somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এবার এফ বি আই এর বলির পাঠা হলো বাংলাদেশের নাফিস

১৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ বিল্ডিং এ বোমা হামলার পরিকল্পনার জন্য গ্রেপ্তার হওয়া আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী ছাত্র কাজী মোঃ রেজোয়ানুল হোক নাফিস এর গ্রেপ্তারের ঘটনা আমেরিকার সচেতন নাগরিক সমাজে সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। বরাবরের মতো এবারও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু এফ বি আই এর স্টিং অপারেশন। আসলেই কি নাফিস আল কায়েদার সাথে জড়িত কিংবা বোমা হামলার কোন পরিকল্পনা কি আদৌ সে করেছিলো? নাকি সব আমেরিকার এফ বি আই এর স্টিং অপারেশনের ফসল, শুধুমাত্র কেবল বাহবা কুড়ানোর জন্য আর টেরোরিজমের বিরুদ্ধে বিশ্বাস অর্জনের জন্য। যেনো ভবিষ্যতে ন্যাটোর পাশাপাশি তারাও কাজ করতে পারে বিভিন্ন দেশে , ঢুকে যেতে পারে যে কোন দেশে সহজেই আর হাতিয়ে নেয় কনফিডেনশিয়াল সব ফাইল?


তার আগে আমরা জানবো কি এই স্টিং অপারেশন? স্টিং অপারেশন হচ্ছে একটা ছদ্মবেশী অপারেশন যেটা পুলিশ বা গোয়েন্দা সিভিল পোশাকে করে থাকেন অথবা সোর্স বা ইনফর্মারদেরকে কাজে লাগানো হয় ক্রিমিনাল ধরার জন্য। সরাসরি ক্রিমিনাল ধরতে পারলে তো খুবই চমৎকার, কিন্তু তা দিয়ে যদি ফাদ পাতা হয় কোন অসহায় ব্যাক্তিকে ধরতে বা ঝুকিপূর্ন লোকদের ধরতে যারা হয়তো কোন ক্রিমিনাল অফেন্সের সাথে জড়িত না বা ঝুকিপূর্ন বা থ্রেট হিসেবে বিবেচিত এমন কোন ব্যাক্তিকে ধরার কাজে যদি ব্যাবহৃত হয় তাহলে ব্যাপারটা নিন্দনীয়। দেখা গেলো লোকটার টাকার খুব দরকার, এমন সময় সে কোন সোর্সের নৈকট্য লাভ করলো, সোর্স থাকে টাকার লোভ দেখিয়ে একটা ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা করলো, আর ব্যাংক ডাকাতি করার সময় সেই সোর্স আগে থেকে পুলিশকে খবর দিয়ে রাখলো, যথাসময়ে ধরা খেলো সেই অসহায় লোকটি। এখন প্রশ্ন হলো যদি পুলিশের সেই সোর্স তাকে লোভ না দেখাতো কিংবা সে রকম সাপোর্ট না পেতো লোকটা কি তাহলে এমন কোন পরিকল্পনার সাহস করতে পারতো? ঠিক এমন একটা ভূয়া বোমা হামলার পরিকল্পনার স্বীকারই হয়েছেন নাফিস। ব্যাপারটা খুলে বলার আগে কয়েকটা স্টিং অপারেশনের উদাহরন দেই আমি।
যেমনঃ
একটা গাড়িকে ফাঁদ হিসেবে রাখা হলো গাড়ী চোর ধরার উদ্দেশ্যে
একটা হানিট্র্যাপ কম্পিউটার বা হ্যাকার ডিটেক্টিং কম্পিউটার রাখা হলো কোন হ্যাকার এর ইনফরমেশন সংগ্রহ করার জন্য।
প্রাপ্ত বয়স্ক না হলে মদপান নিষিদ্ধ, এমতাবস্থায় কোন অপ্রাপ্তবয়স্ক কে অফার দেয়া হলো ড্রিংক্স এর জন্য এরপর তাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হলো।
ছদ্মবেশী খদ্দের সেজে পতিতা আটক করা।
চ্যাট রুমে শিশু সেজে চ্যাট করে শিশু যৌন নির্যাতনকারীকে ধরা ইত্যাদি
কিংবা ভূয়া বোমা তৈরী করে বোমা হাম্লাকারীকে ধরা।

এবার আসি মূল ঘটনায়ঃ
আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ বিল্ডিং এ বোমা হামলার পরিকল্পনার জন্য গ্রেপ্তার হওয়া আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী ছাত্র কাজী মোঃ রেজোয়ানুল হোক নাফিস এর গ্রেপ্তার হন কিছুদিন আগে। অভিযোগ উঠেছে ফেডারেল রিজার্ভের সামনে ১০০০ পাউন্ড বোমা পেতেছিলেন তিনি। সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে পড়ালেখা করতে ভর্তি হোন আমেরিকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
যে বোমা পাতা হয়েছিলো তা ছিলো মূলত অকেজো আর যে মোবাইল ডিভাইস ব্যাবহৃত হয়েছিলো, তা ছিলো আমেরিকা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সাজানো।
তাকে বুধবার আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করেন এবং তার আবেদন খারিজ করে দেয়। ঠিক পর দিন ইউ এস এটর্নী (পূর্বাঞ্চল) লরেন লিঞ্চ এফ বি আই এর প্রসংশা করে একটা স্ট্যাট্ম্যান্ট প্রকাশ করে। এফ বি আই এর এই ধরনের ছদ্মবেশী অপারেশন অনেক আগে থেকেই চাল আছে। সাধারনত যারা ঝুকিপূর্ন বা থ্রেট হিসেবে বিবেচিত হয়, তাদেরই ধরা হয় এর মাধ্যমে। কিন্তু ৯/১১ এর পর এটা বেশ সমালোচিত হয়। আমেরিকার নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি এটার সমালোচনা করে বলেন এটা কি আসলেই সন্ত্রাসবাদ ধ্বংস করতে ব্যাবহৃত হচ্ছে নাকি শধুমাত্র এফ বি আই এর অর্থে পরিচালিত, এফ বি আই এর সাজানো নাটকের মাধ্যমে ঝুকিপূর্ন ব্যাক্তিদের ধরতে কিংবা নির্দোষ লোকদের ফাদে ফেলে ধরতে পরিচালিত হচ্ছে? সবার মনে একটাই প্রশ্ন এফ বি আই এর সাহায্য ছাড়া কি আদৌ এ ধরনের হামলা সম্ভব? ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোরের এক প্রতিনিধি নিউ ইয়র্ক থেকে নিউজ কভার করার সময় এমনটাই বলেছিলেন। ২০০৯ সালে আমেরিকার জিউইস সেন্টারে বোমা হামলাকারী গ্রেপ্তারের পর এক আইনজীবিও বলেছিলেন এমনটা।
এবার একটা ঘটনা বলি। ২০০৯ এর দিকে নিউবার্গ ৪ নামের একটা ঘটোনা ঘটে। যারা নিউইয়র্ক সিটির জিউইশ সেন্টারে হামলা করে, এবং আমেরিকার মিলিটারী বিমান ধ্বংস করে। নিহত হয় অনেকে। তদন্ত করে জানা যায়, আসামী ৪ জন কালো নিগ্রো, তারা নিউবার্গ সিটিতে বাস করে।



View this link
যেটা খুবই দরিদ্র একটা শহর। তাদের বিরুদ্ধে ছোটখাটো কয়েকটা ড্রাগ মামলা ছিলো, তাছাড়া আর কোন বড় অপরাধের সাথে তাদের যুক্ততার প্রমান মিলে নাই। কিন্তু এদেরকে পরে আল কায়েদার সাথে মেশানো হয় আর ২৫ বছরের জেল দেয়া হয়। এই হামলার পরিকল্পনা তাদের মাথায় এনে দেয় একজন এফ বি আই এর সোর্স। নাম ক্রেইগ মন্টি। যে মুসলিম সেজে মসজিদে যেতো নিয়মিত এবং এই ৪ জন লোককে প্ররোরচিত করে। ক্রেইগ মন্টি ড্রাগ মামলার আসামী যে কিনা আবার কাজ করে ইনফর্মার হিসেবে। View this link

ইউ এস সিভিল রাইটস এই ঘটনার নিন্দা করে। এমনকি পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে সে কয়েকজনকে ধর্মান্তরিত হতে প্ররোচিত করেছে, পড়ে স্থানীয়রা মামলা করলে তার জন্য সে মসজিদ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এফ বি আই এর এমন অনেক মামলা আছে যেটা আদালতে বিচারক আসামী ধরতে ‘প্রশ্নবিদ্ধ কৌশল’ বলে অবহিত করেছেন, কিন্তু তা বিচার ব্যাবস্থায় কোন পরিবর্তন আনেনি। দেখা যায় নির্দোষ ব্যাক্তি কৌশলে ফাদে পা দিলেই ২৫ বছরের জেল হয়ে যায়।
কিছুদিন আগে আব্দেল দাউদ নামের এক ব্যাক্তি এফ বি আই এর দ্বারা আটোক হয়। সে নাকি হামলার পরিকল্পনা করেছিলো শিকাগোতে। ইনফর্মাররা প্রথমে তার সাথে যোগাযোগ করে একটা ফেইক জিহাদি চ্যাট সাইটের মাধ্যমে, যেটা চালায় এফ বি আই এর কিছু ইনফর্মার। পরে তার সাথে যোগাযোগ করে, হামলার পরিকল্পনা বাতলে দেয় আর তাদেরকে দুটো ভূয়া বোমসহ গাড়ী দেয়া হয়। হামলার দিন তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ক্লিক
বাংলাদেশী ছেলে নাফিস পড়ালেখা করতে আমেরিকায় যায়। সেখানে তার বিরুদ্ধে আল কায়েদার সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমান এখনও পায় নি পুলিশ। এমনকি তার বাবা, মা আত্মীয়, আমেরিকায় তার বন্ধু প্রতিবেশী সবাই এটাই বলে যে তার মধ্যে কখনোও কোন সন্দেহ জনক আচরন পরিলক্ষীত হয় নি। সম্প্রতি একটা ভিডিও টেপ জব্দ করে পুলিশ, যেটাতে নাফিসকে একটা কথা বলতে শোনা যায়।“ আমি যে কাজটা করতে যাচ্ছি, সেটা কি আল কায়েদা দ্বারা পরিচলিত?’” অর্থাৎ সে তখনোও নিশ্চিত না যে আল কায়েদাই কি তার সাথে কাজ করছে। এখানে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। এই শিকাগোর আব্দেল দাউদের কাহিনী আর নাফিসের কাহিনী একই। পড়ালেখার খরচ চালাতে কষ্টই হচ্ছিলো নাফিসের। হয়তো এই এফ বি আই এর সোর্স তাকে ডলারের লোভ দেখিয়েই কাজটি করে, যার ফাদে পা দেয় অসহায় নাফিস।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যে ভ্যানের ভেতর যে বোমাটা ছিলো, তা ছিলো ডিভাইস নিয়ন্ত্রিত এবং অকেজো। অর্থাৎ বোমাটি নিষ্ক্রইয় ছিলো। ক্লিক
আমার মনে যে লাখ টাকার প্রশ্ন দুটি ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলোঃ

একটা ছেলে কেনো একটা নিষ্ক্রিয় বোমা নিয়ে এই ধরনের কাজ করতে যাবে? এবং এফ বি আই এর ইনফর্মাররা যদি তার উপর এই স্টিং অপারেশনটা না করতো তাহলে কি তার পক্ষে এতোবড় একটা হামলার পরিকল্পনা করা আদৌ সম্ভব ছিলো? প্রশ্ন থাকলো।
View this link

(ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর অবলম্বনে)
২২টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×