৮ বছরের একটা মেয়ে টুম্পা। ১ বছর ধরে জ্বরে ভুগছে! জ্বর ১০৪*ফাঃ। তার মা কে জিজ্ঞেস করলাম এতদিন পরে কেন আনলেন? আঙুলে ক্লাবিং! সম্ভাব্য ডায়াগনসিস ছিল ইনফেক্টিভ এন্ডোকার্ডাইটিস। বললাম ওর একটা ইকোকার্ডিওগ্রাম এবং রক্তের CBC এবং widal test করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে দেখা করেন। মহিলার প্রশ্ন স্যার কত লাগতে পারে? জবাব দিলাম দেড় হাজারের কাছাকাছি লাগতে পারে। মহিলা বলল স্যার এতদিন ডাক্তার দেখাতে পারিনি, এখন বোধহয় চিকিৎসার অভাবে মেয়েটা চোখের সামনে মারা যাবে? জিজ্ঞেস করলাম টাকার সমস্যা? মহিলা বলল স্যার আপনাকে সব খুলে বলি। দুটো মেয়ে নিয়ে ছিল আমার সংসার। মেয়ের বাবা নেশা করা শুরু করায় এবং আমাদের কোন খরচ দিতে না পারায় মেয়ে দুটোকে নিয়ে ঘর ছেড়ে চলে আসি এবং একটা গার্মেন্টস-এ চাকরি নেই। এখানে আসার পর ছোট ছেলেটাকে দেখছেন ওর বাবার সাথে পরিচয় এবং ওর প্রস্তাবে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল দুটো মেয়ে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করি। ছোট ছেলেটা দ্বিতীয় স্বামীর। ছেলে হওয়ার পর থেকেই আমাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেয় এবং আমার মেয়ে দুটোকে বাড়িতে রাখবেনা বলে জানিয়ে দেয়। মেয়ে দুটোকে নানীর কাছে রেখে আসি। কিন্তু ছোট মেয়েটার জ্বর ও শরীর খুব খারাপ হওয়ায় তার কান্নাকাটির কারণে অনেকদিন পরে হলেও কিছুদিনের কথা বলে এনেছি। মেয়েটার সামনে আমাকে মার ধর করায় মেয়েটা আপত্তি জানায়। এতে সৎ বাপ আরো ক্ষেপে গেছে। সে বলেছে বড় মেয়েকে দুএকদিনের জন্য আনতে পার কিন্তু ওকে না। এই মেয়েটাকে ফেরত পাঠানোর আগে আপনাকে একবার দেখিয়ে নিতে আসছিলাম। আমাকে চাকরিও করতে দেয় না এবং কোন টাকাও দেয় না। ৪ ভাইদের বলেছিলাম সবাই মিলে যদি একটা সেলাই মেশিন কিনে দিত। কিন্তু দেয় নি। ওরা বলছে এই জামাই ছেড়ে চলে গেলে তখন মেশিন দেবে। সব শুনে বললাম আমি আম্মার সাথে কথা বলি। উনি যদি একটা সেলাই মেশিন দেয় আপনি নেবেন? সে বলল নেব স্যার। আমি বললাম আপনার মেয়ের চিকিৎসা আরো জরুরী। আমি আম্মাকে সব জানাবো। আপনি টেস্ট করতে দিয়ে দেন, কাল এসে আম্মার সাথে দেখা করবেন। একটা সিঙ্গার সেলাই মেশিন কিনে দিলাম। টেস্ট রেপোর্ট পেলাম। এন্ডোকার্ডাইটিস নয়, টাইফয়েড জ্বর! এক বছর ধরে। রোগী যে বেঁচে আছে সেটাই আশ্চর্য!!! আম্মা টেস্ট থেকে শুরু করে ওষুধ পত্র সব খরচ দিলেন। ১৩ দিন সেফ থ্রী চলার পরও জ্বর নামছেনা। মহিলাকে বললাম শিরায় ওশুধ দিতে হবে। হাসপাতাল ছাড়া হবেনা। মহিলা বলল স্যার মেয়েটাকে আর একমুহূর্তও রাখতে দিতে চাচ্ছেনা। হাসপাতালে নিতে দিবেনা কারণ রাতে আমি ঘরের বাইরে যেতে পরবনা। আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিলাম, সে ক্ষেত্রে টুম্পা মারাও যেতে পারে। আপনি হাসপাতালে ভর্তি করেন খরচ আম্মা দেবে। এবার সে বলল স্যার আর ভয় করে লাভ কি ঘর যদি ভেঙেও যায় আমি মেয়েকে বাঁচাতে চাই। কিছু এডভান্স দিয়ে দিলাম, টুম্পা ক্লিনিকে ভর্তি হল। এর মাঝে বড় মেয়েকে নানীর কাছ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে টুম্পাকে দেখার জন্য ।আজ ছয়দিন IV Ceftriaxone চলছে। কাল হয়ত ডিসচার্জ। আজ মহিলা এসে বলল স্যার আপনাদের সহযোগীতা আছে বলে আমাকে মারধর করার সাহস পায়নি। স্যার আমি সোয়েটারের কাজ জানি, আর আপনার মেশিন তো আছেই। বড় মেয়েকে আমার কাছেই রাখবো। ও বাচ্চাটাকে দেখবে আমি কাজ করলে মাসে ১০/১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হবে হিসাব করেছি। স্যার আমি একটা কথা বলার সাহস পাচ্ছিনা কিন্তু বলতেই হবে। আমার ভাল দিন আসলে আপনার টাকাটা ফেরত দেব। আপনি যা করেছেন তা কোনদিনও শোধ করতে পারবনা। স্যার আমি নতুন জীবন শুরু করব। আপনি আর খালাম্মা আমাকে দোয়া করবেন। আমি পারব স্যার ইনশাল্লাহ্। আজ তার চোখে মুখে আমি দৃঢ় প্রত্যয় দেখেছি।
পরে আবার জ্বর আসার পর টুম্পার টিবি ধরা পড়ে যার চিকিৎসার পুরো ব্যায়ভার আমরাই দিয়েছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ ভোর ৫:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



