somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু আমি আর আমার মা.............

২৪ শে জুন, ২০১০ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা.....আমার মা।


আমার কাছে আমার এই ভুবন সবার কাছেও সবার মা তাই।


যার নেই সেই বুঝে কি হারালাম আর থেকেও দূরে সেও বুঝে মা কি জিনিস...
যারা মায়ের কাছে আছেন,তারা হয়তো বুঝতেই পারছেন না কোন স্বর্গে আছেন।
আজ খুব ইচ্ছে হলো আমার আর মায়ের কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করার।
মায়ের সাথে এতো স্মৃতি হয়তো সব পারবো না শেয়ার করতে তবে চেষ্টা করছি যা যা মনে আসছে এই মুহুর্তে..........................


ছোট বেলায় ভীষন চঞ্চল থাকায় মাকে খুব জ্বালাতন করতাম। এজন্য মা প্রায়ই বলতো -তোকে ফেলে একদিন চলে যাবো,যাতে আর না জ্বালাতে পারিস। আমার কথা তো শুনিস না।
আমি তো চিন্তায় পড়ে গেলাম,মা চলে গেলে কি হবে। আমি বললাম সব সময় তোমার সাথে থাকবো,দেখি কেমন করে যাও। মা বললো - যখন তুই ঘুমাবি তখন চলে যাবো। এখন কি করি ভেবে তো পাই না,কারন ঘুমালে যদি সত্যি ই চলে যায়.../:)
সে জন্য যখন ই মা'র পাশে ঘুমাতে ছোট্ট হাতটা মায়ের চুড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে চুড়িটা শক্ত করে ধরে ঘুমাতাম,যাতে আমায় ফেলে যেতে না পারে। ;);) যাতে হাত সরানোর সময় আমার হাতে টান পড়ে,আমি জেগে যাই। কি বুদ্ধি......:P;)


খাওয়া-দাওয়া নিয়ে তো কত বাহানা,কত অজুহাত দিতাম তার কোন ইয়াত্তা নেই। মা আমায় দুধ খেতে বলতো। আমার ভালো লাগতো না। মা তখন বলতো- সারাদিন এত দুষ্টামী করিস তার জন্য তোর শক্তি দরকার। দুধটা খেয়ে নে। মা'কে তখন বিজ্ঞের মতো বলে দিলাম- মা তুমি তো সারাদিন কতো কাজ করো,তোমার না আমার চেয়ে বেশী শক্তি দরকার। আর তুমি যে আমাকে সারাদিন অনেক বকাঝকা করো,তার জন্যও শক্তি দরকার। তুমি দুধটা খাও।
ছোট মুথে এ যুক্তি শুনে মা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে থকতো........:P


আমার মা আমার নানার বড় মেয়ে। বড় নাতি হওয়ার সুবাধে সবার অনেক আদর পাইছি। নানার তো কলিজার টুকরো ছিলাম। নানা বাড়ীতে যখন থাকতাম তখন ভয় অনেক কম থাকতো,কারন মা কিছুই করতে পারবে না। একদিন কি কারনে যেনো (এখন ঠিক মনে পড়ছে না:(() মা নানার সামনে একটা থাপ্পড় মারলো। নানা পাশে ই ছিল এবং নানা মা'কেও একটা থাপ্পড় মেরে বললো- তুই আমার সামনে,আমার নাতিকে মারিস। আমি তখন থাপ্পড়ের ব্যাথা ভুলে মা'কে বললাম- আর মারবা..??? দেখ থাপ্পাড় খেলে ক্যামন লাগে?? মা আর কি করবে তখন না পারে কিছু কইতে না পারে সইতেX((X((


রান্না সম্পর্কে খুব ই স্বল্প জ্ঞান ছিল আমার। একদিন মা চুলায় দুধ বসিয়ে অন্য রুমে কি যেনো করছিলো। আমায় বললো- দেখিস তো দুধটা উৎরায় কিনা.? আমি তখন চুলার পাশে দাঁড়িয়ে আছি কখন দুধ উৎরাবে। আসলে এ সম্পর্কে আমার কোন ধারনা-ই ছিল না। হঠাৎ দেখি দুধটা পাতিলা থেকে ফুলে,ফেঁপে পড়ে যাচ্ছে। চুলা কমাতে গিয়ে নিভিয়ে ফেললাম। তারপর পাতিলটা কাপড় দিয়ে ধরে মা'র কাছে নিয়ে গিয়ে বললাম- দেখ তো দুধ উৎরাইছে কিনা?? মা তখন চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল;);)। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম আমার দিকে এ্যমন করে তাকানোর কি আছে...!!!


পড়াশুনার জন্য চট্টগ্রাম চলে আসলাম মা'কে ছেড়ে। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো।যদিও অনেক চঞ্চল ছিলাম কিন্তু সব ই ছিল আমার বাবা-মা'কে ঘিরে। আমি যে তাদের একমাত্র সন্তান। চট্টগ্রাম খাকতে একবার পতেঙ্গা সী-বিচের ব্লকের মাঝখানে পড়ে বেশ ভালো ব্যাথা পেয়েছিলাম। কয়েক জায়গায় ব্যান্ডেজ লাগলো। মা'কে তো জানানোর প্রশ্ন ই আসে না। যে দিন সন্ধ্যায় এ্যাকসিডেন্ট করলাম তার পরদিন খুব ভোরে মা আমায় ফোন দিয়ে কোন কথা বলার আগে ই জিজ্ঞাস করলো- বাবা, তুই ভালো আছিস তো? তুই সুস্থ আছিস তো? আমি ভাবলাম হয়তো কেউ মা'কে কিছু বলেছে। আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম- হ্যাঁ ভালো আছি তো। কেন কেউ কিছু বলছে নাকি? তখন মা আমায় বললো- না কাল তোকে নিয়ে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখছি। তাই জিজ্ঞাসা করলাম। ভালো থাকিস,সাবধানে থাকিস বাবা। ফোনের লাইনটা কেটে খুব অবাক হয়ে ভাবলাম এর ই নাম মা, এর নাম বুঝি নাড়ীর টান,অকৃত্রিম ভালোবাসা।


খেলাধূলার প্রতি বিশেষ করে ক্রিকেটের প্রতি ভীষন দূর্বল ছিলাম। বেশ ভালোই খেলতাম। মা'র মোটেও ভালো লাগতো না আমার এই ক্রিকেট প্রীতি। কত মাইর যে খাইছি এই খেলার সুবাধে,তার ইয়াত্তা নাই। নানা বিচার আসতো আমার নামে। কত বার যে মা'কে লিখিতো দিসি "আমি আর কখনো মাঠে যাবো না"। কিন্তু যখন ই কোন খেলার ডাক পড়তো কিসের কি.... আমায় আর কে পায়। নিজের রুমে বসে বসে মা'কে পাহারা দিতাম মা কখন একটু সরবে আর আমি চম্পট দিবো। সেজন্য ব্যাট টা রাখতাম আমার জানালার পাশে যাতে বাসা থেকে খালি হাতে বের হলেও বাহির থেকে নেয়া যায়। চোর যদি পুলিশ কে পাহারা দেয়,পুলিশ কি আর পারে.......!!!



আজ মায়ের কাছে খেকে দূরে জীবন-জীবিকার তাগিদে। সেই শাসন আজও আছে,যখন ই বাড়ী যাই,তখনই চলে সে শাসন কারন সন্তান যে কখনো বড় হয় না মায়ের কাছে। আমি যেনো তার সেই ছেট্টটি এখনও। আজও দিনে দু'বার কথা বলতে না পারলে শান্তি পায় না। ফোন রিসিভ না করলে চিন্তায় অস্থির হয়ে যায় নানা বাজে ভাবনায়। এমন করে হয়তো কেউ ভাবেনা এবং ভাববেও না আমায় নিয়ে কারন "মা'র" সাথে কি কারও তুলনা চলে এই ভূবনে..........???

দোয়া করবেন আমার অবুঝ বুড়ো মেয়েটার জন্য



সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১০ রাত ১০:০৬
১৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×