ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে . . . . . গানটা শোনেন নি এবং পছন্দ করেন না আমার জানামতে এমন একজন ব্যক্তিও নেই। ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে অথচ এই গানটি কোথাও শোনা যাচ্ছে না- এমনটা আর যাই হোক আমাদের দেশে কল্পনা করা যায় না। এখানে ঈদুল ফিতর মানেই ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। আচ্ছা, এই গানে কী বার্তা প্রদান করা হয়েছে? প্রকৃতপক্ষেই কি গানটি মুসলিমদের আনন্দের বার্তা বহন করে নাকি ভিন্ন কিছু? আমরা গানের কথাগুলো নিয়ে ভেবেছি কিনা? সম্ভবত ভাবি নি। কারণ এই গানটি উপলব্ধি করতে পারলে আমাদের আনন্দ করার কথা নয়, লজ্জায়-অনুতাপে মরে যাবার কথা। অথচ লজ্জার বালাই তো নেই-ই, বাস্তবতা হলো- এই গান না হলে যেন আমাদের আনন্দই জমে না। খুবই হাস্যকর! চলুন দেখে নেয়া যাক কী বলা হয়েছে-
রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে তুই বিলিয়ে দে , শোন আসমানী তাক্বিদ।
আমরা আসমানী তাগিদ পালন করতে গিয়ে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা রাখি তো? রাখলে ভালো, না রাখলে কিন্তু গোড়ায় গলদ। যাই হোক, পরেরটুকু দেখুন-
তোরা সোনা-দানা, বালাখানা সব রহে ইল্লিল্লাহ
দে যাকাত , মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
তার মানে এই জাতি মুর্দা? এ জাতির দেহে প্রাণ নেই? তাহলে মুর্দা মুসলিমের আবার ঈদ কীসের? আর কীসের অভাবেই বা জাতি প্রাণ হারাল? যাক সে কথা, পরেরটুকু দেখি
ও মন রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।
রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
কী বলা হচ্ছে বুঝতে পারছেন তো? অর্ধপৃথিবীতে ইসলামের বিজয়কেতন উড়ানো সম্ভব হযেছিল ইসলামের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী লাখ লাখ মুজাহিদের রক্তের বিনিময়ে, তারা জীবন দিয়েছে কিন্তু রণাঙ্গন ত্যাগ করে নি, সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম থেকে পিছপা হয় নি। কিন্তু আজ এই জাতির অবস্থান কোথায় তা কি বলে দিতে হবে? এরা শত শত বছর পূর্বেই যে রণাঙ্গন (ঈদগাহ) ছেড়ে দিয়েছে এবং তার পরিণতিতে কয়েকশ বছর ভিন জাতির দাসত্ব করেছে, আজ কপালে দাসত্বের রেখা বয়ে নিয়ে ও নির্লজ্ব হাস্যমুখে তারা নামাজ পড়তে চলেছে সেই রণাঙ্গনেই, সেই ঈদগাহেই যেখানে 'সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ'। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে? কাজী নজরুলের এই ভর্ৎসনা বোঝার ক্ষমতাও কি আমাদের নেই?
আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হাত মেলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরীদ।
রমযানের ঐ রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ।
প্রেম দিয়ে বিশ্ব-নিখিলকে জয় করবে কি, এই জাতির নিজেদের রক্তে আজ নিজেদেরই হাত রঞ্জিত। ছাগল দিয়ে আর যাই হোক হালচাষ হয় না
যারা জীবন ভরে রাখছে রোযা, নিত্য উপবাসী
সেই গরীব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ
রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।
একমাসের সওম পালন করে যারা হাফ ছেড়ে বাচল তাদের বোঝা উচিত যে, তাদেরই মতো অসংখ্য আদম সন্তান এই পৃথিবীতেই ছড়িয়ে আছে যাদের পেটে খাবার নেই, পরনে কাপড় নেই, মাথার উপর ছাদ নেই। এরা ইয়াতীম, এরা মিসকিন। তুমি এক মাসের এক বেলা খাবারের অভাবে এত কষ্ট পেয়েছে তাহলে এদের কথা ভাবো। এদের কষ্টও উপলব্ধি করার চেষ্টা কর। এই কাজ তোমার ঈমানী দায়িত্ব থেকে করতে হবে। যে সমাজে দারিদ্রতার কষাঘাতে মানুষকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়, যে সমাজে যাকাতের ভাগ নিতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে একই সাথে ২৭ জন দুস্থ মানুষকে জীবন হারাতে হয়, যে সমাজে ১৩ বছরের বাচ্চাকে নির্মমতার পরাকাষ্ঠা দর্শন করে অসহায়ভাবে প্রাণত্যাগ করতে হয়, যে সমাজে পিতার কাছে মেয়ে নিরাপদ নয়, মেয়ের কাছে পিতা নিরাপদ নয়, যে সমাজে বিনা অপরাধে নিরীহ নারী-শিশুকে যানবাহনের মধ্যে জীবন্ত দগ্ধ হতে হয়, সেই সমাজে ঈদ নয়, সংগ্রাম প্রয়োজন। মানুষের জন্য, মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া প্রয়োজন
এলো খুশির ঈদ এলো, এলো খুশির ঈদ। এলো খুশির ঈদ,
ও মন রমযানের ঐ রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ।
এত কিছুর পরও যদি খুশিতে বুদ হয়ে থাকতে পারেন থাকুন। নামাজ পড়ুন, রোজা রাখুন, ঈদ করুন, ভোগ-বিলাসিতায় মত্য থাকুন, সময় হলে মরে যান- মনুষ্যত্বহীন পশুর চেয়ে এর বেশি কিছু আশা করি না। আল্লাহ হাফেজ।
https://www.facebook.com/asadali.ht
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:২১