ফারাবী এবং ফারাবীদের মত বিপরীত মেরুতে মুক্তমনা যারা নাস্তিক আছে, মূলত তাদের অবস্থা একই রকম। একপক্ষ ইসলামের নাম নিয়া অকাম করছে আর এক পক্ষ তথাকথিত মুক্তমনা দাবি করে অকাম করছে। কে কার চাইতে এগিয়ে আছে তা না হয় বাদই দিলাম। পাবলিক নাস্তিকদের অপকর্ম সম্পর্কে যথাবিহিত অবহিত আছে। তাদের থেকে সাবধান হওয়া সম্ভব। কিন্তু ফারাবীকূল হইতে সাবধান হওয়াটা মানুষের জন্য কষ্টকর। কারণ বলছি। প্রথমত মানুষ জানে নাস্তিকদের কোন আদর্শ নেই। কোন মানদল্ড নেই যার আলোকে তারা বিচার করতে পারে। আজকে এই মানদণ্ড এই তো আগামীকাল অন্যটা। নোংরা ভাষা, বেয়াদবি আচরণ, জঘন্য মিথ্যাচার করতে এরা কোন ধরনের বিবেকের তাড়না বোধ করে না। করবে কীভাবে? তারা তো ধরেই নিয়েছে এ জনমই শেষ। এর জন্য তারা কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। সুতরাং নগদ যা পাও তা দুহাতে কামাও।
সমস্যা হইলো ফারাবীদেরকে নিয়ে। ফারাবী রকমারীকে হুমকি দিয়ে ইদানীং মুজাহিদদের নিকট জাতীয় বীরে পরিণত হইছে। ফারাবীকে অনেকেই সমালোচনা করছে। কিন্তু ফারাবিও হাদিস কোরান ঝেড়ে তার কাজের যৌক্তিতা তুলে ধরেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যারা আল্লাহ, রসুলাল্লাহকে নিয়ে কটুক্তি কিংবা ব্যাঙ্গ করবে তাদের শাস্তি হাদিস-কোরআন অনুযায়ী ফারাবী যা হুমকি দিয়েছে তাই। কিন্তু ফারাবীদের আক্কেলের অভাব এইখানে যে তাদের সময়জ্ঞান খুবই কম। তারা কাঠ মোল্লাদের মত ভুল করে চৈত্রের ওয়াজ মাঘে করে আর মাঘের ওয়াজ চৈত্রে করে ফেলে!
রসুলাল্লার বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার, মিথ্যাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তঘাতক প্রেরণ করে রসুল তাদের মাথা চেয়েছেন। যারা তা করতে পেরেছেন তারা রসুলাল্লাহর প্রিয় পাত্র হয়েছেন। কিন্তু সে সময়টা কখন?
আমরা ইতিহাসে দেখি-রসুলাল্লাহ তার (স) মক্কা জীবনে কি অত্যাচারটাই না হজম করেছেন! প্রানপ্রিয় আসহাবদেরকে নিজের চোখের সামনে হত্যা করা হয়েছে। সুমাইয়া, খাব্বাব, ইয়াসীর (রা) এদের মধ্যে অন্যতম। শুধু আসহাবদের ক্ষেত্রেই নয়, নিজের জীবনের উপরও বার বার আক্রমণ হয়েছে।
এখানে বলা আবশ্যক, ওমর (রা) মক্কায় থাকা অবস্থায়ই দীন গ্রহণ করেছিলেন। তিনি চরিত্রগতভাবে ছিলেন দস্যুপ্রকৃতির। আজকের দিনের সন্ত্রাসী টাইপের। কিন্তু দীন গ্রহণের পর কি তিনি কাপুরুষ হয়ে গিয়েছিলেন? মোটেও নয়। তিনি রসুলের পায়ে নিজের জীবনকে সোপর্দ করেছিলেন। সুতরাং রসুলের হুকুম ছাড়া তিনি কোন কিছু করতে সক্ষম ছিলেন না। একইভাবে আমরা রসুলাল্লাহর চাচাত ভাই আলীর (রা) কথা বলতে পারি। তার বীরত্ব নিয়ে আশা করি কারো কোন প্রশ্ন নেই। এরা কী পারতেন না সে সময় একটা আবু লাহাব, একটা আবু জাহেল কিংবা প্রথম সারির নেতদেরকে হত্যা করতে? নিশ্চয় পারতেন। কিন্তু রসুল তাদরেকে সে হুকুম দেননি। তিনি যদি হুকুম দিতেন তাহলে যে আন্দোলনের সূচনা তিনি মক্কার বুকে শুরু করেছিলেন সে আন্দোলন মক্কার বুকেই নি:শেষ হয়ে যেত । আজ সুদূর বঙ্গভূমিতে বসে যারা আবু জাহেল, আবু লাহাবকে অভিশাপ দিচ্ছেন তারা জীবনেও ইসলামের নামও শুনতেন না।
কিন্তু সেই একই রসুল, একই ব্যক্তি মদীনায় গিয়ে বলা যায় একধরনের যুদ্ধবাজ নেতাতে পরিণত হোন। তার (স) একেকজন অনুসারীর বীরত্ব, সাহসের সাথে আশাকরি ফারাবীকূল ভুল করেও নিজেদের তুলনা করবে না। আর নাস্তিক কূলদের দোসরগণ তখন লেজ উড়িয়ে ইদুরে গর্তে প্রবেশ করেও রেহাই পায়নি। আবু সুফিয়ানদেরকে করজোরে জীবন ভিক্ষা করতে হয়েছিল।
শুধু সক্ষম যোদ্ধাই নন, এমনকি অন্ধ ব্যক্তিও রসুলের প্রতি বিদ্রুপকারী মহিলাকে রাতের আধারে ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত শিশুকে কোল থেকে সরিয়ে হত্যা করেছেন।
একটি সময় মক্কী এবং একটি সময় মদীনার। মক্কায় একতরফা মার খাওয়া, মার খেতে খেতে এক সময় নিজেদের জন্মভূমি থেকে পালিয়ে মদীনায় চলে যাওয়া- এই দুইটি সময়ের মধ্যে পূর্বের মানুষগুলোর মধ্যে এত পরিবর্তন কেন?
কারণ হচ্ছে: একটি সময় হচ্ছে আন্দোলনের জন্ম নেওয়ার সময়, ভিত্তি গড়ার সময়। অন্যটা হচ্ছে প্রতিষ্ঠা লাভের পরের সময়। রসুলাল্লাহ মক্কায় ছিলেন অপ্রতিষ্ঠিত অবস্থায়। সেখানে তিনি কোন বৈধ কর্তৃপক্ষ ছিলেন না। সুতরাং সেখানে তিনি কাউকে কোন কাজের জন্য আদেশ করতে সক্ষম ছিলেন না। কিন্তু মদীনায় যাওয়ার পর তিনি মদীনার সর্বেসর্বায় পরিণত হন। তিনিই তখন সেখানকার বৈধ কর্তৃপক্ষ। সেখানে তার (স) আদেশই আইন (মনে রাখতে হবে আমি রাজনৈতিক দিকটির কথা বলছি। ভুল বোঝার কোন অবকাশ নেই)।
কোন একটি সংগঠন যদি কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে (হোক তা কুফর রাষ্ট্র তবুও) তা অবৈধ হিসেবে পরিগণিত হবে। আর যদি রাষ্ট্র অন্যকোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাহলে সেটা বৈধ যুদ্ধ বলে পরিগণিত হবে। ব্যক্তি কিংবা সংগঠন জেহাদের হুকুম দিতে পারে না। এর তাত্ত্বিক যুক্তি ছাড়া্ও রাজনৈতিক বিষয় আছে। রসুল যদি মক্কায় একজন ওমর (রা) কিংবা একজন আলীকে হুকুম দিতেন তবে নিশ্চয়ই অনেক মস্তক তিনি পেতেন। কিন্তু বিজয়ী হয়ে একটি আদর্শকে এবং একটি দীনকে চির স্থায়ীত্ব দেওয়া সম্ভব হতো না। কোনমতেই দীর্ঘ ১৪০০ বছর পরে আজ পর্যন্ত তার (স) সে আদর্শ টিকে থাকত না। মুসলিম জাতির মাঝে আজ আলী, ওমর, খালিদ, আবু বকরের (রা) ঈমানী তেজ নেই। কিন্তু যেটুকু নিভু নিভু আলো আছে তারই তেজ তাবত দুনিয়া সইতে পারে না। হৃদয়ে শুধু ইসলামের প্রতি ভালোবাসা, রসুলের প্রতি সামান্য ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ নিজেদের প্রাণ উড়িয়ে দিতেে এরা কুণ্ঠাবোধ করে না। দীনের প্রশ্নের, রসুলের সম্মানের প্রশ্নে জীবন দিয়ে দেবে এমন মুসলিমের সংখ্যা পৃথিবী থেকে কখনোই কমে যায়নি। কারো কাছে তা অযৌক্তিক কিংবা অপ্রীতিকর হলেও তাই বাস্তব। আর কখনো তার অভাব হবে বলেও মনে হয় না।
এখন কথা হচ্ছে তাহলে ফারাবীদের ভুল কোথায়? ফারাবীদের ভুল এই যে- ফারাবীরা বৈধ কর্তৃপক্ষ না হয়েই আবেগের বশে, বাস্তবতা বর্জন করে কাউকে আক্রমণের, কাউকে বা হত্যার হুকুম দেয়। যুক্তির আলোকে যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এদের মত আউটলদের জঙ্গিবাদী কার্যক্রম দেখিয়েই বর্তমান পশ্চিমা সভ্যতা অপরাপর মানুষের কাছে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলছে দেখ মুসলিমরা কত খারাপ। এদেরকে ধর, মার জেলে দাও। এদের দেশ জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও।
কিন্তু ফারাবীদের মনে রাখা উচিত, শুধু তারাই নয়, রসুলের জন্য, ইসলামের জন্য প্রাণ দিতে কোটি প্রাণ প্রস্তুত রয়েছে। তাদের কাছে ফারাবীরা নস্যি। এরা ফেসবুক আর ব্লগের কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু ঐ সব প্রাণ দিতে প্রস্তুত মানুষগুলোর জন্য দরকার সঠিক দিক নির্দেশনা। অহেতুক ফতোয়া দিয়ে, দুই একটা ছুপা নাস্তিক (প্রকৃত নাস্তিকরা ধর্মবিদ্বেষী হয় না) হত্যা করে ইসলামের কোন উপকার করা সম্ভব হবে না। বরং ভয়ঙ্কর দানবকে খোচা দিয়ে জাগিয়ে তোলা হবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না, যেমন দীর্ঘদিন যাবত হচ্ছে না। প্রস্তুতিহীন অবস্থায় তোপের মুখে পড়বে মুসলমানরা। এ কাজটি সচেতন বা অসচেতন অবস্থাই করা হোক না কেন- উভয়ই ইসলামের জন্য ক্ষতিকর। ফারাবীদের এ কথা বুঝতে হবে। সময়ের সঙ্গে সত্য-মিথ্যাও ভেরি করে। আপনার হাতে ক্ষমতা এলে আপনিই নির্ধারণ করবেন কার মানদণ্ড দিয়ে আপনি বিচার করবেন। আপনি আপাতত পরাজিত। সুতরাং আপনার যুক্তি, আপনার মানদণ্ড এখানে প্রযোজ্য নয়। আগে সার্বভেৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তখন কার কয়টা কল্লা লাগবে, কার মুণ্ডু লাগবে তার ফতোয়া দিয়েন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:২৯