somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরবাসে ঈদ আনন্দ (৫ম অধ্যায়)

০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্ল্যাক উডসের দেশে- ইউএন অফিসের সালতামামি (৪র্থ অধ্যায়)

বান্দাকায় আসার পর প্রথম যেদিন শুক্রবার পেলাম সেদিন যদিও ইউএনের অফিসের সময়সূচী অনুযায়ী আমাদের অফিস খোলা থাকে কিন্ত জুম্মার দিন থাকায় আমরা যারা মুসলিম তারা অফিস থেকে চলে আসতাম স্থানীয় এক মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য। আমি অবশ্য অফিসে সে সময় একজন কে রেখে আসতাম যে কোন মেসেজ বা ফোনকল রিসিভ করার জন্য। ধারনা করা হয়ে থাকে যে বান্দাকার জনসাধারনের মোট ২০% মুসলিম। এখানে লোকমুখে জানলাম সর্বমোট ৫টি মসজিদ আছে এই বান্দাকা শহরে। আমি যে মসজিদে গেলাম সেটি ছিল এই এলাকায় সবচেয়ে বড় মসজিদ। এছাড়া এই মসজিদে সাধারনত আমরা যারা ইউএনের স্টাফ ছিলাম তারা সবাই একসাথে নামাজ পড়তে আসতাম।

প্রথম যেদিন যাই ভেবেছিলাম হয়ত খুব বড় একটা মসজিদ হবে কিন্ত আকারে দেখলাম তেমন একটা বেশ বড় মসজিদ নয়। একতলার মসজিদটিতে সবমিলিয়ে হয়ত ৫০০ জন নামাজ পড়তে পারবে। মসজিদের একপাশের অংশ মহিলাদের জন্য নির্ধারিত । বেশ অবাক হয়ে দেখলাম এখানে মহিলারা ব্যাপক হারে মসজিদে এসেছে জুম্মার নামাজ আদায় করার জন্য এবং মায়ের কোলে বাচ্চারা বেশ শোরগোল করছে মসজিদের ভেতরে। মহিলাদের মধ্যে কিছু মহিলাকে দেখলাম মুসলিম নারীদের মত পর্দা করে এসেছে আবার অনেককেই দেখলাম পর্দা ছাড়াই মসজিদে এসেছে। এখানে অনেক পুরুষ মুসল্লীদের দেখলাম মসজিদে মাটিতে বসে সামনে অর্থাৎ কিবলার দিকে (বান্দাকায় কিবলা পূর্বদিকে) পা সটান দিয়ে দিব্যি বসে আছে। বিষয়টা আমার কাছে বেশ অস্বস্তিকর মনে হচ্ছিলো কারন ছোটবেলা থেকে মুরুব্বীদের কাছ থেকে শিখেছিলাম কিবলার দিকে পা দেয়া ঠিক নয় অথচ তারা সেটা দিব্যি করে যাচ্ছে। পরে আমি আমার দোভাষী জর্জ মোবোয়ুর কাছ থেকে জানতে পারলাম মজার একটা বিষয় । এখানে আফ্রিকান নারীরা তাদের বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে পিঠে একটা কাপড়ের মাধ্যমে বেঁধে সারাদিন সংসারের সকল কাজ থেকে শুরু করে মাঠেও কাজ করার সময় সেই পিঠে বাচ্চা নিয়েই করতে হয়। এর ফলে একটি আফ্রিকান কংগোলিজ বাচ্চা ছোটবেলার অধিকাংশ সময় মায়ের পিঠেই ব্যয় করে আর এই পিঠে থাকার সময় তাদের পা দুটো মায়ের পিঠের দুদিকে সটান ঝোলানো থাকে । ফলে তারা যখন বড় হয় তখন আমাদের এশিয়ানদের মত পা গুটিয়ে তাদের জন্য বসাটা বেশ দুরুহ হয়ে পড়ে । আর পা গুটিয়ে বসলেও সেটা বেশীক্ষনের জন্য সম্ভবপর হয়না।

মসজিদে যে বিষয়টি সবচেয়ে অবাক হলাম দেখে সেটি হল ইমাম সাহেবের খুতবার বয়ান। অতন্ত্য তেজদীপ্ত ভংগীতে তিনি ঠিক বতৃক্তার মত করে খুতবা বয়ান করলেন এখানকার স্থানীয় লিংগালা ভাষায়। যার একটি শব্দও আমি বুঝতে পারলামনা খালি দেখলাম একটি শব্দ "জাম্বে"বেশ কয়েকবার উনি বললেন পরে জানতে পারলাম লিংগালা ভাষায় জাম্বে মানে সৃষ্টিকর্তা। এখানকার মসজিদে আরো একটি বিষয় আমাকে অবাক করলো ,দেখলাম মসজিদে প্রায় ১০০ জনের মত ভারতীয়দের নামাজে অংশ নিতে। জানতে পারলাম এখানকার অধিবাসীদের কাছ থেকে যে গত ৫০ বছর যাবৎ এই বান্দাকা তথা কংগো সহ আফ্রিকার প্রায় সব কটি দেশে ভারতীয়রা সেই ১৮ শতকের দিক থেকে ভারতবর্ষ থেকে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায় মূলত অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে কিন্ত ধীরে ধীরে পরিশ্রম আর মেধার কারনে প্রতিকূল পরিবেশের মাঝেও তারা একসময় বেশ ভালভাবেই এসব আফ্রিকান দেশের স্রোতধারার সাথে খাপ খাইয়ে অর্থনৈতিক ভাবে বেশ স্বচ্ছল হয়ে উঠে।

আমার দেখা এই বান্দাকায় এই ভারতীয়রা মূলত সকলেই গুজরাট থেকে এখানে এসেছে।এবং সেই আদি ভারতীয়দের বংশধররা আজও বেশ দাপটের সাথে এই বান্দাকায় অধিকাংশ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক হিসেবে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার অর্থনীতির চাকাকে একদিকে যেমন সচল রেখেছে অন্যদিকে নিজেরাও বেশ শক্তিশালী অবস্থানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। মসজিদে নিয়মিত জুম্মার নামাজ পড়তে যেয়ে মূলত ইউএনের স্টাফ আইটি স্পেশালিস্ট ইন্ডিয়ান শেখ রিয়াজের মাধ্যমে এই ভারতীয় মুসলমানদের সাথে মেলামেশার সুযোগ হয়। রিয়াজের কাছ থেকে জানতে পারলাম এই বান্দাকায় সব ভারতীয়রা মূলত গুজারাটি মুসলমান এবং এরা বর্তমানে প্রায় ৫০ টির মত পরিবার এখানে বসবাস করছে। প্রতিবছর এরা তাদের ব্যবসা আর গৃহস্থালি কাজ দেখাশোনার জন্য দেশ থেকে নতুন মুখ নিয়ে আসছে । এছাড়া নতুন বংশধররা ধীরে ধীরে এই বান্দাকায় ভারতীয়দের মোট জনসংখ্যার বেশ বড় একটা অংশ হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রতি রবিবার ছুটির দিনে স্থানীয় ইন্ডিয়ানদের সাথে ক্রিকেট খেলার জন্য শেখ রিয়াজের সাথে আমিও চলে আসতাম স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। এভাবেই তাদের সাথে আমারও একটা সখ্যতা গড়ে উঠে।

এভাবেই কাটতে লাগলো আমার বান্দাকার দিনগুলি এবং দেশ থেকে আসার পর কেটে গেল দেখতে দেখতে ২ মাস এবং শুরু হল পবিত্র রমজান মাস। এই প্রথম দেশের বাইরে রমজান মাসের রোজা রাখা শুরু করলাম। প্রথম প্রথম কিছুটা অসুবিধা হত কিন্ত পরে সবকিছু একটা রুটিনে দাড়িয়ে গেল। তবে একটা ব্যাপারে খুব ভাল লাগতো যখন আমরা সেন্ট্রাল ব্রিফীং এ কনফারেন্স রুমে বসতাম তখন সেখানে আমরা কয়েকজন মুসলিম থাকার কারনে অন্যরা আমাদের সামনে বিয়ার তো দূরের কথা এমনকি পানিও পান করতোনা কারন তারা জানতো আমরা রোজাদার। এই ধর্মীয় সম্মানটুকু একজন মুসলিম হিসেবে অমুসলিমদের থেকে পেয়ে আমাদের খুব ভাল লাগতো। অন্যদিকে আমরাও চেষ্টা করতাম এই সময়ে অন্যদের সামনে বিশেষ করে খাবার গ্রহনের সময় আমরা তাদের সাথে কোন বিষয়ে দেখা করতে যাওয়ার চেষ্টা করতামনা। এই ধরনের পারষ্পরিক ধর্মীয় মুল্যবোধের বিষয়টি ইউএনের স্টাফদের মাঝে দেখে খুব ভাল লাগতো।



আমার ক্যাম্পের প্রতিদিনের সন্ধ্যায় আমরা ইফতারিতে দাওয়াত করতাম এখানকার মুসলিম ও অমুসলিম স্টাফদেরকে। সকলেই তারা আসতো বেশ আগ্রহ নিয়ে এবং ইফতারের পরে আমরা বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা সকলে মিলে ক্যাম্পের নামাজ পড়ার রুমে একত্রে তারাবীর নামাজ পড়তাম। এবং নামাজ পড়ার সময় একটা বিশেষ লক্ষ্যনীয় বিষয় ছিলো যে আমরা যারা উপমহাদেশের মুসলিম তারা হাত বেঁধে নামাজ পড়তাম অন্যদিকে আফ্রিকান দেশের মুসলিমরা হাত দেহের দুপাশে ছেড়ে দিয়ে নামাজ পড়তো। কিন্ত একটি বিষয়ে আমরা সকলেই এক ছিলাম আর তা হল আমরা সকলে মুসলিম এক আল্লাহর ইবাদতকারী। বান্দাকার ইমামের ক্বেরাত পাঠ আমাকে অসম্ভব ভালোলাগায় আচ্ছন্ন করত। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করতাম বান্দাকার মসজিদের সেই ইমাম সাহেব যখন জুম্মার নামাজের সময় ক্বেরাত পাঠ করতেন, তার সেই করুন সুরের ক্বেরাত পাঠ শুনে ইমাম সাহেবের সাথে আমরা মুসল্লীরাও চোখের পানি না ফেলে পারতামনা। ইমাম সাহেবের সুললিত কন্ঠের তেলাওয়াত শুনে তার সম্পর্কে স্থানীয় মুসলিমদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম অর্থাভাবের কারনে তিনি দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস ধরে পায়ে হেঁটে সৌদি আরবের মদীনায় গমন করেন এবং সেখানে বেশ কয়েক বছর পবিত্র কোরআন এবং হাদীসের উপর পড়াশোনা করে একইভাবে পায়ে হেঁটে আবার ফেরত আসেন এই বান্দাকা শহরের মসজিদের ইমামতি করার জন্য। তার জীবনের একটাই লক্ষ্য এই বান্দাকার মুসলিমদের জন্য ইসলামের আলো পৌঁছে দেয়া। ইমাম সাহেবে এই আত্মত্যাগের কথা শুনে তার সাথে দেখা করবার জন্য মনস্থ করলাম। ইমাম সাহেব ইংরেজী বোঝেননা তাই তার সাথে ফ্রেন্চ বা লিংগালা ভাষায় কথা বলার জন্য একদিন জুম্মার নামাজের পরে আমার দোভাষী জর্জ মোবোয়ুকে বললাম সে যেন মসজিদের চত্বরে আমার জন্য অপেক্ষা করে। নামাজের পরে ইমাম সাহেবের সাথে দেখা করলাম সালাম দিয়ে অতন্ত্য সম্মান এবং বিনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করলাম আপনি এই মসজিদের ইমাম হিসেবে এতবড় একটা গুরু দায়িত্ব পালন করছেন এবং মানুষকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন অথচ এই মসজিদে আমি নিয়মিত জুম্মার নামাজ এবং কখনও কখনও অন্যান্য সময়ে নামাজ পড়তে আসি কিন্ত মসজিদে আমি কোন কোরআন শরীফ বা হাদিস সংক্রান্ত বই এমনকি আপনাদের ফ্রেন্চ ভাষায়ও কোন বই আমি দেখিনি বিষয়টা আমাকে বেশ অবাক করেছে এর কারন কি? প্রতি উত্তরে সেই ইমাম সাহেব অতন্ত্য ভারাক্রান্ত এবং আবেগের সাথে কি যেন বললেন ফ্রেন্চ ভাষায় এবং দেখলাম কথা বলার সময় তার চোখের কোনে জল জমে আসছে। আমাকে অনুবাদ করে ইংরেজীতে আমার দোভাষী জর্জ মোবোয়ু বললো যে ইমাম সাহেব বলেছেন তার এই মসজিদে সে অর্থাভাবের কারনে এবং অনেক দূরের পথ পরিক্রমায় সে কোন কোরআন শরীফ বা হাদিস সংক্রান্ত বই সাথে আনতে পারেননি সেই সুদূর মদীনা থেকে। এছাড়া এখানকার মুসলমানরা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে এমনকি তাদের মধ্যে অনেকেই এখন নামাজ পড়া পর্যন্ত ভুলে গেছে।অন্যদিকে কোরআনের অনুবাদ ফ্রেন্চ ভাষায় কোন বই না পাওয়ায় এই মুসলমানদের জন্য তিনি নিজের স্মরনশক্তির উপর ভর করে এদের কোরআন এবং আরবী শিক্ষা দিয়ে আসছেন। কথাগুলো শুনে বেশ মন খারাপই লাগলো।একজন ইমাম এত কষ্ট করছেন এত প্রতিকূল পরিবেশের মাঝেও অথচ তাকে সাহায্য করার জন্য তার পাশে কেউ দাড়াচ্ছেনা। মনে মনে সির্ধান্ত নিলাম বাংলাদেশে ছুটিতে গেলে চেষ্টা করতে হবে ফ্রেন্চ অনুবাদের কোরআন শরীফ এই বান্দাকার মসজিদগুলোর জন্য কিনে আনবার।

অবশেষে দীর্ঘ একমাস রোজা পালনের পর এলো ঈদুল ফিতরের দিন। সকালে সবাই মিলে আমরা ক্যাম্পে সেমাই রান্না করে খেলাম সকালের নাস্তায়। যদিও সেনাবাহিনীর নিজস্ব নিয়মে আমরা সবসময় দেশে থাকতেই যে কোন একটা ঈদ কাটাতাম পরিবার সাথে আর অন্য ঈদ কাটাতাম সেনানিবাসে কিন্ত দেশের থেকে হাজার মাইল দূরে যেন বিচ্ছেদের ব্যাথাটা বেশি করে সবাই অনূভব করছিলো সেদিন। আমি কজনকে ক্যাম্পে ডিওটিতে রেখে বাকী সকলকে নিয়ে রওয়ানা হলাম সকাল আটটায় স্থানীয় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে। মসজিদে পৌঁছে দেখলাম মুসল্লীদের ভিড়ে মসজিদ ভরপুর ভাগ্য ভাল আমাদের জন্য একটি স্থান পাওয়া গেল বসার জন্য । মসজিদের চত্বরে দেখলাম নামাজ পড়ার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একে একে নামাজ শেষে ঈদের খুৎবা পাঠ হল সবশেষে শুরু হল মোনাজাত কেন জানি সেসময় খুব বেশী করে মনে পড়লো আব্বার কথা যাকে হারিয়েছি একবছর আগেই , মায়ের কথা , বউ,বাচ্চা আর প্রিয়জনদের কথা খুব বেশী করে মনে পড়ল , মনের অজান্তেই চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পড়ল উষ্ন কফোঁটা চোখের জল।
ঈদের নামাজের পরে সকলে মিলে বেরিয়ে আসলাম মসজিদের খোলা চত্বরে দেখি সব কংগোলিজ মুসলিমরা সহাস্য একে একে আমার এবং আমার সৈনিকদের সাথে কোলাকুলি করতে এগিয়ে আসছে ,আমরাও এগিয়ে গেলাম তাদের দিকে। কিছুক্ষনের জন্য যেন ভুলে গেলাম আমরা কয়েক হাজার মাইল দূরে বিদেশ বিভূয়ে আছি। অনেক ইন্ডিয়ান গুজরাটিরাও এগিয়ে এলো আমার সাথে কোলাকুলি করার জন্য। অবশ্য ক্রিকেট খেলার সুবাদে ওদের সাথে আমার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো ইতিমধ্যে। কোলাকুলি করে সবাই যখন একে একে মসজিদ চত্বর ত্যাগ করছিলো। আমিও মনে মনে প্রস্ততি নিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলাম ঠিক এইসময় এক গুজরাটি বন্ধু আমর কাছে এসে বললো ক্যাপ্টেন আশিক তুমি কি একটু আমাদের এক মুরুব্বীর সাথে কথা বলবে উনি কি যেন তোমাকে বলতে চান ? আমি দেখলাম মসজিদ চত্বরে এক কোনায় বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ ভারতীয়রা গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি এগিয়ে গিয়ে সকলকে সালাম জানালাম তারা হেসে আমাকে গুজরাটিদের নিজস্ব ভাষায় আমার কুশলাদি জিজ্ঞেস করল পাশে থেকে একজন গুজরাটি ছেলে দোভাষীর মত আমাকে ইংরেজীতে অনুবাদ করে দিল। সেই বৃদ্ধদের মধ্যে যিনি এখানকার ভারতীয় পরিবার সমূহের প্রধান তিনি আমাকে বললেন আমি তাদের আমন্ত্রন গ্রহন করে তাদের সাথে ঈদের আনন্দভাগ করে নেয়ার জন্য তাদের এলাকায় যাব কিনা ? আমি প্রথমে বুঝতে পারছিলামনা কি বলব ।এই গুজরাটি পরিবারগুলো কিভাবে এই বান্দাকায় থাকে এবং তাদের জীবনধারা সম্পর্কে একটা ধারনা নেয়ার জন্য এই সুযোগের লোভ সামলাতে না পেরে রাজী হলাম। অন্যদিকে যেহেতু এখানকার গুজরাটিদের সাথে আমার একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আর ইউএনের শেখ রিয়াজ যেহেতু আমাদের সাথে ছিলো তাই রাজী হলাম এবং আমার কজন সহকর্মীদের সাথে নিয়ে তাদের বাড়ী গেলাম।

অবশ্য একে বাড়ী না বলে বলা যেতে পারে একটা ছোটখাট ভারতীয় রাজত্ব। এখানকার গুজরাটী পরিবারগুলো ঠিক যৌথ পরিবার হিসেবে না থাকলেও পরিবারগুলো আলাদা আলাদা পাকা বাড়ী গুলো একটি বিশাল এলাকার জুড়ে তৈরী করেছে এবং মজার বিষয় হচ্ছে বাসাগুলো সব আফ্রিকান দেশে হলেও তৈরী ভারতীয় আদলে। এছাড়া বাড়িগুলো সব আমাদের দেশের গ্রামের বাড়ীর মত মাঝখানে একটা বিশাল মাঠের মত জায়গার চারপাশ জুড়ে দাড়িয়ে আছে। আমরা সবাই গেলাম সেই গুজরাটি পরিবারের যিনি প্রধান তাঁর বাসায়, তিনি প্রায় ৮০ বছর বয়সী একজন দীর্ঘ শুভ্র শ্মশ্রুমন্ডিত ব্যক্তি নাম আকরাম খান তিনি বেশ মিশুক আমাদের সাথে তিনিও সেমাই খেলেন সাথে ভেতরের অন্দর মহল থেকে আসলো আমাদের জন্য চানাচুরের সাথে আরো কিসব মিশিয়ে এক মজার গুজরাটি খাবার, খেতে যদিও কিছুটা ঝাল তবে বেশ মুখরোচক তারপর আসলো বেশ কয়েক রকমের হালুয়া এবং সবগুলো ছিলো স্বাদে অসাধারন। আমরা কিছুক্ষন সময় কাটালাম সেখানে তারপর বিদায় নিলাম তবে তার আগে আবার সেই বৃদ্ধ বেশ জোড় করে দাওয়াত দিলেন, বললেন রাতে এখানকার সবগুলো পরিবার একসাথে এই মাঠে জড়ো হবে ঈদের আনন্দ একসাথে কাটানোর জন্য তাছাড়া থাকবে খাওয়াদাওয়ার বিশাল আয়োজন। আমি কথা দিয়ে ফিরে আসলাম ক্যাম্পে ।

সারাদিন কাটালাম ক্যাম্পে সৈনিকদের সাথে গল্প করে মাঝখানে কিছুক্ষন সময় কাটালাম স্কাইপিতে দেশে মা,বউ, বাচ্চা আর পরিবারের সকলের সাথে কথা বলে। দুপুরে দাওয়াত দিয়েছিলাম বেশ কিছু ইউএনের স্টাফদের তাদের সাথে আমি আর আমার সৈনিকরা একসাথে খাওয়া দাওয়া করলাম। একসময় সকলে বিদায় নিলে অলস দুপুরে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিলাম গভীর নিদ্রায়। শেষ বিকেলে উঠে দ্রুত তৈরী হয়ে নিলাম রাতের জন্য। সন্ধ্যার পর যে কয়জন সহকর্মী সকালে আমার সাথে গিয়েছিলো তাদেরকে ক্যাম্পে রেখে বাকীদেরকে নিয়ে গাড়ীতে উঠে রওয়ানা দিলাম সেই গুজরাটিদের পরিবারদের সাথে ঈদের দাওয়াতে অংশ নেয়ার জন্য।

ওখানে পৌঁছে দেখি বাড়ীর সদরে সেই বৃদ্ধ পরিবার প্রধান আকরাম খান আমাদের কে অভর্থ্যনা জানানোর জন্য। আমাদের কে দেখে আকরাম খান বুকে জড়িয়ে ধরলেম পরম মমতায়। বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করে দেখি রাতের অন্ধকারে বিশাল মাঠ জুড়ে প্যান্ডেল টাঙানো ঠিক বিয়ে বাড়ির মত। আর মাঠের ঠিক মাঝ বরাবর এক বিশাল সামিয়ানা দিয়ে দুভাগ করা। এখানকার গুজরাটি সমাজব্যবস্থায় কিন্ত মেয়েরা সকলে মুসলিম নিয়ম মোতাবেক পর্দা প্রথা মেনে চলে। আমাদের সকলকে আমন্ত্রন জানানো হলে আমরা মাঠে পেতে রাখা অনেকগুলো গোল টেবিলের একটিতে বসে পড়লাম। একই টেবিলে বসলাম আমার সাথে বসলেন পরিবারপ্রধান আকরাম খান, জানানো হল আমি নাকি এই অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি। চেয়ারে বসে চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম মাঠের চারপাশে বাড়ীর কার্নিশ, দরজা , জানালা আর কিছু গাছের ডালে ডালে মরিচা বাতি জ্বলছে । সামিয়ানার একদিকে যেখানে আমরা পুরুষরা বসা সেখানে প্রায় দেড়শত জনের মত লোকজন বসেছে আর অন্যদিকে সামিয়ানার ওপাশে মেয়েমহল থেকে ভেসে আসছে অসংখ্য মেয়েলী কন্ঠস্বরের আওয়াজ। চেয়ারে বসে স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম সামিয়ানার ওপাশ থেকে কিছুক্ষন পরপর বেশ কিছু বিপরীত লিংগের কৌতুহলী চোখের দৃষ্টি আমার ওপর এসে পড়ছিলো। আলাপচারিতারকালে আকরাম খান আমার পরিবারের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, তার এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমার পরিবারের সদস্যদের ঈদ শুভেচ্ছা জানালেন। । কংগোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা হল।

একসময় দেখি বিশাল প্লেটে একে একে টেবিলে আসতে লাগলো বিরিয়ানী, খাসীর রেজালা, মুরগীর রোস্ট, বেশ কিছু বিভিন্ন ধরনের আচার সাথে ছিলো এবং সবশেষে বোরহানি আর জর্দা। অবশ্য আমরা টেবিলে বসার সাথে সাথে ইতিমধ্যে বেশ কিছু মজাদার ফলের জুস খেয়েছিলাম। নৈশভোজের মেন্যুতে পরিবেশিত খাবার মুখে দিয়ে স্পষ্ট টের পেলাম যেন বাংলাদেশেই বসে ঈদের খাবার খাচ্ছি।যেহেতু আমি নিজে ঢাকাইয়া তাই ছোটবেলা থেকে মুখরোচক বিরিয়ানি আর এই জাতীয় খাবারের স্বাদের সাথে আমি পরিচিত। আজ এখানে এসব খাবারের সাথে তাই সেসব খাবারের মাঝে কোন তফাৎ খুঁজে পেলামনা। ভরপেটে খেলাম এবং বুঝতে পারলাম একই স্বাদের খাবার খেয়ে আমাদের প্রবাসের দুঃখ কিছুটা হলেও কমেছে। এদিকে বারে বারে দোভাষীর মাধ্যমে আকরাম খান জিজ্ঞেস করছিলেন আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছেনাতো, আমাদের পরিতৃপ্ত মুখ দেখে তিনি নিশ্চিন্ত হলেন অবশেষে যে আমরা আসলেই খুব তৃপ্তি সহকারে খাবার খাচ্ছি।

খাবার শেষে সকলে মিলে বসে আছি এমন সময় সেনাবাহিনীর চিরচারিত অভ্যাসের বসে মনে হল এই খাবার যারা রান্না করেছেন তাদের ধন্যবাদ দেয়াটা ভদ্রতার মধ্যে পড়ে । এছাড়া তৃপ্তির মাত্রাটা এত বেশি পরিমানে ছিলো যে ধন্যবাদ না দেয়াটা বরং অভদ্রতার শামিলে পড়ে যায়। তাই দোভাষীর মাধ্যমে আকরাম খানকে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি যদি অনুমতি দেন তাহলে যারা এই খাবার রান্না করেছেন তাদেরকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। আমার কথা শুনে তিনি স্মিত হেসে দূরে থেকে একজনকে কি যেন নির্দেশ দিলেন আর আমাকে ইশারায় অপেক্ষা করতে বললেন। কিছুক্ষন পর তিনি আমার হাত ধরে সামিয়ানার পাশে যেয়ে ওপাশে কাকে যেন কি বললেন তারপর বেশ কিছু মেয়েলী গলার ফিসফাস আওয়াজ শুনলাম । তারপর ভেতর থেকে একজন মহিলা গুজরাটি ভাষায় কি যেন বললেন। আকরাম খান আমাকে নিয়ে ঢুকে পড়লেন সামিয়ানার ওপাশে, সাথে শুধু আমার দোভাষী হিসেবে কাজ করার জন্য সেই গুজরাটি ছেলেটাও আমাদের সাথে প্রবেশ করলো । বুঝলাম আমি প্রবেশ করেছি মেয়েমহলের ভেতরে। দেখি মায়ের বয়সী কয়েকজন মহিলারা দাড়িয়ে আমাকে দেখে হাসলেন আমি সকলকে সালাম জানালাম। মহিলারা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন দোভাষীর মাধ্যমে যে আমি যে খাবারগুলো খেয়েছি সেগুলো কি বাংলাদেশে তৈরি হয় কিনা, তাছাড়া রান্না কেমন হল , আমাদের দেশের মহিলারাও কি একইভাবে এইসব রান্না করে থাকেন কিনা আরো অনেক প্রশ্ন। আমি ধীরে ধীরে সকলের প্রশ্নের উত্তর ধারাবাহিকভাবে দিয়ে গেলাম। এবং দেখলাম অদূরে আরেকটি পর্দার বিভিন্ন কোন থেকে বেশ কিছু অল্পবয়স্ক মেয়েরা আমাদের এই আলাপচারিতা দেখছে আর নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছে মৃদুস্বরে। আমি মহিলাদের বললাম আজকে এখানে আমি আর আমার সহকর্মীরা এসে যে সকল খাবার খেয়েছি তার মধ্যে বেশীরভাগ খাবারই আমরা আমাদের দেশে খেয়ে থাকি। তবে আজকের এই খাবারগুলো ছিল বেশ মজাদার আর আমরা এই খাবার খুব তৃপ্তির সাথে খেয়েছি। সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে এই খাবারগুলো আমাদের কিছুক্ষনের জন্য হলেও আমাদের মায়েদের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।দেশ থেকে এতদূরে থেকেও আমরা আপনাদের এই আথিয়তায় সত্যি সত্যি আমরা আজ যেন আমাদের মায়েদের খুঁজে পেয়েছি আর সেজন্য আমি আমার সহমর্মীদের পক্ষ থেকে অনেক কৃতজ্ঞ এবং আমরা চিরজীবন আপনাদের এই স্নেহ আর আথিয়তার কথা আমরা মনে রাখবো । যখন দোভাষী আমার কথাগুলো গুজরাটি ভাষায় সেই মহিলাদের কে বলছিলো দেখলাম সকলের চোখ আদ্র হয়ে উঠছে কেওবা দেখলাম আঁচলে চোখের পানি মুছতে। আমি যেন হঠাৎ হারিয়ে গেলাম । চোখের সামনে গুজরাটি মহিলার জায়গায় যেন দেখতে পাচ্ছি আমার মায়ের প্রতিচ্ছবি। অস্ফুষ্ট স্বরে বিড়বিড় করে মনের অজান্তে যেন বললাম মা তোমাকে খুব ভালোবাসি।

একসময় সকলকে বিদায় জানিয়ে আকরাম খানের সাথে গভীর মমতা মাখানো আলিংগনের স্পর্শে বুকে মেখে সদর দরজার ওপাশে পার্কিং লটে রাখা আমাদের গাড়ীতে উঠার আগে ঘুরে দাড়িয়ে দেখলাম গুজরাটি সেই উৎসবমুখর বাড়ীর সদর দরজায় ঈদের রঙীন পোশাকে দাড়িয়ে আছে সকল বয়সীর নারী,পুরুষ আর শিশুর দল ।সবাইকে দূরে থেকে প্রথমে সালাম এরপর হাত নেড়ে বিদায় জানালাম । গাড়ীতে উঠে জানালার গ্লাস নামিয়ে শেষবারের মত দেখলাম সকলকে। সবাই দেখি তখনও হাত নেড়ে হাসি মুখে আমাদের বিদায় জানাচ্ছে। তখন ভেবেছিলাম আবার সুযোগ পেলে হয়তবা আবার যাবো এই গুজরাটি পরিবারগুলোর কাছে তবে তখনও বুঝতে পারিনি সেটাই হবে আমার তাদের সাথে প্রথম এবং শেষ সাক্ষাৎ। এরপর নানাবিধ ঘটনা আর পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারনে সুযোগ হয়ে উঠেনি সেই বিশাল গুজরাটি পরিবারের অতিথি হবার। তবে আজও মনে পড়ে বিদেশ বিভুঁয়ে সেই অসাধারন দেশি খাবার আর গুজরাটি মায়েদের স্নেহ আর পরম মমতার কথা।

চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:২২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×