somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরব সিংহ উমর ইবনে আল খাত্তাব

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রখর তপ্ত বালুকাময় প্রান্তরে হেঁটে চলেছে বৃদ্ধ নারী শিশু আর পৌড়দের এক কাফেলা । উটগুলো নাসারন্ধ কিছুক্ষন পরপর ফুলে উঠছে কাছে পিঠে পানির গন্ধ শোঁকার সহজাত স্বভাবে। দূরে এক উঁচু বালুর পাহাড়ে এক আরবী ঘোড়ায় সওয়ার এক তেজতীপ্ত বেদূইন যুবক অনেকক্ষন ধরে সেই কাফেলার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। কাফেলার উটগুলোর পিঠে চাপানো সংসারের যাবতীয় বোঝা চাপানো দেখে বোঝা যাচ্ছে এই কাফেলার সদস্যরা আর কখনো হয়ত ফিরে আসবেনা এই তল্লাটে । আর সেই কারনেই সেই বেদূইন যুবক কিছুটা দূঃখিত। আজকের এই কাফেলার চিরদিনের জন্য চলে যাওয়া তার মনে কোথায় যেন এক ঝড় তুলে চলেছে। সেই বেদূইন যুবক ভেবে চলেছে অনেকক্ষন ধরে কি সেই সত্য ? যেই সত্যর কারনে যুগ যুগ ধরে মক্কায় বসবাসকারী এই কাফেলার দল অনেক অত্যাচার সহ্য করে সমস্ত অধিকারকে জলান্জলী দিয়ে আজ পথের ফকিরের বেশে হেঁটে চলেছে আবিসিনিয়ার পথে। সেই সত্যকে জানার প্রবল আগ্রহ সেই বেদূইন যুবকের মনে দিনে দিনে ছাইচাপা আগুনের মত ধিকিধিকি জ্বলেই চলছিলো । আর সেই কারনেই প্রতিদিন এরকম মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়া কাফেলার দলকে সে দৃষ্টিসীমার শেষ পর্যন্ত দেখে বাড়ী ফিরে আসাটা তার এক প্রাত্যহিক অভ‌্যাসে দাড়িয়ে গিয়েছিলো অবচেতন মনে। কিন্ত কি একটা অজানা কারনে তার সাহস বা ইচ্ছে করেনি সেই সত্যকে জানার অথবা কাফেলার কারও সাথে কথা বলার। কিন্ত একদিন সে তার অবচেতন মনেই কি কারনে এরকমই এক মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়া কাফেলার কাছে ঘোড়া ছুটিয়ে এগিয়ে গেল।

সেই যুবকের এরকমভাবে ছুটে আসতে দেখে কাফেলার অনেকেই ভীত হয়ে উঠল। শিশুদেরকে নিয়ে মহিলাদের দল জড়সড় হয়ে আড়ালে লুকালো কিছু যুবক আর প্রবীনের দল দ্বিধামিশ্রিত হয়ে খোলা তরবারী নিয়ে মুখামুখি হল সেই বেদূইন যুবকের কারন এই যুবক সেই সত্যকে গ্রহন করার কারনে কুরাইশদের সাথে মিলে তাদের উপর চালিয়েছে অনেক অত্যাচার। তারা ভাবছিলো হয়ত কোন বদমতলবে আবার কোন অত্যাচার বা হত্যার উদ্দেশ্য এই যুবকের আগমন। কিন্ত কাছে আসতেই সেই যুবক তাদের কে আশ্বস্ত করলো তার খোলা তরবারী খাপে ভরে । ঘোড়া থেকে নেমে সেই বেদূইন যুবক দৃপ্তপদে এগিয়ে গেল সে উম্মে আবদুল্লাহ বিনতে হানতামাহের কাছে।

(১) " তোমরা কি একেবারের জন্য এই মক্কা ছেড়ে চলে যাচ্ছো ?" বেদূইন যুবকের এই প্রশ্নে উম্মে আবদুল্লাহ বিনতে হানতামাহ অনেকটা ঘৃনা আর দ্বেষমিশ্রিত ভাষায় জবাব দিলো " তোমাদের এই অত‌্যাচারে আমাদের আর কি বা করার আছে, নিজের বসতভিটা তাই আজ চিরদিনের জন্য ছেড়ে আমরা আল্লাহর আদেশে এই পবিত্রভূমি ছেড়ে চলে যাচ্ছি , যতদিন না আল্লাহ আমাদের আবার তাঁর এই পবিত্র ভূমিতে ফিরিয়ে না আনেন"। উম্মে আবদুল্লাহ বিনতে হানতামাহের এই তেজদৃপ্ত জবাবে কিছুটা বিচলিত হয়ে সেই বেদূইন যুবক বললো " আল্লাহ তোমাদের যাত্রাপথে সহায় হউন"।
কালক্ষেপন না করে সেই আরব বেদূইন যুবক লাফিয়ে ঘোড়ায় উঠে জোড়ে ঘোড়া ছুটিয়ে নিমিষেই ঝড়ের বেগে দৃষ্টিসীমার আড়ালে মিলিয়ে গেল। আবারো সেই কাফেলার দল তাদের গন্তব্যস্থানের দিকে যাত্রা শুরু করল। উম্মে আবদুল্লাহ বিনতে হানতামাহ শুধু ভাবতে লাগলেন তিনি আজ যা দেখেছিলেন সেই বেদূইন কুরাইশ যুবকের চোখের কোনে সেই চোখের ভাষা কি তিনি পড়তে ভুল করেছিলেন? আসলেই কি আরবের সিংহশার্দূল বীরদের মাঝে যিনি অন্যতম সেই সময়ে সেই উমর ইবনে আল খাত্তাবের চোখে আজ তিনি কি দেখে ছিলেন তাদের জন্য এক অব্যক্ত বেদনার প্রতিচ্ছবি ? মনের সেই গোপন প্রশ্ন কে আপাতত চেপে রেখে উম্মে আবদুল্লাহ বিনতে হানতামাহ উঠে বসলেন উঠের পিঠে এক অজানা গন্তব্যর পথ ধরে কাফেলার সাথে এগিয়ে চললেন।

(২) কিন্ত সেই অত্যাচারী বেদুইন যুবকের চোখের কোনে আজকের দেখা সেই আদ্রতা তাকে অস্থির করে তুললো । বিষয়টি অবশেষে তিনি সত্যর আরেক অনুসারী আমির ইবনে রাব্বিয়াহকে বললে, তিনি অনেক তাচ্ছিল্য আর অবিশ্বাসের সাথে বললেন " তার মানে তুমি কি বলতে চাও সেই কঠোর অত্যাচারী বেদূইন যুবক অবশেষে ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নিবে? খানিক ক্ষন হেসে আমির বললেন এই কথাটা বিশ্বাসের চাইতে সেই অত্যাচারী যুবকের গৃহপালিত গাধাটা বরং ইসলাম গ্রহন করবে এই কথাটা বললে আমি বিশ্বাস করতে রাজী আছি।"
তবু যেন উম্মে আবদুল্লাহ বিনতে হানতামাহ বিশ্বাস করতে ভাল লাগছিলো যে হয়ত সেই অত্যাচারী বেদূইন যুবকের চোখে যদি তিল পরিমান দয়ার উদ্রেক হয় তাহলে হয়ত সেটা মক্কার অনুসারীদের জন্য হতে পারে মহান আল্লাহ পক্ষ থেকে এক বিশেষ রহমত। শুধু উম্মে আবদুল্লাহ বিনতে হাতমাহ নয় বরং এই প্রার্থনা ছিল সে সময়কার মক্কার সত্য অনুসারীদের সকলের। কারন সেই অত্যাচারী বেদূইন যুবক ছিলো আরবের কুরায়শ বংশের এক উজ্জল নক্ষত্র, একজন সাহসী বীর তিনি ছিলেন আল খাত্তাবের ছেলে উমর ইবনে আল খাত্তাব।

(১) এবং (২)

[Seerah ibn Hishaam (1/216) and Fadaail As-Sahaabah (1/341), by Imaam Ahmad. The chain of this narration is Hassan.]

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪০
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×