somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৯ম পর্ব

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) প্রথম পর্ব

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ২য় পর্ব
আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৩য় পর্ব

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৪র্থ পর্ব

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৫ম পর্ব
আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৬র্থ পর্ব

আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৭র্থ পর্ব
[link|


আইয়ুব মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান ( সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে ) ৮ম পর্ব
জেরুজালেম বিজয়

সালাহউদ্দিন প্রায় সব ক্রুসেডার শহর জয় করেছিলেন । ১১৮৭ সালের ২রা অক্টোবর শুক্রবার তার সেনাবাহিনী অবরোধের পর জেরুজালেম জয় করেন । অবরোধের শুরুতে তিনি জেরুজালেমে বসবাসরত ফ্রাঙ্কিশদের কোনো নিরাপত্তা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । সেই কারণে বেলিয়ান অব ইবেলিন প্রায় ৫০০০ মুসলিম বন্দীকে হত্যা এবং ইসলামের পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদ ও কুব্বাত আস সাখরা ধ্বংস করে ফেলার হুমকি দেন । সালাহউদ্দিন তার উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শক্রমে এবং শর্তে রাজি হন । জেরুজালেমের রাস্তায় চুক্তি পরে শোনানো হয় যাতে সবাই চল্লিশ দিনের মধ্যে প্রস্তুত হতে পারে এবং সালাহউদ্দিনকে মুক্তিপণ দিতে পারে । শহরের প্রত্যেক ফ্রাঙ্ক নারী, পুরুষ অথবা শিশুর জন্য সে সময়ের মূল্য অনেক কম মুক্তিপণ ধার্য করা হয় সাধারন হিসাবে ৫০ ডলার । তবে তার কোষাধ্যক্ষের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে অনেক পরিবার যারা মুক্তিপণ দিতে সক্ষম ছিলেন না তাদের মুক্তি দেন । জেরুজালেমের পেট্রিয়ার্ক হেরাক্লিয়াস বেশ পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেন যার মাধ্যমে ১৮ ০০০ গরীব নাগরিকের মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছিল । বাকি ১৫০০০ জনের জন্য কিছু ছিল না বিধায় বন্দীত্ব বরণ করতে হতো । সালাহউদ্দিনের ভাই আল আদিল তাদের মধ্য থেকে ১০০০ জনকে তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রাখতে চান এবং বাকিদের মুক্তি দেওয়া হয় । অধিকাংশ পদাতিক সৈনিককে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হলো । জেরুজালেম বিজয়ের পর সালাহউদ্দিন ইহুদিদের শহরে পুনরায় বসবাসের অনুমতি দিলেন । আসকালনের ইহুদি সম্প্রদায় এই ডাকে সাড়া দেয় ।
আধুনিক লেবাননের উপকূলে টায়ার ছিল ক্রুসেডারদের শেষ গুরুত্বপূর্ণ শহর । কৌশলগতভাবে এটি প্রথমে জয় করা বেশি কার্যকরী ছিল । কিন্তু জেরুজালেম ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শহর বিধায় সালাহউদ্দিন প্রথম জেরুজালেম জয় করার সিদ্ধান্ত নিলেন । টায়ারের নেতৃত্বে ছিলেন কনরাড অব মন্টিফেরাট । তিনি এর শক্তিবৃদ্ধি করেন এবং সালাহউদ্দিনের দুইটি অবরোধ ব্যর্থ করতে সক্ষম ছিলেন । ১১৮৮ সালে টরটসায় সালাহউদ্দিন গাই অব লুসিগনানকে মুক্তি দিলেন এবং তাকে তার স্ত্রী রাণী সিবিলা অব জেরুজালেমের কাছে পাঠিয়ে দিলেন । তারা প্রথমে ত্রিপলি এবং তারপর এন্টিওকে যান । ১১৮৯ সালে তারা টায়ারের শাসন দাবি করলে কনরাড তাদের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানান । তিনি গাই অব লুসিগনানকে রাজা হিসেবে মানতেন না । তারপর গাই এক্রে অবরোধ করেন । সালাহউদ্দিনের সাথে জর্জিয়ার রাণী তামারের বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক ছিল । সালাহউদ্দিনের জীবনীকার বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদ উল্লেখ করেছেন যে সালাহউদ্দিন জেরুজালেম জয় করার পর জর্জিয়ান রাণী জেরুজালেমের জর্জিয়ান মঠের সম্পদগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে দূত প্রেরণ করেন । সালাহউদ্দিনের পদক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা হয়নি । তবে রাণীর প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল বলে মনে করা হয় কারণ আক্রের বিশপ জ্যাকুস ডা ভিটরি উল্লেখ করেছেন যে জর্জিয়ানরা অন্যান্য খ্রিষ্টান তীর্থযাত্রীদের মত না হয়ে বরং বিনা বাধা তাদের পতাকা নিয়ে শহরে চলাচল করতে পারতো । ইবনে শাদ্দাদ দাবি করেন যে রাণী তামার বাইজেন্টাইন সম্রাটকে ট্রু ক্রস ফিরিয়ে আনায় তার প্রচেষ্টা নিয়ে সালাহউদ্দিনকে ২০০০০০ স্বর্ণখন্ড প্রদানের অতিরঞ্জিত দাবি করেন । হাত্তিনের যুদ্ধ ও জেরুজালেমের পতন তৃতীয় ক্রুসেডকে উদ্বুদ্ধ করেন । ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড‌ দ্য লায়নহার্ট‌ গাই অব লুসিগনানের এক্রে অবরোধে নেতৃত্ব দেন । তারা শহর জয় করেন এবং নারী ও শিশুসহ প্রায় ৩০০০ মুসলিম বন্দীকে হত্যা করেন ।
বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদ লিখেছেনঃ
হত্যার অভিপ্রায় কয়েকপ্রকারে বলা হয় কারো মতে মুসলিমরা যেসব খ্রিস্টানদের হত্যা করেন তাদের বদলা হিসেবে বন্দীদের হত্যা করা হয় । অন্যান্যরা বলে যে ইংল্যান্ডের রাজা আসকালন জয়ের চেষ্টার আগে এত সংখ্যক বন্দী রাখাকে অনর্থক মনে করেন । আসল কারণ শুধু আল্লাহুই জানেন ।

২৮ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বন্দী ক্রুসেডারদের হত্যার মাধ্যমে এর প্রতিশোধ নেওয়া হয় । ১১৯১ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর আরসুফের যুদ্ধে সালাহউদ্দিনের সেনাবাহিনীর সাথে রিচার্ডে‌র সেনাবাহিনীর লড়াই হয়েছিল । তাতে সালাহউদ্দিনের বাহিনী বেশ হতাহত হলেন এবং পিছু হাটতে বাধ্য হলেন । আরসুফের যুদ্ধের পর রিচার্ড‌ তার বাহিনি নিয়ে আসকালনের দিকে অগ্রসর হন । রিচার্ডে‌র পরবর্তী পদক্ষেপ বুঝতে পেরে সালাহউদ্দিন শহর খালি করে দেন এবং শহর থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরে অবস্থান নিলেন । রিচার্ড‌ শহরে উপস্থিত হলে এটি পরিত্যক্ত দেখে অবাক হন । পরের দিন তিনি জাফায় পিছু হটার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সালাহউদ্দিন আক্রমণ করেন । মারাত্মক লড়াইয়ের পর রিচার্ডে‌র পিছু হটতে সক্ষম হলেন । এই দুই বাহিনীর মধ্যে এটি সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ লড়াই ছিল । জেরুজালেম জয়ের জন্য রিচার্ডে‌র সকল সামরিক পদক্ষেপ এবং যুদ্ধ ব্যর্থ হয় । যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তার মাত্র ২০০০ পদাতিক সৈন্য এবং ৫০ জন পদাতিক নাইট ছিল । শহরের খুব কাছে পৌছালেও এত কম সেনা নিয়ে তা জয় করা সম্ভব ছিল না । সামরিক প্রতিপক্ষ হওয়ার পরও সালাহউদ্দিন এবং রিচার্ডে‌র সম্পর্ক ভিন্ন মাত্রার ছিল । আরসুফে রিচার্ড‌ তার ঘোড়া হারিয়ে ফেললে সালাহউদ্দিন তাকে দুইটি ঘোড়া পাঠান। রিচার্ড‌ সালাহউদ্দিনের ভাইকে বিয়ে করার জন্য তার বোন জোয়ানকে প্রস্তাব করেন এবং জেরুজালেম বিয়ের উপহার করার কথা বলেন । তবে সালাহউদ্দিন ও রিচার্ডে‌র মুখোমুখি সাক্ষাত হয়নি । চিঠি বা বার্তাবাহকের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ হতো ।


তথ্যসূত্র ইন্টার নেট ও বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে সংগ্রহ করা ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:২০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×