somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাদের কার্ণিশে কাক - ১৫

২৪ শে মে, ২০০৭ দুপুর ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে ওপেন এয়ার কনসার্ট। বাংলালিংকের স্পন্সরশিপ। ভীড়ে গিজগিজ অবস্থা। খানিকটা দূরে দাড়িয়ে সরণ ভাবছিল কোথায় বসা যায়। শিবলী-সাব্বিরদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মোবাইলে কল করলেও রিসিভ করছে না। সরণ এসএমএস দিয়ে রাখে। একবার ভাবে - বাসায় চলে গেলে কেমন হয়? এরকম জনসমাগমে একা একা ভালো লাগে না, অস্বস্তি লাগে। সরণের মনে হয় - এখানে শুধু সে-ই একা এসেছে, আশেপাশে আর কেউ একা নেই। তারুণ্যের হৈ-চৈ। উচ্ছ্বল ছেলে-মেয়েদের দল। প্রেমিকা ধরে আছে প্রেমিকের হাত। প্রেমিকের গায়ে পাঞ্জাবী, স্কাই ব্লু জিন্স, প্রেমিকার সাদা শাড়ীতে লাল পাড়। মুহুর্তে মনে হয় - এ হৃদকম্পণের শহর হঠাৎ উৎসবের নগরী হয়ে গেছে। এক তরুণী অনভ্যস্ত হাতে শাড়ী গুছাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলালিংকের কালো-হলুদ ফ্যাটি পরা তরুণদল স্টেজের কাছাকাছি ভীড় করছে। সরণ হেঁটে হেঁটে স্টেজের বাম পাশে যায়, দেখা হয় - কলেজ ফ্রেন্ড ফুয়াদের সাথে। ফুয়াদ চিৎকার দেয়, 'কীরে সরণ, কী খবর? শুনলাম তুই নাকি সিটিসেলের বিগ বস'!
সরণ উড়িয়ে দেয় - 'ধুর, কীসের বস? কামলা খাটা চাকরী।'
ফুয়াদ শার্টের হাতা গুটায় - 'আররে, ব্যাপার না। তো একা আসছোস, নাকি গার্লফ্রেন্ড আছে?'
- 'না দোস্ত। হইলো কই আর?' সরণ হাসি দেয়।
- তাইলে আর আমাদের সাথে আয়, এদিকেই থাক।
স্টেজে তখন রিজওয়ান গান গাইছে। পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো - রিজওয়ান নাকি এটিএন তারকা। ট্যালেন্ট হান্টিং প্রজেক্টে ক্লোজ আপ ওয়ান হিট। এটিএনের প্রোগ্রামগুলো দেখা হয়নি। তবে রিজওয়ানের গান শুনে সরণের মনে হচ্ছে - দারুণ গায়কী ঢং, গলাও চমৎকার। হাল্কা-পাতলা শরীর নিয়ে কাঁধ নাচিয়ে গাইছে - 'ছোট্ট এ জীবনে, সূর্যের কিরণে, ঘাসের বুকে থেকে, তোমাকে দেখে দেখে, শিশিরের মতো হারাতে চাই না। ধিনাক ধিনাক ধিন, ধিনাক ধিনাক ধিন, ধিন ধিন ধা-না'। সামনের প্রান চঞ্চল তরুণ দল গানের তালে তালে হাত নাড়িয়ে চলেছে। সুমন চট্টোপাধ্যায় নাকি এক ইন্টারভিউতে বলেছিল - 'তোমাকে চাই' গানের সাথে মিশে তরুণ তরুণী মাথা দোলাতে পারে, এটা কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব। সরণের কেন জানি হঠাৎ ভালো লেগে উঠে। সেটা রিজওয়ানের গানে নাকি সামনের উল্লাসে, তা ঠিক বুঝতে পারে না। বেলার কথা মনে পড়ে। মনে হয় - এ ভীড়ে কোথাও বেলা আছে হয়তো। ইদানিং এমন হচ্ছে - বেলার কাছে মেইলে কী লেখা যায় ওটার ড্রাফট মনের ভেতর চলতে থাকে। ট্রাফিক জ্যামের বিরক্তিকর সময়গুলো বেলার মেইলের কথা ভেবে অনয়াসে কেটে যায়। ভীড় বেড়েছে অনেক। হাবিব ওয়াহিদ যখন স্টেজে আসে তখন সন্ধ্যা নামছে। হাবিবের গান এখন ক্রেজ। চলনে বলনে কেউ কেউ হাবিবের ডুপ্লিকেট - হাফ ফরাসী দাড়ি, স্পাইক হেয়ার কাট, শার্টের উপরে টি-শার্ট - - -। সরণ অপেক্ষায় ছিল কখন 'অচিন দেশের মাঝি ভাইরে' গাইবে হাবিব। অথচ গাইলো না। হয়তো এমন কনসার্টে ঐরকম গানের পাবলিক ডিমান্ড নেই। বরং খানিকটা সুর পাল্টিয়ে 'কৃষ্ণ' গাইলো দুইবার, প্লাগড-আনপ্লাগড।

রাতে বাসায় ফিরে মনে হয় আজ কী যেন একটা জরুরী কাজ করা হলো না। গত ক'দিন ধরে কাজটা মাথার ভেতর বারবার টোকা দিচ্ছিলো, অথচ আজ মনে পড়ছে না। মন আর মাথার সংঘর্ষের সময়টুকুয় সরণ কম্পিউটার অন করে। জিমেইল ইনবক্সে নতুন মেইল -

হাই,
খুব ব্যস্ত নাকি? অনেকদিন মেইল পাই না আপনার!
< বেলা >
--------------------

আচমকা সরণের মাথাটা শীতল হয়ে আসে। আগামীকাল ২৬ তারিখ। বেলার বার্থ ডে। বেলাকে মেইল করতে হবে। ক্লিক কম্পোজ।

বেলা:
শুভ জন্মদিন!
হ্যাপি বার্থ ডে!!
অফুরান শুভকামনা!!!
কত দ্রুত সময় কেটে যায়।
মনে হচ্ছে - এই তো সেদিন মেমরী টেস্ট খেলতে খেলতে আপনাকে শুভ জন্মদিন বললাম।
এক বছর পার হয়ে গেলো!
আমাদের জীবন বুঝি এভাবেই ফুরিয়ে যায়।
আজ বাংলালিংকের কনসার্টে গিয়েছিলাম।
হাবিবের গানের চেয়ে রিজওয়ানের গান ভালো লাগলো বেশী।
জানি না - কেন, বারবার মনে হচ্ছিল - আপনি ঐ কনসার্টে ছিলেন।
হা হা হা। আজব ভাবনা।
ইদানিং আপনার কথা ভেবে অনেক সময় কেটে যায়।
আপনার কথা মানে - আপনার মেইলের কথা; আমি কী লিখবো, আপনি কী লিখতে পারেন -এইসব।
এনিওয়ে, বেশী কিছু লিখছি না আর।
জন্মদিনে কী কী করলেন, জানিয়ে মেইল করবেন।
সময় করে মেইলের সাথে অ্যাটাচড অডিও ফাইলটা ডাউনলোড করবেন প্লিজ।
হয়তো শুনেছেন আগে, মাইলসের গান - 'তুমি এইদিনে পৃথিবীতে এসেছো, শুভেচ্ছা তোমায় - - -'।
আপনার জন্মদিনে আমার কথা মনে করে না হয় আরেকবার শুনলেন!
আবারও শুভকামনা!
- সরণ

----------------------

হ্যালো,
কেমন আছেন? আপনার স্মৃতি শক্তির প্রশংসা করছি। আমাকে জন্মদিনে উইশ করেছেন মনে করে। মাইলসের গানটি শুনেছি। সংগ্রহে ছিল না। থ্যাংকস! খুব খুশী হয়েছি। জন্মদিনে তেমন কিছু করিনি। বাসায় ছিলাম। ফ্রেন্ডরা এসেছিল, খাওয়া দাওয়া করলাম। পরে সবাই মিলে ছবি দেখলাম - 'কাভি আল বিদা না কাহে না'। যতটা শুনেছিলাম ততটা ভালো লাগেনি।
হাবিবের কনসার্টে ছিলাম না। শুনেছি খুব জমেছিল নাকি! সরণ, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে - আপনার আর আমার দেখা হয়ে যাবে খুব শীঘ্রি। মাঝে মাঝে আমার সিক্সথ সেন্স প্রবল হয়ে উঠে। সিক্সথ সেন্সের উপর প্রবল আস্থা রেখেই বলি - আপনার সাথে আমার দেখা হয়ে যাবে!
টেক কেয়ার!
< বেলা >


(চলবে...)
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×