somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গানের অর্থ না বুঝলে যা হয়

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে . . . . . গানটা শোনেন নি এবং পছন্দ করেন না আমার জানামতে এমন একজন ব্যক্তিও নেই। ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে অথচ এই গানটি কোথাও শোনা যাচ্ছে না- এমনটা আর যাই হোক আমাদের দেশে কল্পনা করা যায় না। এখানে ঈদুল ফিতর মানেই ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। আচ্ছা, এই গানে কী বার্তা প্রদান করা হয়েছে? প্রকৃতপক্ষেই কি গানটি মুসলিমদের আনন্দের বার্তা বহন করে নাকি ভিন্ন কিছু? আমরা গানের কথাগুলো নিয়ে ভেবেছি কিনা? সম্ভবত ভাবি নি। কারণ এই গানটি উপলব্ধি করতে পারলে আমাদের আনন্দ করার কথা নয়, লজ্জায়-অনুতাপে মরে যাবার কথা। অথচ লজ্জার বালাই তো নেই-ই, বাস্তবতা হলো- এই গান না হলে যেন আমাদের আনন্দই জমে না। খুবই হাস্যকর! চলুন দেখে নেয়া যাক কী বলা হয়েছে-

রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে তুই বিলিয়ে দে , শোন আসমানী তাক্বিদ।
আমরা আসমানী তাগিদ পালন করতে গিয়ে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা রাখি তো? রাখলে ভালো, না রাখলে কিন্তু গোড়ায় গলদ। যাই হোক, পরেরটুকু দেখুন-

তোরা সোনা-দানা, বালাখানা সব রহে ইল্লিল্লাহ
দে যাকাত , মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
তার মানে এই জাতি মুর্দা? এ জাতির দেহে প্রাণ নেই? তাহলে মুর্দা মুসলিমের আবার ঈদ কীসের? আর কীসের অভাবেই বা জাতি প্রাণ হারাল? যাক সে কথা, পরেরটুকু দেখি

ও মন রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।
রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
কী বলা হচ্ছে বুঝতে পারছেন তো? অর্ধপৃথিবীতে ইসলামের বিজয়কেতন উড়ানো সম্ভব হযেছিল ইসলামের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী লাখ লাখ মুজাহিদের রক্তের বিনিময়ে, তারা জীবন দিয়েছে কিন্তু রণাঙ্গন ত্যাগ করে নি, সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম থেকে পিছপা হয় নি। কিন্তু আজ এই জাতির অবস্থান কোথায় তা কি বলে দিতে হবে? এরা শত শত বছর পূর্বেই যে রণাঙ্গন (ঈদগাহ) ছেড়ে দিয়েছে এবং তার পরিণতিতে কয়েকশ বছর ভিন জাতির দাসত্ব করেছে, আজ কপালে দাসত্বের রেখা বয়ে নিয়ে ও নির্লজ্ব হাস্যমুখে তারা নামাজ পড়তে চলেছে সেই রণাঙ্গনেই, সেই ঈদগাহেই যেখানে 'সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ'। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে? কাজী নজরুলের এই ভর্ৎসনা বোঝার ক্ষমতাও কি আমাদের নেই?

আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হাত মেলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরীদ।
রমযানের ঐ রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ।
প্রেম দিয়ে বিশ্ব-নিখিলকে জয় করবে কি, এই জাতির নিজেদের রক্তে আজ নিজেদেরই হাত রঞ্জিত। ছাগল দিয়ে আর যাই হোক হালচাষ হয় না

যারা জীবন ভরে রাখছে রোযা, নিত্য উপবাসী
সেই গরীব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ
রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।
একমাসের সওম পালন করে যারা হাফ ছেড়ে বাচল তাদের বোঝা উচিত যে, তাদেরই মতো অসংখ্য আদম সন্তান এই পৃথিবীতেই ছড়িয়ে আছে যাদের পেটে খাবার নেই, পরনে কাপড় নেই, মাথার উপর ছাদ নেই। এরা ইয়াতীম, এরা মিসকিন। তুমি এক মাসের এক বেলা খাবারের অভাবে এত কষ্ট পেয়েছে তাহলে এদের কথা ভাবো। এদের কষ্টও উপলব্ধি করার চেষ্টা কর। এই কাজ তোমার ঈমানী দায়িত্ব থেকে করতে হবে। যে সমাজে দারিদ্রতার কষাঘাতে মানুষকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়, যে সমাজে যাকাতের ভাগ নিতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে একই সাথে ২৭ জন দুস্থ মানুষকে জীবন হারাতে হয়, যে সমাজে ১৩ বছরের বাচ্চাকে নির্মমতার পরাকাষ্ঠা দর্শন করে অসহায়ভাবে প্রাণত্যাগ করতে হয়, যে সমাজে পিতার কাছে মেয়ে নিরাপদ নয়, মেয়ের কাছে পিতা নিরাপদ নয়, যে সমাজে বিনা অপরাধে নিরীহ নারী-শিশুকে যানবাহনের মধ্যে জীবন্ত দগ্ধ হতে হয়, সেই সমাজে ঈদ নয়, সংগ্রাম প্রয়োজন। মানুষের জন্য, মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া প্রয়োজন

এলো খুশির ঈদ এলো, এলো খুশির ঈদ। এলো খুশির ঈদ,
ও মন রমযানের ঐ রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ।
এত কিছুর পরও যদি খুশিতে বুদ হয়ে থাকতে পারেন থাকুন। নামাজ পড়ুন, রোজা রাখুন, ঈদ করুন, ভোগ-বিলাসিতায় মত্য থাকুন, সময় হলে মরে যান- মনুষ্যত্বহীন পশুর চেয়ে এর বেশি কিছু আশা করি না। আল্লাহ হাফেজ।
https://www.facebook.com/asadali.ht
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:২১
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×