somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডঃ জাকির নায়েকের জীবনের কিছু কথা

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডঃ জাকির নায়েক হলেন একজন ভারতীয় ইসলামী চিন্তাবিদ ও ধর্মপ্রচারক, বক্তা এবং লেখক তিনি ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে কাজ করেন। তিনি ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা যেটি পিস টিভি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন । যার মাধ্যমে তার বক্তৃতা প্রায় দশ কোটি দর্শকের নিকট পৌঁছে যায়। তাকে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের একজন বিশেষজ্ঞ অনুমেয়ভাবে ভারতের সালাফি মতাদর্শের অনুসারী সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় সালাফি ধর্মপ্রচারকও বলা হয়ে থাকে। বহু ইসলামী ধর্মপ্রচারকদের সাথে তার ভিন্নতা হল তার বক্তৃতাগুলো পারস্পারিক আলাপচারিতা এবং প্রশ্নোত্তরভিত্তিক যা তিনি আরবি কিংবা উর্দুতে নয় বরং ইংরেজি ভাষাযতেই প্রদান করে থাকেন। অধিকাংশ সময়েই তিনি ঐতিহ্যগত আলখাল্লার পরিবর্তে স্যুট টাই পরিধান করে থাকেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন ডাক্তার হলেও ১৯৯১ সাল থেকে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। ইসলাম এবং তুলনামূলক ধর্মের উপর তিনি তার বক্তৃতার বহু পুস্তিকা সংস্করণ প্রকাশ করেছেন। যদিও প্রকাশ্যে তিনি ইসলামে শ্রেণীবিভাজনকে অস্বীকার করে থাকেন তবুও অনেকে তাকে সালাফি মতাদর্শের সমর্থক বলে মনে করেন এবং আরও অনেকে তাকে ওয়াহাবি মতবাদ প্রচারকারী একজন আমূল সংস্কারবাদী ইসলামিক টেলিভেগানিস্ট অথবা তহবিল সংগ্রহকারী টেলিভিশন ধর্মপ্রচারক বলেও মনে করে থাকেন।
জাকির আবদুল করিম নায়েক ১৯৬৫ সালের ১৮ই অক্টোবর ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার্স হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। তারপর তিনি কিশিনচাদ চেল্লারাম কলেজে ভর্তি হন। তিনি মেডিসিনের ওপর টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড নাইর হসপিটালে ভর্তি হন। অতঃপর তিনি ইউনিভার্সিটি অফ মুম্বাই থেকে ব্যাচেলর অব মেডিসিন সার্জারি বা এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।১৯৯১ সালে তিনি ইসলাম-ধর্ম প্রচারের কার্যক্রম শুরু করেন এবং আইআরএফ প্রতিষ্ঠা করেন।ডাঃ জাকির বলেন তিনি আহমেদ দিদাতের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন যার সাথে তিনি ১৯৮৭ সালে সাক্ষাত করেন। ডাঃ জাকিরকে অনেক সময় দিদাত প্লাস বলা হয় এই উপাধি দিদাত নিজে দেন।তাছাড়াও তিনি মুম্বাইয়ের ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং ইউনাইটেড ইসলামিক এইডের প্রতিষ্ঠাতা যা দরিদ্র এবং অসহায় মুসলিম তরুণ তরুণীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে।ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে তাকে পিস টিভি নেটওয়ার্কের পৃষ্ঠপোষক এবং আদর্শিক চালিকাশক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।তার স্ত্রী ফরহাত নায়েক আইআরএফ এর নারীদের শাখায় কাজ করেন।

ডঃ জাকির নায়েকের বক্তৃতা ও বিতর্ক
জাকির নায়েক ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত অনেক বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন ও বিতর্ক করেছেন। তিনি বক্তৃতার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় কোরআন এবং হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইসলামের অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করা তার অন্যতম কৌশল। থমাস ব্লম হানসেন লিখেছেন যে ডাঃ জাকিরের বিভিন্ন ভাষায় কুরআন ও হাদিস সাহিত্য মনে রাখার ভঙ্গী এবং তার ধর্মপ্রচার কর্মকাণ্ড মুসলিমদের মাঝে তাকে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তার অন্যতম বিখ্যাত বিতর্ক হয় ২০০০ সালের এপ্রিলে বিজ্ঞানের আলোয় কুরআন এবং বাইবেল বিষয়ে শিকাগোতে উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের সাথে। তিনি বলেন ইসলাম একটি কার্যকারণ ও যুক্তির ধর্ম এবং কুরআনে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রায় ১০০০ আয়াত আছে। সেখানে তিনি পশ্চিমা কনভার্টের সংখ্যা ব্যাখ্যা করেন। জাকিরের অন্যতম জনপ্রিয় থিম হল বিজ্ঞানের সূত্র দিয়ে কোরআনকে যাচাই করা। ২১ শে জানুয়ারি ২০০৬ জাকির শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের সাথে ইসলাম ও হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর বিষয়ে ব্যাঙ্গালোরে বিতর্ক করেন। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নায়েক ভারত থেকে সরাসরি ভিডিও লিংকের মাধ্যমে অক্সফোর্ড ইউনিয়নের সঙ্গে কথোপকথন করেন।২০১২ সালে ভারতীয় সরকার জাকিরের পিস টিভির সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে । নাম প্রমাসে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় সাংবাদিক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুম্বাই পুলিশ তার আলোচনা-সভার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কারণ তিনি সমালোচনার জন্ম দেন এবং ভারতীয় স্যাটেলাইট সরবরাহকগণ তার টেলিভিশন চ্যানেল পিস টিভির সম্প্রচারে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

২০০৪সাল অস্ট্রেলিয়ায় এবং ২০০৬ সালে ওয়েলসে সফর

শুধু ইসলামই নারীকে সমতা দেয় এ বিষয়ে জাকির ২০০৪ সালে ইসলামিক ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক অফ অস্ট্রেলিয়া এর আমন্ত্রণে মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে বিতর্ক করেন। তিনি বলেন যে পশ্চিমা পোষাক মেয়েদের ধর্ষণের অন্যতম কারণ। কারণ এটা মেয়েদেরকে পর পুরুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। নিউ এজের সুশি দাস মন্তব্য করেন নায়েক ইসলামের উপদেশের এবং আত্মিক শ্রেষ্ঠত্বের উচ্চ প্রশংসা করেন এবং পশ্চিমা বিশ্বে সাধারণ ভাবে যে বিশ্বাস দেখা যায় তাকে ব্যাঙ্গ করেন।
২০১০-এ যুক্তরাজ্য ও কানাডায় নিষেধাজ্ঞা
ডঃ জাকির নায়েককে ২০১০ সালের এর জুন মাসে যুক্তরাজ্যে এবং কানাডায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা তারেক ফাতাহ জাকির নায়েকের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সেদেশের সাংসদে সতর্ক করার পর কানাডায় তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। লন্ডন এবং শেফফিল্ডে তার বক্তৃতা আয়োজনের পর স্বরাষ্ট্র সচিব থেরেসা মে তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মে নিষেধাজ্ঞার রায়ে বলেন জাকির নায়েকের অসংখ্য মন্তব্য তার অগ্রহণযোগ্য আচরণের প্রমাণ হিসেবে আমার কাছে আছে। নায়েক দাবি করেন যে স্বরাষ্ট্র সচিব একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কোন নৈতিক সিদ্ধান্ত নয় এবং তার আইনজীবী বলেন যে এই সিদ্ধান্তটি ছিল বর্বর এবং অমানবিক। তিনি আরও দাবি করেন যে তার মন্তব্যকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ ভাট নায়েককে সমর্থন জানিয়ে বলেন যে এই নিষেধাজ্ঞাটি বাক স্বাধীনতার উপর একটি আক্রমণস্বরূপ। বলা হয়েছিল নায়েক উচ্চ আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করার ব্যবস্থা নেবেন। তার আইনি পুনর্বিবেচনার এই আবেদনটি ২০১০সালের ৫ই নভেম্বর খারিজ করে
দেয়া হয়।

২০১২ এবং ২০১৬সালে ডঃ জাকিরে মালয়েশিয়ায় সফর
২০১২ সালে নায়েক মালয়েশিয়ায় মারা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জহর বারু ও কুয়ান্তান এবং পুত্রা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে তিনি বক্তৃতা দেন। হিন্দ অধিকার সংগ্রাম শক্তির HINDRAF সদস্যদের প্রতিবাদের পরও মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং প্রায় কয়েক হাজার লোক বিভিন্ন স্থানে তার বক্তৃতায় উপস্থিত ছিলেন। নায়েকের বক্তৃতার আয়োজকগণ বলেন যে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য প্রচার করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। ২০১৬ সালের ৯ ২০ এপ্রিল নায়েক মালয়েশিয়ায় আরও ছয়টি বক্তৃতা প্রদান করেন। হিন্দরাফ এবং কিছু স্থানীয় এনজিও সংস্থা সেখানে তার ইসলাম এবং হিন্দুধর্মের সাদৃশ্য এবং কুরআন কি ঈশ্বরের বানী নামক দুটি বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে অভিযোগ করেছিলেন যে এটি আন্তঃধর্মীয় উত্তেজনা বৃদ্ধিতে উস্কানিমূলক হতে পারে কিন্তু তা সত্ত্বেও তার বক্তৃতাগুলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে ডঃ জাকির নায়েকের মন্তব্য
১৯৯৪ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের লজ্জা নামক বইকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সাংবাদিকদের দ্বারা আয়োজিত একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে ডঃ জাকির নায়েক অংশগ্রহণ করেন।এবং তিনি বইটি থেকে ইসলামকেন্দ্রিক বিভিন্ন উদ্ধৃতিকে ভুল ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি হিসেবে দাবি করেন। তাছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি তসলিমা নাসরিনের উদ্দেশ্যে সরাসরি বিতর্কে অংশগ্রহণেরও আমন্ত্রণ জানান।

ডঃ জাকিরের নায়েকের দৃষ্টিভঙ্গি
ডঃ জাকির নায়েক বলেন তার লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষিত মুসলমানরা যারা তাদের নিজ ধর্মকে ত্রুটিপূর্ণ সেকেলে বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন প্রত্যেক মুসলিমের উচিত ইসলাম সম্বন্ধে ভুল ধারণা গুলো ভেঙে দেয়া এবং পশ্চিমা মিডিয়ার ইসলামের ওপর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আক্রমণ বা নাইন ইলেভেন এর সাজানো নাটককে বোঝান। নায়েক আরও বলেন যে তীব্র ইসলাম বিরোধী প্রচারণা সত্ত্বেও ২০০১ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ৩৪,০০০ মার্কিন নাগরিক ইসলাম গ্রহণ করেন। নায়েকের ভাষ্য অনুযায়ী ইসলাম একটি কার্যকারণ এবং যুক্তির ধর্ম ও কুরআনে বিজ্ঞান সম্পর্কিত ১০০০ বানী রয়েছে যা তিনি পশ্চিমা ধর্মান্তরিত মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তার কিছু নিবন্ধ ইসলামিক ভয়েস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

জীবের বিবর্তন
ডঃ জাকির নায়েক বলেছেন যে বিবর্তন বিষয়ক তত্ত্ব হল একটি প্রস্তাব মাত্র এবং এটি খুব বেশি অপ্রমাণিত একটি অনুমান। তার মতে বেশিরভাগ বিজ্ঞানী এটা সমর্থন করেন এই কারণে যে এটা বাইবেলের বিরুদ্ধে যায় এই কারণে নয় যে এটা সত্য। নায়েক দাবি করেন যে কুরআন বহু বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ভবিষৎবাণী করেছে। উদাহরণস্বরূপ ২০১০ সালে তিনি বলেন যে কুরআনের কিছু নির্দিষ্ট আয়াতে মাতৃগর্ভে নবজাতক ভ্রুনের বৃদ্ধি এবং ক্রমবিকাশের ধাপগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।

স্বধর্মত্যাগ
ডঃ জাকির নায়েক বলেছেন কোন মুসলিম চাইলে ইসলাম থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে এবং সেজন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান কোন নেই। কিন্তু কোন মুসলিম যদি ইসলাম ত্যাগের পর তার নতুন অ-ইসলামিক ধর্মবিশ্বাস প্রচার করে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে তবে সে বিশ্বাসঘাতক বলে বিবেচিত হবে। জাকির নায়েক বলেন ইসলামিক আইন অনুসারে তার মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত যেমনটি দেশদ্রোহীর শাস্তি হয়ে থাকে। আরেকটি সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে নায়েকের বক্তব্য অনুযায়ী ইসলামে স্বধর্মত্যাগীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের কোন বিধান নেই যতক্ষণ না পর্যন্ত উক্ত ধর্মত্যাগী ব্যক্তি ইসলামী শিক্ষার বিরুদ্ধে কোন মতবাদ প্রচার শুরু করেন যদি সে তা করেন তবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যাবে।

ইসলামী রাষ্ট্রে অন্যান্য ধর্ম প্রচার
ডঃ জাকির নায়েক যদিও তিনি অন্যান্য ধর্মের মানুষদের উৎসাহিত করে থাকেন যেন তারা তাদের দেশে মুসলিমদেরকে স্বাধীনভাবে ধর্মপ্রচারের সুযোগ দেয় । নায়েক বলেন যে একটি ইসলামী রাষ্ট্রে অন্যান্য ধর্মের ধর্মপ্রচার অবশ্যই নিষিদ্ধ করা উচিৎ কারণ তিনি বিশ্বাস করেন অন্যান্য ধর্মগুলো ভুল তাই তাদের প্রচারণাও ভুল এটা এরকম যে কোন অংকের শিক্ষক কাওকে ২+২=৪ এর পরিবর্তে ২+২=৩ শেখাচ্ছেন। একইভাবে নায়েক বলেন যে গির্জা বা মন্দিরের ভবন নির্মাণের ব্যপারে কিভাবে আমরা তার অনুমতি দিতে পারি যখন কিনা তাদের ধর্মটাই ভুল এবং তাদের উপাসনাটিও ভুল ?

ডঃ জাকির নায়েকের সন্ত্রাসবাদ বিষয় বক্তব্য
ডঃ জাকিরের মতে ইসলামী সন্ত্রাসবাদ মিডিয়ার সৃষ্টি। একটি ইউটিউব ভিডিওতে ওসামা বিন লাদেন সম্পকে জাকির বলেন যে তিনি বিন লাদেনকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেনও না তাদের কখনও সাক্ষাৎ হয়নি। যদি বিবিসি ও সিএনএন দেখে যদি লাদেন সম্পর্কে বলতে হয় তাহলে তাকে বলতেই হবে যে লাদেন একজন সন্ত্রাসী। কিন্তু কুরআন বলছে যে কোনো সংবাদ পেলে তা প্রচারের আগে যাচাই করে নিতে। তাই তিনি তাকে দোষারোপ করতে পারেন না। তিনি আরো বলেন যদি বিন লাদেন ইসলামের শত্রুদের সাথে লড়াই করেন তবে আমিও তার সাথে আছি। তিনি বলেন মুসলমানদের এমন হওয়া উচিত যেন তাদেরকে দেখলে সমাজবিরোধী লোকদের মাঝে ত্রাসের সৃষ্টি হয় এবং এরূপ হলে প্রত্যেক মুসলমানকে একজন সন্ত্রাসী হওয়া দরকার । টাইম পত্রিকা এই উক্তিকে নিজবুল্লাহ জাহির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা বলে ইঙ্গিত করলে ডঃ জাকির নায়েক বলেন আমি সবসময়ই সন্ত্রাসবাদকে দোষারোপ করি এর কারণ হল মহিমান্বিত কোরআন অনুসারে কেউ যদি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করো তবে সে যেনো পুরো মানবজাতিকে হত্যা করলো।
২০০৮ সালে ৩১শে জুলাই পিস টিভিতে দেয়া লেকচারে ডঃ জাকির নায়েক নাইন ইলেভেন সম্বন্ধে মন্তব্য করেন এটি একটি সাজানো নাটক একটা ওপেন সিক্রেট যে টুইন টাওয়ারে হামলা সম্পূর্ণই প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কাজ। এই কথার প্রমাণ হিসেবে তিনি কিছু রিসার্চের উদ্ধৃতি দেন।কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ৯/১১ সম্পর্কিত তার এই বক্তব্যকে অস্বীকার করেন এবং এ ধরনের বিভিন্ন বক্তব্যে জড়িত থাকার কারণে যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় তার প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

ডঃ জাকির নায়েকের সমালোচনা
মুসলিম বিশ্বে জনপ্রিয় হলেও জাকির নায়েক তার বক্তব্য এবং মতের জন্য বিভিন্ন স্থানে সমালোচিত হয়েছেন। তিনি বলেন বিন লাদেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের মত সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে হুমকির সম্মুখীন করে তাহলে তিনি বিন লাদেনের পক্ষে ইসলামের শত্রু বা যুক্তরাষ্ট্রকে কোন উপায়ে হুমকির সম্মুখীন করাকে সন্ত্রাস বলা হলে তিনি প্রত্যেক মুসলিমেরই সন্ত্রাসী হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। আফগান বংশোদ্ভূত সন্ত্রাসী নাজিবুল্লাহ জাজি জাকির নায়েকের বক্তৃতা শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি শিয়া ও সুন্নিদের বিরোধ বিষয়ে কথা বলেন এবং খলিফা ইয়াজিদের নামের পর রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আল্লাহ্‌ তাদের অনুগ্রহ করুন বলেন এতে বহু মুসলমান দ্বারা তিনি ঘৃণিত হন বিশেষ করে শিয়াদের দ্বারা। তিনি আরও বলেন কারাবালার যুদ্ধ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত উক্ত মন্তব্যটিও যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছিল। পরে তিনি তার ভূল স্বীকার করেন এবং বলেন এটি তিনি মুখ ফস্কে বলে ফেলেছিলেন। ২০০৮ সালে লখনউ এর ইসলামি পণ্ডিত সাহার কাজী মুফতি আব্দুল ইরফান মিয়া ফিরিঙ্গি মাহালি জাকিরের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেন যে তিনি ওসামা বিন লাদেনকে সমর্থন করেন এবং তার পদ্ধতি অ-ইসলামিক। ২০১১সালের ফেব্রুয়ারীতে তিনি ভিডিও লিংকের মাধ্যমে অক্সফোর্ড ইউনিয়নকে পত্র লেখেন। ভারতীয় সাংবাদিক খুশবন্ত সিং বলেন ডঃ জাকির নায়েক ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করেন। সিং বলেন ডঃ জাকির নায়েকের বিবৃতি শিশুতোষ । তিনি আরও বলেন তা আন্ডারগ্রাজুয়েট কলেজের বিতর্কের কদাচিৎ উপড়ে ওঠে যেখানে প্রতিযোগীরা ক্ষুদ্র স্কোরের জন্য লড়ে। তিনি আরও বলেন তার কথা মগ্ন হয়ে শুনুন তিনি প্রায়ই বিপুল উৎসাহে বিস্ফোরিত হন যখন তিনি অন্যান্য ধর্মের বাণীকে খাটো করেন। ওসামা বিন লাদেনকে ইসলামের সৈন্য বলায় আলী সিনা এবং খালিদ আহমেদ ডঃ জাকির নায়েকের সমালোচনা করেন। তারা বলেন যে জাকির আল কায়দাকে পরোক্ষ ভাবে সমর্থন করছেন। ২০১৬ সালে ঢাকায় সন্ত্রাসী আক্রমণের ৫ হামলাকারীর মধ্যে একজন জাকির নায়েকের ফেসবুক অনুসারী ছিলেন। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন ডঃ জাকির নায়েকের বক্তব্য আমাদের জন্য একটি নজরদারির বিষয়। আমাদের এজেন্সিগুলো এর উপর কাজ করছে। তার ২ দিন পর মহারাষ্ট্র সরকারের সিআইডি বিভাগ তদন্তের ফলাফল হিসেবে জানায় যে তারা জাকির নায়েকের বক্তৃতায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ খুজে পান নি। ভারতীয় সাংবাদিক শোয়াইব দানিয়াল জাকিরের মার্কিনিরা স্বেচ্ছায় নিজেদের মধ্যে স্ত্রী বিনিময় করে কারণ তারা শুকর খায় যা নিজেও স্বয়ং স্ত্রী বিনিময় করে বক্তব্যটির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি আরও তুলে ধরেন যে ইসলাম পুরুষকে একাধিক নারীকে বিয়ের অনুমতি দেয় কারণ যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশী জাকিরের এই বক্তব্যটি যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। দারুল উলুম নামক প্রতিষ্ঠান জাকিরকে একজন নিজস্ব শৈলীর ধর্মপ্রচারক বলে মনে করে যিনি ইসলামের প্রথাগত চারটি মাজহাব (ফিকহ) হতে বিচ্ছিন্ন এবং একারণে তারা তাকে গায়রে মুকাল্লিদিন হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং মুসলিমদেরকে তার বক্তৃতা না শোনার আহ্বান জানায়। ২০১৬ সালে দারুল উলুমের এক প্রতিনিধি বলেন নৈতিক ইস্যুতে যদিও দারুল উলম ডঃ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে কিছু ফতওয়া জারি করেছে কিন্তু গণমাধ্যম সেগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করছে। দারুম উলুমের সহ সভাপতি আব্দুল খালিক মাদ্রাসি জাকিরের সমর্থনে বলেন ডঃ জাকির নায়েকের সাথে আমাদের অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সে একজন ইসলামী পণ্ডিত হিসেবে স্বীকৃত। আমরা কোনভাবেই বিশ্বাস করি না যে সে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

ডঃ জাকির নায়েককে হত্যার হুমকি দেয়া হয় এভাবে ২০১৬সালের ১৩ই জুলাই বিষ্ণু হিন্দু পরিষদের নেত্রী সাধ্বী প্রাচী ঘোষণা করেন যে কেউ যদি ডঃ জাকির নায়েকের শিরচ্ছেদ করে আনতে পারে তবে তাকে ৫০ লক্ষ্য রুপি পুরস্কার দেয়া হবে।আর হুসনি টাইগার নামক স্বঘোষিত শিয়া দল কর্তৃক জাকির নায়েকের মাথার বিনিময়ে ১৫ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:২৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×