somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব ইজতিমা ও তাবলীগ জমাআত সম্পর্কে আমার কিছু কথা এবং তারা কি ভ্রান্ত দল ? (পর্ব ১)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ব ইজতিমা ও তাবলীগ জমাআত সম্পর্কে আমার কিছু কথা এবং তারা কি ভ্রান্ত দল ? (পর্ব ১)


( বি: দ্র: ঘাড় তেড়া আর বিচার মানি তাল গাছ আমার,এই লেখাটি এজাতীয় লোকদের জন্য নয় তারা না পড়লেই ভাল হয় )






লেখাটির উদ্দেশ্যঃ ব্লগিং আর ফেসবুক,ইন্টারনেট এর সামান্য অভিজ্ঞতায় যা জানতে পেরেছি তা হলো, সত্য-মিথ্যাকে গুলিয়ে ফেলে কিংবা মিথ্যার আঘাতে সত্যকে নিষ্পেষিত করে ধোঁকাবাজি করাই অনেকের নিকট ব্লগিং-এর স্বার্থকতা। এমনই কিছু ‘ব্লগার-কলঙ্ক’(সোহান চৌধুরী সহ আর অনেকেই) বিশ্বজনীন “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত”এর অবিতর্কিত মেহনতের সমালোচনায় পেশাদারী মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন, এবং মিমাংসিত কিছূ অবান্তর প্রশ্নের অবতারণা করে সরলমনা দাঈ ও মুবাল্লিগদের সাথে প্রতারণার পাঁয়তারা করছেন। এমতাবস্থায় আমার উপর ওয়াজিব হয়ে পড়েছে, আমার সাধ্যানুযায়ী এসব মিথ্যাচারের কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক জবাব দিয়ে সর্বসাধারণের আকীদা সংশয়মুক্ত রাখা। তাই সিরিজ আকারে সেই সব বানোয়াটি আপত্তির যথাযথ জবাবের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবং কয়েকটি পর্বে উপস্থাপন করব ইনশা আল্লাহ ! আল্লাহ তা’আলা আমাদের সব নেক আমলকে কবুল করুন। আমীন।





তাবলীগ জমাআত সম্পর্কে কিছু অবান্তর প্রশ্ন ও তার জবাব ।


বলে নিতে চাইঃ “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত”এর ভাইদের কথা অত্যন্ত সাবলীল, বিনয়ী, নম্র ও মিষ্টি হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে আমি আমার উত্তরপর্বে অনেক ক্ষেত্রেই চরম ভাষা ব্যবহার করেছি। কারণ,
১) আমি তাদের মত এখনো অত ভালো হতে পারি নাই। শুধু সত্যের পক্ষাবলম্বনে আমাকে তাদের পক্ষে কলম ধরতে হলো।
২) বাতিলের মুকাবেলা করার জন্য একটু কঠিন হাতিয়ার ব্যবহার না করলে সামান্য সুযোগে আঁধমরা সাঁপের ফুঁসে ওঠার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সর্বশান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিনয়ী ও নম্রতার গুণকে আপাতত বিশ্রাম দেওয়া হলো।
বলাবাহুল্য, আমার এই পোস্টটি সূরা নাহলের ১২৫ নং আয়াত অনুযায়ী হিকমতপূর্ণ দাওয়াত নয়, বরং একই আয়াত অনুযায়ী নিরুত্তরকারী জবাব। তাই ভিন্নতার জন্য আমি দায়মুক্ত।
একটি স্বীকারোক্তিঃ এ লেখাটির একটি বিরাট অংশ আমার একাধিক শ্রদ্ধাভাজন উস্তাদের প্রবন্ধ থেকে গৃহিত। ঈষৎ পরিমার্জন ও ব্লগে প্রকাশের উপযোগী করে প্রকাশ করা হলো।
“দাওয়াত” একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ ডাকা, আহবান করা। ইসলামের দাওয়াতের সারকথা হচ্ছে, মানুষকে দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির দিকে আহবান করা।
তদ্রুপ “তাবলীগ”ও একটি আরবী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণীসমূহ অবিকলভাবে আল্লাহর বান্দা ও রাসূলের উম্মতগণের নিকট পৌছে দেওয়া।
আর এ মহত দু’টি কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্যই বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহত মুসলিম জামাতকে “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত” বলা হয়।
প্রসঙ্গতঃ বলা প্রয়োজন যে, “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত” এটি কোন স্বতন্ত্র দল, গ্রুপ বা গতানুগতিক সংগঠন নয়, বরং এটি হচ্ছে একটি নীরব বাতিলঘাতী আন্দোলন ও অত্যাসম্ভী বিপ্লব। এমনকি এই দায়ী ও মুবাল্লিগ জামাতের গতানুগতিক কোন প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইত্যাদী কোন ব্যক্তিও নেই। বরং যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই মুবারক নবুওয়তী জিম্মাদারীকে পূণঃবিন্যস্ত করেছেন, তিনি সকল আত্মকেন্দ্রিকতার সীমা পেরিয়ে এবং নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেকের গণ্ডি ছাড়িয়ে সরাসরি সীরাতে রাসূল, হায়াতে সাহাবা এবং পরবর্তী দাঈ-ইলাল্লাহদের যুগের দাওয়াতের ইতিহাসের প্রতি গভীর মনোনিবেশ করেছেন। পাশাপাশি সমাকালীন যুগশ্রেষ্ঠ ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় উলামায়ে কেরাম ও মুরুব্বীদের সঙ্গে মাশওয়ারা ও মতবিনিময় করেছেন। এরপর এসবের আলোকেই বর্তমান কর্মপদ্ধতিটি প্রস্তুত করেছেন।
বর্তমানেও এই জামাতে কোন পদনির্ভর আসন নেই। একজন মুখলিস আমীরের পূর্ণ আনুগত্যে ইখলাসের সাথে সকল দাঈ ও মুবাল্লিগগণ বিশ্বব্যপী আপন জিম্মাদারী পালনার্থে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমন ইখলাস ও অনাড়ম্বরতার নযিরবিহীন নমুনা দেখাতে গোটা দুনিয়া বারবার ব্যর্থ হয়েছে, ব্যর্থ হয়েছে দুনিয়াভিত্তিক ও দুনিয়াকেন্দ্রিক দলগুলো। পার্থিব সার্থবাদীরা এমন নূরানী পরিবেশ ও নূরানী শাহীদারী জনমেও দেখেনি। তাই অনেকটা হিংসা পরায়ণ হয়েই ক্ষেপে ওঠে আল্লাহর নিরীহ এই মুখলিস বান্দাদের উপর।
অন্যান্য জোট বা সংঘের চেয়ে এই জামাতটি এজন্যই অনন্য বৈশিষ্ট ও স্বতন্ত্র আবেদনের অধিকারী। কারণ, বর্তমান পৃথিবীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য সংঘ, সংগঠন এবং সভা-সম্মেলনের কোনো অভাব নেই। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এত বেশি সভা-সমাবেশ নিয়মিত বা তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যার হিসাব রাখাও অসম্ভব। এসব সম্মেলনের উদ্দেশ্য যদি হত অন্তত মানুষের পার্থিব কল্যাণ সাধন, তবুও একটা কথা ছিল। কিন্তু তা নয়। এসবের আসল উদ্দেশ্যই হল শক্তিধরের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও শক্তিহীনের ক্ষতি সাধন। যেখানে সম্মেলন ও সংঘবদ্ধতার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দুর্বল ও অসহায়ের সাহায্য এবং কল্যাণের কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান সেখানে এসবের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ শক্তিশালী জালেমকে সমর্থন দেওয়া আর দুর্বল নিপীড়িতদের অসহায়ত্বকে দীর্ঘায়িত করা। আর তা এমনই সূক্ষ্ম কৌশলে যে, মজলুমের ‘আহ’ করার বা তার প্রতি কৃত-অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে অনুভব করারও সুযোগ থাকে না। এটাই বর্তমান সময়ের সংঘ ও সংগঠনগুলোর নীতি। সৌভাগ্যবশতঃ দু’একটি সংগঠন যদি এমন পাওয়া যায়, যারা সেবামূলক মানসিকতা নিয়ে কাজ করে, তবে তাদেরও উদ্দেশ্য হয়ে থাকে শুধু মানুষের পার্থিব উন্নতি, যার সম্পর্ক শুধু মানুষের দেহের সাথে। প্রশ্ন এই যে, রক্ত-মাংসের সঙ্গে যুক্ত এ দেহটিই কি প্রকৃত মানুষ? তাহলে অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের পার্থক্য কী থাকল? মনুষ্যত্বই তো মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য।
আজ বস্তুবাদী চিন্তা এবং অর্থ ও পদের লালসা এতই প্রবল হয়ে উঠেছে যে, প্রায় সকলেই বিশেষত ক্ষমতার মসনদে আসীন ব্যক্তিরা মনুষ্যত্বের বিকাশ ও পরিচর্যা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে একেবারেই ভুলে গেছে। তাদের সম্পূর্ণ চিন্তাশক্তি ও কর্মশক্তি এই আসল সমস্যার বাইরেই খরচ হয়ে যায়, অথচ মনুষ্যত্বের অভাবই হল সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর যথার্থ সমাধান ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা, সামাজিক, পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সমস্যার ও কোনো সমাধান সম্ভব নয়। অথচ কিছু সাহসী ও সৎ চিন্তাশীল মানুষ যখন এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন তখন তাদের আহ্বানকে নিতান্ত অপরিচিত মনে করা হয় এবং তাদের উদ্যোগ-ইজতিমাকে অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয় ভাবা হয়। এ যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেই বাণীরই বাস্তব চিত্রঃ
بدأ الإسلام غريبا و سيعود كما بدأ، فطوبي للغرباء
ইসলামের সূচনা হয়েছিলো অপরিচিত অবস্থায়, এবং তা অচিরেই সেই অপরিচিত অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং সেই অপরিচিত সময়ে যারা অপরিচিত থেকেও ইসলামকে আঁকড়ে পড়ে থাকবে, তাদের জন্য মহা-সুসংবাদ। আলহাদীস।
প্রকৃত মানবতা বা ইনসানিয়াতের কয়েকটি মৌলিক বৈশিষ্ট হলোঃ
১) খালিকের মা’রিফাত অর্জন (সূরা যারিয়াত, আয়াতঃ ৫৬)। কেননা, এ তো সহজ কথা যে, ইনসানকে সবার আগে পেতে হবে সৃষ্টিকর্তার পরিচয় এবং তাঁকে হতে হবে সকল সৃষ্টির প্রতি দায়িত্বশীল।
২) হৃদয়-জগতের পবিত্রতা (সূরা আ’লা, আয়াতঃ ২৪, সূরা শামস, আয়াতঃ ৯)।
৩) চিন্তার বিশুদ্ধতা ও বুদ্ধির পরিশুদ্ধতা (সূরা বাকারাহ, আয়াতঃ ২৬৯)। যেন সবাই ক্ষণস্থায়ীর জন্য চিরস্থায়ীকে বিসর্জন দেওয়ার নির্বুদ্ধিতা থেকে রক্ষা পেয়ে যায, এবং সৃষ্টি জগতের বিভিন্ন রহস্য উদঘাটনের গর্বে আত্মহারা হয়ে কিংবা চরম গাফলত ও উদাসীনতায় আত্মবিস্মৃত হওয়ার লজ্জায় নিমজ্জিত থেকে কেউ যেন পরকালীন প্রস্তুতি গ্রহণে অবহেলা না করে বসে।
৪) আভিজাত্য, উন্নত চরিত্র ও উত্তম আখলাকের অধিকারী হওয়া (সূরা আলু ইমরান, আয়াতঃ ১৫৯)।
৫) আমানতদারী (সূরা মু’মিনূন, আয়াতঃ ৮)। খালেক ও মাখলুক প্রত্যেকের আমানত আদায় করার মানসিকতা সৃষ্টি করা।
সকল পেরেশানী, যাকে প্রকৃত পক্ষেই পেরেশানী বলা যায়-তার সমাধান ইনসানকে ইনসানিয়াত শেখানোর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। অথচ এই সহজ সরল সাদামাঠা কথাটি বোঝতেও ঐসব ডবল শিক্ষিতদের পক্ষে সম্ভব নয়, যারা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম-এর শিক্ষার সাথে জানাশোনাও রাখে নি এমনকি জানার আগ্রহও যাদের নেই। আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম-এর মধ্যে সর্বশেষ যিনি প্রেরিত হয়েছেন, তিনি হলেন মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ব্যাপকভাবে সকল মানুষের প্রতিই প্রেরিত হয়েছেন। স্থান-কাল-পাত্র-গোত্র-বর্ণ ইত্যাদি সকল সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে তিনি সবার জন্যই রাসূল। তাঁর আনীত শিক্ষা ও নির্দেশনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া ছাড়া এই সত্য উপলব্ধি করা আদৌ সম্ভব নয়। শুধু ঈমানের সম্পদে সম্পদশালীরাই এই মহাসত্য উপলব্ধি করতে পারেন এবং ঈমানের মিষ্টতা যিনি যে পরিমাণ অর্জন করেছেন তিনি ততটা গভীরভাবে তা উপলব্ধি করে থাকেন। বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে, আজ যারা উন্নতি-অগ্রগতির সবচেয়ে বড় দাবিদার এবং মানবতার শিরোপা যাদের অধিকারে, তারাই সবচেয়ে বেশি মানবতার দুশমন। তো যে নিজেই রিক্তহস্ত সে অন্যকে কী দিতে পারে? সারকথা এই যে, মনুষ্যত্বের অভাবই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা আর এই বাস্তব সমস্যার একমাত্র সমাধানের ব্যাপারে যদি কিছু চিন্তা-ভাবনা এবং সাধ্যমতো কিছু কাজ হয়ে থাকে তবে তা অবশ্যই ঈমানওয়ালারাই করে যাচ্ছে।
একমাত্র ঈমানওয়ালারাই দাওয়াত- তালীম, তাবলীগ, তারবিয়্যাত-তাযকিয়া, ওয়াজ-নসীহত, দ্বীনী মোযাকারা, সাধ্য অনুযায়ী সীমিত আকারে ‘আমর বিল-মারূফ নাহি আনিল মুনকার’ এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে সাধ্যমতো ‘জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ’র মাধ্যমে পৃথিবীতে ইনসানিয়াতের সবক প্রচারে যথাসাধ্য মশগুল রয়েছেন। এটা ভিন্ন কথা যে, ঈমানওয়ালাদের ঈমানী দুর্বলতা তাঁদের খেদমতগুলোকে মানে ও পরিমাণে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করতে পারছে না। কিন্তু এ কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিশ্বের মুক্তি ও উন্নতি ঈমানদারদের ঈমানী তরক্কীর মধ্যেই নিহিত আছে এবং পৃথিবীর ক্ষতি ও অকল্যাণও হয়েছে ঈমানদারদের ঈমানী অবনতির কারণে। এই অবক্ষয়ের যুগেও ব্যাপক দাওয়াতের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য খেদমত আল্লাহ তা’আলা যে মহাপুরুষের মাধ্যমে আঞ্জামের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি হলেন, হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. (১৩০৩-১৩৬৩ হি.), এবং তার মেহনত ও মাকবুলিয়াতের ফসলই হলোঃ “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত”। যদিও সবাই এই জামাতকে “দাওয়াত ওয়া তাবলীগের জামাত” বলে সম্বোধন করে থাকে, কিন্তু হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. বলতেন, “যদিও অনেকে এই জামাতকে “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত” নামে সম্বোধন করে থাকে, কিন্তু আমি এই জামাতের এখনো কোন নামকরণ করি নাই। যদি আমি কোন নামকরণের মনস্থ করতাম তাহলে এই মেহনতের নাম দিতাম “তাহরীকে ঈমান” বা ঈমানী আন্দোলন।
হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. কুরআন ও হাদীসের অনেক বড় মুহাক্কিক আলেম ছিলেন। তিনি ছিলেন হিন্দুস্থানের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ দুই দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দ ও মাজাহিরুল উলূম সাহারানপুর মাদরাসার সন্তান। তিনি কিতাব ও সুন্নাহ গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন। সীরাতুন্নবী ও সাহাবা-জীবনী বিস্তৃতভাবে অধ্যয়নের পাশাপাশি তাঁদের জীবনের দাওয়াত অংশটি মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করেছেন। পরবর্তী দাঈ-ইলাল্লাহদের যুগের দাওয়াতের ইতিহাসও পাঠ করেছেন। বড়দের সঙ্গে মশওয়ারা ও মতবিনিময় করেছেন। এরপর বর্তমান প্রচলিত কর্মপদ্ধতিটি প্রস্তুত করেছেন। কাজ আরম্ভ করে যতই অগ্রসর হয়েছেন ততই তাঁর অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কাজের মধ্যে মজবুতি এসেছে। তাঁর ব্যথিত হৃদয়ের আহাজারি ও আল্লাহর বান্দাদের প্রতি তাঁর দরদ আল্লাহ তা’আলা কবুল করে নিয়েছেন। ফলে তাঁর কাজ পুষ্পিত ও পল্লবিত হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত লক্ষ-কোটি মানুষ এই মেহনতের মাধ্যমে সিরাতে মুস্তাকীমের সন্ধান পেয়ে চলেছে। এরপর যে ব্যক্তি যে পরিমাণ উসূলের পাবন্দী করেছেন এবং হক্কানী উলামা-মাশায়েখের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত রেখেছেন তিনি তত বেশি উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছেন।
তাঁর এই মুবারক মেহনতের অন্যতম একটি মূল উদ্দেশ্য এই যে, বর্তমানে কালেমা পাঠকারী মুসলিমগণও দুনিয়ার মোহ ও বস্তুবাদিতার যে ব্যধিতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়ে আছে, সে বিষয়ে তাদের মধ্যে অনুভূতি সৃষ্টি করা এবং তা থেকে মুক্তিলাভের প্রেরণা জাগ্রত করা। এটাই এ কাজের রূহ বা প্রাণ। আর এর কর্মপদ্ধতি এমন সুনিপুনভাবে বিন্যস্ত যে, আত্মসংশোধনের সাথে সাথে অনুভূতিহীন মানুষের মধ্যেও দ্বীনের প্রয়োজনীয়তার অনুভূতি জাগ্রত করার এক সুপ্ত মেহনত তার মননশীলতায় চলতে থাকে।
বর্তমানে বিশ্বব্যপী মুসলিম উম্মাহ সবচে’ বেশী যে বিষয়টির প্রয়োজন উপলব্ধি করছে, তা হলো সমগ্র মুসলিমশক্তির ঐক্য ও একতা। এ বিষয়ে হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. তার মালফূযাতের ১৬৫নং-এ উল্লেখ করেন, আমাদের এই আন্দোলনের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানের যাবতীয় জযবার উপর দ্বীনের জযবাকে জয়যুক্ত করা এবং এই পথে একই উদ্দেশ্য পয়দা করার পাশাপাশি ইকরামে মুসলিমের উসূলকে যিন্দা করে পুরো মুসলমি উম্মাহকে এই হাদীসের পরিপূর্ণ অর্থে পরিণত করা।
المسلمون كجسد واحد সমস্ত মুসলিম জাতি এক দেহের মত।
********************************************************


সূত্র

পরের টুকু আগামি পর্বে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০৮
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×