নজরুল ইসলাম অনেক আগে বলেছিলেন, “এই নিরীহ জাতটাকে আচরে কামড়ে বেরাবার ইচ্ছা আমার কোনো কালেই ছিলো না”। আবহমান কালের ইতিহাস ঘেটে দেখলে দেখা যায় আমরা এই বাংঙালীরা সবসময়ই শান্তিপ্রীয়, অহিংস ও নিরীহ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমাদের নিয়ে যখন যে যেভাবে পেরেছেন খেলা করেছেন। সেই আফগান শাসক থেকে শুরু করে আর্মেনীয়, ডাচ, ফরাসী, ইংরেজ থেকে শুরু করে পাকিস্তানী সাশক সহ পরবর্তীতে যারা বাংলাদেশের শাসক হয়েছেন প্রায় সবাই আমাদের নিয়ে পুতুল খেলার আশ্রয় নিয়েছেন।
তারপরও আমরা টিকে আছি। তারপরও আগামী বিশ্বের প্রধান শক্তিশালী ও বৃত্তশালী ১৮টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান থাকবে ইনশাল্লাহ্। একাত্তরে পাকিস্তানে বসবাস করে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে থেকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দু-দু’বার ছুটিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন হোসে মোহাম্মদ এরশাদ। আর তিনিই বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে আমাদের কান্ডারী হয়েছিলেন।
সিলেটকে বাংলাদেশের অংশ করার জন্য যে গণভোট হয়েছিলো সেই ভোটে সিলেট কে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যার অবদান সবচেয়ে বেশী ছিলো সেই মাওলানা ভাষানী নীতিগত কারণে ১৯৭২-৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর কড়া সমালোচনা করেছিলেন আর সেখানে তার সাথে হাত মিলাতে গিয়েছিলের গোড়া কমিউনিস্ট নেতারা আজকে যারা তথ্যমন্ত্রী, বানিজ্য মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী বা রাশেদ খান মেননের মতো সুযোগ সন্ধাণী নেতারা। যাদের মাওলানা সাহেব বলেছিলেন “আমাকে লাল সালাম নীল সালাম দিস না-খামোশ”। মাওলানা ভাষানী তোফায়েলের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন “তোফায়েল!!! আমি এই ৯৩বছরে যেটুকু পোশাব করেছি তুই ঐ পরিমাণ পানিও খাসনি, আর তুই বুড়া মৌলবীর সমালোচনা!!! তোর নেতা মুজিব (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ছিলো আমার সবচেয়ে প্রিয় সেক্রেটারী। মুজিবের জন্য আমি যেটুকু দোয়া করেছি তার পিতাও তার জন্য এত দোয়া করেনি।”
যাই হোক, জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের ফাঁসী দিয়েছিলেন সব ধরনের আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে। নাহলে জেনেভা কনভারশন আইনের তোয়াক্কা না করে একজন পঙ্গু মানুষকে রায় হবার দুই সপ্তাহের আগেই ফাঁসীতে ঝুলানো হয়েছিলো।
তারপরও আমরা টিকে আছি। গোলাম আজম সম্পর্কে তার ১৯৫২এর ভাষার জন্য অবদান ও ১৯৭১ এ পাকিস্তানের দোশর সাজার জন্য প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক শওকত ওসমান বলেছিলেন “বেশ্যাও একদিন স্বতী থাকে।”
পল্লীকবি জসীম উদ্দিন লন্ডনের এক রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময় বাংলাদেশী এক হোটেল বয়ের কথায় প্রচন্ড রকম আনন্দিত হয়েছিলেন। তিঁনি দেখেছিলের একটি গরীব ঘরের ছেলে নিজে রেস্ট্রুরেন্টে কাজ করে লন্ডনে ব্যারিষ্টারি পড়ছেন। তিনি এক সময় ঐ সুন্দর ছেলেটিকে নিজের জামাতা করে নিয়ে ছিলেন। ঐ সুদর্শন ছেলেটি আওয়ামীলীগ+বি,এন,পি+জাতীয় পার্টি সহ সব দল করেছেন। একসময় দেশের উপ-রাস্ট্রপতিও হয়েছিলেন। বর্তমানেও তিনি বগুড়ার আসন দিয়ে সংসদ সদস্য। ফকরুদ্দিন সাহেব যখন ক্রিস গেইলের মত খেলে চার ছক্কার মত করে নেতা, নেত্রী, বাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের জেলে পুরে ছিলেন তখনও ঐ পল্লীকবির জামাতা ছিলেন ধরা ছোঁয়ার বাইড়ে। বলতে পারেন তিনি কে? তিনি আমাদের প্রিয় পল্টিবাজ নেতা মওদুদ আহমেদ সাহেব।
যাই হোক এবার মূল আলোচনায় আসার আগে এখানে ক্লিক করে আমার আগের পোস্টটি পড়ে নিলে ভালো হয় । বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ডাঃ ইমরান নামের একজন কথিত ও স্বঘোষিত ব্লগার নেতা বা মুখপাত্র আত্মপ্রকাশ করেছেন। তিনি তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবহার করে সভা করে যাচ্ছেন। শাহবাগ প্রজন্ম আন্দলনের জন্মদাতা বলে নিজেকে দাবি করছেন। মজার ব্যাপার হল তিনি যে ব্লগারদের নেতা হলেন কিন্তু তিনি জীবনেও একটি ব্লগও লেখেন নি। অনেক কষ্ট করে গতদিন প্রথম আলো ব্লগ সাইটে তার একটি ব্লগ একাউন্ট পাওয়া গেলো তাতে মাত্র দুটি মন্তব্য করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আবার তার একটি হল হরমুজ প্রনালীর উপরে। এখানে থেকে দেখতে পারেন। শাহবাগ আন্দলনের একদম প্রথম দিকে তার কোনো প্রকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় নি। কিন্তু কাকের গায়ে ময়ুরের পেখম লাগানোর মত করে তিনি হঠাৎ নিজের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আসার ভাব নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। তিনি মাহমুদুর রহমানের মতো বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকে ৪৮ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছেন। এ কেমন কথা?
আজ যেখানে আমার দেশের নিরীহ মানুষ ব্লগার বলতেই বুঝে নিচ্ছে নাস্তিক সেখানে তিনি এই ভুল ভাঙানোর চেষ্টা না করে। মনে মনে নিজেকে বখতিয়ার খিলজী মনে করে বক্তৃতায় পটু হয়ে যাচ্ছে। তাতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হচ্ছে আপনার আমার মতো ব্লগাদের। আমরা সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছি। আমরা বাবা, মা, প্রতিবেশীর কাছে কাফের বলে গণ্য হচ্ছি। কোন প্রকার অপরাধ না করেই।
আমাকে আপনারা বলুন কোন কোন ব্লগার ডাঃ ইমরান সাহেবকে ব্লগারদের নেতা বা মুখপাত্র বানিয়েছেন? আমার মনে হয় না ডাঃ ইমরানের এই উত্থানে কোনো ব্লগারের কোনো প্রকার অবদান আছে। তিনি স্বঘোষিত বা কোনো শক্তির বলে এহেন নেতা সেজেছেন। কিন্তু যার মাসুল আপনাকে আমাকে দিতে হচ্ছে। তাই সামু সহ সবধরনের ব্লগ সাইটের কাছে আমার বিনীত মিনতী তাকে ব্লগার সমাজ থেকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হোক। আবার অবাঞ্চিত করার প্রশ্নও বা আসে কি করে তিনি তো ব্লগারই নয়। তাহলে আমাদের ব্যপক প্রচার চালাতে হবে তার আসল মুখোষ উম্মোচন করার জন্য নইলে ব্লগার সমাজের এই অপমান ও লাঞ্চনার ভার আমাদেরই বয়ে বেরাতে হবে। আসুন আমরা এই জটিল সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজি।
সব কথার মুল কথা ব্লগাররা নিজের ইচ্ছায় নিজের ঘাটের টাকা খরচ করে লিখেন, ব্লগারদের কোনো নেতা নেই সকল ব্লগারই নেতা ও কর্মী। সকল ব্লগারই জ্ঞান পিয়াসী। সকল ব্লগারই শান্তি প্রিয়। আসুন আমরা এই সুযোগসন্ধানী অমানুষগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




