে স্বামী-স্ত্রীর মিলন,মেডিকেল সেক্স গাইড,ইংরেজি শিক্ষা বা হোমিও গাইড,সেরা জোকস আরও নানা কিসিমের বই ।
তবে প্রধানত: ভ্রমনকালে সাধারণত: জনপ্রিয় রহস্য রোমাঞ্চ ডিটেকটিভ বা ডাইজেস্ট জাতীয় বই ছাপিয়ে এই যে ধর্মীয় টোটকা জাতীয় বইয়ের পাঠপ্রিয়তা – এইটি কিসের লক্ষণ ? মজার ব্যপার এই যে মূল ধর্মের বইও কিন্তু নেই, যেমন -কোরান,বাইবেল বা গীতা বা ত্রিপিটক। এটা কি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল বই বাদ দিয়ে মেড-ইজি পড়ার ফল ?
এইটি ভাববার কথা । আমরা তবে কোথায় চলেছি