আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) প্রথম পর্ব
আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ২য় পর্ব
আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৩য় পর্ব
আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৪র্থ পর্ব
আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৫ম পর্ব
সাম্রাজ্য বিস্তারের ঘটনা
১১৮১ সালের জুন মাসে সাইফউদ্দিন মারা যাওয়ার পর তার ভাই ইজ্জউদ্দিন মসুল নেতৃত্ব লাভ করেন । ডিসেম্বরের চার তারিখ জেনগি যুবরাজ আস সালিহ আলেপ্পোতে মৃত্যুবরণ করেন । মৃত্যুর আগে তিনি তার প্রধান কর্মকর্তাকে শপথ করান যে তিনি ইজ্জউদ্দিনের প্রতি অনুগত থাকবেন কারণ তিনি ছিলেন যিনি সালাহউদ্দিনকে প্রতিহত করতে পারবেন এমন একমাত্র জেনগি শাসক । ইজ্জউদ্দিনকে আলেপ্পোয় স্বাগত জানানো হল । তিনি তার ভাই ইমাদউদ্দিন জেনগির উপর সিনজারের বিনিময়ে আলেপ্পোর ভার অর্পণ করেন । জেনগিদের সাথে করা পূর্বের চুক্তির কারণে সালাহউদ্দিন এই সকল আদানপ্রদানে কোনো হস্তক্ষেপ করলেন না । ১১৮২ সালের ১১ মে সালাহউদ্দিন তার অর্ধেক মিশরীয় আইয়ুবী সেনা এবং বেশ সংখ্যক বেসামরিক লোক নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে কায়রো ত্যাগ করেন । সালাহউদ্দিন একে অশুভ মনে করেন । তারপর তিনি আর মিশরে আসেন নাই । ক্রুসেডাররা তাকে মোকাবেলা করার জন্য সীমান্তে সমবেত হয়েছেন জানতে পেরে তিনি সিনাই উপদ্বীপের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যান । জুনে তিনি দামেস্কে পৌছে জানতে পারেন যে ফররুখশাহ গেলিলি আক্রমণ করেছেন । জুলাই মাসে সালাহউদ্দিন ফরুরখশাহকে কাওকাব আল হাওয়া আক্রমণ করতে পাঠান । পরে আগস্টে আইয়ুবীরা বৈরুত জয়ের জন্য নৌ এবং স্থল পথে আক্রমণ চালায় । এই অভিযান ব্যর্থ হয় । সালাহউদ্দিন তা পরিত্যাগ করে এবং মেসোপটেমিয়ার দিকে নজর দিলেন ।
হারানের আমির কুকবারি সালাহউদ্দিনকে জাজিরা অঞ্চল অধিকারের জন্য আমন্ত্রণ জানায় । এটি মেসোপটেমিয়ার উত্তর অংশ ছিল । জেনগিদের সাথে তার চুক্তি ১১৮২ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয়ে যায় । জাজিরায় তার অগ্রসর হওয়ার পূর্বে এখানের জেনগি শাসকদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়ে যায় । সালাহউদ্দিন ইউফ্রেটিস নদী অতিক্রম করার পূর্বে ই আলেপ্পো অবরোধ করার মাধ্যমে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে দেন । বিরা পৌছার পর নদীর কাছে সালাহউদ্দিনের সাথে কুকবারি এবং হিসান কাইফার নুরউদ্দিন যুক্ত হলেন । সেই যৌথ বাহিনী জাজিরার শহরগুলো জয় করে নেন । প্রথম এডেসা এরপর সারুজ ও রাকা, কারকেসিয়া এবং নুসাইবিন তাদের অধিকারে আসেন । রাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল । সেসময় এর দায়িত্বে ছিলেন কুতুবউদ্দিন ইনাল । ইতিপূর্বে ১১৭৬ সালে তিনি সালাহউদ্দিনের কাছে মানবিজ হারিয়েছিলেন । সালাহউদ্দিনের বিশাল সেনাবাহিনী দেখে তিনি প্রতিরোধের তেমন কোন চেষ্টা করেননি এবং তাকে তার সম্পদ ধরে রাখার অধিকার দেওয়া হবে এই শর্তে আত্মসমর্পণ করেন । বেশ কিছু কর বাতিল করে শহরের অধিবাসীদের উপর প্রভাব ফেলেন । কোষাগারের নথি থেকে সেগুলো মুছে ফেলা হয় এবং বলা হয় যে সবচেয়ে খারাপ শাসক হল তারা যাদের নিজেদের টাকার থলে পূর্ণ থাকে আর জনগণ থাকে দুর্বল । রাকা থেকে তিনি আল ফুদাইন, আল হুসাইন, মাকসিম ও দুরাইন, আরাবান এবং খাবুর জয়ের জন্য এগিয়ে গেলেন । সেসব অঞ্চল তার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন ।
ততকালিন সালাহউদ্দিন নুসায়বিনের দিকে এগিয়ে যান । আর সেই অঞ্চল কোনো বাধা প্রদর্শন করেনি । মাঝারি আকারের শহর হিসেবে নুসায়বিন তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না । কিন্তু মারদিন ও মসুলের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্থান ছিল এবং তখন দিয়ারবাকিরে সহজে পৌছানো যেত । এসব বিজয়ের মাঝে সালাহউদ্দিন সবগ্নাদ পান যে ক্রুসেডাররা দামেস্কের গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালাচ্ছেন । ইতিমধ্যে আলেপ্পোতে শহরের আমির জানগি উত্তর ও পূর্বে সালাহউদ্দিনের শহর যেমন বালিস ও মানবিজ, সারুক, বুজা এবং আল কারজাইনে আক্রমণ করে । তিনি এমনকি আল আজাজে নিজের দুর্গও ধ্বংস করেন । যাতে করে আইয়ুবীরা তা জয়ে করার পরে ব্যবহার করতে না পারেন ।
এর পরে সালাহউদ্দিন তার দৃষ্টি মসুল থেকে আলেপ্পোর দিকে সরিয়ে নিলেন । এবং তার ভাই তাজুল মুলুককে তেলের খালিদ দখলের জন্য পাঠান । শহরটি অবরোধ করা হল । কিন্তু শহরের শাসক ১৭ই মে সালাহউদ্দিন ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হওয়ার পর আত্মসমর্পণ করলেন । ইমাদউদ্দিনের মতে তেল খালিদের পর সালাহউদ্দিন উত্তরে আইন তাবের দিকে এগিয়ে অবস্থান নেন । ২১শে মে তিনি শহরের বাইরে শিবির স্থাপন করেন এবং নিজে আলেপ্পো দুর্গের পূর্ব দিকে অবস্থান নিলেন । তার সেনারা বানাকুসার শহরতলি থেকে উত্তর পূর্বে এবং বাব জানান থেকে পশ্চিম দিকে অবস্থান নিলো । প্রাথমিক সাফল্যের জন্য তার সেনাবাহিনী খুব ঝুকিপূর্ণভাবে শহরের নিকট অবস্থান নিয়ে থাকে ।
জানগি দীর্ঘ সময় প্রতিরোধ করেন নাই । প্রজাদের মধ্যে তিনিও অজনপ্রিয় ছিলেন । তিনি সিনজারে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন । সেই শহর তিনি পূর্বে শাসন করতেন । সালাহউদ্দিনের সাথে তার আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় যে তিনি আলেপ্পোকে সালাহউদ্দিনের হাতে তুলে দিবেন এবং বিনিময়ে তাকে সিনজার ও নুসায়বিন এবং রাকার নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হবে । জানগি এসব অঞ্চলকে সামরিক সহায়তার শর্তবলে সালাহউদ্দিনের অনুগত হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করবেন । ১২ই জুন আলেপ্পো আইয়ুবীদের হস্তান্তর করা হয় । আলেপ্পোর জনগণ এই আলোচনার ব্যাপারে অবগত ছিলেন না । ফলে দুর্গে সালাহউদ্দিনের পতাকা উত্তোলন করা হলে তারা আশ্চর্য হয়ে যায় । সালাহউদ্দিনকে শহরে স্বাগত জানানো হয় এবং দুজন আমির যার মধ্যে একজন সালাহউদ্দিনের পুরনো বন্ধু ইজ্জউদ্দিন জুরুদুকও ছিলেন তার প্রতি আনুগত্য জানান । সালাহউদ্দিন শহরের হানাফি আদালতের স্থলে শাফি আদালত স্থাপন করেন । জানগিকে দুর্গের গুদামের সম্পদ যা তিনি নিতে পারবেন তা নিয়ে যেতে দেওয়া হয় । বাকি গুলো সালাহউদ্দিন কিনে নিলেন । সালাহউদ্দিনের জন্য আলেপ্পো জয় আট বছরের প্রতীক্ষার অবসান ছিল । আলেপ্পো দুর্গে এক রাত অবস্থান করার পর তিনি হারিমের দিকে অগ্রসর হয় । এটি ছিল ক্রুসেডারদের অবস্থানস্থল এন্টিওকের নিকটে । শহরটির শাসনকর্তা ছিলেন সুরহাক নামক একজন মামলুক । সালাহউদ্দিন হারিমের বদলে তাকে বুসরা শহর এবং দামেস্কে সম্পত্তি প্রদানের প্রস্তাব করলেন । কিন্তু সুরহাক আরো বেশি দাবি করলেন যার কারনে তার নিজ গেরিসন তাকে পরিত্যাগ করেন । সালাহউদ্দিনের ডেপুটি তাকিউদ্দিন তাকে গ্রেপ্তার করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি হারিমকে এন্টিওকের তৃতীয় বোহেমন্ডের কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন । হারিমের আত্মসমর্পণের পর সালাহউদ্দিন এর প্রতিরক্ষা মজবুত করেন । অগ্রসর হওয়ার পূর্বে তিনি বেশ কিছু প্রশাসনিক বিষয় নিষ্পত্তি করে যান। তিনি বোহেমন্ডের সাথে চুক্তিতে আসেন এবং এর বিনিময়ে তার কাছে বন্দী মুসলিমদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় । আলমউদ্দিন সুলায়মানের কাছে আজাজ এবং সাইফউদ্দিন আল ইয়াজকুজের কাছে আলেপ্পোর দায়িত্ব প্রদান করা হয় ।
তথ্যসূত্র ইন্টার নেট ও বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে সংগ্রহ করা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৩৪