somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাজিংডংয়ের স্মৃতি...

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম ভাঙতেই দেখলাম সবুজ পাহাড়ি বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে বাস। দুই পাশে খাড়া পাহাড় সতর্ক করছে চোখ রাঙিয়ে। ঘড়ির কাটা বলছে যাত্রার প্রায় আড়াই ঘণ্টা শেষ। কখন পৌঁছব থানচি ! মনে পড়ে গেল ঐতিহাসিক এ যাত্রার শুরুর ইতিহাস।
ঢাকায় টি-শার্টের শীত সাথে প্রিয় ঋতু শীতের বিদায় বিরহ। বিরহ বেদনা আরও উসকে দিল পাহাড়। মনে পড়ে গেল, দু’বছর ওমুখো হওয়া হয়নি। প্রস্তাব তুললাম বন্ধুমহলে। রাজি আমিসহ ৫ জন (যদিও বিজোড়)। যাত্রার তারিখ ঠিক হলো পহেলা ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
নির্ধারিত দিনে ঢাকা থেকে ৭ ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম প্রাথমিক গন্তব্য বান্দরবান শহরে। উদ্দেশ্য- এখান থেকে থানচি হয়ে তাজিংডং। আগে-পরে সম্ভব হলে আরও কিছু স্পট ঘুরে দেখা। ৫ বন্ধুর হাইকিং প্ল্যান হলেও শেষ পর্যন্ত স্পটে কেবল আমি আর আমাদের প্রকৌশলী বন্ধু মঞ্জু। পাহাড়ের নিরাপত্তা আর এই রুটের ছোটখাট সব কারণে সবাই পিছু হটলেও মঞ্জু একপ্রকার অদম্য। সে রাজি বিজয় পাহাড়ের চূড়ার অভিযানে। অগত্যা বান্দরবান শহরে সাবেক সহকর্মী সাংবাদিক ফরিদুল আলম সুমনের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে উঠে পড়লাম থানচির বাসে। সম্ভবত ৮৮ কিলোমিটারের পাহাড়ি আকাবাঁকা পথ পাড়ি দিতে চালক জানালো, সময় লাগবে ২ ঘণ্টা। শুক্রবারের দিনের দুপুর, উঠে পড়লাম। পথে চিম্বুক বিরতিতে দেখলাম বাসের সবাই পোলাও আর ডিম ভুনা খাচ্ছে ধীরেসুস্থে। ভাবলাম খাবারের এই গতি নিশ্চয়ই চালকের সময় হিসাবের অন্তর্ভূক্ত নয়। হলোও তাই। বিরতি শেষ হলো পাক্কা ৩০ মিনিট পর। আবারো শুরু যাত্রা। ক্লান্তিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম না।
চিম্বুক ছেড়ে থানচির পথে যাচ্ছি অনেকক্ষণ; ঘড়ি বলছে আড়াই ঘণ্টার যাত্রা শেষ। আবারো বিরতি। যথারীতি আধাঘণ্টা নষ্ট এখানে। ধীরে ধীরে বাস ভরলো মানুষে তবেই যাত্রা শুরু। আবারো ঘুমিয়ে পড়লাম। থানচি বাজারে পৌঁছলাম সন্ধ্যা নাগাদ। অর্থাৎ চালকের দুই ঘণ্টা যাত্রার হিসাব মিললো সাড়ে চার ঘণ্টায়। কথা বলারও মুড হারিয়ে ফেলেছি ততক্ষণে।


সোজা গিয়ে উঠে পড়লাম বুকিং দিয়ে রাখা থানচি রেস্ট হাউসে। খুবই সাধারণ। দোতলার ঘরটা স্যাতস্যাতে, মিটিমিটি আলো। শীতের সন্ধ্যায় অন্যরকম এক আবহ তৈরি করলো ঘরটা। গোসল শেষে ৮ টার পর রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তা ধরে বাজারে গেলাম। সেখানে ১০ টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোন চার্জে দিয়ে ৯ টার মধ্যে রাতের খাবার সেরে নিলাম। পেটপূজার পর মন চাইলো, বিশুদ্ধ বায়ুর অধিক সেবন। থানচি ব্রিজের উপর এসে চোখ চড়কগাছ ! উপরে বেড়ালের চোখের মত স্বচ্ছ আকাশ। তাতে ফুটে আছে লক্ষ-কোটি ফুল। তারার এমন বড় আর অবাক করা মেলা শেষবার দেখেছিলাম, বান্দরবানের লামায়।

ঢাকায় শীত না থাকলেও এখানে শীত রীতিমত হাড়ে কাপন ধরাচ্ছিল। এরমধ্যেই দুই বন্ধু শুয়ে পড়লাম ব্রিজের উপর। ঘণ্টাখানেক আকাশ দেখে মনে পড়লো সকাল সকাল উঠতে হবে। তাই অনিচ্ছা সত্বেও রুমে ফিরলাম।


পরদিন সকালে থানচির একমাত্র সাংবাদিক অনুপম দা’র তথ্য ও সাহায্য নিয়ে গাইড জোগাড় হলো। ছেলে অতিমাত্রায় ভালো, সহজ সরল, নাম- জয় (পুরো নাম খুব কঠিন)। জয় আগের দিনই রেমাক্রি, তিন্দু থেকে ফিরেছে। এবার আমাদের সাথে অতদূর যেতে পারবে তো ! পাহাড়ি ছেলেটা জানালো- ব্যাপার না। ওর কথা শুনে আশ্বস্ত হলাম, ভাবলাম তাহলে খুব একটা দুর্গম নয় তাজিংডং। আবার সন্দেহ হলো- তাহলে এই পথে কেন তাজিংডং যায় না অভিযাত্রীরা। যা হোক চাল, ডাল, ডিমসহ বাজার-সদাই করে শেষ পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ রওয়ানা দিলাম বিজয় পাহাড়ের উদ্দেশে। পথে পড়বে দুটি জনপদ- বোর্ডিং পাড়া আর শেরকর পাড়া।
শীতের পথে ব্যাকপ্যাক নেব না ভেবেও আমার আর মঞ্জুর- একেজনের ব্যাগের ওজন দাড়ালো ১২ কেজি করে।

তারউপর মঞ্জু আবার ভারি জামা কাপড় পড়ে পাহাড়ে হাটা শুরু করেছিল। ১০ মিনিটের মাথায় শুধু শর্টস ছাড়া বাকি সব খুলে ফেলতে হলো আমাদের। ভাবছিলাম শীতেই যদি লাল পাহাড়গুলো এমন তেঁতে ওঠে, তাহলে গরমে এ পথে মানুষ হাটবে তেমন করে। বৈরি এ পথে দেড় ঘণ্টা হাটার পর প্রথম বিরতি। পথে দেখা হয়ে গেল কারিতাসের দুই কর্মকর্তার সাথে আলাপে দেখি তারা আমাদের পূর্ব পরিচিত। আড্ডা জমে উঠলো আমার আর জয়ের সাথে। এই ফাঁকে পানি আর বিস্কুট খেয়ে নিলাম। ৩০ মিনিট বিরতির পর আবারো শুরু পথচলা। পাহাড়ে একনাগাড়ে হাটা সমতলের মানুষের জন্য খুবই কষ্টের। কেননা সমতলের ৪ কিলোমিটারের সমতুল্য পাহাড়ে এক কিলোমিটার হাটা। খাড়া পথে উঠতে যতটা কষ্ট, শুকনো বালু মাটিতে নামতে গিয়ে ততটাই বেগ পেতে হচ্ছিল। চড়া আর নামার এ খেলায় মাসল যেমন টান খাচ্ছিল তেমনি কুঁকড়ে যাচ্ছিল। এভাবে কয়টা পাহাড় পেরোয়েছি সে হিসাব নেই, যাত্রার সোয়া ৪ ঘণ্টার মাথায় গাইড জয় ধপ্ করে বসে পড়লো। আমদের বুক তখন রীতিমত কামারের হাপুরের মত ওঠানামা করছে।

একটু দম নিয়ে জয়কে জিজ্ঞেস করলাম, আর কত দূর? জয়ের জবাব, অর্ধেকও আসি নাই। আমার তো আক্কেল গুড়ুম! বেলা বাজে সাড়ে বারোটা অর্ধেক পথও পেরোতে না পারলে বিপদে আছি। একটু শক্তি সঞ্চয় করে নতুন করে লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করলাম তিনজন। সময় হিসাব করে প্রথম লক্ষ্য বোর্ডিং পাড়ার উদ্দেশে দিলাম হাটা। পথে বুনো ফল ফুল আর ঝিরি বাতাস মন শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছিল। এ পথে যেতে দেখা পেলাম বুনো নয়নতারাসহ নাম জানা না জানা রঙ্গীন ফুল। থেকে থেকে ডাক শুনলাম ডাহুক, ময়না, মাউন্টেন হক, টিয়াসহ নানা জাতের পাখির। এরমধ্যে জয়ের জানাশোনা একটা বাসায় হানা দিয়ে ডাক শুনলেও শকুনের দেখা পেলাম না। ঝিরির এ পথে প্রতিবারই মন আর পেট ভরে ঝিরির পানি খেলাম। সবশেষ ঝরণার প্রবাহ পেলাম যেখানে সেটাই বোর্ডিং পাড়া।

তখন বেলা প্রায় ৩ টা। পাড়ার বাইরে মাচাং আর ঘর বানানো আছে পথিকদের জন্য। সেখানেই শুয়ে পড়লাম।

দেখলাম এখানে মানুষ এখনো অর্ধনগ্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত। সেই মুহূর্তে বলতে গেলে আমরাও অর্ধনগ্ন। নিম্নাঙ্গে কেবল শর্ট প্যান্ট। এতে কিছুটা সুবিধাও মিললো। আদিবাসে এই ধরণের জীবন ও আচারের সাথে মেলামেশার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানতাম কীভাবে ওদের সাথে ব্যবহার করতে হবে। কীভাবে তাকাতে হবে, কতটা বলতে হবে আর বডি ল্যাংগুয়েজ কেমন হওয়া চাই। যাই হোক বিশ্রামের সময়টুকু ওরা আমাদের তেঁতুল, পানি, ফলমূল খাওয়ালো। আমরা খাওয়ালাম বিস্কুট আর সিগারেট। যেন নিমিষেই পার্থক্য ঘুঁচে গেল সমতল আর পাহাড়ের। এসময় গাইড জয়ের ভাষ্য, পাহাড় ঠাণ্ডা না হলে বড় পাহাড়ে ওঠা যাবে না। খহাত তুলে দেখালো- বোর্ডিং পাড়া লাগোয়া ওই খাড়া লাল পাহাড়ে উঠতে ঘণ্টাখানেক লাগবে। বিশ্রাম শেষ হলো সাড়ে তিনটায়। শুরু হলো এই ট্রেইলের সবচেয়ে বড় পাহাড় ডিঙ্গানোর পালা। সময় পুষিয়ে নিতে এক ঘণ্টার পথ দ্রুততার সাথে উঠলাম ৪৫ মিনিটে। এরপর কেবলই এগিয়ে যাওয়া। পথে খাড়ি, ঝিরিপথ, পেরোলাম বেশ কটি। বিকেল ৫ টার দিকে এসে যেখানে পৌঁছলাম সেখানে পাহাড় বাঁক নিয়ে ঢুকে গেছে মোদক ট্রেইলে।

আমরা সেই পাহাড় ছেড়ে নামবো প্রায় দেড়শ ফুট নিচে। নামার পথ বলতে খেজুর গাছ কেটে পা-দানি তৈরি করা।


সেপথে নামতেই ট্রেইলে গয়ালের উপস্থিতি। পাহাড়ি গয়াল, শান্ত, সুবোধ। কোন কারণে ভয় পেলে বা ক্ষেপে গেলে এরাই ভীতিকর হয়ে ওঠে। বৈশাখৈর দিন, শেষ বিকেলে স্যাতস্যাতে পাহাড় কাঁপন ধরাচ্ছে গা’য়। এ অবস্থায় আরো ঘণ্টা দুয়েক হাটার পর সন্ধ্যা নাগাদ দেখা পেলাম কাঙ্খিত শেরকর পাড়ার। যেখান থেকে পরের দিন তাজিংডং চূড়ার উদ্দেশে যাত্রা করবো আমরা।


শেরকর পাড়া পৌঁছে নিচের ঝরণায় গোসল করলাম। শান্ত প্রকৃতির কোলে সঁপে দিলাম নিজেকে। চুপচাপ উপভোগ করলাম বুনো আমন্ত্রণ। আলো নিভে আসলে উঠে পড়লাম শেরকর পাড়ার প্রথম বাড়িটাতে। সারাদিনের ক্লান্তি এড়াতে গা এলিয়ে দিলাম। রান্নার কাজ শুরু করলো জয় আর বাড়ির মালিক (নাম জানা নাই)। জানালো বিকেলে একটা বনমুরগী শিকার করেছে সে। আমরা টাকা দিলে আমাদের রান্না করে দিতে পারে। সত্যিই এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।

২ শ টাকায় বনমুরগী কিনে রান্না চাপালাম। সাথে জুমের সাদা ভাত, ডিম ভাজি আর ঘন ডাল, আহা...। খাওয়া শেষে স্থানীয়দের বিশেষ চা দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থার মধ্যে দু’জন ছেলে দেখা করতে এলো। ওরা আগের দিন (শুক্রবার রাতে) এসে পৌঁছলেও গাইড ওদের বসিয়ে রেখেছে শেরকর পাড়ায়। কেননা শনিবার গাইড চলে গেছে থানচি, আর রোববার কোন কাজ করার নিয়ম নেই ওদের। রোববারের প্রার্থণা দিন শেষে সোমবার তাজিংডং উঠতে পারবে ওরা। সেই পর্যন্ত দীর্ঘ বিশ্রামে দুই যুবক। একজন বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা অন্যজন পর্তুগালে থাকে। এই প্রথম বাংলাদেশের কোন একটা জায়গায় ঘুরতে বেরিয়ে দুইজনই পড়েছে মহা বিপদে। ওদের পেয়ে আমরাও খুশী, বললাম- কোন চিন্তা নেই রোববার সবাই যখন প্রার্থণায় ব্যস্ত থাকবে তখন জয় আমাদের তাজিংডং ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। সুতরাং যেমন ভাবা তেমনই কাজ। আপাতত রাতভর গানের আয়োজনে ঘুমিয়ে পড়ার ব্যবস্থা হল।

পরদিন খুব ভোরে তাজিংডং (বিজয়) পাহাড় জয়ের উদ্দেশে শেরকার পাড়া ছাড়লাম আমরা। আবারো উপরে উঠতে শুরু করলাম। শেরকর পাড়া থেকে তাজিংডংয়ের চূড়া দেখে কাছে মনে হচ্ছিল। উঠতে গিয়ে কষ্ট হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম। আবারো অসমতল ভূমি, লতা-গুল্মের ঘণ জঙ্গল আর ঝিরিপথ পেরোনোর পালা। এভাবে টানা দুই ঘণ্টা ট্রাকিংয়ের মাঝে চারবার বিশ্রাম নিতে হলো। অবশেষে তাজিংডংয়ের নিচে উপস্থিত হলাম আমরা ৫ জন। ততক্ষণে সূর্য তেঁতে উঠেছে। তাজিংডংয়ের এ প্রান্ত দিয়ে উঠতে রাস্তা বা ট্র্যাক না থাকায় জান কাবার। হাত আর পা সমানভাবে ব্যবহার করে, কখনো কখনো ক্রলিং করে সরু আর দুর্গম সামিট ট্রেইলটুকু পাড়ি দিলাম। চূড়ায় উঠলাম মাটির গায়ে গা মিশিয়ে, একে অপরকে টেনে তুলে। অবশেষে তাজিংডংয়ের চূড়ায় উঠলাম আমরা।


এখান থেকে দেখা মেলে মিয়ানমারের সুউচ্চ পাহাড় আর কেওক্রাডংয়ের পথ হয়ে তাজিংডং আসতে গেলে সবশেষ যে জনপদ সেই সিমপ্লাম্পি পাড়া আর বিজিবির ক্যাম্প। অদ্ভুত ব্যাপার, দৃষ্টিসীমা এখানেও আটকে যাচ্ছে পাহাড়ের কারণে। চূড়ায় ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে অর্ধেক সময়ে ফিরে এলাম শেরকর পাড়ায়। এবার ফেরার পালা। যাওয়ার পথে পাহাড় চড়ার বদলে নামতে হবে বেশি। ভাবতে গিয়ে কিছুটা মানসিক শক্তি পেলাম। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সকাল ১১ টার দিকে রওয়ানা হলাম আমরা ৫ জন। অবাক ব্যাপার যে পথ চড়তে তিন ঘণ্টা লেগেছিল অনেকটা আরামে সেই পথ নেমে এলাম সোয়া একঘণ্টায়। এভাবে পথ চলে তিনটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম বোর্ডিং পাড়ায়। এখানে এবার অপেক্ষার পালা। কেন ? যাবার সময় দেখেছি পাহাড়ের এই চূড়া থেকে কাঠ কেটে নামাতে বিশেষ এক ধরণের ট্রাক সর্বোচ্চ সীমায় ওঠে। সেগুন, গজারি, গামারী কাঠ নিয়ে এই ট্রাক যায় থানচি। খবর নিয়ে রেখেছিলাম, কয়েকদিন পরপর আসা ট্রাক আসবে আজ এবং বিকেল ৩ টার মধ্যে। যদি তাই হয় তবে বাকি পথটা বিপদজনক হলেও ট্রাকে যাওয়ার পক্ষে সবাই। কেননা হাটতে রাজি নয় কেউই। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। ট্রাকের শব্দে সজাগ হয়ে গেলাম সবাই। এক দৌড়ে বোর্ডিং পাড়া থেকে এক পাহাড় উপড়ে উঠলাম। দেখলাম সেখানে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। ওরা জানালো ভবিষ্যতে এই পথে আসতে পারবে পর্যটকরা, যাতে কষ্ট বারো আনা কমে যাবে। আমাদের অফার করা হলো কাঠ বোঝাই ট্রাকে যেতে হবে।


চ্যালেঞ্জটা নিলাম সবাই। অবশ্য পড়ে দেখা গেল কাঠ বোঝাই ট্রাক ওপথে ফিরতে পারবে না। তাই খালি ট্রাক আমাদের নিয়ে রওয়ানা হলো। সত্যি এ এক অসাধারণ যাত্রা। এর আগে রোয়াংছড়িতে এমন দুর্গম পথে চান্দের গাড়িতে একবার ভ্রমন করেছিলাম। শত প্রতিকূল এসব পথ পর্যটকদের জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। তবুও জান হাতে নিয়ে রওয়ানা হলাম আমরা সবাই। ট্রাকের পেছনে সর্ব শক্তি দিয়ে কোনমতে আকড়ে থাকার চেষ্টায় একজন আরকেজনকে দেখে হেঁসেই খুন। শেষ বিকেলে পাহাড়ি পথে দেখলাম বিশেষ ট্রাকটি ৭০-৮০ ডিগ্রি খাড়া পাহাড়ে উঠে যাচ্ছে। আবার নামছে দুর্বার গতিতে। এভাবে চলে মাত্র দুই ঘণ্টায় চলে এলাম থানচি বাজারে। হালকা কিছু খেয়ে আপাতত রেস্টহাউসের উদ্দেশে ছুট দিলাম দুই জন।


বাকি দুইজন গেল পরের দিন বান্দরবানের উদ্দেশে সকালের টিকিট কনফার্ম করতে। এরমধ্যে জয়কে ওর প্রাপ্য মিটিয়ে বিদায় দিলাম। এবার ফেরার পালা। বিশ্রাম হবে রাতভর। শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম- থানচির জনপদে এসে সমতলের কিছুটা হলেও পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে। বান্দরবানে এসে নীলগিরি পাহাড়ের কোনায় ডুবতে বসা সূর্য দেখছিলাম।


ভাবছিলাম জমজমাট বাজার, সাজিয়ে রাখা পসরা, মানুষের হাঁকডাক এই সবই রাজধানী ঢাকার তুলনায় নিরিবিলি। তারপরও নিরবতার যে ঐকতান মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পেছনে ফেলে এলাম শেরকর পাড়ার কোলে তার সাথে আর কীসের তুলনা চলে ?
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×