মেয়েটা বড্ড বেশি জ্বালাচ্ছে । একটুও কাজ করতে দিচ্ছেনা । সেই তখন থেকে টেবিলের উপর উঠে আপন মনে লাফাচ্ছে তো লাফাচ্ছেই । থামার কোন নাম নেই ।
- মামনি, পড়ে যাবে তো ।
- না বাবা, পলবো না ।
আবার লাফাচ্ছে । কোন কথাই শুনছেনা । বাচ্চা মানুষ করাটা যে ছেলে খেলা না, এবার আরিফ সেটা ভাল করেই বুঝতে পারছে । বিয়ের পর সংসারের সব কাজের সাথে সাথে এ দায়িত্বটাও মেয়েদের ঘাড়েই চাপে । কিন্তু, মিতু মারা যাবার পর এ দায়িত্বটা আরিফকেই নিতে হয়েছে । ভালবেসে বিয়ে করেছিল মিতুকে । একই সালে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে বিয়ে করে নেয় ওরা । আরিফ পড়ত আইন নিয়ে । আর মিতু সমাজবিজ্ঞান । পালিয়ে বিয়ে করলেও, পরে দু’পরিবারেই মেনে নেয় সবকিছু ।
মিতু প্রায়ই বলত আরিফকে, “যদি মরে যাই কখনও আমাদের বাবুটাকে ভাল করে মানুষ করবে তো ?”
এ কথার বিনিময়ে এত্তগুলা বকা শুনতে হতো মিতুকে । তারপর দুজন একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতো । তারপর কান্না থামিয়ে আরিফের চোখ মুছে দিত মিতু । মিতুর ভেজা চোখেই চুমু এঁকে দিত আরিফ ।
তারপর একদিন সত্যি সত্যিই আরিফকে ছেড়ে চলে যায় মিতু । যাবার আগে দিয়ে যায় মিষ্টি একটা বাবু । ডাক্তার বলেছিল, মা হতে গেলে মিতুর জীবন সংশয় হতে পারে । কি যেন একটা রোগ আছে ওর । নামটা মনে নেই । কিন্তু, মিতুর খুব ইচ্ছে, আরিফকে একটা বাবু গিফট করবে । আর নাম দেবে “বাটি” । আরিফকে ভালবেসে “বাবুই পাখি” ডাকতো মিতু । আর আরিফ মিতুকে “টিয়া” । দুইয়ে মিলে “বাটি” । নামটা মিতুরই ঠিক করা । খুব হেসেছিল দুজনে সেদিন ।
ফোনে কথা বলছিল একজোড়া পাখি । বাবুই-টিয়া।
- “এ্যাই বাবুই পাখি”
- “জ্বি টিয়া পাখি বলো”
- “আমাদের বাবুটার একটা সুন্দর নাম ঠিক করো তো” ।
- “উমম।। উমম। নাহ্ টিয়া, ভাল নাম মাথায় আসেছেনা তো” !
- “তোমার মাথায় দেখছি হারপিক দিয়ে ঠাসা ! হি হি হি।”
- “পাগলী একটা, তুমিই ঠিক করো না।
- “আমাদের বাবুর নাম হবে “বাটি” ।। বলেই ফিক করে হেসে দেয় মিতু । হাসলে মিতুর গালে টোল পড়ত । ফোনে কথা বলতে বলতেই মুগ্ধ হয়ে শুনতো আরিফ ঐ মিষ্টি হাসিটা । আর হারিয়ে যেতো মিতুর টোল পড়া গালে । কল্পনাতেই ছুয়ে দিতো মিতুকে ।
আরিফ এখন এ মিষ্টি বাবুটার মাঝেই খুঁজে ফেরে মিতুর স্মৃতিগুলোকে । মিতুর মতই দেখতে হয়েছে বাবুটা । ওদের “বাটি” । যে বাটিতে জমা হয়ে আছে আরিফ মিতুর সীমাহীন ভালবাসা ।
টেবিলের উপর লাফিয়েই চলেছে বাবুটা । কচি কচি পায়ের ছাপ লেগে যাচ্ছে টেবিলের গায়ে ।
সন্ধ্যা নেমে আসছে । কালো হয়ে যাচ্ছে চারপাশটা । পরিষ্কার হচ্ছে তারাগুলো ।
- মামনি, ছাদে যাবে ?
- তলো বাবা
সন্ধ্যা নামলেই মেয়েকে নিয়ে ছাদে যায় আরিফ । আকাশের বুকে জেগে ওঠা সবচে বড় তারাটার সন্ধানে ।
ছোট্ট বাবুটা অবাক বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে বাবার দিকে । তখনও হয়তো বাবা খুঁজে যাচ্ছে আকাশের সবচে বড় তারাটাকে ।
লেখাঃ আঁধারের আর্তনাদ
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:২৯