somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ এর ভবিষ্যৎ এবং আমরা

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে ব্লগ অ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম । পরে নিক পরিবর্তনের জন্য আবেদন করলেও মডুরা সাড়া দেয় নাই । কিন্তু আর চুপ থাকা উচিত বলে মনে করছি না ।
পাঠকরা ইতিমধ্যে অনেককিছুই জেনেছেন । অনেক পাঠক অনেক পোস্টে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন ।
কিছু বিষয় পরিস্কার করা দরকার ।
একজন ব্লগার বলেছেন -
“আপনাদের আন্দোলনের প্রতি দেশবাসীর পূর্ণ সমর্থন আছে। কিন্তু যখন এতো উচ্চ শিক্ষিত হয়ে আমার-আমাদের কষ্টের টাকায় কেনা গাড়ি, বাস ভাংলেন তখন আপনাদের উপর সমর্থন থাকে কি করে ?
কে দিবে আমাকে এখন এই গাড়ি ঠিক করার খরচ? এটা যোগাতে গিয়ে কি চুরি করবো? ঘুষ খাবো? দুর্নীতি করবো?
তাহলে, আপনাদের সঙ্গে তথাকথিত ছাত্র নামধারী নেতা, কর্মী, ক্যাডার দের পার্থক্য থাকে কি করে? বলেন?”


আপনার কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করি । তবে আমরা আগবাড়িয়ে কোন গাড়ি ভাংচুর করিনি । প্রথম দিন ছাত্ররা প্রেস ক্লাবে মানববন্ধনে দাড়িয়ে ছিল । ছাত্রলীগ বিনা উস্কানিতে আমাদের ভাই বোনদের উপর আক্রমন করে । তারপর পুলিশ । এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয় যার সব দায় চাপিয়ে দেওয়া হয় আমাদের উপর ।
দ্বিতীয় দিন আমরা চুপচাপ রায়সাহেব বাজার মোড়ে বসেছিলাম । পুলিশ বিনা উস্কানিতে আমাদের এক সহপাঠীকে সবার মাঝখান থেকে উঠিয়ে নেয় । দাড়ি গোঁফ ওয়ালা ওই ছেলেটিকে ধরার একমাত্র উদ্দেশ্য হল যাতে শিবির বলে চালিয়ে দেওয়া যায় । তারপর একটা অস্থির ধরপাকর এর মাঝে আটক করে আরও অনেককে । আর যাবতীয় বিশৃঙ্খলার দায় চাপায় ছাত্রদের উপর ।
আমাদের সাথে কেউ নেই । আমাদের মাননীয় ভিসি বলে আমরা নাকি ছাত্রদল আর শিবির এর এজেনডা বাস্তবায়নে নেমেছি । আফসোস । এই আইন কার্যকর হলে উনার বেতন হবে যাদের টাকায় তাদের বিরুদ্ধে এই কথা বলার আগে একবার ভাবা উচিত ছিল উনার !!
নিজের উপর মায়া হচ্ছে যে এমন একটা দেশে জন্ম যেখানে এইরকম মেরুদণ্ডহীন লোকের উপর ২০,০০০ শিক্ষার্থীর অভিভাবকত্ব অর্পিত । ধিক , শতধিক ।
আগামি শুক্রবার আমরা মানব বন্ধন করব । কিন্তু সেখানেও আমাদের মাঝে লুকিয়ে থাকবে কিছু লীগ এর চেলা যারা চান্সে থাকবে একটা ঢিল ছুরে মারার যাতে করে পুলিশের ছাত্র পিটাতে সুবিধা হয় ।
এদের কারনে বারবার আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের গায়ে কালি পড়ছে এবং সচেতন সমাজ ছাত্রদের দায়ী করছে ।
পুলিশরা আমাদের বিপক্ষে থাকবেই । কারন আমাদের হলগুলো বেশিরভাগই ওই উর্দিধারীদের দখলে । আমাদের এই আন্দোলনের ব্যর্থতার উপর নিভর করছে ওদের ওই দখল ।

একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যূনতম যে সুযোগ সুবিধা তার কিছুই আমাদের নাই । হল নাই, মাঠ নাই, যথেষ্ট শিক্ষক নাই, পরিবহন সুবিধা যথেষ্ট নাই, অডিটরিয়াম নাই, ভাল ল্যাব নাই , লাইব্রেরিতে বই অপ্রতুল ।

অনেক ব্লগার আমাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছেন এই ভাবে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক কম মেধাবি হলেও আমাদের এই দাবি বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
এই কথাটা কতটা যুক্তিযুক্ত ?
ঢাকা এবং আশেপাশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩ । ঢাকা, জগন্নাথ এবং জাহাঙ্গীরনগর । আমি এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধার খুব বড়মাপের কোন পার্থক্য দেখি না । বিবিএ ফ্যাকাল্টির কথা ধরি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট ১০০০ এর মত, জগন্নাথে ৬০০ আর জাহাঙ্গিরনগরে সম্ভবত ২০০ । তাহলে কি ধরে নিব যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০০ শিক্ষার্থী মেধাবি বাকিরা নয় ? অথচ এইচএসসি তে যখন হাজার হাজার এ+ মেধাবির গল্প টিভি তে দেখায় তখন কার আপত্তি থাকে না । এদেরই কেও চান্স পায় আর কেও পায়না ।

ক্যারিয়ার এর জন্য এখন সবারই টার্গেট ঢাকাতে থাকা । আমি নিজে জাহাঙ্গিরনগরে ভর্তি বাতিল করেছি দূরত্বের জন্য আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করেছি সাবজেক্ট পছন্দ না হওয়ার জন্য । কিন্তু আমার ফেলে আসা সিটে যে ভর্তি হল তাকে কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমার চেয়ে বেশি মেধাবি বলা হবে ? আমার কাছে মনে হয় তার এবং আমার মধ্যে আকাশ পাতাল কোন তফাত নেই । ভুল যদি কোথাও থাকে তাহলে তা আছে আমাদের শিক্ষা বাবস্থায় । প্রত্নতত্ত্ব পড়ার যদি কার ইচ্ছা থাকে তবে সে যত মেধাবিই হোক ভর্তি হতে হবে জাহাঙ্গিরনগরে । আমার বন্ধুদের প্রায় সবাই অন্যান্য একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে ভর্তি হয়নি শুধু ঢাকায় থাকবে বলে । তাই বলে এতটা বলার কন সুযোগ নাই যে রাজশাহী বা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবি নাই । আমি একটা আন্তর্জাতিক সংস্থায় পার্টটাইম কাজ করি । আমার পড়াশুনা শেষ হয়নি । আমার সাথে একই পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ করা ছাত্র কাজ করে । মানে কি ?????
নিঃসন্দেহে সবার প্রথম পছন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় । তবে কে বেশি মেধাবি তা বলার মানদণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় নয় ।
এবার একটু অন্য দিকে নজর দেই ।
ঢাকাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের খরচ কত হতে পারে যদি সে একলা থাকে, একটু দেখি-
মেস ভাড়া ১০০০/১৫০০ টাকা মিনিমাম । সাথে বুয়ার বিল ২০০ টাকা।
তিন বেলা খাওয়া । মেসে প্রতি মিল ২০/২৫ টাকা হলে মাসে গড়ে ২০০০ টাকা ।
প্রতি সেমিস্টারে চার্জ প্রায় ৪০০০ টাকা। সাথে বই খাতা ।
এরপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ।
এবারে আসেন দেখি ছাত্রদের আয় ইনকাম এর বাবস্থা কি আছে ।
পড়াশুনার সুবিধার্থে অধিকাংশরাই ক্যাম্পাস এর কাছাকাছি থাকে যাদের ভরসা টিউশনি । আর পুরান ঢাকার বাজার খুবই খারাপ । ১৫০০/১০০০ এ পড়াতে বাধ্য হয় কারন এই এলাকায় অন্যান্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজের উপস্থিতি । ওরা খুব কম টাকায় পড়ায় । আর অভিভাবকরা সেই সুযোগ নেয় । অনেকে যদিও করছে তবুও পার্টটাইম কাজের কথা না বলাই ভাল ।
এই অবস্থায় সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেমিস্টার ফি ২০০০০ টাকা করা মানে অন্তত নিশ্চিত ভাবে ৫০০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন বন্ধ হবে । বাকিরা কোনভাবে চালাবে । কিন্তু এইখানে একটা বড় প্রশ্নবোধক আছে । যদি টাকা দিয়েই পরতে হয় তবে কেন জগন্নাথে ? এইচএসসির পর আমাকে যখন বাসা থাকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথা বলল আমার উত্তর ছিল “না” । কারন আজন্ম লালিত স্বপ্ন পাবলিক এ পড়ব । প্রাইভেটে পড়লে আমি মুক্তি পেতাম এক বছরের সেশান জট থেকে, মুক্তি পেতাম ৭ নম্বর বাসের জন্ত্রনা থেকে । কিন্তু আমার হৃদয় থেকে ????

আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ । আশা করব প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের সমর্থন পাব যারা বুঝবেন কতটা অসহায় হয়ে রাস্তায় নেমেছি আমরা ।

দেখা হবে আগামীকাল বিকাল ৪.০০ টায় শাহবাগে ।
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×