স্বামী-সন্তান ছিল তুচ্ছ। শারীরিক চাহিদাটাই ছিল তার কাছে মুখ্য- পুলিশের কাছে এ কথা স্বীকার করেছেন সন্তান খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আদাবরের আয়েশা হুমায়রা এশা।
এর কারণও তিনি বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, স্বামীর শারীরিক অক্ষমতার কারণে বিয়ের দেড় বছরের মাথায় একাধিক পুরুষের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে গড়ে তোলেন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন আরিফকে বিয়ে করে নতুন করে সংসার গড়বেন। তাই স্বামীর কাছ থেকে কয়েক দফায় ১৫ লাখ টাকা নিয়ে সাথীকে দিয়েছিলেন। সাথীকে খুশি রাখতেই এ টাকা দেয়া। একমাত্র সন্তান হারানোর পরও তার অনুশোচনা নেই। আয়েশা জানান, ২০০৩ সালে সতের বছর বয়সে কে আর আজিমের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। আমাদের দু’জনের বয়সের পার্থক্য ১৫ বছর। বিয়ের পর আমি লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স পড়তাম। বিয়ের এক বছরের মাথায় সামিউল জন্ম নেয়। তারপরই লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। সামিউলের ৬-৭ মাস বয়সের মাথায় স্বামীর সঙ্গে আমার মনোমালিন্য দেখা দেয়। ছোটবেলা থেকেই আমার সাজগোজের অভ্যাস ছিল। নিজেকে সবসময় পরিপাটি রাখতে পছন্দ করতাম। বিভিন্ন পার্লারে যেতাম। আমার অনেক ছেলে-বন্ধু আছে। তাদের নিয়ে বিভিন্ন রেস্তরাঁয় খেতে যেতাম। যেহেতু স্বামী আমাকে সময় দিতে পারতো না তাই বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতাম। এটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল।
আয়েশা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, বছর তিন আগে সাথীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমার স্বামীর অক্ষমতার কথা তাকে জানিয়েছিলাম। সাথী পরিচয় করিয়ে দেয় তার স্বামী আরিফের সঙ্গে। সাথী অর্থলোভী। আমার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য নিজের স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে। একদিন দুপুরে আমি সাথীর বাসায় যাই। সাথী আমাকে বলে, তুমি আরিফের সঙ্গে কথা বলো- আমি জরুরি কাজে বাইরে যাচ্ছি। এই বলে আরিফের সঙ্গে আমার অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগ করে দেয়। ওই দিন প্রথম আমরা সেক্স করি। এরপর থেকে প্রায়ই আমাদের মেলামেশা চলতো। এ সুযোগে সাথী আমার কাছ থেকে কয়েক দফায় ১৫ লাখ টাকা নেয়। আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে। টাকা দিতে না চাইলে আমার স্বামীকে সব কিছু বলে দেবে এমন হুমকি দেয়। আস্তে আস্তে আমার সঙ্গে আরিফের সম্পর্ক গাঢ় হয়। আমি আরিফকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। সাথী আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সাথীর বাসায় ও পার্লারে আমার যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আমরা কখনও হোটেলে, কখনও কখনও বন্ধু-বান্ধবের বাসায় গিয়ে মিলিত হতাম। বাড্ডায় আরিফের প্রথম স্ত্রী নাজমার বাসায়ও আমাকে নিয়ে গেছে।
পুলিশের ধারণা, আয়েশা-আরিফের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিশোধ হিসেবে সামিউলকে খুন করতে পারে সাথী। আবার আরিফ-আয়েশার অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলার কারণেও সামিউল খুন হতে পারে। অথবা আরিফ-সাথী মিলে সামিউলকে খুন করা হতে পারে। তবে একমাত্র ছেলেকে হারানোর কোন অনুভূতিই নেই আয়েশার মনে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাজী শাহান হক বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, আয়েশা শুধু আরিফই নয়- একাধিক ছেলের সঙ্গে অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল। সে সুন্দরী হওয়ায় বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় অতৃপ্ত থাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তার স্বামী বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আয়েশাও বেরিয়ে যেতো। বন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে রঙ্গলীলায় মেতে থাকতো। আসামি সাথীও বিউটি পার্লারের আড়ালে বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল। পার্লার ছিল নারীদের। তবে পার্লারে ছেলেদেরও আনাগোনা ছিল। ইয়াবা থেকে শুরু করে সব ধরনের নেশা করতো সাথী। আয়েশাও ইয়াবা-আসক্ত হয়ে পড়েছিল। আরিফ-আয়েশা ইয়াবা সেবন করেই অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতো বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
কে এই আরিফ
পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার রতিপুর গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে সামসুজ্জামান আরিফ। দীর্ঘদিন ধরেই সে ঢাকায় বসবাস করছে। চাঁপাই নবাবগঞ্জের জামানের মেয়ে নাজমাকে আরিফ বিয়ে করে। তাদের দু’টি মেয়ে সন্তান হয়। ৬-৭ বছর আগে প্রথম স্ত্রীর অজান্তেই সাথীর সঙ্গে তার প্রেম ও বিয়ে হয়। বর্তমানে নাজমা বাড্ডায় তার বাবার বাসায় থাকে সন্তান নিয়ে আর সাথীকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে আসছিল আরিফ। দু’ বছর আগে নাজমাকে ডিভোর্স দেয় আরিফ। নাজমার পিতা জামান মোবাইল ফোনে এসব তথ্য জানান।
যা বললেন আজিম: বছর তিন আগে আমি জানতে পারি সাথীর সঙ্গে আমার স্ত্রী আয়েশার বন্ধুত্বের কথা। প্রতিবেশীরা আমাকে এ কথা জানিয়েছিল। তারা বলেছিল, সাথী ভাল না। তার সঙ্গে আয়েশার চলাফেরা থাকলে আয়েশাও খারাপ হয়ে যবে। আমি সাথীর সঙ্গে মিশতে নিষেধ করি আয়েশাকে। সে শোনেনি আমার কথা। তারপরেই জানতে পারি আরিফের সঙ্গে আয়েশার অনৈতিক সম্পর্কের কথা। বছরখানেক আগে আরিফের প্রথম স্ত্রী নাজমা আমাকে ফোনে জানায়, বাড্ডায় তার বাসায় আয়েশাকে একাধিকবার নিয়ে গেছে আরিফ। এ-ও জানায়, আজিম ভাই আপনার স্ত্রীকে বাদ দিয়ে নতুন করে চিন্তা করেন। এ নিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে বচসা হয়। আয়েশা ক্ষমা চায়। আর এসব কাজ করবে না। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে ক্ষমা করে সংসার করি। তিনি জানান, কিছুদিন আগে বাবু নামের এক ব্যক্তির ফোন আসে আয়েশার মোবাইলে। তখন এ নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোন উত্তর দেয়নি আয়েশা। আমার ধারণা বাবু নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
মোহাম্মদপুর গ্রিনউড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নার্সারির ছাত্র মাত্র ৬ বছরের শিশু সামিউলের বস্তাবন্দি লাশ গত বুধবার উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সন্তান হত্যার অভিযোগে সামিউলের পিতা কে আর আজিম স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে সামিউলের মা আয়েশা হুমায়রাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আয়েশাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আরিফ ও সাথীকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




