সামনেই পরীক্ষা । আছি দৌড়ের উপর । তারপরও গতকাল 'টেলিভিশন' সিনেমা টা দেখা হয়ে গেলো । বেশ কিছুদিন ধরেই কাঁটা হয়ে খোচাচ্ছিল মুভিটা, ভাবলাম, নাহহ্, কাঁটাটা বের করে দিয়েই আসি । কিন্তু, কোত্থেকে কি ? আরও জোরে-সোরে সেটা বিঁধল । এখন মনে হচ্ছে, আরো দু-একবার এটা দেখতেই হবে !!
ফারুকী ভাই যখন টেলিভিশন নিয়া শুধু পুসান, ইরান দৌড়াদৌড়ি করছিলেন, তখন ভেবেছিলাম, কাম সারসে্ !! এইটা বোধহয় আমাদের দেশের গরীবিয়ানা কিংবা দুর্যোগ নিয়া সূক্ষ ডকুমেন্ট্রি ! অথবা হয়তো গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের উপন্যাস বা সালভাদর দালির পেইন্টিং এর মতই হাই-থট মার্কা কোন জিনিস, যেটা বানানোর প্রথম উদ্দেশ্যই হল, 'ধলা বিদেশি'দের মন যোগানো ! কিন্তু, আজ সিনেমাটা দেখে বুঝলাম, এটা একেবারেই অন্য একটা জিনিস, একেবারেই !! ট্রেইলার দেখে এতটা জমজমাট গল্প অবশ্যই আশা করিনি ! ভেবেছিলাম, হয়তো ফারুকী আমাদের আবেগ নিয়ে খুব বড় রকমের অস্ত্রোপচার করেছেন, যেটা বুঝার সাধ্য আম-জনতার নাই !! কিন্তু, আসলে তা না । বাজি লেগে বলতে পারি প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি বহুগুণ ! 'পিতা-পুত্রের সংঘাত্ত', 'জেনারেশনের গ্যাপ' এইসব আসলে ছবিটার ট্যাগ !! আসল মজা কাহিনীতেই । এটা আমাদের কাহিনী, এই কাহিনীর মজনু, সোলাইমান, কোহিনূররা আমাদের আশেপাশেই আছে, কিংবা কে জানে আমরাই হয়তো !!! এটা প্রেমের গল্প, না পাওয়ার কষ্টের গল্প, ভালোবাসার গল্প.। মোদ্দাকথা, এটা আমাদের গল্প । কিছুদিন আগেই আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আরেকটা মাইলফলক 'চোরাবালি' দেখে একটু কষ্ট পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, 'কেন মিছেমিছি অন্য দেশের থ্রিলার জনরাটা দিয়ে আমাদের 'থ্রিল' করার চেষ্টা' ? আমাদের নিজেদের আটপৌরে কাহিনীতে কি কম থ্রিল আছে ? টেলিভিশন দেখে চোখ ও মন ঠিক এই আরামটাই পেয়েছে । এই কাহিনী পুরোপুরিই আমাদের । তবু কি নাই এতে ??
ধার্মিক ও কট্টরপন্থী আমিন চেয়ারম্যান (রুমী) গ্রামে টেলিভিশন থেকে শুরু করে জন্ম নিয়ন্ত্রণও নিষিদ্ধ করে রেখেছেন । সোলাইমান (চঞ্চল) তাঁর একমাত্র পুত্র, যার প্রেমিকা একই গ্রামের কোহিনূর (তিশা)। মজনু (মোশাররফ করিম) সোলাইমানের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট, যে কিনা নিজেও কোহিনূরকে অনেক বেশি ভালোবাসে ! অথচ, কপাল এমনই যে, নিজের ভালোবাসার মানুষটাকেও বারবার সাহায্য করা লাগে যেন সে সোলাইমানের সাথে নির্বিঘ্নে প্রেম করতে পারে । যাই হোক, এমন সময় গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক কুমার বাবু (মুকিত) একটা টেলিভিশন নিয়ে আসেন ................................ তারপর ? বাকিটা না হোক সিনেমা থিয়েটারের জন্যই তোলা থাক !!!
ছবির লোকেশন আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে । অসম্ভব সুন্দর সব লোকেশন এবং সেটা আমাদের নোয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ এসবখানেই, ব্যাংকক,পাতায়া (বা*-ছা*) তে না ! পুরো ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য মোশার্রফ করিম ও শাহির হুদা রূমীকে টুপিখোলা অভিবাদন । একই সাথে শামীম শাহেদের ক্যামিও চরিত্রটাও অসাধারণ ছিল । চঞ্চল এর অভিনয়ও বেশ মানানসই ছিল । তিশার অভিনয় কিছু কিছু জায়গায় বেখাপ্পা হলেও মোটের উপর উতড়ে গেছে বলেই মনে হয় !! আর হ্যাঁ, গোলাম মাওলা নবীর নামের মানুষটাও ক্যামেরা হাতে সিনেমাটোগ্রাফিতে মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন !! আর, ফারুকী ভাইকে কি আর বলবো ? বাংলা সিনেমা নিয়ে স্বপ্নের ব্যারোমিটারের পারদ আরো উপরে উঠানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ । ভালো থাকুন আর এমন সব সৃষ্টি দিয়ে ভালো রাখুন আমাদেরও !!
ও আচ্ছা, ভালো কথা, সমালোচনাও তো করা দরকার, তাই না ? কিন্তু কেন জানি নেতিবাচক কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না । আর, তারচেয়ে বড় কথা হল, আমি সেইরাম কোন সিনেমাবোদ্ধা না যে ছবির সূক্ষ ত্রুটি-বিচ্যুতি বের করব। তবে, ছবির আবহ সঙ্গীত ও শব্দ ধারণ বোধহয় তেমন ভালো না !!
পুনশ্চ ১: অলরেডী একজনের কাছে শুনেছি, সিনেমাটা নাকি ''নাটক-নাটক'' লেগেছে তার কাছে ! আমি জানি ভালো লাগাটা আপেক্ষিক, তারপরও প্লিজ সমালোচনা করলেও বুইঝা-শুইনা করেন । ডোন্ট টক ননসেন্স !! একটা সিনেমা কি কি থাকলে নাটক থেকে আলাদা হয়, এইটাই তো বুঝলাম না !!
পুনশ্চ ২: সবাইকে ছবিটা থিয়েটারে গিয়ে দেখার অনুরোধ করছি । বাজি লাগাতে পারি, ঠকবেন না !! এই সিনেমাটা তো আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিরই সন্তান, নাকি ? তো, নতুন মুখটা তাড়াতাড়ি দেকাই তো উচিত, নাকি ?
পুনশ্চ ৩: জীবনে এই প্রথম কোন ছবি দ্বিতীয়বারের মত সিনেমার পর্দায় দেখতে ইচ্ছে করছে !!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



