ক্লাস থেকে বেরিয়েই শীমুর কথা মনে পড়ে জনির। একটু আগেও মনে হচ্ছিলো আজ আর মনে হয় ক্লাসটা শেষ হবেনা। পন্চাশ মিনিটের ক্লাস যেনো যুগ যুগ ধরে চলছে। স্যারের কাজই হলো বিশ মিনিট লেটে আসা আর ক্লাসের সময় থেকে মেপে মেপে পুরো দশ মিনিট খেয়ে দুপুরের বাসটা যাতে কেউ ধরতে না পারে সেই ব্যবস্হা করে দেয়া। একেতো স্যারের পড়া কিছু বোঝা যায়না, তার উপর এমন বদরাগী মানুষ, বাস মিস হওয়ার কথা বলা মানে আরো বড় বিপদে পড়া।
একদিন স্যারের পড়ানোর ফাঁকে অনেকেই চুপ চাপ বের হয়ে যাচ্ছিলো বাস ধরবে বলে। ক্লাসের সবচেয়ে নরমসরম মেয়ে সুমনাও ভাবলো সে বের হয়ে বাসটা ধরবে। যেই না দরজা দিয়ে বের হবে অমনি স্যারের প্রশ্ন, কোথায় যাও? বাস ধরবো স্যার, অনেক সাহস করে বলে ফেলে সুমনা। বিচারের খড়গটা সুমনার উপরেই নেমে আসে, স্যারের অম্লমধুর বাক্য কানে বার বার বাজতে থাকে। সব অপমান আর লজ্জা নিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে নিজের জায়গায়।
ঐ ঘটনাটা মনে না পড়লে হয়তো সুমনার মতো ঝুঁকি নেয়ার কথা ভাবতো জনি। শীমুর সাথে সম্পর্কটা ঠিক কোন পর্যায়ে আছে বুঝতে পারেনা মোটেও। কেমন করে কবে কোথায় শীমুকে প্রথম দেখেছিলো সেটাও মনে নেই। প্রেম করা নিয়ে কখনই তেমন ঝোঁক ছিলোনা নিজের ভিতর। কোন বিখ্যাত ব্যাক্তি যেন বলে গেছে, প্রেমটা আসলে শারীরিক বাসনার মানসিক রূপ। কোন মেয়েকে যদি কোন ছেলে এসে বলে আমি তোমাকে চুমু খেতে চাই, তাহলে তার জন্য গালি এবং স্যান্ডেল অবধারিত। অথচ এই মেয়েটাকেই যদি বলা হয় তোমার চোখ দুটো অপূর্ব, তোমার হাসিটা একদম অন্যরকম, গলতে থাকে সব পাহাড়। প্রেম এসে ধরা দেয় অধরার কাছে। এইসব দার্শনিক কথাবার্তায় প্রেমের স্বকীয়তায় সন্দীহান হয়ে ওঠে জনি।
এগুলো ভেবে আর কোন লাভ নেই, অনেক আগেই শীমুর সাথে জড়িয়ে ফেলেছে নিজেকে। মেয়েটা খুব অদ্ভুত, একেবারে অন্যরকম। একটু সিরিয়াস কথা শুরু করলেই পুরো পাথর হয়ে যায়। এতো সংকোচ, লজ্জাই যদি তবে প্রেম করা কেন। প্রায় ছয় মাস হয়ে গেলো সম্পর্কের এখনও জনির সামনে সহজ হতে পারেনি। কোন একটা বিষয়ে নিজ থেকে কিছু বলেনা শীমু। ঘন্টার পর ঘন্টা পাশাপাশি বসে কেটে যায়। অপরাধী ঘাসগুলোর শিরচ্ছেদই হয় কেবল।
আজ একটা বিশেষ দিন, আজ জনিকে তুমি করে বলা শুরু করবে এমন কথাই দিয়েছিলো শীমু। কথা ছিলো ক্লাস শেষে এ বিষয়ে আলাপ হবে। সকালে অবশ্য আর কোন কথা হয়নি। দুপুরের বাসে করেই চলে যাবে নাকি থাকবে বিকাল পর্যন্ত সেটাও ঠিক করা হয়নি। নাহ, মেয়েটা এত গুটিয়ে রাখে কেনো নিজেকে। ক্লাসটা শেষ হতেই এক লাফে দুটো তিনটা করে সিঁড়ি ভেংগে নীচে নামে জনি। বাসটা এখনও ছেড়ে যায়নি, না না শীমু মনে হয় ওয়েট ই করবে ওর জন্য। তবুও ওর মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ থেকেই যায়।
ক্যাফের সামনে পৌঁছাতেই সামনে দিয়ে বাসটা বেরিয়ে যায়। ক্যাফেতে ঢুকে শীমুর বান্ধবীর কাছে খোঁজ নেয় শীমু কোথায়। জানতে পারে এইমাত্র বাসে উঠে চলে গেলো শীমু। কেনো ভাইয়া ওর কি থাকার কথা ছিলো? মেয়েটার প্রশ্নটা শুনতে ভালো লাগেনা আর। বের হয়ে আসে কোন কথা না বলেই।
একটা চেয়ার টেনে নেয় জনি। আপনি আর তুমির মাঝামাঝি একটা ঝুলন্ত সাঁকোতে বসে চুপ করে তাকিয়ে থাকে স্মৃতির পর্দায় চলে যাওয়া বাসটার দিকে।
(অনেক চেষ্টা করে একটা ছোট্ট গল্প লেখার সাহস করলাম, অনেকটা ট্রায়াল। আমার গল্প আসতে চায়না, হয়তো মোটেও হয়নি, তাই যেকোন মতামতের জন্য প্রস্তুত )
ছবি কৃতজ্ঞতা
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০০৮ সকাল ৮:৩৩