somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নালন্দার পতন বা ধ্বংসের ইতিহাস মূল কারন কি ছিল ? (পার্ট ১)

২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নালন্দা ছিল প্রাচীন ভারতের মগধ রাজ্যে অবস্থিত একটি খ্যাতনামা বৌদ্ধ মহাবিহার। এটি বিহারের রাজধানী পাটনা শহরের ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে এবং বিহার শরিফ শহরের কাছে অবস্থিত। খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দী থেকে আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নালন্দা মহাবিহার ছিল ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এটি একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।প্রাচীন ভারতে বৈদিক শিক্ষার উৎকর্ষতা তক্ষশিলা, নালন্দা, বিক্রমশিলা প্রভৃতি বৃহদায়তন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির স্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে ইতিহাসবিদগণ ভারতের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেও চিহ্নিত করে থাকেন। নালন্দা মহাবিহারের বিকাশ ঘটেছিল খ্রিস্টীয় ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে গুপ্ত সম্রাটগণের এবং পরবর্তীকালে কনৌজের সম্রাট হর্ষবর্ধনের পৃষ্ঠপোষকতায়। গুপ্ত যুগের উদার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের ফলশ্রুতিতে খ্রিস্টীয় ৯ম শতাব্দী পর্যন্ত ভারতে এক বিকাশ ও সমৃদ্ধির যুগ চলেছিল। পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে অবশ্য সেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। সেই সময় পূর্ব ভারতে পাল শাসনকালে বৌদ্ধধর্মের তান্ত্রিক বিকাশ ছিল ভারতের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ঘটনা।খ্যাতির মধ্যগগনে থাকাকালীন নালন্দায় ভারত ছাড়াও তিব্বত, চীন, কোরিয়া ও মধ্য এশিয়ার পণ্ডিত ও ছাত্ররা অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা করতে আসতেন। ইন্দোনেশিয়ার শৈলেন্দ্র রাজবংশও যে এই মহাবিহারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিল তাও পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে স্পষ্ট।বর্তমান কালে নালন্দা মহাবিহার সম্পর্কে জানা যায় মূলত হিউয়েন সাং ও ই ৎসিং প্রমুখ পূর্ব এশীয় তীর্থযাত্রী ভিক্ষুদের ভ্রমণ-বিবরণী থেকে। এঁরা খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে নালন্দায় এসেছিলেন। ভিনসেন্ট আর্থার স্মিথ মনে করেন যে নালন্দার ইতিহাস হল মহাযান বৌদ্ধধর্মেরই ইতিহাস। হিউয়েন সাং তার ভ্রমণ বিবরণীতে নালন্দার অবদান হিসেবে যে সকল পণ্ডিতের নাম করেছেন তাদের অনেকেই মহাযান দর্শনের বিকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নালন্দায় সকল ছাত্রই মহাযান এবং বৌদ্ধধর্মের আঠারোটি সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থাদি অধ্যয়ন করতেন। সেই সঙ্গে বেদ, ন্যায়শাস্ত্র, সংস্কৃত ব্যাকরণ, ভেষজবিদ্যা ও সাংখ্য দর্শনও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত ছিল।
১৯শ শতাব্দীতে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ প্রাথমিকভাবে এই প্রত্নস্থলে খননকার্য চালায়। ১৯১৫ সালে প্রথম এখানে নিয়মমাফিক খননকার্য শুরু হয় এবং ১২ হেক্টর জমিতে সুবিন্যস্ত এগারোটি মঠ এবং ইঁটের তৈরি ছয়টি মন্দির আবিষ্কৃত হয়। তাছাড়া ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে প্রচুর ভাস্কর্য, মুদ্রা, সিলমোহর এবং উৎকীর্ণ লিপিও আবিষ্কৃত হয়। সেগুলির কয়েকটি নিকটবর্তী নালন্দা পুরাতত্ত্ব সংগ্রহালয়ে রক্ষিত আছে। বর্তমানে নালন্দা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র এবং বৌদ্ধ তীর্থপর্যটন পথের অন্যতম গন্তব্যস্থল।
নালন্দা নামের ইতিহাস
নালন্দা নামটির ব্যুৎপত্তি সংক্রান্ত একাধিক তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। চীনা তীর্থযাত্রী হিউয়েন সাং এর মতে এই নামটি এসেছে ন অলম দা কথাটি থেকে। এই কথাটির অর্থ উপহার দানে যার বিরাম নেই বা অবিরত দান। অপর চীনা পর্যটক ই ৎসিং অবশ্য বলেছেন যে নালন্দা নামটি নাগ নন্দ নামে এক সাপের নাম থেকে এসেছে। উক্ত সাপটি স্থানীয় এক পুষ্করিণীতে বাস করত।নালন্দায় খননকার্য পরিচালনাকারী হীরানন্দ শাস্ত্রী বলেছেন যে এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে নাল পদ্মের মৃণাল পাওয়া যেত। তাই নালন্দা নামটির আদি অর্থ ছিল যা নাল অর্থাৎ পদ্মের মৃণাল প্রদান করে।


নালন্দায় গৌতম বুদ্ধের একটি মূর্তি ১৮৯৫।
প্রথম দিকে নালন্দা ছিল একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। মগধের রাজধানী রাজগৃহের উপর দিয়ে যে বাণিজ্যপথটি চলে গিয়েছিল নালন্দা সেই পথের ধারেই অবস্থিত ছিল। কথিত আছে জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীর ১৪টি চতুর্মাস নালন্দায় অতিবাহিত করেছিলেন। আরও কথিত আছে যে গৌতম বুদ্ধও নালন্দার নিকটবর্তী পাবরিক নামক আম্রকুঞ্জে উপদেশ দান করেছিলেন এবং তার দুই প্রধান শিষ্যের অন্যতম সারিপুত্ত এই অঞ্চলেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং পরে এখানেই নির্বাণ লাভ করেন। মহাবীর এবং গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে এই স্থানের প্রথাগত যোগসূত্রের নিরিখে বলা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৫ম ও ৬ষ্ঠ শতাব্দীতেও এই গ্রাম টির অস্তিত্ব ছিল।পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে নালন্দার অবস্থা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। ১৭শ শতাব্দীর তিব্বতি লামা তারানাথ লিখেছেন যে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মৌর্য সম্রাট অশোক নালন্দায় সারিপুত্তের চৈত্যের স্থানে একটি বৃহৎ মন্দির নির্মাণ করান। তারানাথ আরও লিখেছেন যে খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দীর মহাযান দার্শনিক নাগার্জুন এবং তার শিষ্য আর্যদেব নালন্দার ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং নাগার্জুন এই মহাবিহারের অধ্যক্ষও ছিলেন। তারানাথের রচনা থেকে জানা যায় নাগার্জুনের সমসাময়িক সুবিষ্ণু নালন্দায় ১০৮টি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এই তথ্য থেকে এটুকু বোঝা যায় যে খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দীর আগে নালন্দা ছিল বৌদ্ধধর্মের এক বর্ধিষ্ণু কেন্দ্র। কিন্তু এই ধরনের তথ্যের সপক্ষে কোনও পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দীতে চীনা বৌদ্ধ পর্যটক ফাহিয়েন ভারতে এসে সারিপুত্রের পরিনির্বাণ স্থল নালো পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য হিসেবে একটি মাত্র স্তুপই দেখেছিলেন।


বালাদিত্য মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের সম্মুখভাগ
নালন্দার কালপঞ্জির সূত্রপাত ঘটেছে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে। একটি সিলমোহর থেকে জানা যায় যে শক্রাদিত্য নামে এক রাজা ছিলেন এই মহাবিহারের প্রতিষ্ঠাতা। হিউয়েন সাং এবং অপর এক কোরীয় তীর্থযাত্রী উল্লেখ করেছেন যে পর্যন্যবর্মণ এই স্থানে একটি সঙ্ঘারাম প্রতিষ্ঠা করেন। শক্রাদিত্য হলেন খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দীর গুপ্ত সম্রাট প্রথম কুমারগুপ্ত।তার রাজত্বকাল আনুমানিক ভাবে ধরা হয় ৪১৫ থেকে ৪৫৫ সাল পযন্ত। তার মুদ্রা নালন্দায় আবিষ্কৃত হয়েছে। তার উত্তরসূরি বুদ্ধগুপ্ত তথাগতগুপ্ত, বালাদিত্য এবং বজ্র পরবর্তীকালে আরও মঠ ও মন্দির নির্মাণ করিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে প্রসারিত এবং পরিবর্ধিত করেন।প্রথাগতভাবে গুপ্ত রাজবংশ ছিল একটি ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজবংশ। যদিও নরসিংহগুপ্ত মহাযান দার্শনিক বসুবন্ধুর প্রভাবে লালিতপালিত হন। তিনি নালন্দায় একটি সঙ্ঘারাম এবং একটি ৩০০ ফুট উঁচু বিহার নির্মাণ করেন। এই বিহারে একটি বুদ্ধের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। হিউয়েন সাংয়ের মতে এই বিহারটি বোধিবৃক্ষের তলায় নির্মিত মহাবিহারটির অনুরূপ ছিল। তিনি আরও লিখেছেন যে বালাদিত্যের পুত্র বজ্রও ভক্তিসমাহিত চিত্তে একটি সঙ্ঘারাম নির্মাণ করান।
গুপ্তোত্তর যুগে দীর্ঘকাল ধরে বহু রাজা ভাস্করদের দক্ষতাকে ব্যবহার করে নালন্দায় নির্মাণকার্য চালিয়ে যান। কোনও এক সময়ে মধ্য ভারতের এক রাজা নালন্দা মহাবিহার চত্বরের অট্টালিকাগুলিকে পরিবেষ্টন করে একটি একদ্বারবিশিষ্ট উচ্চ প্রাচীর নির্মাণ করান। পূর্ণবর্মণ নামে আরেক জন রাজা সম্ভবত মৌখরী রাজবংশের রাজা যাঁকে “অশোক রাজার বংশের শেষ বংশধর বলা হয় তিনি একটি ৮০ ফুট উঁচু তামার বুদ্ধ মূর্তি নির্মাণ করান। তিনি ছয়টি ধাপবিশিষ্ট একটি বেদিও নির্মাণ করিয়েছিলেন।যদিও গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর এই মহাবিহারের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পৃষ্ঠপোষক ছিলেন কনৌজের ৭ম শতাব্দীর সম্রাট হর্ষবর্ধন। হর্ষবর্ধন বৌদ্ধধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন এবং নিজেকে নালন্দার ভিক্ষুদের দাস মনে করতেন। তিনি মহাবিহারের মধ্যে পিতলের একটি মঠ নির্মাণ করিয়েছিলেন এবং ১০০টি গ্রাম থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব এটিকে প্রদান করেছিলেন। তাছাড়া তিনি সেই গ্রামগুলির ২০০ জন গৃহস্থকে মহাবিহারের ভিক্ষুদের চাহিদা অনুসারে রোজ চাল, মাখন এবং দুধ সরবরাহ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। নালন্দার প্রায় এক হাজার ভিক্ষু কনৌজে হর্ষবর্ধনের রাজকীয় উপাসনা সভায় উপস্থিত থাকতেন।৮ম শতাব্দীর পূর্বের নালন্দা সম্পর্কে যা জানা যায় তার মূল সূত্রগুলি হল চীনা ভিক্ষু হিউয়েন সাংয়ের ভ্রমণবিবরণী এবং ই ৎসিংয়ের ভ্রমণবিবরণী ।


৮ম শতাব্দীর দুংহুয়াং গুহাচিত্রে হিউয়েন সাংয়ের ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনের চিত্র।
হিউয়েন সাং ভারত পর্যটন করেন ৬৩০ থেকে ৬৪৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে। তিনি প্রথম নালন্দায় আসেন ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে। তারপর ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবার নালন্দায় এসেছিলেন। নালন্দার মঠে তিনি প্রায় দুই বছর অতিবাহিত করেন। নালন্দায় তাকে সাদরে অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেখানে তিনি একটি ভারতীয় নামও লাভ করেন। নামটি ছিল মোক্ষদেব। নালন্দার তৎকালীন অধ্যক্ষ শীলভদ্রের তত্ত্বাবধানে তিনি সেখানে অধ্যয়ন করেন। সেই সময় যোগাচার নামে একটি চিন্তাধারার কিয়দংশ চীনে বিস্তার লাভ করেছিল। হিউয়েন সাং মনে করতেন শীলভদ্র এই বিষয়ের এক অতুলনীয় শিক্ষক এবং তার কাছে শিক্ষালাভ করতে পেরে তার কষ্টকর বিদেশযাত্রা সার্থক হয়েছে। বৌদ্ধশাস্ত্র ছাড়াও হিউয়েন সাং নালন্দায় ব্যাকরণ,, ন্যায় এবং সংস্কৃত শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে মহাবিহারে ভাষণও দেন।
নালন্দায় তার অবস্থানের এক বিস্তারিত বিবরণীতে হিউয়েন সাং তার বাসকক্ষের জানলার বাইরের দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন
সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি একটি ইষ্টকনির্মিত প্রাচীরের দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই প্রাচীরটি সমগ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে বাইরে থেকে ঘিরে রয়েছে। একটি দ্বার দিয়ে মহান মহাবিদ্যালয়টিতে প্রবেশ করা যায়। মধ্যে আটটি অন্য সভাগৃহ সেই মহাবিদ্যালয় থেকে পৃথক অবস্থায় রয়েছে। সুসজ্জিত স্তম্ভ ও পরীর তুল্য দেখতে স্তম্ভশীর্ষগুলি একসঙ্গে সূচালো পর্বতশীর্ষের ন্যায় সন্নিবেশিত। মনে হয় যেন মানমন্দিরগুলি সকালের কুয়াশায় এবং স্তম্ভশীর্ষের কক্ষগুলি মেঘের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে।


হিউয়েন সাং রচিত পশ্চিমাঞ্চল সম্পর্কিত মহৎ তাং নথি বা দা তাং জিয়ুজি গ্রন্থের একটি পৃষ্ঠা।
হিউয়েন সাং ছিলেন হর্ষবর্ধনের সমসাময়িক এবং তার সম্মানীয় অতিথি। হিউয়েন সাং হর্ষবর্ধনের মানবপ্রেমের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। হিউয়েন সাংয়ের জীবনীকার হয়ুই লি লিখেছেন যে নালন্দায় মহাযান দর্শনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হত বলে কয়েকজন স্থবির এই মহাবিহারকে অপছন্দ করতেন। কথিত আছে রাজা হর্ষবর্ধন ওড়িশা পরিদর্শনে গেলে তারা নালন্দাকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য রাজার নিন্দা করেন নালন্দায় যে আকাশকুসুম দর্শনের শিক্ষা দেয়া হয় তাকে উপহাস করেন এবং বলেন হর্ষবর্ধনের উচিত একটি কাপালিক মন্দিরেরও পৃষ্ঠপোষকতা করা। হর্ষবর্ধন এই কথা নালন্দার আচার্যকে জানালে তিনি সাগরমতি, প্রজ্ঞারশ্মি, সিংহরশ্মি ও হিউয়েন সাংকে প্রেরণ করেন ওড়িশার ভিক্ষুদের মত খণ্ডন করার জন্য।চীনে প্রত্যাবর্তনকালে হিউয়েন সাং ২০টি অশ্বপৃষ্ঠে ৫২০টি পেটিকায় করে ৬৫৭টি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ যার মধ্যে অনেকগুলি ছিল মহাযান ধর্মগ্রন্থ ও ১৫০টি অবশেষ নিয়ে যান। তিনি নিজে ৭৪টি গ্রন্থ অনুবাদ করেন। তার চীনে প্রত্যাবর্তনের পরবর্তী ৩০ বছরে অন্যূন এগারো জন চীনা এবং কোরীয় পর্যটক নালন্দায় এসেছিলেন।


আলেকজান্ডার কানিংহামের ১৮৬১ থেকে ৬২ এএসআই রিপোর্টে নালন্দা এবং তার পারিপার্শ্বিকের একটি মানচিত্র। এই মানচিত্রে মহাবিহারের চারপাশে একাধিক পুষ্করিণী দেখা যাচ্ছে।

ফাহিয়েন এবং হিউয়েন সাংয়ের ভ্রমণবিবরণী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তীর্থযাত্রী ই ৎসিং শ্রীবিজয়ে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা করেন এবং ৬৭৩ সালে ভারতে আগমন করেন। ভারতে তিনি চোদ্দো বছর অতিবাহিত করেছিলেন। তার মধ্যে দশ বছর তিনি কাটিয়েছিলেন নালন্দা মহাবিহারে। ৬৯৫ সালে তিনি যখন চীনে প্রত্যাবর্তন করেন তখন তিনি ৪০০টি সংস্কৃত গ্রন্থ সঙ্গে করে নিয়ে যান এবং তারপরেই সেগুলি অনুদিত হয়।হিউয়েন সাং ৭ম শতাব্দীর ভারতের ভূগোল এবং সংস্কৃতির বর্ণনা দিয়েছিলেন। কিন্তু ই ৎসিং তার বর্ণনা নিবদ্ধ রেখেছিলেন মূলত বৌদ্ধধর্মের উৎসভূমিতে সেই ধর্মের চর্চা এবং মঠের ভিক্ষুদের রীতিনীতি, নিয়মাবলি ও নির্দেশিকার প্রতি। তার বিবরণীতে ই ৎসিং লিখেছেন যে ২০০টি গ্রামের রাজস্বের আয় নালন্দার রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয়িত হত। তার বর্ণনা থেকে জানা যায় যে মহাবিহারে আটটি সভাঘর এবং প্রায় ৩০০টি কক্ষ ছিল। তার মতে নালন্দার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অঙ্গ ছিল একাধিক অনুষ্ঠান। সকলেই তা পালন করতেন। প্রতিদিন সকালে একটি ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে স্নানের সময় নির্দেশিত হত। সেই ঘণ্টাধ্বনি শুনে শতাধিক বা সহস্রাধিক ভিক্ষু তাদের বিহার থেকে চত্বরের মধ্যস্থ বা পার্শ্বস্থ একাধিক বিশালাকার জলাধারে উপস্থিত হতেন এবং সেখানে স্নান করতেন। তারপর আরেকটি ঘণ্টাধ্বনি হত বুদ্ধের প্রতি আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধানিবেদন নির্দেশ করে। সন্ধ্যায় চৈত্যবন্দনা অনুষ্ঠিত হত। এর অন্তর্গত ছিল একটি ত্রিভাগীয় সেবা নির্দিষ্ট স্তোত্র, শ্লোক এবং ধর্মগ্রন্থের নির্বাচিত অংশ পাঠ। এই অনুষ্ঠানটি সাধারণত মহাবিহারের কেন্দ্রস্থলে অনুষ্ঠিত হত। তবে ৎসিং লিখেছেন নালন্দার অধিবাসীর সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে দৈনিক সমাবেশ কষ্টকর ছিল। তার ফলে একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান প্রচলিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে একজন পুরোহিত ধূপ ও পুষ্পবহনকারী সাধারণ ভৃত্য এবং শিশুদের সঙ্গে করে একটি সভাগৃহ থেকে অন্য সভাগৃহে গিয়ে গিয়ে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতেন। গোধূলির মধ্যেই এই অনুষ্ঠান শেষ হত।
পাল যুগে নালন্দা

৮ম শতাব্দীতে উত্তর পূর্ব ভারতে পাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত এই অঞ্চল পাল শাসনাধীনে থাকে। পাল রাজবংশ ছিল একটি বৌদ্ধ রাজবংশ। তবে তাদের যুগে বৌদ্ধধর্ম ছিল নালন্দায় অনুশীলিত মহাযান এবং বজ্রযান নামে পরিচিত মহাযান দর্শনের তন্ত্র প্রভাবিত একটি মতবাদের মিশ্রণ। নালন্দা গুপ্ত যুগের একটি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বহন করছিল এবং তা প্রশংসিত হত। পাল সম্রাটরা বহু প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তাদের শাসনকালে নালন্দা মহাবিহারের আদলে জগদ্দল, ওদন্তপুরা, সোমপুরা ও বিক্রমশিলায় চারটি মহাবিহার গড়ে ওঠে। উল্লেখ্য পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল নালন্দা থেকে মাত্র ৬ মাইল দূরে ওদন্তপুরা মহাবিহারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।নালন্দার উৎকীর্ণ লিপিগুলি থেকে জানা যায় গোপালের পুত্র ধর্মপাল নালন্দার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। উল্লেখ্য তিনি বিক্রমশিলা মহাবিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে পাল যুগে নালন্দার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ধর্মপালের পুত্র তথা ৯ম শতাব্দীর সম্রাট দেবপাল। তিনি সোমপুরা মহাবিহারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। নালন্দার ধ্বংসাবশেষে একাধিক ধাতুমূর্তিতে দেবপালের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাছাড়া দুটি গুরুত্বপূর্ণ উৎকীর্ণ লিপি থেকেও তার কথা যানা যায়। প্রথমটি হল একটি তাম্রলিপি। নালন্দায় খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত এই লিপিটি থেকে জানা যায় সুবর্ণদ্বীপের শৈলেন্দ্র রাজা বালপুত্রদেব“নালন্দার বহুমুখী উৎকর্ষে আকৃষ্ট হয়ে সেখানে একটি মঠ নির্মাণ করেন এবং সেটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেবপালকে পাঁচটি গ্রামের রাজস্ব অনুমোদন করার অনুরোধ জানান। দেবপাল তার অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন। ঘোসরাওয়ান উৎকীর্ণ লিপিটি হল দেবপালের সমসাময়িক কালের অপর একটি উৎকীর্ণ লিপি। এই লিপি থেকে জানা যায় যে তিনি বীরদেব নামে এক বৈদিক পণ্ডিতকে অভ্যর্থনা জানান এবং তার পৃষ্ঠপোষকতা করেন। বীরদেব পরবর্তীকালে নালন্দার অধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছিলেন।পাল যুগে পূর্ব ভারতের পাঁচটি বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র একটি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম গঠন করেছিল। পণ্ডিতরা সহজেই এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলির একটি থেকে অপরটিতে গমন করে বিভিন্ন পদ অলংকৃত করতে পারতেন। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রতীকচিহ্ন ছিল। সেই প্রতীকচিহ্নে দুই পাশে দুটি মৃগ বেষ্টিত একটি ধর্মচক্র অঙ্কিত থাকত। তার নিচে প্রতিষ্ঠানের নামটি খোদিত থাকত। নালন্দার ক্ষেত্রে এই নামটি ছিল ( শ্রী নালন্দা মহাবিহার আর্য ভিক্ষুসঙ্ঘস্য ) অর্থৎ হল নালন্দা মহাবিহারের সম্মানীয় ভিক্ষুদের সঙ্ঘ ।
বহু সংখ্যক শিলালিপি এবং সাহিত্যিক সূত্র থেকে জানা যায় যে পাল রাজারা উদারভাবে নালন্দার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কিন্তু পাল যুগে অন্যান্য মহাবিহারগুলি নালন্দা থেকে অনেক শিক্ষিত ভিক্ষুকে গ্রহণ করেছিল। তাই নালন্দা এই যুগে একক অসাধারণত্ব হারিয়ে ফেলে। পাল যুগে বৌদ্ধধর্মের উপর বজ্রযানের প্রভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। নালন্দার উপরেও এর প্রভাব পড়ে। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতীতে মহাযান মতকেন্দ্রিক একটি উন্মুক্ত পাণ্ডিত্যের কেন্দ্র ছিল তা ধীরে ধীরে তান্ত্রিক মতবাদ ও জাদুবিদ্যায় কেন্দ্রীভূত হতে থাকে বা একটি সময় হয়ে পড়ে। তারানাথের ১৭শ শতাব্দীর ইতিহাস গ্রন্থটি দাবি করছে যে নালন্দা সম্ভবত কোনও এক সময় বিক্রমশিলা মহাবিহারের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীনেও এসেছিল।
নালন্দা মহাবিহারের যে অংশের খননকার্য আজ পর্যন্ত করা হয়েছে তার আয়তন কেবলমাত্র দৈর্ঘ্যে ১,৬০০ ফুট এবং প্রস্থে ৮০০ ফুট বা প্রায় ১২ একর। তবে মধ্যযুগে নালন্দার আয়তন আরও বড় ছিল। স্থাপত্যের দিক থেকে এটিকে একটি অতুলনীয় কীর্তি মনে করা হত। এটির বৈশিষ্ট্য ছিল একটি প্রকাণ্ড প্রাচীর এবং একটিমাত্র প্রবেশদ্বার। নালন্দায় আটটি পৃথক চত্বর ও দশটি মন্দির ছিল। সেই সঙ্গে ছিল ধ্যানকক্ষ এবং শ্রেণিকক্ষ। চত্বরে হ্রদ ও উদ্যানও ছিল। নালন্দা ছিল আবাসিক বিদ্যালয়। এখানে ছাত্রদের বাসকক্ষও ছিল। খ্যাতির মধ্যগগনে থাকাকালে এই মহাবিহারে ১০,০০০ ছাত্র ও ২,০০০ শিক্ষক ছিলেন। চীনা তীর্থযাত্রীদের মতে এই মহাবিহারের ছাত্রসংখ্যা ছিল ৩০০০ থেকে ৫০০০এর মধ্যবর্তী।শিক্ষার সর্বস্তরের বিষয় এখানে অধীত হত। কোরিয়া, জাপান, চীন, তিব্বত, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য ও তুরস্ক থেকে ছাত্র এবং পণ্ডিতেরা এখানে আসতেন।হিউয়েন সাং ৭ম শতাব্দীর নালন্দা মহাবিহারের একটি বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন কীভাবে সুশৃঙ্খল সারিবদ্ধ স্তম্ভ, সভাঘরের অরণ্য, হার্মিক ও মন্দিরগুলিকে আকাশে কুয়াশার উপর উড্ডয়নশীল মনে হত যাতে নিজেদের কক্ষ থেকে ভিক্ষুরা বায়ু ও মেঘের জন্মদৃশ্যের সাক্ষী থাকতে পারেন। তিনি লিখেছেন মঠগুলির চারিপাশে একটি নীল হ্রদ ভাসত। তাতে ভেসে থাকত পূর্ণ প্রস্ফুটিত নীল পদ্ম সুন্দর লাল কনক ফুল এখানে ওখানে দুলত আর আম্রকুঞ্জের বাইরে অধিবাসীরা তাদের গভীর ও নিরাপদ আশ্রয় লাভ করতেন।
নালন্দার গ্রন্থাগার

ই ৎসিং যে দশ বছর নালন্দায় অতিবাহিত করার পর প্রচুর গ্রন্থ নিয়ে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন তার যথেষ্ট প্রমাণও পাওয়া গেছে। আর এই থেকেই প্রমাণিত হয় যে এই মহাবিহারে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ছিল। প্রথাগত তিব্বতি সূত্র থেকে জানা যায় নালন্দার সুসমৃদ্ধ গ্রন্থাগারটির নাম ছিল ধর্মগঞ্জ এর অর্থ হলো ধর্মের হাট । তিনটি বহুতল ভবনে এই গ্রন্থাগারটি অবস্থিত ছিল। ভবনগুলির নাম ছিল রত্নসাগর,আর্থাৎ রত্নের মহাসাগর, ‘ও রত্নোদধি, অর্থাৎ রত্নের সমুদ্র, এবং রত্নরঞ্জক অর্থাৎ রত্নখচিত। রত্নোদধি ছিল নয়টি তলবিশিষ্ট ভবন। এখানেই পবিত্রতম ধর্মগ্রন্থ প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্র ও গুহ্যসমাজ রক্ষিত ছিল।নালন্দা গ্রন্থাগারের সঠিক গ্রন্থসংখ্যা জানা যায় না। তবে মনে করা হয় সেখানে লক্ষাধিক গ্রন্থ ছিল। সেই গ্রন্থাগারে শুধুমাত্র ধর্মগ্রন্থের পুথিই রক্ষিত থাকত না বরং ব্যাকরণ, ন্যায়, সাহিত্য, জ্যোতিষ, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং ঔষধবিদ্যা সংক্রান্ত গ্রন্থাবলিও ছিল। নালন্দা গ্রন্থাগারের নিশ্চয় একটি শ্রেণিবিন্যাস ক্রম ছিল যেটি সম্ভবত সংকৃত ভাষাবিদ পাণিনির শ্রেণিবিন্যাস ক্রমের ভিত্তিতে সৃজিত হয়েছিল। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলি খুব সম্ববত ত্রিপিটকের প্রধান তিনটি বিভাগ, বিনয় ও সুত্ত এবং অভিধম্মের ভিত্তিতে বিন্যস্ত ছিল।
নালন্দা শিক্ষাক্রম
হিউয়েন সাংয়ের জীবনীগ্রন্থে হয়ুই লি লিখেছেন যে নালন্দার সকল ছাত্রই মহাযান এবং বৌদ্ধধর্মের আঠারোটি সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন করতেন। তাছাড়াও তারা বেদ, হেতুবিদ্যা, ন্যায়, শব্দবিদ্যা,ব্যাকরণ ও ভাষাতত্ত্ব,চিকিৎসাবিদ্যা বা ভেষজবিদ্যা, জাদুবিদ্যা-সংক্রান্ত অন্যান্য গ্রন্থ অথর্ববেদ এবং সাংখ্যও অধ্যয়ন করতেন।হিউয়েন সাং নিজে শীলভদ্র ও অন্যান্যদের অধীনে এই সকল বিষয়ের মধ্যে একাধিক বিষয় অধ্যয়ন করেছিলেন। ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন ছাড়াও ন্যায়শাস্ত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত বিতর্ক এবং আলোচনাসভার আয়োজন করা হত। মহাবিহারের একজন ছাত্র দর্শনের সকল শাখার সঙ্গে যুক্ত ন্যায়শাস্ত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যয়ন করতেন এবং সেই সঙ্গে তাকে বৌদ্ধধর্মের সপক্ষে যুক্তিবিস্তার করে অন্যান্য মত খণ্ডন করতে হত।তাছাড়াও মনে করা হয় যে নালন্দায় আইন, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও নগর পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয় শিক্ষাদান করা হত।প্রথাগত তিব্বতি বিশ্বাস অনুসারে, নালন্দায় চারটি ডক্সোগ্রাফি শিক্ষাদান করা হতঃ
সর্বাস্তিবাদ বৈভাষিক
সর্বাস্তিবাদ সৌত্রান্তিক
মধ্যমক, নাগার্জুনের মহাযান দর্শন
চিত্তমাত্রা, অসঙ্গ ও বসুবন্ধুর মহাযান দর্শন
৭ম শতাব্দীতে হিউয়েন সাং নালন্দার শিক্ষকদের যে সংখ্যা নথিভুক্ত করেছিলেন তা ছিল প্রায় ১৫১০জন এদের মধ্যে প্রায় ১০০০ জন সূত্র এবং শাস্ত্রের ২০টি সংকলন ব্যাখ্যা করতে পারতেন ৫০০ জন ৩০টি সংকলন ব্যাখ্যা করতে পারতেন এবং মাত্র ১০ জন ৫০টি সংকলন ব্যাখ্যা করতে পারতেন। হিউয়েন সাং নিজে ছিলেন সেই অল্পসংখ্যক শিক্ষকদের অন্যতম যারা ৫০টি বা ততোধিক সংকলন ব্যাখ্যা করতে পারতেন। সেই সময় অধ্যক্ষ শীলভদ্রই কেবলমাত্র সূত্র ও শাস্ত্রের সকল প্রধান সংকলনগুলি অধ্যয়ন করেছিলেন।
নালন্দা প্রশাসন ব্যবস্থা
চীনা ভিক্ষু ই ৎসিং লিখেছেন যে নালন্দায় আলোচনার বিষয়বস্তু এবং প্রশাসন ছিল সমাবেশ ও সেই সমাবেশে উপস্থিত সকলের তথা অধিবাসী ভিক্ষুদের সম্মতিসাপেক্ষ ।এতে ভিক্ষুদের কিছু করতে হলে তাঁদের সমবেত হয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হত। তারপর তারা বিহারপাল নামক আধিকারিককে আদেশ করতেন তিনি যাতে অধিবাসী ভিক্ষুদের প্রত্যেকের কাছে গিয়ে করজোড়ে নিবেদন এবং বিজ্ঞাপিত করেন। একজন ভিক্ষুরও তাতে আপত্তি থাকলে প্রস্তাবটি গৃহীত হত না। তার মত ঘোষণা করার জন্য বলপ্রয়োগ করতে হত না। যদি কোনও ভিক্ষু সকল অধিবাসীর সম্মতি না নিয়ে কিছু করতেন তবে তাকে বলপূর্বক মঠ ছাড়তে বাধ্য করা হত। কোনও বিষয় নিয়ে মতানৈক্য হলে তারা সম্মতি অর্জনের জন্য যুক্তি প্রদর্শন করতেন। সম্মতি অর্জনের জন্য বলপ্রয়োগ বা চাপ সৃষ্টি করা হত না।
হিউয়েন সাংও লিখেছেনঃ
এই পূতচরিত্র ব্যক্তিত্বদের সকলের জীবন স্বাভাবিকভাবেই নিয়ন্ত্রিত হত সর্বাধিক ভাবগম্ভীর এবং কঠোরতম অভ্যাসের মাধ্যমে। তাই মঠের সাতশো বছরের ইতিহাসে কেউই শৃঙ্খলার বিধিভঙ্গ করেননি। রাজা মঠের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মানের চিহ্ন বর্ষণ করতেন এবং একশো শহর থেকে আহৃত রাজস্ব ধার্মিকদের ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করতেন।



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:০৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×