somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৬র্থ পর্ব

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) প্রথম পর্ব

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ২য় পর্ব
আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৩য় পর্ব

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৪র্থ পর্ব

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৫ম পর্ব

সাম্রাজ্য বিস্তারের ঘটনা
১১৮১ সালের জুন মাসে সাইফউদ্দিন মারা যাওয়ার পর তার ভাই ইজ্জউদ্দিন মসুল নেতৃত্ব লাভ করেন । ডিসেম্বরের চার তারিখ জেনগি যুবরাজ আস সালিহ আলেপ্পোতে মৃত্যুবরণ করেন । মৃত্যুর আগে তিনি তার প্রধান কর্মকর্তাকে শপথ করান যে তিনি ইজ্জউদ্দিনের প্রতি অনুগত থাকবেন কারণ তিনি ছিলেন যিনি সালাহউদ্দিনকে প্রতিহত করতে পারবেন এমন একমাত্র জেনগি শাসক । ইজ্জউদ্দিনকে আলেপ্পোয় স্বাগত জানানো হল । তিনি তার ভাই ইমাদউদ্দিন জেনগির উপর সিনজারের বিনিময়ে আলেপ্পোর ভার অর্পণ করেন । জেনগিদের সাথে করা পূর্বের চুক্তির কারণে সালাহউদ্দিন এই সকল আদানপ্রদানে কোনো হস্তক্ষেপ করলেন না । ১১৮২ সালের ১১ মে সালাহউদ্দিন তার অর্ধেক মিশরীয় আইয়ুবী সেনা এবং বেশ সংখ্যক বেসামরিক লোক নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে কায়রো ত্যাগ করেন । সালাহউদ্দিন একে অশুভ মনে করেন । তারপর তিনি আর মিশরে আসেন নাই । ক্রুসেডাররা তাকে মোকাবেলা করার জন্য সীমান্তে সমবেত হয়েছেন জানতে পেরে তিনি সিনাই উপদ্বীপের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যান । জুনে তিনি দামেস্কে পৌছে জানতে পারেন যে ফররুখশাহ গেলিলি আক্রমণ করেছেন । জুলাই মাসে সালাহউদ্দিন ফরুরখশাহকে কাওকাব আল হাওয়া আক্রমণ করতে পাঠান । পরে আগস্টে আইয়ুবীরা বৈরুত জয়ের জন্য নৌ এবং স্থল পথে আক্রমণ চালায় । এই অভিযান ব্যর্থ হয় । সালাহউদ্দিন তা পরিত্যাগ করে এবং মেসোপটেমিয়ার দিকে নজর দিলেন ।

হারানের আমির কুকবারি সালাহউদ্দিনকে জাজিরা অঞ্চল অধিকারের জন্য আমন্ত্রণ জানায় । এটি মেসোপটেমিয়ার উত্তর অংশ ছিল । জেনগিদের সাথে তার চুক্তি ১১৮২ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয়ে যায় । জাজিরায় তার অগ্রসর হওয়ার পূর্বে এখানের জেনগি শাসকদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়ে যায় । সালাহউদ্দিন ইউফ্রেটিস নদী অতিক্রম করার পূর্বে ই আলেপ্পো অবরোধ করার মাধ্যমে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে দেন । বিরা পৌছার পর নদীর কাছে সালাহউদ্দিনের সাথে কুকবারি এবং হিসান কাইফার নুরউদ্দিন যুক্ত হলেন । সেই যৌথ বাহিনী জাজিরার শহরগুলো জয় করে নেন । প্রথম এডেসা এরপর সারুজ ও রাকা, কারকেসিয়া এবং নুসাইবিন তাদের অধিকারে আসেন । রাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল । সেসময় এর দায়িত্বে ছিলেন কুতুবউদ্দিন ইনাল । ইতিপূর্বে ১১৭৬ সালে তিনি সালাহউদ্দিনের কাছে মানবিজ হারিয়েছিলেন । সালাহউদ্দিনের বিশাল সেনাবাহিনী দেখে তিনি প্রতিরোধের তেমন কোন চেষ্টা করেননি এবং তাকে তার সম্পদ ধরে রাখার অধিকার দেওয়া হবে এই শর্তে আত্মসমর্পণ করেন । বেশ কিছু কর বাতিল করে শহরের অধিবাসীদের উপর প্রভাব ফেলেন । কোষাগারের নথি থেকে সেগুলো মুছে ফেলা হয় এবং বলা হয় যে সবচেয়ে খারাপ শাসক হল তারা যাদের নিজেদের টাকার থলে পূর্ণ থাকে আর জনগণ থাকে দুর্বল । রাকা থেকে তিনি আল ফুদাইন, আল হুসাইন, মাকসিম ও দুরাইন, আরাবান এবং খাবুর জয়ের জন্য এগিয়ে গেলেন । সেসব অঞ্চল তার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন ।

ততকালিন সালাহউদ্দিন নুসায়বিনের দিকে এগিয়ে যান । আর সেই অঞ্চল কোনো বাধা প্রদর্শন করেনি । মাঝারি আকারের শহর হিসেবে নুসায়বিন তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না । কিন্তু মারদিন ও মসুলের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্থান ছিল এবং তখন দিয়ারবাকিরে সহজে পৌছানো যেত । এসব বিজয়ের মাঝে সালাহউদ্দিন সবগ্নাদ পান যে ক্রুসেডাররা দামেস্কের গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালাচ্ছেন । ইতিমধ্যে আলেপ্পোতে শহরের আমির জানগি উত্তর ও পূর্বে সালাহউদ্দিনের শহর যেমন বালিস ও মানবিজ, সারুক, বুজা এবং আল কারজাইনে আক্রমণ করে । তিনি এমনকি আল আজাজে নিজের দুর্গও ধ্বংস করেন । যাতে করে আইয়ুবীরা তা জয়ে করার পরে ব্যবহার করতে না পারেন ।

এর পরে সালাহউদ্দিন তার দৃষ্টি মসুল থেকে আলেপ্পোর দিকে সরিয়ে নিলেন । এবং তার ভাই তাজুল মুলুককে তেলের খালিদ দখলের জন্য পাঠান । শহরটি অবরোধ করা হল । কিন্তু শহরের শাসক ১৭ই মে সালাহউদ্দিন ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হওয়ার পর আত্মসমর্পণ করলেন । ইমাদউদ্দিনের মতে তেল খালিদের পর সালাহউদ্দিন উত্তরে আইন তাবের দিকে এগিয়ে অবস্থান নেন । ২১শে মে তিনি শহরের বাইরে শিবির স্থাপন করেন এবং নিজে আলেপ্পো দুর্গের পূর্ব দিকে অবস্থান নিলেন । তার সেনারা বানাকুসার শহরতলি থেকে উত্তর পূর্বে এবং বাব জানান থেকে পশ্চিম দিকে অবস্থান নিলো । প্রাথমিক সাফল্যের জন্য তার সেনাবাহিনী খুব ঝুকিপূর্ণভাবে শহরের নিকট অবস্থান নিয়ে থাকে ।


জানগি দীর্ঘ সময় প্রতিরোধ করেন নাই । প্রজাদের মধ্যে তিনিও অজনপ্রিয় ছিলেন । তিনি সিনজারে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন । সেই শহর তিনি পূর্বে শাসন করতেন । সালাহউদ্দিনের সাথে তার আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় যে তিনি আলেপ্পোকে সালাহউদ্দিনের হাতে তুলে দিবেন এবং বিনিময়ে তাকে সিনজার ও নুসায়বিন এবং রাকার নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হবে । জানগি এসব অঞ্চলকে সামরিক সহায়তার শর্তবলে সালাহউদ্দিনের অনুগত হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করবেন । ১২ই জুন আলেপ্পো আইয়ুবীদের হস্তান্তর করা হয় । আলেপ্পোর জনগণ এই আলোচনার ব্যাপারে অবগত ছিলেন না । ফলে দুর্গে সালাহউদ্দিনের পতাকা উত্তোলন করা হলে তারা আশ্চর্য হয়ে যায় । সালাহউদ্দিনকে শহরে স্বাগত জানানো হয় এবং দুজন আমির যার মধ্যে একজন সালাহউদ্দিনের পুরনো বন্ধু ইজ্জউদ্দিন জুরুদুকও ছিলেন তার প্রতি আনুগত্য জানান । সালাহউদ্দিন শহরের হানাফি আদালতের স্থলে শাফি আদালত স্থাপন করেন । জানগিকে দুর্গের গুদামের সম্পদ যা তিনি নিতে পারবেন তা নিয়ে যেতে দেওয়া হয় । বাকি গুলো সালাহউদ্দিন কিনে নিলেন । সালাহউদ্দিনের জন্য আলেপ্পো জয় আট বছরের প্রতীক্ষার অবসান ছিল । আলেপ্পো দুর্গে এক রাত অবস্থান করার পর তিনি হারিমের দিকে অগ্রসর হয় । এটি ছিল ক্রুসেডারদের অবস্থানস্থল এন্টিওকের নিকটে । শহরটির শাসনকর্তা ছিলেন সুরহাক নামক একজন মামলুক । সালাহউদ্দিন হারিমের বদলে তাকে বুসরা শহর এবং দামেস্কে সম্পত্তি প্রদানের প্রস্তাব করলেন । কিন্তু সুরহাক আরো বেশি দাবি করলেন যার কারনে তার নিজ গেরিসন তাকে পরিত্যাগ করেন । সালাহউদ্দিনের ডেপুটি তাকিউদ্দিন তাকে গ্রেপ্তার করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি হারিমকে এন্টিওকের তৃতীয় বোহেমন্ডের কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন । হারিমের আত্মসমর্পণের পর সালাহউদ্দিন এর প্রতিরক্ষা মজবুত করেন । অগ্রসর হওয়ার পূর্বে তিনি বেশ কিছু প্রশাসনিক বিষয় নিষ্পত্তি করে যান। তিনি বোহেমন্ডের সাথে চুক্তিতে আসেন এবং এর বিনিময়ে তার কাছে বন্দী মুসলিমদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় । আলমউদ্দিন সুলায়মানের কাছে আজাজ এবং সাইফউদ্দিন আল ইয়াজকুজের কাছে আলেপ্পোর দায়িত্ব প্রদান করা হয় ।

তথ্যসূত্র ইন্টার নেট ও বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে সংগ্রহ করা ।



সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৩৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×