somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগ আন্দোলন - একটি আশ্চর্য সঙ্গমের স্মৃতি*

১০ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

First Thing First, আমরা কি তা করছি?
আমার তা মনে হয় না। এই আন্দোলনের গোড়াতে মূল সমস্যাটা চিহ্নিত করা উচিত ছিল, অন্তত পক্ষে যখন এটা বিশালাকার লাভ করে। উচিত ছিল মূল সমস্যা চিহ্নিত করে সেই মোতাবেক দাবী জানানো। তা হয় নি!
অপরাধীদের ফাঁসি চাওয়া হচ্ছে। কার কাছে চাওয়া হচ্ছে? ট্রাইবুনালের কাছে, তাই তো? কিন্তু এই ট্রাইবুনাল কি আমি-আপনি চাইলেই একজনকে ফাঁসি দিয়ে দেবে? ট্রাইবুনাল কি তা পারে? ট্রাইবুনাল অনুসরণ করবে তার জন্য তৈরী নির্দিষ্ট আইন, সেই আইন অনুসারে বিচার করে তবেই ট্রাইবুনাল রায় দেবে। ট্রাইবুনালের কাছে জন দাবীর কোন মূল্য নেই। এখানে মূল্য আছে সাক্ষী, প্রমাণ, দলিল-দস্তাবেজ যা আইনের দ্বারা গ্রহণযোগ্য। এর বাইরে যাবার রাস্তা নেই ট্রাইবুনালের।

পরের বিষয় যেটা জরুরী সেটা হচ্ছে, এই ট্রাইবুনাল কি যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে অথবা করতে পেরেছে? স্কাইপ কেলেঙ্কারি থেকে আমরা জানি, সেখানে সরকারের চাপ আছে এবং পদত্যাগী বিচারক স্বীকার করেছেন তারা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ নন! কেউ সর্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ হবেন তা ভাবার কোন কারণ নেই; কিন্তু তিনি কি যখন তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তখন বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছিলেন? কর্তৃপক্ষেরও কি উচিত ছিল না অভিজ্ঞ বিচারকমন্ডলী নিয়োগ প্রদান করা এবং অবশ্যই নিদির্ষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গকে ট্রাইবুনালের সাথে সম্পৃক্ত করা। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এটা কোন অসম্ভব কিছু ছিল না। পৃথিবীতে এই জাতীয় অনেক ট্রাইবুনাল হয়েছে, তাদের সাহায্য নেওয়াটা দরকার ছিল এবং সেটা হত যৌক্তিক।

আমরা নিশ্চয়ই যেনতেনভাবে কিছু লোকের ফাঁসি চাচ্ছি না। তা চাইতেও পারি না। যেখানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, সেখানে সরকারের উচিত ছিল জোরালো সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করার চেষ্টা করা। উচিত ছিল আসামী যে এলাকায় অপরাধের সাথে জড়িত ছিল সেই এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করা এবং ভুক্তভোগী/জনগণকে সম্পৃক্ত করে যতদূর সম্ভব অকাট্য তথ্য এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা। উচিত ছিল আসামীর বক্তব্য বিচার বিশ্লেষণ করে তার গ্রহণযোগ্যতা/নির্ভুলতা যাচাই করা। যেটা গোলাম মওলা রনি এম.পি. উল্লেখ করেছেন।

কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল জনগণকে সম্পৃক্ত করে তথ্য এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করা, তাদেরকে তথ্য সরবরাহের আহ্ববান জানানো। আশা করা যায় এই প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট তথ্য এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থিত করা সম্ভব হত; তাহলে হয়ত ঘটনা প্রবাহ এত দূর এসে পৌছত না। ডঃ আহমেদ জিয়াউদ্দীন, International Crimes Strategy Forum এবং/অথবা আর যারা এই বিষয় নিয়ে কাজ করেন/করছেন তারা স্কাইপ বা এই জাতীয়ভাবে সম্পৃক্ত না হয়ে ট্রাইবুনালকে সরাসরি সাহায্য করতে পারতেন।

তবে সময় এখানে অবশ্যই একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দাঁড়াবে তাতে সন্দেহ নেই। ৪ দশক অনেক লম্বা সময়, এবং এই সময়ে অনেক তথ্যই হারিয়ে যেতে পারে, সাক্ষ্য-প্রমাণ-আলামত নষ্ট/ধ্বংস হতে পারে। এই দূর্বলতা কাটিয়ে উঠবার জন্যই প্রয়োজন ছিল এগিয়ে যাবার জন্য একটি সর্বব্যপী পরিকল্পণা (ট্রাইবুনালের কার্যক্রম বিশ্লেষণ, ঘটনা পরম্পরা, কিংবা সওয়াল জবাব থেকে তা সরকারের ছিল বলে মনে হয় না)।

তবে সদিচ্ছা থাকলে সময় কোন অন্তরায় না, তার প্রমাণ পাওয়া যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৬ দশক পরে গণহত্যায় সহযোগীতার অপরাধে গত বছর (মে ২০১২) জার্মানীর একটি আদালত কর্তৃক জন ডেমেনিয়াউক (John Demjanjuk) –কে অপরাধী সাবাস্ত্য করে শাস্তি প্রদান।

অবশ্য আমাদের সরকারের ইচ্ছাটাই এখানে প্রশ্নের সম্মুখীন!!! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্য মানুষের আকঙ্খাকে বিবেচনায় নিতে ট্রাইবুনালকে অনুরোধ করেছেন! বটে!!!
Click This Link

সাত খন্ড রামায়ণই শেষ কথা নয়!
ভারতীয়দের বরাবরই আমাদের নিয়ে মেলা আগ্রহ। থাকবেই বা না কেন, দুধেল গাভী কে না চোখে চোখে রাখতে চায়। না চাইতেই সব দিয়ে দেয়, এমন বন্ধু এই পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমরা ভারতীয়দের এমনই বন্ধু! সেই ভারতের পত্রিকায় যখন লেখা হয় “Protesters at Shahbagh in Bangladesh backed by India” এবং যখন “...foreign minister Salman Khurshid, too, had voiced his solidarity with the protesters” তখন আপনি আমাকে যতই চোখ রাঙ্গান, আমি ভ্রু কোঁচকাবই। বেনাপোল বন্দরে এসে তারা শাহবাগ আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে যায়, আমারাও আবার ঋণী হই (এই চক্রবৃদ্ধি ঋণের আর কোন শেষ নেই!), ঋণ স্বীকার করি! (বনবালাদের ঋণ কখনও শোধ হয় না)।

তবে মূল রামায়ন বোধ করি আমাদের নিজেদের ঘরেই লিখিত হয়েছে। আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় সংসদ এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে! যে সরকার এই বিচার প্রক্রিয়ার আয়োজন করেছে, যে সরকার বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় আইন করেছে, যে সরকার বিচারক এবং আইনজীবী নিয়োগ করেছে, যে সরকারের প্রসাশনের মাধ্যমে যাবতীয় তদন্ত কর্ম সম্পাদিত হয়েছে, যে সরকার এই ট্রাইবুনালকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেছে, সেই সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বসলেন! কাহিনীর এই টুইষ্ট, কে কবে চিন্তা করতে পেরেছিল!!!

আন্দোলনের Modus Operandi কি?
আমি আপনাকে অন্যায়ভাবে মারলাম। আপনি মার খেয়ে আমার বিরুদ্ধে দশজনার কাছে বিচার চাইলেন। আমি আপনাকে বললাম, আহা, কি মারটাই না মেরেছি! বড্ড লেগেছে নিশ্চয়ই। আমি আপনার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলাম, আমার বিরুদ্ধে বিচার চাইতে বুদ্ধি-পরামর্শ দিলাম, লোক-বল দিলাম!!! লে বাবা, ঘটনাটা কি হল?

কার বিরুদ্ধে আন্দোলন?
ট্রাইবুনাল, আইনজীবী কার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত?
সাক্ষ্য-প্রমাণ যোগারের দায়িত্ব কার?
প্রয়োজনীয় আইন কে করেছে?

তাহলে প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ কিভাবে এই আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে? এই সংহতি প্রকাশ করে তারা কি বুঝাতে চাইছে? তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনে উদ্বেল প্রধানমন্ত্রীর হৃদয় আসলে ঠিক কি চাইছে?

আমার এই মূহুর্তে এটাই মনে হচ্ছে যে আল্লাহর অশেষ রহমত আমাদের প্রতি যে, ইয়াহিয়া খান, আইয়ুব খান গংদের এই জাতীয় আওয়ামী বুদ্ধি ছিল না। নচেৎ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে তারা নির্ঘাত সমর্থন দিয়ে বসত! একবার ভাবুন দেখি, আমরা পাকিস্তানীদের সমর্থনপুষ্ট হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করছি! এন্টেনায় কিছু ধরে কি?

আন্দোলন – সার্বজনীন, অথবা নয়?
এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় আন্দোলন প্রথমবস্থায় সার্বজনীন ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটা সরকারের হস্তগত হয়েছে। এই আন্দোলন সার্বজনীন ছিল, কারণ প্রথমে তরুণেরা ভেবেছিল এটা একটা সুযোগ, যার মাধ্যমে সরকারকে একটা ধাক্কা দেওয়া সম্ভব। সেই ধাক্কা দেবার জন্য সবাই এখানে একত্রিত হয়েছিল। সকলে বাংলাদেশের প্রচলিত বিষবৃক্ষের রাজনীতি থেকে মুক্তি কামনা করেছিল। অনেকে যেমন যুক্তি দেখিয়েছেন, ঘরে বসে থেকে তো কিছু হবে না, কাজেই শাহবাগে যেয়ে চেষ্টা করতে দোষ কোথায়। সেই চেষ্টাই দল-মত নির্বিশেষে সবাই করতে গিয়েছিল।

কিন্তু শাহবাগ নেতৃত্ব অবশ্যই দূরদর্শীতা দেখাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। একটি হঠাৎ পাওয়া একতাবদ্ধ জনতাকে বিভক্ত করে ফেলেছে। এর কারণ তারা কখনই ভাবেনি এই আন্দোলন এই মাত্রায় যেতে পারে, অর্থাৎ এই বিশাল সমর্থন তাদের জন্য ছিল বিনামূল্যে পাওয়া উপহার। এবং সস্তার তিন অবস্থার মত আন্দোলনকে তারা অতি সস্তাভাবে চালিত করেছে।

যেখানে এই আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়ে, সরকারকে নিদেনপক্ষে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা যেত, সেখানে সরকার এখন এই আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলবার আয়োজন সম্পন্ন করে এনেছে। শাহবাগ নেতৃত্বের যুক্তি ছিল, যে জন্য এখানে একত্রিত হওয়া সেই কাজেই তাদের মনঃনিবেশ থাকা দরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা এক দাবীতে অটল থাকেননি। বরং আরও নানাবিধ দাবী-দাওয়া নিয়ে হাজির হয়েছেনঃ

শাহবাগ থেকে ঘোষিত ৬টি আলটিমেটাম ( ব্লগার অপূর্ণের ব্লগ থেকে):

১) ঘাতক জামাত শিবিরের হামলায় শহীদ রাজীব হায়দার, জাফর মুন্সী, বাহাদুর মিয়া, কিশোর রাসেল মাহমুদ হত্যাকান্ডে জড়িতদের আগামী ৭দিনের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।
২) ২৬ শে মার্চের পূর্বে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক সন্ত্রাসী জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সুশোধনী আইনের অধীনে অভিযোগ গঠন এবং নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
৩) অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধী সংগঠনগুলোর আর্থিক উৎস, যেসব উৎস থেকে সকল প্রকার জঙ্গিবাদী, এবং দেশবিরোধী তৎপরতার আর্থিক জোগান দেয়া হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
৪) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া গতিশীল ও অব্যহত রাখতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালকে স্থায়ী রূপ দিতে হবে।
৫) গণমানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও তান্ডব বন্ধে অবিলম্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সকল সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ গোপন আস্তানা সমূহ উৎখাত করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এদের ভয়ংকর রূপ প্রকাশ করে দিতে হবে।
৬) যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষক এবং হত্যা ও সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতা গণমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।


এখানে মূল যে দাবী নিয়ে শুরু তার কোন হদিসই নেই! বরং আরও নানাবিধ দাবী চলে এসেছে। অন্যবিধ দাবী যদি আসলই, তাহলে সরকারের অন্যান্য সব আপকর্মের কথা বলতে সমস্যা কি ছিল? কি সমস্যা ছিল সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে?

এর পরবর্তীতে আন্দোলনের দখন যখন পুরোমাত্রায় সরকারের হাতে চলে যায়, তখন সর্ব সাধারণের পক্ষে আর সম্ভব হয় নি এই আন্দোলনের পক্ষে এক থাকা। কারণ এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে শাহবাগ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করবে না কিছু বলবে না; শুধুমাত্র রাজাকারের লোক দেখানো বিচার চাওয়া ছাড়া যেটা আওয়ামীলীগ অনেক আগে থেকেই করে আসছে।

শাহবাগ ঘোষণা – যা চেয়েছি আমি তা পাইনি...
শাহবাগ থেকে যৌক্তিক যে দাবীটি উত্থাপিত হওয়া উচিত ছিল, সেটা হচ্ছে ট্রাইবুনাল ভেঙ্গে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন করে একটি সুপরিকল্পনা মাফিক গঠিত ট্রাইবুনালে নতুন করে যত দ্রুত সম্ভব বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা। এতে করে অন্তত এ যাবত যত দূর্বলতা ছিল তার অনেক কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হত। যেমন: ট্রাইবুনালে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ নিয়োগ দেওয়া/সংশ্লিষ্ট করা, অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া, মাঠ পর্যায়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে সাক্ষ্যপ্রমাণ, তথ্য, দলিলপত্র, ইত্যাদি সংগ্রহ করা, সাক্ষীদের নিরপত্তা নিশ্চিত করা, যথাযথ তদন্ত কার্যের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এবং লোকবল সরবারাহ করা ইত্যাদি।

কিন্তু তা না করে বিচারের রায় ঘোষিত হবার পর (কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে), যেনতেনভাবে আইন সংশোধনের মাধ্যমে আপীলে কঠিন সাজার আবেদন আদৌ কি কার্যকর কোন ব্যবস্থা হতে পারে? (যদি না প্রধানমন্ত্রীর আবেদন (জনগণের আকাঙ্খা) আমলে না নেওয়া হয়!) সেক্ষেত্রে আমার ভুল না হলে, এটা নিতান্তই অকার্যকর বলে প্রতীয়মান হবে। কারণ আপীলে নতুন করে কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ, তথ্য হাজির করা হবে না; ইতিমধ্যেই উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে রায় পর্যলোচনা করা হবে। সেক্ষেত্রে যে অপরাধগুলো প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেওয়া হয়েছে, সেগুলোও টিকবে কিনা সেটাই চিন্তার বিষয়। এবং অন্যান্য অপরাধীর আপীলের খেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিতকরণের আন্দোলন! দীর্ঘ মেয়াদে এর ফলাফল কি?
আমাদের দেশে ন্যায় বিচার চাওয়ার পরিবর্তে ফাঁসির দাবীতে মিছিল-মিটিং কিংবা চামরা তুলে নেওয়ার বজ্রকন্ঠ আওয়াজ নতুন কিছু নয়, বলা চলে এটা আমাদের বিচার চাওয়া সংক্রান্ত সংস্কৃতির একটি অংশ। যেখানে সাধারণের জন্য ন্যায় বিচার পাওয়া সুদুর পরাহত, সেখানে এই জাতীয় দাবীতে মিছিল-মিটিং অনেকটা কামানের দাবী জানিয়ে রাখা, যাতে শেষ অবধি অন্তত নূন্যতম বন্দুক প্রাপ্তি ঘটে।

কিন্তু ফাঁসির দাবীতে এই রকম দীর্ঘ সময় ব্যাপী সর্বসাধারণের অংশগ্রহণে (প্রথমাবস্থায়) অন্দোলন এবং তাতে বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গের এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদের সংহতি জ্ঞাপন অভূতপূর্ব ঘটনাই বটে। কিন্তু এটা একটি বিচার প্রক্রিয়াকে সরাসরি প্রভাবিত করার মত স্পর্শকাতর ঘটনা এবং ন্যায় বিচারের পরিপন্থি। যারা ফাঁসির দাবীতে আন্দোলন করছেন তাদের বক্তব্য হল অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গের অপরাধের মাত্রা এতটাই ভয়ঙ্কর এবং সর্বব্যাপী যে এই ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে মানবাধিকার/ন্যায় বিচার নিয়ে কথা বলা অনর্থক।

কিন্তু সমস্যা হল, আইন তো শুধুমাত্র চার্জশীটে উল্লেখ্য আপরাধের মাত্রা বা ধরণ বিবেচনা করবে না; সে একই সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধের সপক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ আমলে নিয়ে তবেই রায় দেবে। কাজেই একজন কবি তার কবিতায় বলতেই পারেন ‘আমি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’, কিন্তু আদালত কবির কবিতা আমলে নেবে না। এটাই ধ্রুব সত্য। কিন্তু একজন কবি তখনই এমন একটি কবিতা লিখতে পারেন যখন কোন একটি ঘটনা তার মনে মোটা দাগে গভীর ভাবে প্রভাব বিস্তার করে। অপরাধের মাত্রা এবং তাৎপর্য বিবেচনায় কবির দাবীকে যথার্থতা দিতে সংশ্লিষ্ট প্রসাশন এবং কর্তৃপক্ষকেই প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রসাশন এবং কর্তৃপক্ষ কি সেই অতি প্রয়োজনীয় কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করেছে? কিংবা প্রসাশন এবং কর্তৃপক্ষের আদৌ সেই সদিচ্ছাটি ছিল কি? সেক্ষেত্রে জনগণের এই ফাঁসির দাবী শুধুমাত্র শক্তির বিচারে বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত করে একটি অভিষ্ট রায় আদায় করা। যা আইনের পরিপন্থী। তাহলে আইনের শাসনের কি প্রয়োজন?

আমাদের দেশের দীর্ঘ মেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য দরকার ছিল একটি সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্জিত রায়(!) কি দেশকে একটি হুমকির মুখে ঠেলে দেবে না? আমরা একটি বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম, তাই নয় কি?

একি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে!কিছুদিন আগ আব্দুন নূর তুষারের একটি ইন্টারভিউ শুনলাম (http://www.youtube.com/watch?v=TrRLue_7JlY)। সেখানে বলা হল ফাঁসির দাবী নাকি একটি প্রতীকী দাবী! আমি ঠিক জানি না, শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্ব কিংবা যারা এতে অংশগ্রহণ করেছেন, এই প্রতীকী দাবীর বিষয়টি জানেন কিনা! দেশে এমনিতেই প্রতীকের অভাব নেই, নতুন আর কোন প্রতীকের অবতারনার কোন প্রয়োজন নেই বলেই মনে করি। দেশ নানান প্রতীকের দাপটে কোনঠাসা। আর এই দাবী যদি প্রতীকীই হবে, তবে সহজ-সরল ভাষায় ন্যায় বিচারের দাবী জানাতে এবং সেই লক্ষ্যে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একটি ট্রাইবুনাল গঠনের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দাবী জানাতে কি সমস্যা ছিল? ৪২ বছর চলে গেছে, একটি সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার জন্য আরও অতিরিক্ত দুই-একটি বছর যথাযথরূপে ব্যয় হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের ভালো হত। শাহবাগ নেতৃত্ব এই বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেছেন, একজন ব্যক্তির মূল্য তার শেষ কাজের সমান! অর্থাৎ শুধুমাত্র শেষ অবস্থান বিবেচনা করতে হবে একজন ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে! একজন ব্যক্তির কাজের মূল্য তার পুরো জীবনের সমান। শুধুমাত্র শেষ একটি কাজ দিয়ে একজন ব্যক্তিকে মূল্যায়ন পুরোপুরি ভুল মেসেজ দেবে। হয়ত এই যুক্তির কারণেই আওয়ামী লীগের রাজাকারেরা বিশেষ মূল্য পেয়ে থাকেন তাদের সমর্থকদের কাছ থেকে!

আর নিজের পক্ষে বললেই সব ঠিক, বিপক্ষে গেলেই মতি ভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি ইত্যাকার অভিযোগ তোলা নিতান্তই বালখিল্যতা। বরং সমালোচকের বক্তব্যকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় অংশটুকু নিলে কোন ক্ষতি তো নেইই, উল্টো লাভ।

যাই হোক এই আন্দোলন ইসলাম এবং ইসলামভাবাপন্ন জনগোষ্ঠীকে অনেক ভুল মেসেজ দিয়েছে (জ্ঞাত কিংবা অজ্ঞাতসারে)। তন্মধ্যে ব্লগার রাজীব হায়দার সংক্রান্ত কার্যকলাপ অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। তার হত্যাকান্ড নিন্দনীয় এবং দুঃখজনক; কিন্তু একই সাথে তাকে ভালো মানুষ সাজানোর প্রচেষ্টা এবং ‘শহীদ’ হিসেবে উল্লেখ অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য এবং নিন্দনীয় কাজ। যে ধর্ম নিয়ে তার অত্যন্ত নীচু শ্রেনীর বিরূপ মন্তব্য, সেই ধর্মেরই একটি স্পর্শকাতর শব্দ তার উপর আরোপ করে মহিমান্বিত করবার অপচেষ্টা ইসলামভাবাপন্ন জনগোষ্ঠী সঙ্গত কারণেই ভালোভাবে নেয় নি।

কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে এই আন্দোলনের শুরু হলেও পরবর্তীতে আরও অনেক দাবী যুক্ত হয়েছে, এবং আন্দোলনের মঞ্চ থেকে জামাত এবং জামাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান সমূহ নিষিদ্ধের দাবী তোলা হয়েছে। এই দাবীর উদ্দেশ্য যাই থাকুক, যখন এটা ছড়ানো হয়েছে তখন ইসলামীভাবাপন্ন ব্যক্তিবর্গের নিকট একটি ভুল মেসেজ গিয়েছে। যেখানে দেশের জনগনের একটি বড় অংশ যথেষ্ট শিক্ষার অভাব থেকে বঞ্চিত এবং তাদের কাছে সঠিক তথ্যের অভাব রয়েছে, তখন এই ধরনের দাবী তোলার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার ছিল। কিন্তু সেটা তারা ছিলেন না!

এখানে ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরামের আহ্ববায়ক (সম্ভবত; উনার নামটা মনে করতে পারছি না) প্রথম দিকে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন। যেখানে তিনি জামাত নিষিদ্ধ করার সপক্ষে যুক্তি হিসেবে জামাতের গঠনতন্ত্র কিভাবে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক তা বুঝাতে উল্লেখ করেন জামাতের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে ‘আল্লাহ সকল ক্ষমতার উৎস’ এবং সংবিধানে আছে ‘জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস’!

একটু দেখে নেওয়া যাক আল কোরাণে আল্লাহ্‌র ক্ষমতার বিষয়ে কি বলা আছে-
“And of mankind are some who take (for worship) others besides Allah as rivals (to Allah). They love them as they love Allah. But those who believe, love Allah more (than anything else). If only, those who do wrong could see, when they will see the torment, that all power belongs to Allah and that Allah is Severe in punishment”. Chapter 2 Surah Al Bakarah আয়াত ১৬৫

...that all power belongs to Allah...অর্থাৎ আল্লাহ্‌ সকল ক্ষমতার মালিক/উৎস। তাহলে কি এখন বলা যাবে আল কোরাণ বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে কারণ কোরাণ বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। বিষয়টা কি তাই?

জামাত যেটা করেছে, সুরা বাকারার ১৬৫ নম্বর আয়াতের অংশ বিশেষ তাদের গঠনতন্ত্রে সংযুক্ত করেছে মাত্র। এখন এই আপাত সাংঘর্ষিকতার কারণে যদি আজকে জামাত নিষিদ্ধ হয়, তাহলে কালই আবার ধর্ম বিরোধীরা দাবী তুলবে কেন মূলই উপরে ফেলা নয়!

অথচ দুইটি বক্তব্যের content এবং context বুঝলে এই জাতীয় অযৌক্তিক দাবী তিনি উঠাতেন না। আল কোরাণে যে ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে তার প্রেক্ষাপট তাঁর স্রৃষ্ট সমগ্র বিশ্বব্রম্মান্ড এবং এতদ্বমধ্যে বিদ্যমান তাঁর ক্ষমতা। আর আমাদের সংবিধানে যে ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে তার প্রেক্ষাপট ৫৬হাজার বর্গমাইল এবং এতদ্বমধ্যে বিদ্যমান জনগণের শাসক নির্বচিত করার ক্ষমতা! আর যেহেতু আল্লাহ্‌ তায়ালা মনুষকে তার নিজের ভালোমন্দ বিচার-বিবেচনার বুদ্ধি এবং দায়িত্ব দিয়েছেন, কাজেই বাংলাদেশের জনগণের তাদের নিজেরদের শাসক নির্বাচিত করার ক্ষমতাও কোরাণের এই আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক হয় না।

Content এবং Context না বুঝে ঢালাওভাবে একটি বক্তব্য কতখানি ক্ষতিকর উপরিউক্ত বিশ্লেষণ থেকেই বোঝা যায়। জামাতকে নিষিদ্ধ করতে তাই গঠনতন্ত্র এবং সংবিধানের সাংঘর্ষিকতার আলোচনা নিরর্থক। এই প্রেক্ষিতে জাতীয় স্বার্থে ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্টের পক্ষ থেকে যে সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়ছে তার ৫ নম্বর দাবিটি বরং অনেক যুক্তিযুক্ত এবং বিশেষ বিবেচনার দাবী রাখে; যেখানে বলা হয়েছে –

“মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী দল এবং ব্যক্তিদের বাংলাদেশে রাজনৈতিক অধিকার নিষিদ্ধ করতে হবে”।

জাতীয় স্বার্থে ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্টের পক্ষ থেকে শাহবাগের ঘোষনা এবং সাত দফা দাবি - Click This Link

কাজেই অযথা অনাহুত এবং অনর্থক বক্তব্যের মাধ্যমে বিভেদ সৃষ্টি না করে, বরং বক্তব্য সম্বন্ধে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া জরুরী।

তবে একটি কথা এখানে প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা যেতে পারে, নির্বাচন কমিশন জামাতের গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে নাকি আপত্তি করেছে। এটা যদি একই প্রেক্ষিতে হয়ে থাকে এবং জামাত যদি তার গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনে, তবে সেটা জামাতের ধর্ম ব্যবসায়ী রূপটিই আবার তুলে ধরবে।

বিভক্তি-ঘৃণা ছড়ানো সহজ, কিন্তু তা থেকে ফিরে আসা?
আন্দোলন কিংবা সাক্ষ্য-প্রমাণ যে কারণেই হউক, সাঈদীর ফাঁসির রায় হয়েছে। এর পর শুরু হয়েছে দেশব্যাপী তান্ডব। এই তান্ডবে জামাত-শিবির কর্মী যেমন মারা গিয়েছে, তেমনিভাবে নিহত হয়েছে সাধারণ জনগণ, পুলিশ।

জামাত-শিবির কর্মী/সমর্থক মারা যাওয়ায় অনেকেই মনে হয় খুশি। তারা বলতে চান এদের ক্ষেত্রে মানবতা প্রযোজ্য নয়! কিন্তু আমি খুশি হতে পারছি না। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে একজন সাধারণ বিক্ষোভকারী/কর্মী/সমর্থককে গুলি করে হত্যা, সভ্যতা নয় এবং কোন অবস্থাতেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই ধরণের কাজের স্বীকৃতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অযাচিতভাবে বেপরোয়া করে তুলবে এবং তারা ভবিষ্যতে এই ধরণের আরও অনেক অন্যায় করবে। বিধি বহির্ভুতভাবে এইসব হত্যাকান্ড সর্ব অবস্থাতেই নিন্দনীয়। এই হত্যাকান্ডে আন্দোলনের, জনগণের, দেশের কি উপকার হল?

মনে রখতে হবে একটি দেশে একটি সমাজে ছাত্র থাকবে, শিক্ষক থাকবে, থাকবে চাকুরিজীবী, থাকবে ব্যবসায়ী, থাকবে কামার-কুমার-জেলে-তাঁতী, থাকবে দিনমজুর, থাকবে ধনী-গরীব, থাকবে বেশ্যা-বাঈ, থাকবে লম্পট, থাকবে মওলানা-মৌলভী, থাকবে শঠ, আরও কত কি জাত-পাত! এর সবাইকে নিয়েই সমাজ এবং রাষ্ট্র। আপনি কি এর কোন একটি গোষ্ঠীকে আপনার পছন্দ নয় বিধায় নির্মূলে নামতে পারেন?

কেউ কেউ বলেছেন জঞ্জাল পরিষ্কার করা হচ্ছে! কিন্তু কত জঞ্জাল পরিষ্কার করা হবে? জঞ্জাল চিহ্নিত করার মাপকাঠিগুলো কি কি? এই জঞ্জাল চিহ্নিত করার দায়িত্ব কার? ভুলের মাশুল কে দেবে? এই হত্যাকান্ডে সাধারণ জনগণের সহানুভুতি কি তারা একেবারেই পাচ্ছে না?

এই প্রক্রিয়ায় উল্লেখিত অনেক প্রশ্নের মধ্যে একটি হচ্ছে ‘সংখ্যা’ সংক্রান্ত প্রশ্ন! কত হাজার জনকে মারতে হবে? কারও কাছে কোন উত্তর জানা আছে কি? এবং এই ‘সংখ্যাগুলো’ কি আগার দিকের সংখ্যা নয়? আপনি একটি ভেঙ্গে দেবেন, আশ-পাশ দিয়ে আরও দশটি মাথা বের করবে, তাই নয় কি? এত এত জঞ্জাল তৈরী না করে সরাসরি গোড়া কেটে দেওয়া হচ্ছে না কেন? কেন তাদের শিকরসহ উপড়ে ফেলা হচ্ছে না?

এই প্রসঙ্গে দক্ষিণ আফিকার একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। PW Botha ছিলেন একজন ঘোর বর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তিনি যখন মারা যান তখন দক্ষিণ আফিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট Thabo Mbeki বোথার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জোর দিয়েছিলেন “... the need for a "balanced" appraisal of former President Botha's life, the better to promote nation-building and national reconciliation”. বিশেষভাবে উল্লেখ্য Mbeki তার এক ভাই, এক ছেলে এবং কাজিনকে হারিয়েছিলেন বোথার Apartheid Government –এর সময়।

যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন, তবুও কিছুটা হলেও মিল পাওয়া যায় বোথা সরকারের নৃশংসতা এবং জামাতের নৃশংসতা মাঝে। সেই প্রেক্ষিতে যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান/পদ্ধতি না পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ কিছুটা ভারসাম্যবস্থা রক্ষা করা যেতে পারে। কারণ দেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন একতাবদ্ধ জাতি, বিভক্ত জাতি মুখ থুবরে পড়তে বাধ্য।

কাদের মোল্লার ‘V’ সাইন, জাতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন?
কসাই কাদের তার রায়ের পর ‘V’ সাইন প্রদর্শন করেছেন। এক অর্থে কাদের মোল্লার জন্য তা বিজয়ই বটে। এত গুরুতর অভিযোগ যে অনায়াসে পাশ কাটিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডীত হল, সেটা একটি বিশাল বিজয়ই বটে। কিন্তু একটু গভীর চিন্তা করলে এই সাইনের কি অন্য কোন অর্থ করা যায় না?

আমাদের কর্তব্যে অবহেলা, সঠিক কাজটি না করা, বিভক্তি ইত্যাকার নানান কারণে ট্রাইবুনাল কর্তৃক তাকে প্রদত্ত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রেক্ষিতে তার প্রদর্শিত ‘V’ সাইন কি জাতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন নয়? আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং কলহ কত গভীর তা কি তুলে ধরে না? আসুন না, একটু চিন্তা করি।

একটি আশ্চর্য সঙ্গমের স্মৃতি
নানান চরাই উৎরাই পেরিয়ে আসল ৯০। দেশের ইতিহাসে একটি মাইল ফলক অবশ্যই। দীর্ঘদিনের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ফসল অবেশেষে স্বৈরাচারের পদত্যাগ এবং একটি চমৎকার নির্বাচন। কিন্তু ভেজাল বেধে গেল নির্বাচনের ফলাফলে! একটি সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন কোন দলই পায়নি।

ভেজাল মিটল কিভাবে? জামাত সমর্থন দিল বিএনপিকে! আমরা যারা আওয়ামী বিরোধী, খুব একটা ভেটকি হাসি দিয়েছিলাম। বিধাতা বোধকরি খানিকটা মুচকি হাসি হেসেছিলেন। চোখে পড়েনি অবশ্য।

ভেজাল দিয়ে যার শুরু, তার ভেজাল এত তারাতারি শেষ হবে কেন? তবে তো দেশ তরতরিয়ে এগিয়ে যাবে! এই দেশে তাই হয় নাকি। তাছাড়া ওমন তাগড়া যোয়ান!

তা হলোটা কি? না, বিএনপি প্রেসিডেণ্ট পদে মনোনয়ন দিল আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে! একজন রাজাকার! আওয়ামী লীগ তা মানবে কেন! হাজার হলেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রেজিষ্ট্রার্ড শক্তি! তারা মনোনয়ন দিল বিচারপতি বদরুল হায়দায় চৌধুরিকে। দেখা যাক আমাদের স্মরণ শক্তি কত ভাল। বলুন তো, কি হয়েছিল এরপর?

আচ্ছা, আপনি তখন নাবালক ছিলেন? পরের ঘটনা জানেন না? ওই যে একটু আগে বললাম না “ওমন তাগড়া যোয়ান”! পায়ে পড়ে ছালাম নিয়ে সিরিয়ালটা নিয়ে রাখতেই হবে। জ্বী, ঠিক তাই হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রেজিষ্ট্রার্ড শক্তি গোলাম আযমের পায়ে ছুয়ে ছালাম করে বিচারপতি বদরুল হায়দায় চৌধরির জন্য ভোট চেয়ে বসেছিলেন! আব্দুন নূর তুষারের শেষ কর্মের মূল্য ত্বত্ত্ব অনুসারে গোলাম আযম প্রায় মুক্তিযোদ্ধা হয়েই গিয়েছিলেন! ভাগ্যিস সেই সময় বিধাতা আরেকটু মুচকি হেসেছিলেন।

এর পরে ভেজাল এবং মুচকি হাসির এই খেলা ফি জমানায় এই অবধি বহাল আছে। কামাতুর যুবতীদের কামার্ত যুবকের সাথে অবৈধ সম্পর্কের যে খেসারত, তার ফলাফল ব্যাথাতুর এক নারী প্রতি মূহুর্তে ভোগ করছে। কারণ আধুনিক এই বিশ্বে সহবাসের খেলায় অর্জি অনেকের কাছেই প্রিয়।

শেষ হইয়াও হইল না শেষ!
শাহবাগ থেকে জনগনের প্রাপ্তি বলা চলে শুন্য; ঠিক শুন্য নয় বরং সামগ্রিক হিসেবে হয়ত মোটের উপর নেতিবাচক সূচক! আওয়ামীপন্থীরা বলবেন প্রাপ্তি অনেক! আমি দেখি শুধু লাশের মিছিল এবং ব্যাথাতুর নারী। শাহবাগ নেতৃত্ব যখন এমন একটি সুযোগ হেলায় হারাল এবং যখন খুব শীঘ্রী একটা গ্রহনযোগ্য সমাধান দিল্লী দূর অস্ত, তখন অবৈধ সহবাসের খেসারত থেকে দেশকে বাচাতে এবং সাধারণ জনগণের উপর থেকে পুলিশের বন্দুকের নল সরাতে খাঁচায় আটক ইঁদুরগুলোকে কি তারা ব্যবহার করতে পারে না? তাতে গাছের গোড়াটা চটজলদি কাটা যায়। সরকার কি অবৈধ সহবাসের খেলা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে?

সময়ের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

* টাইটেল ক্রেডিট সৈয়দ শামসুল হক
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৩৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×