http://allbanglanewspapers.com/prothomalo/
জুম্মা খান নিয়াজী পেশায় সাধারণ চিত্রকর। আজ থেকে দেড় যুগ আগে শুরু করেছিলেন যৌতুকবিরোধী স্লোগান-লিখন। এরপর তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে নানা প্রতিবেদন। এখন কেমন আছেন তিনি, কীভাবে চলছে তাঁর যুদ্ধ
তাঁর পুরো নাম জুম্মা খান নিয়াজী। থাকেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়া মহল্লায়। পেশায় সাধারণ চিত্রকর হলেও এখন সবাই তাঁকে চেনেন যৌতুকবিরোধী স্লোগানের ফেরিওয়ালা হিসেবে।
আজ থেকে দেড় যুগ আগের ঘটনা। যৌতুকের পীড়ন বাঙালি নারীদের জীবন কীভাবে বিষিয়ে তুলছে, পত্রিকার পাতায় সেসব খবর ভাবিয়ে তুলেছিল সেদিনের কিশোর নিয়াজীকে। সেই উপলব্ধি থেকে নিজের উদ্যোগে রিকশা ও দেয়ালে যৌতুকের বিরুদ্ধে স্লোগান লিখতে শুরু করলেন তিনি।
.প্রথম এক যুগে তাঁর এই কীর্তি যখন সবার কাছে হইচই ফেলে দিয়েছে, তখনো তিনি ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। অসংখ্য মানুষ তাঁর স্লোগান পড়ে পুলকিত হয়েছেন, কিন্তু মানুষটির সম্পর্কে তখনো তেমন কিছু জানতেন না কেউ।
২০০৪ সালের ৩ এপ্রিল প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের শিরোনাম হন নিয়াজী। প্রথম আলোতে তাঁকে নিয়ে ‘যৌতুকের বিরুদ্ধে নিয়াজীর লড়াই’ শিরোনামে প্রথম প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ওই বছরের ৮ এপ্রিল প্রথম আলোসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় অভিনন্দনসূচক সম্পাদকীয় প্রকাশ পায়। ২২ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চিঠি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর উদ্যোগের প্রশংসা করেন। টিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানেও তাঁকে নিয়ে প্রচার হয় বিশেষ প্রতিবেদন। এরপর কেটে গেছে ১০ বছর। এখন কেমন আছেন নিয়াজী, কীভাবে চলছে তাঁর যৌতুকবিরোধী যুদ্ধ?
সম্প্রতি এক সকালবেলা তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘নিয়াজী আর্ট’-এ কথা হলো নিয়াজীর সঙ্গে। বললেন, ‘নিজের কাছে আমার দায়বদ্ধতা এখন আরও বেড়ে গেছে।’
ছিপছিপে গড়নের মানুষটি পোশাক-পরিচ্ছদে সাদামাটা। আশপাশের অঞ্চলে নিজের কাজের গুণে আছে পরিচিতি আর সম্মান। পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরার মাহমুদাবাদ এলাকা থেকে কলেজপড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী এসেছেন যৌতুকবিরোধী একটি নাটকের অনুষ্ঠানে তাঁকে অতিথি করতে। নিয়াজী জানালেন, তরুণদের এমন আবদার না রেখে তিনি পারেন না। খুব লজ্জা লাগে যখন দূরের কোনো শহরের মানুষ তাঁকে দেখতে আসে। অনেকে এসে হাতে কিছু টাকাও ধরিয়ে দেন।
যৌতুকবিরোধী যুদ্ধে নিয়াজী এখন একা নননিয়াজীর এই গল্পের মধ্যে এবার শোনা যাক শাহিন মিয়া নামের যৌতুকবিরোধী আরেক যোদ্ধার কথা। শাহ আলম নামের এক তরুণকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন শাহিনের চাচাতো বোন ভৈরবের টানকৃষ্ণনগর গ্রামের মেয়ে বেবি আক্তার। তাঁদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি। দুই বছরের মধ্যে স্বামীর বাড়ির বসতঘরে তাঁর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
তাঁর পরিবারের ধারণা, যৌতুকের বলি হয়েছিলেন বেবি। ঘটনাটি ভীষণ দাগ কাটে বেবির চাচাতো ভাই শাহিনের মনে। ২৩ মে ২০১৪, নিজের অটোরিকশা নিয়ে নিয়াজীর কাছে হাজির হন তিনি। উদ্দেশ্য অটোরিকশার পেছনে একটি স্লোগান লিখিয়ে নেওয়া ‘যৌতুক চাওয়া মানে ভিক্ষা চাওয়া, যৌতুক চাওয়া মানে মানুষের মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দেওয়া’। এক হাতে রং আর এক হাতে তুলি নিয়ে বসে যান নিয়াজী।
দেড় যুগ আগে শুরু করা যৌতুকের বিরুদ্ধে নিয়াজীর এই লড়াইয়ে শাহিনের মতো অসংখ্য যোদ্ধা যুক্ত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখন তরুণ-তরুণীরা এসে যৌতুকবিহীন বিয়ের দীক্ষা নেন তাঁর কাছ থেকে। স্কুল-কলেজে তাঁর ডাক পড়ে যৌতুকের বিরুদ্ধে শপথ পাঠ করানোর। নিমন্ত্রণ পান যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠানে। অতিথি হন যৌতুকবিরোধী মঞ্চ ও পথনাটকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নিয়াজীর যৌতুকবিরোধী তুলির অাঁচড়ভৈরব ছাড়াও এ পর্যন্ত নিয়াজীর তুলির আঁচড় পড়েছে কক্সবাজার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, ময়মনসিংহ থেকে হাওরাঞ্চল, চায়ের দেশ সিলেট, ঢাকার সদরঘাট ও গাজীপুর জেলায়। জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রায় আট হাজার রিকশায় যৌতুকবিরোধী স্লোগান লিখেছেন তিনি। এ কাজে যে খরচ হয়, তার জোগান আসে তাঁর সামান্য আয় থেকেই। একটি ব্যানার লিখে যা পান, তা থেকে ৩০ টাকা তুলে রাখেন। কিছু টাকা জমা হলেই রং আর তুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দেশের কোনো জেলা বা উপজেলা শহরে।
‘ঢাকার কিছু অংশে স্লোগান লেখা শেষ। রাজধানী তো ব্যস্ত শহর। জায়গা পাওয়া কঠিন। রিকশাচালকদেরও পেছন ফিরে তাকানোর সময় নেই। এমন বাস্তবতায় ঢাকায় কাজটি ইচ্ছেমতো শেষ করা যায়নি।’ এখন কী নিয়ে ব্যস্ত? প্রশ্নের উত্তরে এভাবেই নিজেকে মেলে ধরে নিয়াজী আরও বললেন, ‘কিছুদিন আগেও এক ব্যক্তি এসে টাকা দিয়ে গেছেন। রোজার পর পর উত্তরবঙ্গ গিয়েছিলাম। ছিলাম চার দিন। এ সময় সেখানে যৌতুকবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছি। যৌতুক চাওয়া মানে ভিক্ষা চাওয়া, যৌতুক চাওয়া মানে মানুষের মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দেওয়া, যৌতুককে না বলুন—আমৃত্যু এসব স্লোগানের ফেরিওয়ালা হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’
http://allbanglanewspapers.com/prothomalo/
জুম্মা খান নিয়াজী পেশায় সাধারণ চিত্রকর। আজ থেকে দেড় যুগ আগে শুরু করেছিলেন যৌতুকবিরোধী স্লোগান-লিখন। এরপর তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে নানা প্রতিবেদন। এখন কেমন আছেন তিনি, কীভাবে চলছে তাঁর যুদ্ধ
তাঁর পুরো নাম জুম্মা খান নিয়াজী। থাকেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়া মহল্লায়। পেশায় সাধারণ চিত্রকর হলেও এখন সবাই তাঁকে চেনেন যৌতুকবিরোধী স্লোগানের ফেরিওয়ালা হিসেবে।
আজ থেকে দেড় যুগ আগের ঘটনা। যৌতুকের পীড়ন বাঙালি নারীদের জীবন কীভাবে বিষিয়ে তুলছে, পত্রিকার পাতায় সেসব খবর ভাবিয়ে তুলেছিল সেদিনের কিশোর নিয়াজীকে। সেই উপলব্ধি থেকে নিজের উদ্যোগে রিকশা ও দেয়ালে যৌতুকের বিরুদ্ধে স্লোগান লিখতে শুরু করলেন তিনি।
.প্রথম এক যুগে তাঁর এই কীর্তি যখন সবার কাছে হইচই ফেলে দিয়েছে, তখনো তিনি ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। অসংখ্য মানুষ তাঁর স্লোগান পড়ে পুলকিত হয়েছেন, কিন্তু মানুষটির সম্পর্কে তখনো তেমন কিছু জানতেন না কেউ।
২০০৪ সালের ৩ এপ্রিল প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের শিরোনাম হন নিয়াজী। প্রথম আলোতে তাঁকে নিয়ে ‘যৌতুকের বিরুদ্ধে নিয়াজীর লড়াই’ শিরোনামে প্রথম প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ওই বছরের ৮ এপ্রিল প্রথম আলোসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় অভিনন্দনসূচক সম্পাদকীয় প্রকাশ পায়। ২২ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চিঠি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর উদ্যোগের প্রশংসা করেন। টিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানেও তাঁকে নিয়ে প্রচার হয় বিশেষ প্রতিবেদন। এরপর কেটে গেছে ১০ বছর। এখন কেমন আছেন নিয়াজী, কীভাবে চলছে তাঁর যৌতুকবিরোধী যুদ্ধ?
সম্প্রতি এক সকালবেলা তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘নিয়াজী আর্ট’-এ কথা হলো নিয়াজীর সঙ্গে। বললেন, ‘নিজের কাছে আমার দায়বদ্ধতা এখন আরও বেড়ে গেছে।’
ছিপছিপে গড়নের মানুষটি পোশাক-পরিচ্ছদে সাদামাটা। আশপাশের অঞ্চলে নিজের কাজের গুণে আছে পরিচিতি আর সম্মান। পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরার মাহমুদাবাদ এলাকা থেকে কলেজপড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী এসেছেন যৌতুকবিরোধী একটি নাটকের অনুষ্ঠানে তাঁকে অতিথি করতে। নিয়াজী জানালেন, তরুণদের এমন আবদার না রেখে তিনি পারেন না। খুব লজ্জা লাগে যখন দূরের কোনো শহরের মানুষ তাঁকে দেখতে আসে। অনেকে এসে হাতে কিছু টাকাও ধরিয়ে দেন।
যৌতুকবিরোধী যুদ্ধে নিয়াজী এখন একা নননিয়াজীর এই গল্পের মধ্যে এবার শোনা যাক শাহিন মিয়া নামের যৌতুকবিরোধী আরেক যোদ্ধার কথা। শাহ আলম নামের এক তরুণকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন শাহিনের চাচাতো বোন ভৈরবের টানকৃষ্ণনগর গ্রামের মেয়ে বেবি আক্তার। তাঁদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি। দুই বছরের মধ্যে স্বামীর বাড়ির বসতঘরে তাঁর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
তাঁর পরিবারের ধারণা, যৌতুকের বলি হয়েছিলেন বেবি। ঘটনাটি ভীষণ দাগ কাটে বেবির চাচাতো ভাই শাহিনের মনে। ২৩ মে ২০১৪, নিজের অটোরিকশা নিয়ে নিয়াজীর কাছে হাজির হন তিনি। উদ্দেশ্য অটোরিকশার পেছনে একটি স্লোগান লিখিয়ে নেওয়া ‘যৌতুক চাওয়া মানে ভিক্ষা চাওয়া, যৌতুক চাওয়া মানে মানুষের মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দেওয়া’। এক হাতে রং আর এক হাতে তুলি নিয়ে বসে যান নিয়াজী।
দেড় যুগ আগে শুরু করা যৌতুকের বিরুদ্ধে নিয়াজীর এই লড়াইয়ে শাহিনের মতো অসংখ্য যোদ্ধা যুক্ত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখন তরুণ-তরুণীরা এসে যৌতুকবিহীন বিয়ের দীক্ষা নেন তাঁর কাছ থেকে। স্কুল-কলেজে তাঁর ডাক পড়ে যৌতুকের বিরুদ্ধে শপথ পাঠ করানোর। নিমন্ত্রণ পান যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠানে। অতিথি হন যৌতুকবিরোধী মঞ্চ ও পথনাটকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নিয়াজীর যৌতুকবিরোধী তুলির অাঁচড়ভৈরব ছাড়াও এ পর্যন্ত নিয়াজীর তুলির আঁচড় পড়েছে কক্সবাজার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, ময়মনসিংহ থেকে হাওরাঞ্চল, চায়ের দেশ সিলেট, ঢাকার সদরঘাট ও গাজীপুর জেলায়। জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রায় আট হাজার রিকশায় যৌতুকবিরোধী স্লোগান লিখেছেন তিনি। এ কাজে যে খরচ হয়, তার জোগান আসে তাঁর সামান্য আয় থেকেই। একটি ব্যানার লিখে যা পান, তা থেকে ৩০ টাকা তুলে রাখেন। কিছু টাকা জমা হলেই রং আর তুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দেশের কোনো জেলা বা উপজেলা শহরে।
‘ঢাকার কিছু অংশে স্লোগান লেখা শেষ। রাজধানী তো ব্যস্ত শহর। জায়গা পাওয়া কঠিন। রিকশাচালকদেরও পেছন ফিরে তাকানোর সময় নেই। এমন বাস্তবতায় ঢাকায় কাজটি ইচ্ছেমতো শেষ করা যায়নি।’ এখন কী নিয়ে ব্যস্ত? প্রশ্নের উত্তরে এভাবেই নিজেকে মেলে ধরে নিয়াজী আরও বললেন, ‘কিছুদিন আগেও এক ব্যক্তি এসে টাকা দিয়ে গেছেন। রোজার পর পর উত্তরবঙ্গ গিয়েছিলাম। ছিলাম চার দিন। এ সময় সেখানে যৌতুকবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছি। যৌতুক চাওয়া মানে ভিক্ষা চাওয়া, যৌতুক চাওয়া মানে মানুষের মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দেওয়া, যৌতুককে না বলুন—আমৃত্যু এসব স্লোগানের ফেরিওয়ালা হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’
http://allbanglanewspapers.com/prothomalo/
এই নিউজ টা প্রথম আলোতে পড়ে খুবই ভাল লাগলো তাই সবাইকে জানালাম ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৪৬