somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) প্রথম পর্ব

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ও আইয়ুবীয় রাজবংশের একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন । তিনি কুর্দি জাতিগোষ্ঠীর লোক ছিলেন । লেভান্টে ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে তিনি মুসলিম প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেন । ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে তার সালতানাতে মিশর সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, হেজাজ, ইয়েমেন এবং উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল । ১১৬৩ সালে তার জেনগি বংশীয় ঊর্ধ্বতন নুরউদ্দিন জেনগি তাকে ফাতেমীয় মিশরে প্রেরণ করে । ক্রুসেডারদের আক্রমণের বিরুদ্ধে সামরিক সাফল্যের ভিতর দিয়ে সালাহউদ্দিন ফাতেমীয় সরকারের উচ্চপদে পৌঁছান । ফাতেমীয় খলিফা আল আদিদের সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিল । ১১৬৯ সালে তার চাচা শিরকুহ মৃত্যুবরণ করলে আল আদিদ সালাহউদ্দিনকে তার উজির হিসেবে নিয়োগ করেন । ততকালিন সময় শিয়া নেতৃত্বাধীন খিলাফতে সুন্নি মুসলিমদের এমন পদ দেয়া বিরল ঘটনা ছিল । উজির থাকাকালীন তিনি ফাতেমীয় শাসনের প্রতি বিরূপ ছিলেন । আল আদিদের মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের আনুগত্য ঘোষণা করেন । পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি ফিলিস্তিনে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান । ইয়েমেনে সফল বিজয় অভিযানের তিনি আদেশ দেন এবং উচ্চ মিশরে ফাতেমীয়পন্থি বিদ্রোহ উৎখাত করেন । ১১৭৪ সালে নুরউদ্দিনের মৃত্যুর অল্পকাল পরে সালাহউদ্দিন সিরিয়া বিজয়ে ব্যক্তিগতভাবে নেতৃত্ব দেন । দামেস্কের শাসকের অনুরোধে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে শহরে প্রবেশ করেন । ১১৭৫ সালের মধ্যভাগে তিনি হামা এবং হোমস জয় করেন । জেনগি নেতারা তার বিরোধী হয়ে পড়েন । সরকারিভাবে তারা সিরিয়ার শাসক ছিলেন । এরপর শীঘ্রই তিনি জেনগি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন ও আব্বাসীয় খলিফা আল মুসতাদি কর্তৃক মিশর এবং সিরিয়ার সুলতান ঘোষিত হলেন । উত্তর সিরিয়া এবং জাজিরায় তিনি বহু অভিযান চালান । সেসময় হাশাশিনদের দুটি হত্যাচেষ্টা থেকেও তিনি বেঁচে যান । ১১৭৭ সালে তিনি পূর্ণরায় মিশরে ফিরে আসেন । ১১৮২ সালে আলেপ্পো জয়ের মাধ্যমে সালাহউদ্দিন সিরিয়া জয় সমাপ্ত করেন । তবে তখন জেনগিদের মসুলের শক্তঘাটি দখলে সমর্থ হননি । সালাহউদ্দিনের ব্যক্তিগত নেতৃত্বে আইয়ুবী সেনারা ১১৮৭ সালে হাত্তিনের যুদ্ধে ক্রুসেডারদের পরাজিত করেন । এর ফলে মুসলিমদের জন্য ক্রুসেডারদের কাছ থেকে ফিলিস্তিন জয় করা সহজ হয় । এর আগে ৮৮ বছর ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে নেন । ক্রুসেডার ফিলিস্তিন রাজ্য এরপর কিছুকাল বজায় থাকলেও হাত্তিনের পরাজয় এই অঞ্চলে মুসলিমদের সাথে ক্রুসেডার সংঘাতের মোড় ঘুরিয়ে দেয় । মুসলিম ও আরব, তুর্কি এবং কুর্দি সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব । ১১৯৩ সালে তিনি দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন । তার অধিকাংশ সম্পদ তিনি তার প্রজাদের দান করে দেন । উমাইয়া মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয় । সেখানে তার মাজার অবস্থিত ।
সালাহউদ্দিন আইয়ুবী মেসোপটেমিয়ার তিকরিতে জন্মগ্রহণ করেছেন । তার ব্যক্তিগত নাম ইউসুফ সালাহউদ্দিন যার অর্থ বিশ্বাসের ও ন্যায়পরায়ণ । তার পরিবার কুর্দি বংশোদ্ভূত এবং মধ্যযুগীয় আর্মেনিয়ার ডিভিন শহর থেকে আগত । নুরউদ্দিন জেনগি ছিলেন তার নানা । এসময় তার নিজ রাওয়াদিদ গোত্র আরবিভাষী বিশ্বের অংশ হয়ে যায় । ১১৩২ সালে মসুলের শাসক ইমাদউদ্দিন জেনগির পরাজিত সেনাবাহিনী পিছু হটার সময় টাইগ্রিসের দিকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পরে । সে সময় সালাহউদ্দিনের বাবা নাজমুদ্দিন আইয়ুব সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন । তিনি সেনাদের জন্য ফেরির ব্যবস্থা করতেন এবং তাদের তিকরিতে আশ্রয় দিতেন । মুজাহিদউদ্দিন বিহরুজ নামক একজন প্রাক্তন গ্রীক দাস সেসময় উত্তর মেসোপটেমিয়ায় সেলজুক পক্ষের সামরিক গভর্নর ছিলেন । তিনি জেনগিদের সাহায্য করার জন্য আইয়ুবের বিরোধী করেন । ১১৩৭ সালে আইয়ুবের ভাই আসাদউদ্দিন শিরকুহ বিহরুজের এক বন্ধুকে সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে হত্যা করার পর তাকে তিকরিত থেকে বিতাড়িত করা হয় । বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদের মতে যে রাতে সালাহউদ্দিনের পরিবার তিকরিত ত্যাগ করে সে রাতেই তিনি জন্মগ্রহণ করে । ১১৩৯ সালে আইয়ুব এবং তার পরিবার মসুলে চলে আসেন । এখনে ইমাদউদ্দিন জেনগি তাদের পূর্ব অবদান স্বীকার করে আইয়ুবকে বালবিকের দুর্গের কমান্ডার নিয়োগ দেয় । ১১৪৬ সালে ইমাদউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার পুত্র নুরউদ্দিন জেনগি আলেপ্পোর অভিভাবক এবং জেনগি রাজবংশের নেতা হয় । সেসময় সালাহউদ্দিন দামেস্কে বসবাস করছিলেন । বলা হয় তিনি সে শহরের প্রতি দুর্বল ছিলেন । তবে তার অল্প বয়সের তথ্য বেশি পাওয়া যায় না । শিক্ষা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন বড়রা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছেন সেভাবে শিশুদের গড়ে তোলা হয় । তার একজন জীবনীকার আল ওয়াহরানির মতে সালাহউদ্দিন ইউক্লিড আলমাজেস্ট ও পাটিগণিত এবং আইন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন । কিছু সূত্র মতে ছাত্রাবস্থায় তিনি সামরিক বাহিনীর চেয়ে ধর্মীয় বিষয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন । ধর্মীয় বিষয়ে তার আগ্রহে প্রভাব ফেলা আরেকটি বিষয় হল প্রথম ক্রুসেডের সময় খ্রিষ্টানদের কর্তৃক জেরুজালেম অধিকার । ইসলাম ছাড়াও বংশবৃত্তান্ত ও জীবনী এবং আরবের ইতিহাস পাশাপাশি আরব ঘোড়ার রক্তধারা সম্পর্কে তার বহু জ্ঞান ছিল । আবু তামামের রচিত হামাশ তার সম্পূর্ণ জানা ছিল । তিনি কুর্দি এবং তুর্কি ভাষায় কথা বলতে পারতেন ।
চাচা আসাদউদ্দিন শিরকুহর তত্ত্বাবধানে সালাহউদ্দিন সামরিক কর্মজীবন শুরু করেন । শিরকুহ সেসময় দামেস্ক এবং আলেপ্পোর আমির নুরউদ্দিন জেনগির একজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কমান্ডার ছিলেন । ১১৬৩ সালে ফাতেমীয় খলিফা আল আদিদের উজির শাওয়ার শক্তিশালী বনু রুজাইক গোত্রের দিরগাম নামক ব্যক্তি দ্বারা মিশর থেকে বিতাড়িত হয় । তিনি নুরউদ্দিনের কাছে সামরিক সহযোগিতা চাইলে নুরউদ্দিন তা প্রদান করেন । তিনি ১১৬৪ সালে দিরগামের বিরুদ্ধে শাওয়ারের অভিযানে সহায়তার জন্য শিরকুহকে পাঠানো হয় । ২৬ বছরের সালাহউদ্দিন সেসময় তার সাথে যান । শাওয়ার পুনরায় উজির হওয়ার পর তিনি শিরকুহকে মিশর থেকে তার সেনা সরিয়ে নিতে বলেন । কিন্তু শিরকুহ তা প্রত্যাখ্যান করেন । তিনি বলেন যে নুরউদ্দিনের ইচ্ছা যে তারা মিশরে অবস্থান করবেন । এ অভিযানে সালাহউদ্দিনের ভূমিকা বেশি ছিল না । বিলবাইসের পর ক্রুসেডার মিশরীয় বাহিনী এবং শিরকুহর বাহিনী গাজার পশ্চিমে নীল নদের সন্নিকটে মরু সীমান্তে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় । সালাহউদ্দিন তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বা পালন করেন । তাতে তিনি জেনগি সেনাবাহিনীর দক্ষিণভাগের নেতৃত্ব দেন । কুর্দিদের একটি দল সেসময় বাম দলের দায়িত্বে ছিলেন । শিরকুহ ছিলেন মধ্য ভাগের অবস্থানে । প্রথমদিকে ক্রুসেডাররা সাফল্য লাভ করলেও অঞ্চলটি তাদের ঘোড়ার জন্য উপযুক্ত ছিল না । কায়সারিয়ার কমান্ডার হিউ সালাহউদ্দিনের দলকে আক্রমণের সময় গ্রেপ্তার হয় । মূল অবস্থানের দক্ষিণ প্রান্তের ছোট উপত্যকায় লড়াইয়ের পর জেনগিদের কেন্দ্রীয় শক্তি আগ্রাসী অবস্থানে চলে আসে । সালাহউদ্দিন পিছন থেকে তাদের সাথে যুক্ত হন । সে যুদ্ধে জেনগিরা বিজয়ী হয় । ইবনে আল আসিরের মতে সালাহউদ্দিন শিরকুহকে লিখিত ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় বিজয়ে সাহায্য করে । তবে তাতে শিরকুহর অধিকাংশ লোক মারা যান এবং কিছু সূত্র মতে এই যুদ্ধ সামগ্রিক জয় ছিল না । সালাহউদ্দিন এবং শিরকুহ আলেক্সান্দ্রিয়ার দিকে যাত্রা করেন । সেখানে তাদের অভ্যর্থনা জানান হয় এবং অর্থ অস্ত্র প্রদান ও শিবির স্থাপন করতে দেয়া হয় । শহর অধিকার করতে এগিয়ে আসা একটি শক্তিশালী ক্রুসেডার মিশরীয় দলকে প্রতিহত করার জন্য শিরকুহ তার সেনাবাহিনীকে বিভক্ত করেন । তিনি এবং তার অধীন সেনারা আলেক্সান্দ্রিয়া থেকে অন্যত্র যাত্রা করেন এবং সালাহউদ্দিন ও তার অধীনস্ত সেনারা শহর রক্ষার জন্য থেকে যান ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:২৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×