somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৫ম পর্ব

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) প্রথম পর্ব

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ২য় পর্ব
আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৩য় পর্ব

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৪র্থ পর্ব
সালাহউদ্দিন বল্ডউইনের সাথে যুদ্ধ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা সন্ধি করেন

আইয়ুবী রাজা বল্ডউইনকে তার গাজা ভিত্তিক টেম্পলারদের নিয়ে আসকালনে প্রবেশ করতে দেওয় । ততকালিন ক্রুসেডার বাহিনী শুধু ৩৭৫জন নাইট নিয়ে গঠিত হলেও সালাহউদ্দিন দক্ষ সেনাপতিদের উপস্থিতির জন্য আক্রমণ থেকে বিরত থাকলেন । ২৫ নভেম্বর আইয়ুবী সেনাবাহিনীর বড় অংশ অনুপস্থিত থাকায় মন্টগিজার্ডের যুদ্ধে সালাহউদ্দিন এবং তার সেনারা রামলার কাছে অতর্কিত আক্রমণের সম্মুখীন হয়ে পড়েন । সেনারা অবস্থান গঠনের আগ পযন্ত টেম্পলাররা আইয়ুবী সেনাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে সালাহউদ্দিন তার সেনাদের সুসংগঠিত করতে সচেষ্ট হন । কিন্তু তার পরবর্তীতে পরাজয় অনিবার্য হয়ে উঠায় তিনি সেনাদের নিয়ে মিশর ফিরে যান । যুদ্ধে পরাজয়ে আটকে না গিয়ে সালাহউদ্দিন পুনরায় ক্রুসেডারদের সাথে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে নেন । ১১৭৮ সালের বসন্তে তিনি হোমসের দেয়ালের কাছে ঘাটি স্থাপন করেন এবং তার সেনাপতিদের সাথে ক্রুসেডার সেনাদের কিছু খন্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয় । হামায় তার বাহিনী জয়লাভ করেন এবং অনেক শত্রুসেনাও বন্দী হয় । বিশৃংখলা সৃষ্টির দায়ে তাদের শিরোচ্ছেদের আদেশ দেওয়া হয় । বছরের বাকি সময় তিনি সিরিয়ায় শত্রুদের সাথে লড়াই না করে অবস্থান করেন । সালাহউদ্দিনের গোয়েন্দারা তাকে জানায় যে ক্রুসেডাররা সিরিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা করছে । ততকালিন তিনি তার সেনাপতি ফররুখশাহকে তার এক হাজার সেনা নিয়ে দামেস্কের সীমানায় কোনো আক্রমণ হচ্ছে কিনা তা দেখা ও পর্যবেক্ষনের জন্য পাহারা দেয়ার নির্দেশ দেন এবং যুদ্ধ এড়িয়ে ফিরে আসতে বলে দেন । তাকে বলা হয় এরপর পাহাড়ের উপর মশাল জ্বালানোর জন্য যাতে সালাহউদ্দিন এরপর অগ্রসর হতে পারেন । ১১৭৯ সালের এপ্রিলে বল্ডউইনের নেতৃত্বাধীন ক্রুসেডাররা ধরে নেন কোনো প্রতিরোধ হবে না । এবং গোলান মালভূমির পূর্বে মুসলিম পশুপালকদের উপর আচমকা হামলা চালানোর অপেক্ষায় থাকেন ।

ফররুখশাহর বাহিনীর উদ্দেশ্যে বল্ডউইন খুব দ্রুত যাত্রা শুরু করেন । তাদের মধ্যে সংঘটিত লড়াইয়ে আইয়ুবীরা ই জয়ী হয় । আর এই বিজয়ের পর সালাহউদ্দিন মিশর থেকে আরো সেনা আনার পরিকল্পনা করেন । তিনি আল আদিলকে ১৫০০ ঘোড়সওয়ার পাঠাতে বলেন । ১১৭৯ সালের গ্রীষ্মে রাজা বন্ডউইন দামেস্কের দিকের পথে একটি চৌকি স্থাপন করেন এবং জর্ডান নদীর দিকের পথ সুরক্ষিত করতে চাইলেন । সালাহউদ্দিন ১০০০০০ স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে এই কাজ বন্ধের জন্য বল্ডউইনকে প্রস্তাব দিলেন । কিন্তু এতে সে কোন সাড়া পেলেন না । এরপর তিনি টেম্পলারদের অবস্থান করা চেস্টেলেট নামক দুর্গ ধ্বংস করতে উদ্যত হলেন । ক্রুসেডাররা দ্রুত মুসলিমদের আক্রমণ করতে এগিয়ে আসায় বিশৃঙ্খল হয়ে পড়লো । তাদের পদাতিকরা পিছিয়ে পড়েন । তারা প্রাথমিক ভাবে সাফল্য লাভ করলেও সালাহউদ্দিন পরে সফল হন এবং তার সেনারা ক্রুসেডারদের আক্রমণ করেন ।

যুদ্ধে আইয়ুবীরা ই জয়ী হন । অনেক উচ্চপদস্থ নাইট গ্রেপ্তার হন । সালাহউদ্দিন এরপর দুর্গ দখলের জন্য যাত্রা শুরু করেন । ১১৭৯ সালের ৩০ এপ্রিল এটির পতন ঘটে । ১১৮০ সালের বসন্তে সালাহউদ্দিন সাফাদ অঞ্চলে অবস্থান করার সময় জেরুজালেমের ক্রুসেডার রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক আকারের অভিযান চালানোর ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন । বল্ডউইন তার কাছে শান্তিপ্রস্তাব পাঠিয়ে দেন । খরা এবং ফসল কম থাকায় সালাহউদ্দিন চুক্তিতে উপনীত হলেন । রেমন্ড অব ট্রিপলি এই চুক্তির বিরোধীতা করলেও পরে তার এলাকায় আইয়ুবী সেনাদের এক অভিযান এবং টারটুস বন্দরে সালাহউদ্দিনের নৌবহর উপস্থিত হওয়ার পর তা মানতে রাজি হন । ১১৮০ সালের জুনে কেইফার অরতুকি আমির নুরউদ্দিন মুহাম্মদের জন্য সালাহউদ্দিন একটি অভ্যর্থনার আয়োজন করেন । তাতে তাকে এবং তার ভাই আবু বকরকে ১০০০০০ দিনার মূল্যের উপহার দেওয়া হয় । অরতুকি আমিরদের সাথে মিত্রতা স্থাপন এবং মেসোপটেমিয়া এবং আনাতোলিয়ার আমিরদের প্রভাবিত করার উদ্দেশ্য ছিল । পূর্বে সালাহউদ্দিন নুরউদ্দিন এবং সেলজুক সুলতান দ্বিতীয় খিলজি আরসালান যুদ্ধের মুখোমুখি হলে তাদের মধ্যে সমঝোতা করান । খিলজি আরসালান দাবি করেন যে তার মেয়েকে বিয়ে করার মোহর হিসেবে নুরউদ্দিন তাকে দেওয়া এলাকা ফিরিয়ে দিবেন । আরসালান সংবাদ পেয়েছিলেন যে তার মেয়েকে অপমান করা হয়েছে এবং সেলজুক অঞ্চল লাভের জন্য তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে । নুরউদ্দিন সালাহউদ্দিনকে এই ব্যাপার মধ্যস্থতা করার অনুরোধ জানান । তবে আরসালান তা প্রত্যাখ্যান করে দেন ।

নুরউদ্দিন এবং সালাহউদ্দিন গেইক সুতে সাক্ষাত করার পর শীর্ষ সেলজুক আমির আল দীন আল হাসান আরসালানের মেনে নেওয়ার সংবাদ নিশ্চিত করেন । তারপর একটি চুক্তি হল । সালাহউদ্দিন পরবর্তীতে আরসালানের কাছ থেকে জানতে পারেন নুরউদ্দিন তার মেয়েকে আরো অপমান করছেন । তাতে সালাহউদ্দিন ক্ষিপ্ত হলেন । পরে তিনি মালাতয়া আক্রমণের হুমকি দিলেন। হুমকির পর সেলজুকরা আলোচনার জন্য চাপ দেন । শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় যে আরসালানের কন্যাকে এক বছরের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে এবং যদি নুরউদ্দিন শর্ত মানতে ব্যর্থ হয় তবে সালাহউদ্দিন তার সমর্থন প্রত্যাহার করবেন ।

ফররুখশাহকে সিরিয়ার দায়িত্বে রেখে ১১৮১ সালের শুরুতেই সালাহউদ্দিন কায়রোতে ফিরে আসেন । এবং আবু শামার বর্ণনা অনুযায়ী তিনি মিশরে রমজানের রোজা রাখতে চাইছিলেন আর গ্রীষ্মে হজের জন্য মক্কায় যেতে চাইছিলেন । যে কোন কারণেই হোক তিনি তার পরিকল্পনা বদলান এবং জুন মাসের দিকে নীল নদের অঞ্চলে পরিদর্শনে রওনা হন । এখানে তিনি পুনরায় বেদুইনদের সাথে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হলেন । তিনি তাদের দুই তৃতীয়াংশ জায়গির অপসারণ করেন যাতে ফায়ুমের জায়গিরদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় । তাছাড়াও বেদুইনরা ক্রুসেডারদের সাথে ব্যবসা করার দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন । তাই তাদের শস্য বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং তাদেরকে পশ্চিমে বসতি সরিয়ে নিতে বাধ্য করেন । পরবর্তীতে আইয়ুবী যুদ্ধজাহাজ নদীপথে বেদুইন জলদস্যুদের উপর আক্রমণ করেন ।

তথ্য গুগল ও বিভিন্ন ওয়েব সাইট ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×