somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধ্বংসের মুখে উত্তর প্রজন্ম এবং আমাদের দায়

২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ পৃথিবীতে আসে আবার নির্ধারিত কাল অতিক্রম করে চলে যায়। কিন্তু সে সব সময়ই চিন্তা করে তার উত্তরসুরীর মাধ্যমে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে। উত্তরসূরী রেখে যাওয়ার মাধ্যমেই মানুষ তার আদি পিতা আদমের অমরত্বের আকাক্সক্ষাকে পূর্ণতা দেয়। যে মানুষ তার উত্তরসূরী রেখে যেতে পারে না সে তার জীবনকে বৃথা বলে মনে করে। আমরাও এর ব্যতিক্রমন নই। কিন্তু আমাদেরকে অবশ্যই দেখতে হবে পৃথিবীতে আমাদের কেমন উত্তরসুরি রেখে যাচ্ছি। আমরা কি তাদেরকে মানুষ বানাতে পারছি, নাকি রেখে যাচ্ছি মানুষ নামের দু’পেয়ে কিছু প্রাণি?এই লেখাটার পেছনে যিনি আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন তিনি অতিশয় দুঃখ নিয়ে আমাকে একটি ঘটনা শোনালেন। কোরবানির ঈদের দিন ঢাকা মহানগরীর কোন একটি গলিতে বাড়ির কর্তা গরু কোরবানি দেবেন। যাই হোক, গরুতো আর একা জবাই করা সম্ভব নয়, তাই তিনি কসাইসহ আরো দু-একজনের সহযোগিতা নিলেন এবং তার পরিবারের (উত্তর প্রজন্ম) তরুণটিকে শিক্ষা দেওয়াই হোক কিংবা প্রয়োজনের তাগিদেই ডাকলেন গরুটিকে শোয়ানোর কাজে সহযোগিতা করার জন্য। তরুণটি আসলো বটে, কিন্তু সে গরুটিকে বিব্রত ভাব নিয়ে এমনভাবে ধরলো যাকে ‘ধরলো’ না বলে ‘ছুয়েছে’ বলাটই শ্রেয় হবে। তার চালচলনে ভীষণ আনাড়ি ভাব। কিন্তু গরুকে শুধু ছুয়ে রাখলে তো আর জবাই করা সম্ভব নয়। কর্তা তরুণটির এই অবস্থা দেখে রেগে মেগে দিলেন এক ধমক, ‘যা এখান থেকে! ছেলেটি সঙ্গে সঙ্গে বিড়বিড় করতে করতে পিছু হটে গেল, যেন এটাই সে চাইছিল। আর বয়স্ক লোকটি তখন রাগে গজ-গজ করতে করতে আরো দু’একজন প্রৌঢ়-বৃদ্ধের সহযোগিতায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করে গরুটিকে জবাই করলেন। তরুণটি তখন কী করছিল? সে পাঞ্জাবির পকেট থেকে স্মার্ট ফোনটি বের করে টেপাটিপি করছিল আর গরু জবাইয়ের ছবি তুলছিল।



হ্যাঁ, এই হচ্ছে আমাদের উত্তর প্রজন্ম। এরা হাতে ছুঁয়ে দিয়ে গরু জবাই করতে চায়, পারে তো ভার্চুয়ালী গরু কোরবানি করে ফেলে আর কী! এরা বড় হয়ে উঠছে টিভি স্ক্রিনে ফুটবল, ক্রিকেট, রেসলিং দেখে, নিজেরাও খেলছে বহুকিছু তবে ঐ কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। ধূলি-বালি-কাদা এদেরকে স্পর্শ করতে পারে না। অল্প বয়সেই এরা ভারি চশমা ব্যবহার করে। এরা অদ্ভুত বাংরেজি ভাষায় কথা বলে। মাথার চুল থেকে পায়ের জুতা পর্যন্ত পশ্চিমা রকস্টারদের নকল করে এরা হয়েছে ‘ইয়ো ইয়ো’ জেনারেশন। পরনে থ্রি কোয়ার্টার, কয়েক জায়গায় স্টাইলের ছেড়া। হাতে এনার্জি ড্রিংসের বোতল। কৈশোরেই ধূমপানে অভ্যস্ত। মাদকাসক্তও কম নয়। বেলা একটার পরে এদের সকাল হয়। এক মাইল পথ হাঁটার সামর্থ এদের নেই, ইচ্ছাও নেই। এদের কেউ ডাব কেটে পানি বের করে খেতে পারে না। এরা গাড়ি, রিক্সা, মোটর বাইক ছাড়া চলে না, এদের প্রিয় খাদ্য ফাস্টফুড। এদের প্রত্যেকের হাতে থাকে বড় বড় স্ক্রিনের মোবাইল ফোন, ট্যাব। দিনমান ব্যস্ত ফেসবুক, স্কাইপে, ভিডিও চ্যাট, হোয়াটসএপ-ভাইবার প্রভৃতি নিয়ে। বাবা-মা এদের কাছে গুরুত্বহীন ওল্ড ফুল, ফর্মালিটির সম্পর্ক, হৃদয়ের বন্ধন বহু আগেই ছিন্ন হয়ে গেছে। ডিজিটাল সন্তানের অ্যানালগ বাবা-মায়ের সঙ্গে জেনারেশন গ্যাপতো হবেই। বন্ধুরাই জীবন-মরণ। দিনরাত বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ফুর্তি (ওদের ভাষায় মাস্তি), চ্যাটিং আর ফোনালাপ। এদের নাকি বন্ধু ছাড়া একটা দিনও চলে না! গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশেও তারা থাকে ফেসবুকে মগ্ন।একবার ভেবে দেখুনতো আপনার ঘরে আপনার যে উত্তরসুরীটি এভাবে বড় হচ্ছে তাদের ভবিষ্যত কী? বাস্তবতা বিবর্জিত, শারীরিক এবং মানসিকভাবে অক্ষম ও ভারসাম্যহীন এই প্রজন্মই আপনার আকাক্সিক্ষত ছিল? এরা কি আমাদের অমরত্বের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে? এভাবে যদি চলতে থাকে তবে আর দু’এক প্রজন্ম পরে এরা বলবীর্য্যহীন নপুংসকে পরিণত হবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×