(৫ম কিস্তির পর)
চলচিত্রের ইতিহাসে যে সময়টাকে অশ্লীলতার যুগ বলা হয়,নব্বইয়ের এর দশকের শেষ সময় থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত, সেই সময়েই কিন্তু সবচেয়ে বেশি ব্যাবসা সফল ছবি নির্মিত হয়েছে।একথা না মানার কোন উপায় নেই।কিন্তু পরবর্তীতে বেশ কিছু দিন চলচিত্রে মন্দা অবস্থা গেছে।একটা বিষয় খুব খটকা লাগে,তখন কার ছবি আর এখনকার নির্মিত ছবির মধ্যে আমি খুব একটা ডিফারেন্স দেখি না।এখনকার ছবির আইটেম গান গুলো আগের সেই সময়ের গান গুলো থেকে বরং হট এবং শরীর গরম করা।এর পালটা যুক্তি দেখাতে গিয়ে হয়ত কেউ কেউ বলবেন যে তখনকার সময় আর এখন কার সময়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক।দেশ এখন আগের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে,তাই আমাদের মনমানসিকতা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
অভিনেত্রী নাসরিন বাংলাদেশের চলচিত্র দর্শকের মনে অন্যরকম আবেদন সৃস্টি করেছিলেন।তখন এমন কোন ছবি মুক্তি পেত না,যেটাতে নাসরিন নেই।নাসরিন আমার পরিচালিত প্রায় সবকটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন,হোক সেটা পুরো ছবিতে কিংবা একটি গানের সিনে হলেও।এই যাহ!নাসরিন এর ব্যাপারে লিখতে ভূলে গেছি! আচ্ছা নাসরিনের ব্যাপারে এখন কিছু তথ্য যোগ করতেই পারি এই লেখায়।নাসরিন চলচিত্রে আসেন ১৯৯২ সালে পরিচালক সোহানোর রহমান সোহানের "লাভ" ছবির মাধ্যমে।কিন্তু এই ছবির আগেই তার আরেকটি ছবি মুক্তি পায়।তাই অনেক ক্ষেত্রে অগ্নিপথ ছবিকেই নাসরিনের প্রথম ছবি বলা হয়।১৩ ই মে,১৯৭৮ ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহন করেন নাসরিন।তার পুরো নাম নাসরিন আক্তার নার্গিস। প্রায় পাঁচশোর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন নাসরিন।দিলদার এর সাথে এবং পরে কাবিলার সাথে তার জুটি মানুষের মনে থাকবে অনেকদিন।১৮ মে ২০১২ সালে ব্যাবসায়ী রিয়েল খান কে বিয়ে করেন নাসরিন।এই নাসরিন ছিলেন তখনকার আইটেম ক্রেজ।প্রায় প্রত্যেকটি ছবির আইটেম গান তিনিই করতেন।এখনকার সময়ের আইটেম গান নিয়ে নাসরিন বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভি কে বলেন, "আমরা যখন আইটেম গানে কাজ করেছি, তখন আমাদের আবেদন দেখে ছেলেদের দেহমন গরম হতো। আর এখন আইটেম গানে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের অনেকের কাজ দেখে আমার হাসি পায়।তাঁদের অঙ্গভঙ্গি দেখে মানুষের শরীর গরম হওয়ার সুযোগ নেই। কীভাবে দাঁত খিচায়, জিভ বের করে নাচ করে, দেখতে খুব খারাপ লাগে। আমার কাছে অশ্লীল মনে হয়।"প্রথম কমেন্টে দেয়া লিংক থেকে নাসরিনের সাক্ষাতকারটি পড়তে পারেন।
যাইহোক,তখনকার ছবি আর এখনকার ছবি,কোনটা অশ্লীল।সেটা আমাদের থেকে হয়ত সেন্সর বোর্ড ভাল বুঝবে।কারন সেন্সরবোর্ড এর কাজ ই হচ্ছে চলচিত্র থেকে অশ্লীলতা দূর করতে কাজ করা।কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই কাজ কতটুকু হচ্ছে,সেটাই দেখার বিষয়।
আমার মনে হয় চলচিত্রে সেন্সরবোর্ড নামে এই বোর্ড এর কোন দরকার নেই।এর পরিবর্ধিত রূপ হিসেবে বরং রেটিং সিস্টেম চালু করা যায়। আমি বরাবরই বলে আসছি বাংলা চলচ্চিত্র থেকে সেন্সর বাতিল করতে হবে। এই কথা শুনে অনেকেই আমাকে প্রগতিশীল বলে গালি দিয়েছেন।সেন্সর বাতিল করে গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ আমি করছি দুটো কারনে।সেন্সর বাতিল করে গ্রেডিং সিস্টেম চালু করলে একদিকে যেমন বেঁচে যাবে আমাদের চলচিত্র, তেমনি উত্তেজক ছবি দেখে উত্তেজনায় মার্গউত্থিত যুবাদের হাত থেকে বাঁচবে আমাদের নারীরাও। বলতে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত।জনৈক মনীষি বলেছিলেন শহর থেকে পতিতালয় উচ্ছেদ করার অর্থ পুরো শহরকে পতিতালয়ে পরিণত করা। আর কারণটা বোধকরি বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই। আমি চলচ্চিত্রের উদ্ভট সেন্সরে কাটিং-মারিং এগুলো বাদ দিতে বলি এজন্যই। এর বাইরে অন্তত ক্যাটেগরি দেয়া হোক। নির্ধারণ করে দেয়া হোক কোন চলচ্চিত্র কোন হলে প্রদর্শন করা যাবে। কোন চলচ্চিত্র প্রদর্শন করার জন্য নির্দিষ্ট হল বাদে অন্য কোনো যায়গা ব্যবহার করা যাবে না।
আবারো একটু ফ্লাশব্যাকে যাই যাঁরা আমাকে প্রগতিশীল সেন্সরবিরোধী বলে নাক সিঁটকাবেন তাঁদের জন্য বলে রাখা ভালো আপনারাই ১৮+ কোনো দৃশ্য গভীর আগ্রহ নিয়ে দেখেন। তাই সেটাকে নিয়ে আপনাদের বাড়াবাড়ি বেশি। জনৈক কানাডিয়ান পর্নস্টার ভারতীয় সিনেমায় অভিনয়ের হাতেখড়ি ঘটালে আপনাদের অতি সমালোচনামূলক বিনোদন আমাকে আপ্লুত করেছে বেশি। কারণ চলচ্চিত্রে বিহাইন্ড দ্য স্ক্রিন বলে একটা কথা থাকে, আর সেটা বুঝলে আপনাদের আপত্তির জায়গাটা আরো সংকুচিতই হয়ে আসতো বলে আমি মনে করি।
অনেক চলচ্চিত্র বিশ্লেষক নামের উজবুক এটাকে কাহিনী, নাম কিংবা কামের বিচারে অন্যরকম ও উন্নত চিন্তা বলতে চাইবেন। আমি বলবো ফালতু, নকল ও একঘেঁয়ে চিন্তা। কারণ যারা ধুম নামক হিন্দি চলচ্চিত্রটি দেখেছেন আর বিশেষ করে দিলবার শিকদুম শিকদুম গানটির চিত্রায়ন দেখেছেন তারা এটা ভালো করে জানেন। কমলা নেংটি পরে তিড়িং বিড়িং করার এক পর্যায়ে রিমা সেনকে হোসপাইপের পানিতে কাকভেজা করে দেয় অভিজিৎ। তারপর শুরু হয় তার তোয়ালে পরা নাচাকুঁদা। ঠিক এক পর্যায়ে তোয়ালে খুলে সে একই স্টাইলে দেহসোষ্ঠব দেখিয়ে দেয় অভিষেককে।সেই ধুম ছবিকে আমাদের চলচিত্র বোদ্ধারা ভালভাবেই গ্রহন করেন,কিন্তু সমস্যা হয় তখন,যখন বাংলা ছবির কোন নায়িকা খোলামেলা সিনে অভিনয় করে।
(চলবে)]
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৮