somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খনার বচন :: আসুন আগলে রাখি আমাদের সম্পদ :: পরবর্তি প্রজন্ম যেন আমাদের গর্বের অতীত জানতে পারে!!!

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার আন্তরিক প্রীতি, সম্মান, শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জ্ঞাপন করছি।

কে বলেছে আমরা গরিব? যে জাতির এত এত সম্পদ তারা যদি সাময়িক ভাবে গরিব হয়েও থাকে, শুভদিন আবার আসবেই, আসতে বাধ্য। আমরাই পারবো আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে। অনেকেই বলবেন আমাদে এত এত জনসংখ্যা, কি করবো? কি ভাবে চলবো? এই জনসংখ্যা যদি জনসম্পদ হয় তাহলে কি হবে?



লালনের একটি গান মনে পড়লো । শুনুন -

“রাম কি রহিম সে কোনজন?

মাটি কি পবন,

জল কি হুতাশন।

শুধাইলে তার অন্বেষণ,

মূর্খ দেখে কেউ বলে না।।”



খনার জীবনী আমি ভালো জানি না তাই জীবনীটুকু সংগ্রহ করতে হয়েছে উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে।


খনা বা ক্ষণা কথিত আছে তার আসল নাম লীলাবতী জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারীর যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত, মূলত খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনার বচন নামে বহুল পরিচিত। মনে করা হয় ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিস পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম ছিন অনাচার্য। অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে তিনি ছিলেন সিংহলরাজের কন্যা। বিক্রমপুরের রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজ সভার প্রখ্যাত জোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহিরকে খনার স্বামীরূপে পাওয়া যায়। কথিত আছে বরাহ তার পুত্রের জন্ম কোষ্ঠি গণনা করে পুত্রের আয়ূ এক বছর দেখতে পেয়ে শিশু পুত্র মিহিরকে একটি পাত্রে করে সমুদ্র জলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌছলে সিংহলরাজ শিশুটিকে লালন পালন করেন এবং পরে কন্যা খনার সাথে বিয়ে দেন। খনা এবং মিহির দু'জনেই জ্যোতিষশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। মিহির একসময় বিক্রমাদিত্যের সভাসদ হন। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পরলে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাস রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে প্রতিহিংসায় বরাহের আদেশে মিহির খনার জিহ্বা কেটে দেন। এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্যু হয়।

এই রচনা গুলো চার ভাগে বিভক্ত করা যায়।

যথা

(১) কৃষিকাজের প্রথা ও কুসংস্কার।
(২) কৃষিকাজ ফলিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান।
(৩) আবহাওয়া জ্ঞান।
(৪) শস্যের যত্ন সম্পর্কিত উপদেশ।



১.

শ্রাবণের পুরো ভাদ্রের বার।

এর মধ্যে যত পার।।

[ধান রোপনের প্রকৃত সময় সারা শ্রাবণ ও বারোই ভাদ্র পর্যন্ত]

২.

ষোল চাষে মূলা।

তার অর্ধেক তূলা।।

তার অর্ধেক ধান।

বিনা চাষে পান।।

[মূলার ক্ষেত্রে ষোল বার, তুলার ক্ষেত্রে আট বার, ধানের ক্ষেত্রে চার বার হাল চালনা করা কর্তব্য। পানের জমিতে হাল চালনার প্রয়োজন নাই।]

৩.

পূর্ণিমা আমায় যে ধরে হাল।

তার দুঃখ সর্বকাল।।

তার বলদের হয় বাত।

নাহি থাকে ঘরে ভাত।।

খনা বলে আমার বাণী।

যে চষে তার, প্রমোদ গণি।।

[পূর্ণিমা আমারস্যাতে হাল চালনা করতে নেই। ওই দুই দিন যে হাল চালনা করে তাকে চিরদিন কষ্ট পেতে হয়। বাতে সেই কৃষকের বলদ কষ্ট পায় ও তার গৃহে অন্ন সংস্থান হয় না।]

৪.

যে বার গুটিকাপাত সাগর তীরেতে।

সর্বদা মঙ্গল হয় কহে জ্যোতিযেতে।।

নানা শস্যে পূর্ণ এই বসুন্ধরা হয়।

খনা কহে মিহিরকে নাহিক সংশষ।।

[সমুদ্র তীরে যে বৎসর গুটিকাপাত হয়, ধরণী সেই বৎসর শস্যপূর্ণা হয়।]

৫.

বুধ রাজা আর শুক্র মন্ত্রী যদি হয়।

শস্য হবে ক্ষেতভরা নাহিক সংশয়।।

[যে বছর বুধ রাজা ও শুক্র মন্ত্রী হয় সে বছর পৃথিবী শস্য পরিপূর্ণ হয়।]

৬.

মঙ্গলের ঊষা বুধে পা।

যথা ইচ্ছা তথা যা।।

[ মঙ্গলবারের রাত্রি গত হইলে ঊষাকালে বুধবারের আরম্ভে যাত্রা করিলে যাত্রা শুভ হয়ে থাকে।]

৭.

রবি গুরু মঙ্গলের ঊষা।

আর সব ফাসাফুসা

[রবি, বৃহস্পতি আর মঙ্গলবারের ঊষাকালে যাত্রা করতে পারলে দিন ক্ষন দেখবার কোনো প্রয়োজন হয় না।]

৮.

যদি বর্ষে আঘনে।

রাজা যান মাগনে।।

যদি বর্ষে পৌঁষে।

কড়ি হয় তুষে।।

যদি বর্ষে মাঘের শেষ।

ধন্য রাজার পুণ্যদেশ।।

যদি বর্ষে ফাল্গুনে।

চিনা কাউন দ্বিগুণে।।

[অগ্রহায়ণ মাসে যদি ভাল বর্ষণ হয়, তা হলে শষ্যকীটে ধান কেটে ফেলে। উত্তমরূপ শস্য না পাওয়ার দরুন প্রজাগণ রাজস্ব দিতে অক্ষম হয়, সে কারণে রাজাকেও বিপদগ্রস্ত হতে হয়। পৌষ মাসে বৃষ্টি হলে হৈমান্তিক ধান্য ঝরে পড়ে ধান মহার্ঘ্য হয়ে যায়, আর তুষেও অর্থ উপার্জন হয়। আর যদি মাঘের শেষে বৃষ্টি হয় হেমন্তের ধান ও আশু ধানের কৃষি ভালোভাবে হয়ে থাকে। চিনা ও কাউন ধান ফাল্গুন মাসে বৃষ্টি হলে দ্বিগুণ হয়ে থাকে]



৯.

হাঁচি টিকটিকির ফল

শয়নে ভোজনে উপবেশনে বা দানে।

বিবাহে বিবাদে আর বস্ত্র পরিধানে।।

এই সপ্ত কর্মে হাঁচি আদি সুশোভন।

অন্য কর্মে শুভ নাহি হয় কদাচন।।

বৃদ্ধ শিশু অথবা কফের যে হাঁচি।

যত্নপূর্বকের হাঁচি কদাচ না বাছি।।

গোধনের হাঁচি হয় মৃত্যুর কারণ।

জ্যোতিষ বচনে ইহা অবশ্য বারণ।

দিকের নির্ণয় করি বুঝহ সুবুদ্ধি।

পূর্বদিকে অগ্নিকোণে হৈলে ভয় হয়।

দক্ষিণেতে অগ্নিভয় জানিহ নিশ্চয়।।

নৈঋতে কলহলাভ পশ্চিমেতে ভাব।

বায়ুকোণে নব-বস্ত্র গন্ধ জয়লাভ।।

উত্তরে টিকটিকি হাঁচি স্ত্রী-লাভ কারণ।

ঈশাণে হৈলে মৃত্যু কে করে বারণ।।


১০.

উঠান ভরা লাউ শশা।

খনা বলে লক্ষ্মীর দশা।।

(গৃহী মাত্রেরই নিজ নিজ বাটিতে লাউ শশা রোপণ করা কর্তব্য। যাদের বাটীতে তেমন জায়গা নেই, তাদের পক্ষে ইহা বাটীর উঠানে রোপন করা উচিত।


১১.

ছায়ার ওলে চুলকায় মুখ।

কিন্তু তাতে নাইকো দুখ।।

(রৌদ্র না পেয়ে যদি ছায়ার মধ্যে ওল জন্মায় তা হলে মুখ চুলকায়। কিন্তু ওল বৃহৎ আকৃতির হয়ে থাকে।)



১২.

বাঁশ বনের ধারে বুনলে আলু।

আলু হয় গাছ-বেড়ালু।।

(বাঁষ বনের ধারে বড় আলু পোঁতা হইলে, গাছ সতেজ ও আলু বৃহদাকারের হয়ে থাকে।)



১৩.

পৌষের কুয়া বৈশাখে ফল।

য’দিন কুয়া ত’দিন জল।।

শনির সাত মঙ্গলের তিন।

আর সব দিন দিন।।

(পৌষ মাসে যে কয়দিন কুয়াশা হয়, বৈশাখ মাসে সেই কয়দিন বৃষ্টি হয়ে থাকে। যদি শনিবারে বৃষ্টি আরম্ভ হয়, তবে সাতদিন ধরে বৃষ্টি হবে। মঙ্গলবারে বৃষ্টি আরম্ভ হইলে তিনদিন বৃষ্টি হবে, আর অন্য বারে আরম্ভ হইলে সেইদিন মাত্র বৃষ্টি হয়ে থাকে)



আজ খনার বচন নিয়ে গবেষনা হচ্ছে এত আগে তিনি এত বিজ্ঞানীক কথাবর্তা বলেছেন কি করে। হয়তো আমাদের মাঝেও এমন কেউ থাকা অসম্ভব নয় যাকে নিয় হয়তো আরও ৫০০ বছর পরে গবেষণার পর গবেষণা হবে।

আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের অনেক কিছু হয়তো হারিয়ে যাবে যদি আমরা এখনি সজাগ না হই।

বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিন অসাধারণ কিছু ছবি :: ফেসবুক পাগলদের জন্য দেখা ফরজ !!!
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×