somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হানাফী মাযহাব নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি এবং তার জবাব...................

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু দিন আগে আমার একভাই আমাকে হানাফী মাযহাব সম্পর্কে তিনটি প্রশ্ন করেন এবং আমি আগেও দেখেছি যে, এই প্রশ্নগুলো নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। আমি তাকে যেভাবে উত্তর দিয়েছি সেভাবেই উত্তরটি কপি-পেষ্ট করে দিলাম।

প্রশ্নগুলো হল.......

ইমাম আবু হানাফী রঃ এর জন্ম ৮০ হিঃ এবং মৃত্যু ১৫০ হিঃ। ফিকাহ গ্রন্থ কুদরী লেখা হয় ৩৬২ হিঃ।ইমাম আবু হানাফী রঃ এর ৪ জন প্রসিদ্দ ছাত্র ১)আবু ইউসুফ রঃ।২)মুহাম্মাদ রঃ।৩)ইমাম যুকারা রঃ।৪)হাসান বিন জিয়াদ রঃ।আমার প্রশ্ন আপনার কাছে :

১) ১৫০ হিঃ থেকে ৩৬২ হিঃ এর সনদ অর্থাৎ রাবী গুলার নাম বলবেন?

২) আবু ইউসুফ রঃ ও মুহাম্মাদ রঃ, ইমাম আবু হানাফী রঃ এর ২-৩ অংশ ফতুয়ার বিরধীতা করেন কেন ?

৩) ইমাম আবু হানাফী রঃ এর কোন হাদিস গ্রন্থ এর নাম বলেন ।যেটা থেকে অনার মতআমত পাওয়া যাবে।

উত্তর....

১। আপনি বলেছেন,
ফিকাহ গ্রন্থ কুদরী লেখা হয় ৩৬২ হিঃ। .... ১৫০ হিঃ থেকে ৩৬২ হিঃ এর সনদ অর্থাৎ রাবী গুলার নাম বলবেন?

ভাই আপনার কুদুরীর সনদের প্রয়োজন হয়েছে কেন? আপনি কি মনে করেন, ফেকহে হানাফীতে প্রথম কুদুরী লেখা হয়েছে? এর আগে ও কিন্তু কিতাব লিখা হয়েছে।
যেমন: ইমাম আবু হানিফার ছাত্র ইমাম মোহাম্মদ নিজেও অনেক কিতাব লিখেছেন। ১। সিয়র কবীর, ২। সিয়রে সগীর, ৩। কুতুবুস্ সুন্নাহ (জাহেরুর রেওয়ায়াত) ৪। জিয়াদাত ৫। জামে কবীর ৬। জামে সগীর। সবচেয়ে বড় কথা হল ইমাম শাফী রা: ও ইমাম মোহাম্মদ থেকে হাদীস রেওয়ায়ত করেছেন।

২। আপনি প্রশ্ন করেছেন।
ইমাম আবু হানিফা রাহ: এর ছাত্রগণ ওনার বিরোধিতা করেছেন কেন?

ইমাম আবু হানীফা রহঃ থেকে বর্ণিত একাধিক বক্তব্যের মাঝে যে বক্তব্যটি তাদের কাছে দলিলে ভিত্তিতে শক্তিশালী হয়েছে সেটাকে তারা প্রাধান্য দিয়েছেন। পরবর্তিতে ওলামাগণ দেখেছেন বিরোধিতা করলেও কোন কোন স্থানে ইমাম আবু হানিফার মতামত ঠিক ছিল, আবার কোন কোন জাগায় আবু ইউচুফ বা ইমাম মোহম্মদ রাহ: এর মতামত ঠিক ছিল। যেখানে যার মতামত টিক ছিল সেখানে তার মতামতের উপর ফতওয়া দেয়া হয়েছে।একে বলা হয় হানাফীরা অন্ধ বিশ্বস করেনা। আপনি কি বলেন আমরা অন্ধ বিশ্বাস করব এবং ভুল হলেও মেনে নেব

আরেকটি বিষয় অনেকেই জানে না যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্রদের মতামত মূলত ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতই। ইমাম আবু হানীফা রহঃ যেহেতু একজন উদ্ভাবক তথা মুজতাহিদ ছিলেন, তাই কুরআন সুন্নাহে দ্বিধাবিভক্ত বর্ণনাযুক্ত মাসায়েল বা বর্ণনাহীন মাসআলায় তিনি যখন ইজতিহাদ করে মতামত ব্যক্ত করতেন, তখন তা ছাত্রদের জানাতেন, মাঝে মাঝে এমন হত এ বিষয় কুরআন সুন্নাহে বিভক্ত বা না থাকার কারণে পরে তার মতামত পাল্টে যেত। তাই পরে তিনি আগের বক্তব্যের উল্টো বক্তব্য দিতেন, আগেরটি ভুল বলে। তখেন ছাত্রদের মাঝে যাদের কাছে আগের বক্তব্যটিই সঠিক বলে মনে হয়েছে, তারা আগেরটি নেন, আর যাদের কাছে নতুনটি সঠিক বলে মনে হয়েছে তারা সেটাইকেই গ্রহণ করেন। এ কারণে তার ছাত্রদের কোন কথাই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এ মতামতের বাহিরে কি না? তা সুনির্দিষ্টভাবে কেউ বলতে পারবে না।

৩। আপনি বলেছেন,
ইমাম আবু হানাফী রঃ এর কোন হাদিস গ্রন্থ এর নাম বলেন ।যেটা থেকে অনার মতআমত পাওয়া যাবে।

আমি প্রশ্ন করি হযরত আবু বকর ওমর ওসমান আলি রা: কোন হাদিসের কিতাব লিখেছেন যেখান থেকে কোন হাদিস জাল কোন হাদিস যইফ তা জানতে পারতাম। অবশ্যয় লিখেননি। ওনারা যেকারনে লিখেন নি, সে কারনে ইমাম আবু হানিফাও লিখেন নি।
কারণ টা কি?

১। ছাহাবা যুগ যাকে হাদীসে খায়রুল কুরুন বলেছে সে যুগে হাদীস জাল বা জঈফ হয়নি, যার কারণে হাদস সংকলনের প্রয়োজন দেখা দেয়নি বরং হাদীস উস্তাদ থেকে শুনে শুনে মুখস্থ রাখা হইত। ইমাম আবু হানিফা সেই যুগেরই মানুষ ছিলেন। অর্থাত উনি সাহবা এবং তাবঈদের থেকে হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেচেন। পরের ‍যুগে যখন হাদিস জাল করা শুরু হয় তখন ইমাম আহমদ, ইমাম বোখারী প্রমুখ ব্যক্তি হাদীস সংকলনের কাজ শুরু করেন।

২। হাদিস শরীফে আছে : মুসলিম শরীফের রেওয়ায়াত।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( لا تَكْتُبُوا عَنِّي وَمَنْ كَتَبَ عَنِّي غَيْرَ الْقُرْآنِ فَلْيَمْحُهُ وَحَدِّثُوا عَنِّي وَلا حَرَجَ ... ) رواه مسلم
হুযুর পাক সা: বলেন: তোমরা আমার থেকে কোরান অন্য কিচু লিখবেনা। যদি লিখে থাক তাহলে মুছেপেল। কিন্তু আমার থেকে রেওয়ায়াত কর।
এই হাদিসে কোরান ছাড়া অণ্য কিছু লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। এর উপর ছাহাবাগণ আমল করেছেন, ইমাম আবু হানিফাও আমল করেছেন।
উনারা হাদিসের উপর আমল করাতে আপনার কোন অসুবিধা হইলে জানাবেন।

ইমাম আবু হানিফা রাহ: নিজে কোন কিতাব লিখেননি সংকলনের কাজে ব্যস্ত থাকার কারনে। তবে ওনার ছত্ররা ওনার রেওয়ায়ত সমুহ একত্রিক করেছেন।
যেমন
1। الفقه الأكبر، برواية حماد بن أبي حنيفة
لفقه الأكبر، برواية أبي مطيع البلخي(2)
العالم والمتعلم، برواية أبي مقاتل السمرقندي(3)
رسالة الإمام أبي حنيفة إلى عثمان البتي(4)
الوصية، برواية أبي يوسف(5)


পাঠকরা যদি ইচ্ছা করেন তবে উক্ত প্রশ্নগুলো সাধারনত যারা করেন আপনারা তাদের সম্পর্কেও জানতে পারেন..... ক্লিক করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৪৭
২০টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×