somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সীমিত সংখ্যক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সায়: উদ্যোগ ভাল, তবে...

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার তার সীমিত সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিকদেরকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। প্রায় এক দশক পর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা আগামী দুই মাসের মধ্যে। ২০১১ সালে নাগরিকত্ব পাওয়া দুই হাজার চারশত পনের জনকে প্রথম দফায় ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। গত রবিবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তটি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক। কারণ, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন থেকেই মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদ হওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছিল। বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ। নিজের জনসংখ্যার ভারে এমনিতেই দেশটি নুব্জ। এ দেশকে নিজের নাগরিকের চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হয়। অধিকন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে উদ্বাস্তু হওয়া জনসংখ্যা এ সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। তাছাড়া উদ্বাস্তু হওয়া এসব ভীনদেশি নাগরিকগণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অপরাধী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশ সব সময়ই মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমার যেন তার নাগরিকদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু মিয়ানমার বরাবরই এ ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। অধিকন্তু রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকারও করে আসছিল। তাই এবারে প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হওয়ায় বাংলাদেশ প্রীত বোধ করছে। এ জন্য আশা করা যাচ্ছে প্রায় তিন দশক ধরে প্রতিবেশী এই দেশটির সাথে রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে সৃষ্ট তিক্ত সম্পর্কের দ্রুত অবসান ঘটবে। বলা আবশ্যক, শুধুমাত্র রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার কারণেই দেশ দু’টোর মধ্যে সাথে উষ্ণ সম্পর্ক সৃষ্টিতে অন্তরায় হয়ে আছে।

রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের এই নমনীয় আচরণের কারণে বাংলাদেশের জন্য তা স্বস্তিদায়ক হলেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। এর প্রথম কারণটি হচ্ছে, ঠিক যে কারণে রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়েছে সে কারণটির সমাধান এখনো নিশ্চিত হয়নি। রোহিঙ্গারা সকলেই সংখ্যালগু মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সে দেশের সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা তাদেরকে সহজভাবে গ্রহণ করছে না। প্রায় এক হাজার বছর যাবত রোহিঙ্গারা তাদের ভিটে-মাটিতে বসবাস করে আসলেও শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ায় তাদেরকে বাংলাদেশি নাগরিক বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় এই যে এটা শুধু উগ্রবাদী বৌদ্ধরাই নয়, মিয়ানমার সরকারও এমনটাই মনে করে থাকে। তাই নির্বিবাদী বলে পরিচিত বৌদ্ধরা যখন মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর পাশবিক কর্মকাণ্ড চালায় তখন সে দেশের প্রশাসনও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে না। এই সুযোগে একদিকে রোহিঙ্গারা যেমন নির্যাতিত হয়, ধর্ষিত হয়, বাড়ি-ঘর ছেড়ে অথৈ সাগরে, অজানার পথে পাড়ি দেয়, তেমনি শান্তি প্রিয় বলে পরিচিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের গায়েও উগ্রতার তকমা লাগে। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার সরকার যদি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ আচরণ করত এবং যে কোন উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক আচরণের ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা পালন করত, তবে নিশ্চয় এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।

দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার এবার শুধু সীমিত সংখ্যক রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। বাকিদের ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। তবে সবচেয়ে বড় আশঙ্কাটি হচ্ছে সরকার সংখ্যালগু বৌদ্ধদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রায়ই ব্যর্থ হয়। যে কারণে কিছুদিন পরপরই উগ্রবাদীদের আক্রমণের মুখে নতুন নতুন রোহিঙ্গারা উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। তাই মিয়ানমার যতদিন নিজ নাগরিকদেরকে উদ্বাস্তু হওয়ার মুখ থেকে রক্ষা না করতে পারে ততদিন তারা অন্য দেশের জন্য বোঝা হয়েই থাকবে। আর প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশই বেশি সমস্যার মুখোমুখি হবে। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে সমস্যার গোড়ায় হাত দিতে হবে। অন্যথায় এটা না মিয়ানমারের মর্যাদার উন্নতি ঘটাবে, না অন্যদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
৩টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×