আওয়ামীলীগের বিশ্বাসগুলোর মধ্যে একটি বিশ্বাস হলো তারা ধর্ম নিরপেক্ষতার পক্ষে। এই ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ কি? যারা আওয়ামীলীগ করেন তাদের ও অনেকের জানা নেই। তাছাড়া আওয়ামী সংশ্লিষ্ঠদের কাছ থেকে এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
প্রথমতঃ যেটা লোকমুখে শুনা যায় যে,যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতার নামই ধর্মনিরপেক্ষতা। অর্থাৎ হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ,খৃষ্টান যে যার যার ধর্ম পালন করবে কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবেনা। এই যদি ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা হয় তাহলেতো এটাই ইসলাম বলে। ইসলাম যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দিয়ে বলে "ধর্মের ব্যপারে জবরদস্তি নেই"।
চার খলীফা সহ মুসলিম শাসকদের শাসনকাল দেখলে প্রমান হয় তাদের যুগে অমুসলিমদের জন্য ধর্ম পালনের পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। ইসলামী রাষ্ট্রের চেয়ে বেশী ধর্ম পালনের স্বাধীনতা অন্য কোন রাষ্ট্র দিতে পারেনি।
তাই যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়াই যদি হয় আওয়ামীলীগের চাহিদা তাহলে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্টার কথা তাদের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করুক।
আর যেহেতু তারা মদিনা সনদে দেশ পরিচালনা করতে চায় সেজন্য তাদেরকে মুসলিম রাষ্ট্র এবং ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। কারন এটাই মদীনা সনদের মূলকথা।
দ্বিতীয়তঃ কারো কারো মতে সব ধর্মের প্রতি সমর্থন থাকাই হলো ধর্মনিরেপেক্ষতা। তাই তারা মুসলমানদের উৎসবে বলেন, আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। আবার হিন্দুদের উত্সবে গিয়ে বলেন, মা দূর্গা গজে চড়ে এসেছেন বলে ভালো ফলন হয়েছে। এটা অনেকটা আকবরের দ্বীনে এলাহীর মত জগাখিচুড়ী মার্কা মতবাদ। যেই ধর্মের অনুসারীরা আলেমদের ঐক্যমতে কাফের। অন্য ধর্মের স্বাধীনতা দেওয়া এক কথা। আর তাদের সমর্থন করা আরেক কথা। সুতরাং এরকম বিশ্বাসীরা শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসলমান নয়।
তৃতীয়তঃ আরেকটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যা নিরপেক্ষ শব্দ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। দুজন ঝগড়া করলে আরেকজন যদি বলে আমি নিরপেক্ষ,এর অর্থ হচ্ছে সে কারো পক্ষে নয়। সুতরাং ধর্মের ব্যপারে নিরপেক্ষতার অর্থ হলো কোন ধর্মের অনুসারী না হওয়া।
সৈয়দ আশরাফের ভাষায় " আমি হিন্দুও না মুসলমান ও না"। কোন ধর্মের অনুসারী না হওয়াই নাস্তিকতা। সত্য মিথ্যার মাঝে নিরপেক্ষ থাকাই নাস্তিকতা। যেহেতু এটা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের কথা তাই এটা তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার মূল ব্যখ্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। যা কিনা নাস্তিকতার উপর নাম।
এবার আসুন ধর্মনিরপেক্ষতার আসল ব্যাখ্যা জেনে নেই। ইংরেজী সেকুলারিজম শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। পরিভাষায় ধর্মনিরপেক্ষতা বলা হয়ঃ the doctrine that state,morality,education,etc should be separated from religion. অর্থাৎ ধর্মের প্রভাব থেকে রাজ্য নীতি শিক্ষা ইত্যাদিকে মুক্ত রাখা।
উইকিপিডিয়ায়ও ঠিক এরকম ব্যখ্যা দেওয়া হয়েছে Secularism is the principle of separation of government institutions,and the persons mandated to represent the state from religious institutions and religious dignitaries.
ইউরোপে পাদ্রীদের মনগড়া মতামতের সাথে যখন গবেষক ও বৈজ্ঞানিকদের গবেষনালদ্ধ মতামতের দ্বন্ধ দেখা দিল এবং তারই ভিত্তিতে 'গীর্জা বনাম রাষ্ট্রের লড়াই' নামক দশ বৎসর ব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম পরিচালিত হল, তখন সংস্কারবাদীরা একটা আপোষ রক্ষার জন্য মার্টিন লুথারের নেতৃত্বে প্রস্তাব দিল যে,ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ থাকুক আর সমাজের ও পার্থিব জীবনের সর্বক্ষত্রে নেতৃত রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত থাকুক।
১৮৪৯ খৃষ্টাব্দে এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আন্দোলনের সূচনা হয়। হলিউক এই আন্দোলনকে নাস্তিকতাবাদের উত্তম বিকল্প হিসেবে অভিহিত করেন। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নেতা ব্রেডলেফ এর মত ছিল ধর্মীয় আকীদা বিশ্বাস প্রতিহত করাই সেকুলারিজম এর কর্তব্য। ধর্মনিরপেক্ষতার পারিভাষিক অর্থ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আচরিত অর্থে ধর্ম নিরপেক্ষতা একটি কুফরী মতবাদ। কারন ধর্মের ব্যপকতায় রাজনীতি,শিক্ষা ইত্যাদি সবকিছু আওতাভুক্ত।
ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে এবং সবকিছুর জন্য আদর্শ। আল্লাহ বলেন "আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এই কিতাব যাতে সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা ও হেদায়েত রয়েছে।" অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, " আমি এই কিতাবে কোন কিছুর বর্ণনা করতে ছরড়ে দেইনি"। যারা ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান মনে করেননা, রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামকে ব্যর্থ মনে করেন, তাদের মুসলনমান পরিচয় দেওয়ার অধিকার নেই। তাদের মনে রাখা উচিৎ আল্লাহর রাসূল শুধু রাসূল নন, একজন সফল রাষ্ট্র নায়কও। ইসলাম শুধু নামাজ রোজার নাম নয় রাষ্ট্র পরিচালনাও ইসলামের বিরাট একটা অংশ।
আমাদের দেশের অনেক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নেতা ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে সূরা কাফিরুনের শেষ আয়াত পেশ করে থাকেন, যেখানে বলা হয়েছে "তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম আর আমার জন্য আমার ধর্ম।" অথচ কোরআন সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম জ্ঞান আছে তারাও জানে এই আয়াত ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে নয়, বরং এর বিপক্ষে। এখানে ধর্মের ব্যপারে নিরপেক্ষতা নয় বরং পক্ষপাতিত্বের কথা বলা হয়েছে। আয়াতের ব্যখ্যায় মুফাসসিরগন বলেন, এখানে কর্মফলের কথা বলা হয়েছে।
অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল যখন কাফিরদের চূড়ান্তভাবে দাওয়াত দেওয়ার পরও ঈমান আনলনা,তখন তাদেরকে বলা হলো,তোমাদের কর্মফল তোমাদের জন্য এর জন্য তোমরাই দায়ী, আর আমাদের কর্মফল আমাদের জন্য এর জন্য আমরাই দায়ী। কেউ অন্যের মন্দকাজের জন্য দায়ী নয়। আমরা যখন কাউকে বোঝাতে অক্ষম হই তখন নিরুপায় হয়ে বলি 'তোমার পথে তুমি আমার পথে আমি। এখানেও ঠিক সেভাবে বলা হয়েছে। তাছাড়া অনেকের মতে এই আয়াত রহিত হয়ে গেছে। এটা ইসলামের প্রথম যুগের হুকুম ছিল। কোরআনের অন্যান্য আয়াতে ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে,'ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম। "যারা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু ধর্ম হিসাবে গ্রহন করবে, তা কখনও গ্রহণযোগ্য হবেনা"।
আমি আওয়ামীলীগ সমর্থনকারী ভাইদের কাছে বিনয়ের সাথে প্রশ্ন করি, আপনার কাছে যদি ইসলাম নিয়ে ভাবার সামান্য সময় থাকে, পরকাল নিয়ে ভাবার সামান্য সুযোগ থাকে, মুসলিম হয়ে মরার সামান্য আশা থাকে, দোযখের আগুন থেকে বাঁচার সামান্য চাহিদা থাকে, তাহলে বলুন আপনি কি মুসলিম নাকি ধর্মনিরপেক্ষ?
যদি আপনি মুসলিম হোন তাহলে পরিত্যাগ করুন ধর্মনিরপেক্ষতা নামক এই কুফরী মতবাদকে। আর যদি আপনি ধর্মনিরপেক্ষ হোন তাহলে দয়া করে মুসলিম পরিচয়টা কেটে ফেলুন। এবং হলিউক ও ব্রেডলেফদের সাথে হাশরের জন্য প্রস্তুত হোন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




