আগামী ২৮শে জুন রোজ শুক্রবার বিকাল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত রাজাকারের দ্রুত বিচারের দাবী নিয়ে ডাকা মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে চলা বিতর্ক ও ফিরে দেখা পুরনো শাহবাগ নিয়ে লেখাটি পড়ার পরেও কি আপনি ঘরে বসে থাকবেন, কিছু দালালের কথায়? নাকি মিলিত হবেন শাহবাগে একই কাতারে প্রানের দাবীতে।
গত ৫ই ফেব্রুয়ারী কসাই কাদের মোল্লার রায়ের পর প্রথম অন লাইন জবীনে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে ব্লগে একটি লেখা দেই শাহবাগে যাওয়ার আগে। লেখাটার শিরোনাম ছিল “ ধর্ষিত মাতৃভূমি ৭১ এ জামাত ২০১৩ তে আওয়ামী লীগ”। এদিকে যখন Click This Link
সবাই ছুটছে শাহবাগে তখন বিশিষ্ট ফেসবুক ও ব্লগ এবং ক্ষমতাশীন দলের দালাল সেলিব্রেটি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধীতা করে লেখা দেন। ৫ তারিখ রাত বারটা আগেই শাহবাগ হয়ে উঠে সারা বাংলার মানুষের প্রানের দাবীতে। রাত বারটার পর ধীরে ধীরে ঢল নামে ঘরে ফেরা মানুষের বন্ধ হয়ে যায় মাইক। কমতে থাকে মানুষের ভীড়, রাত দেড়টার দিকে দেখা যায় শাহবাগ শূন্য। মাথা গুনে দেখা যায় মাত্র ২৫/৩০জন মানুষ আছে। চারুকলার কিছূ স্টুডেন্ট বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের ডাঃ রতন, শুশাংক, রাইফেলস্ পাবলিকের ইন্টার পড়ুয়া ছাত্র রিয়াজ, পুরান ঢাকার হেলাল ও তার কয়েকজন বন্ধু সহ সর্ব মোট ২৫/৩০জন বাংলা মায়ের সন্তান। তারা সিদ্ধান্ত নিল যে, যদি আমরা এখন ঘরে ফিরে যাই আর কাল আসার পর যদি শাহবাগে বসতে না দেয়া হয় বা জামাত শিবির তান্ডবলীলা শুরু করে দেয় এই সব সাত/পাঁচ চিন্তা করে তারা সকলের মিলিত সিদ্ধান্ত নেয় যত ঝড়-ঝাপটা আসুক তারা শাহবাগ থেকে নড়বে না। যেই কথা সেই কাজ এভাবে রাত পার করে দিল তারা। সকাল তখন আনুমানিক আটটা বাজে লোকজন বা রাত বারটার আগে সহযাত্রী হিসেবে যারা ছিল তাদের কারো কোন খরব নাই। এভাবেই কেটে যায় আরো একটি ঘন্টা। সবার মনে একই প্রশ্ন আমরা পারবো তো? সাড়ে নয়টার দিকে আস্তে আস্তে লোকজনের সমাগত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, রাত-জাগা মানুষ গুলোর মাঝে নেমে আসে প্রশান্তি। এভাবেই চলতে থাকে শাহবাগ। এদিকে “মুন্নি সাহা ওরফে অনুভূতি সাহা” বারবার প্রশ্ন করে আপনার এই আন্দোলন আর কতদিন বা কতক্ষন চালিয়ে যাবেন?
ঘটনাক্রমে রাত-জাগা ২৫/৩০ জনের মাঝে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে কিনা ২০০৯ সালে একটি কোম্পানীতে চাকুরীর সুবাদে সেই কোম্পানীর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার জন্য কোম্পানীর হেড অফিসে “মুন্নি সাহা ওরফে অনুভূতি সাহা” এসেছিল। তখন “মুন্নি সাহা ওরফে অনুভূতি সাহা” কে ধানমন্ডি ভূত রেষ্টুডেন্টে দুপুরের লাঞ্চ ও উৎকোচ বাবদ ১০০০০ হাজার টাকা দিয়ে রিপোর্ট করা থেকে কোম্পানীকে মুক্ত করার দায়িত্ব পালন করে। সেই লোকটি শাহবাগ আন্দোলনের তৃতীয় দিন “মুন্নি সাহা ওরফে অনুভূতি সাহা” কে কানে কানে বলে যে, ম্যাডাম আপনি যদি এভাবে বারবার লোকজনকে প্রশ্ন করেন আপনার কবে বাড়ি ফিরবেন তাহলে ২০০৯ সালের ভূত রেষ্টুডেন্ট এ যা যা হয়েছে প্রকাশ করে দেয়া হবে। তারপর থেকে “মুন্নি সাহা ওরফে অনুভূতি সাহা” আস্তে আস্তে গাট্টি ঘোল করে শাহবাগ ত্যাগ করে। কিন্তু প্রবাদ আছে “কাপালে যদি থাকে করাতের গুড়ি, কোথায় পাব পিঠার গুড়ি”। দুঃখজনক ভাবে ৭তারিখ সন্ধ্যার পর আন্দোলন ছিনতাই হয়ে যায় বামদের মাধ্যমে। সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন এর ছেলেদের আনা-গোনা বৃদ্ধি পেতে থাকে,শুরু হয়ে যায় বানরের পিঠা ভাগা-ভাগি। বানরের পিঠা ভাগা-ভাগির প্রথম পর্ব শুরু হয় জুনায়েত সাকি, নাসির উদ্দিন বাচ্চু ও অঞ্জন রায়কে নিয়ে তিন সদস্যের উপদেষ্ঠা কমিটি গঠনের মাধ্যমে। প্রথম মহা-সম্মেলন এর আগের দিন রাত আনুমানিক দুইটার দিকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের নিচ তলায় সিদ্ধান্ত হয় যে, মহা-সম্মেলনে ভাষন দিবে সেই সকল তরুন প্রজন্ম, যাদের হাত ধরে ৪২ বছর পর দেশের মানুষ এক হয়েছে। এবং ৮০ দশকের সেই সকল ছাত্র নেতারা যারা কোন দলের দালাল নয় ও প্রানের টানে ছুটে আসা মানুষরা, যাদের কোন দলীয় পরিচয় নয় বরং বাংলা মায়ের সন্তান হিসেবে সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালে বলতে দ্বিধা করে না। মহা-সম্মেলনে কোন প্রকার ট্রাক বা অন্য কোন কিছু দিয়ে স্টেজ করা হবে না। দেড় ঘন্টা ব্যাপি মিটিং শেষে এই সিদ্ধান্ত গুলো হয়। কথায় আছে ”কয়লার ময়লা যায় না ধুলেও”। যেহেতু
বানরের পিঠা ভাগা-ভাগি শুরু হয়ে গেছিল এর মাঝেই, পরবর্তীতে প্রকাশ হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের মিটিং শেষ হওয়ার পর, দালালরা রাত চারটার পরে আজিজ সুপার মার্কেটে আরেকটি গোপন মিটিং করে পর্বে সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে নিজেদের মত করে সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম মহা-সম্মেলনের পর থেকেই মূলত শাহবাগ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একদিকে দেশের সব চেয়ে সুবিধাবাদী বাম, দালাল ও সরকার দলীয় সংগঠন গুলো। অন্যদিকে প্রানের টানে ছুটে আশা সাধারন সেই অংশটা যারা প্রথম রাত থেকে শাহবাগে অবস্থান নেয়, যারা ছিল শক্তি ও সংখ্যায় অতি নগন্য। এভাবেই চলতে থাকে, এর মাঝে দালালরা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে আলাদা আলাদা প্রতিবাদী ছোট ছোট গ্রুপ গুলোকে ভেঙ্গে দিয়ে পুরাপুরি নিয়ন্ত্রন নিতে। এর মাঝে বানরের পিঠা ভাগা-ভাগিকে কেন্দ্র করে পরিবেশ উত্তপ্ত হতে থাকে, তারই জের ধরে লাকির মাথায় আঘাত করা হয়। এটাকে কেন্দ্র করে সাধারন মানুষ ও দালালদের বাহীরের অংশটা মরিয়া হয়ে উঠে সরকার দলের সংগঠন গুলোকে শাহবাগ থেকে বের করে দেয়ার। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ছুটে আসে বিশিষ্ট সুবিদাবাদী কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সাহেব। বানরের পিঠা ভাগা-ভাগিতে যেটুকু অপূর্ণতা ছিল তা তিনি সুচারুপ ভাবে পরিপূর্ন করে দেন। ও বলতে ভুলে গেছি, জারাজ শিবিরের রাজাকারের বিরুদ্ধে লেখা পোষ্টার ছিড়তে বাঁধা দিতে গিয়ে শিবিরের হামলায় আহত হয়ে পরে শহীদ হন লিফটম্যান জাফর মুন্সী, তার জানাজা শাহবাগে আনার চেষ্টা করা হলে তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তিন উপদেষ্ঠা দালালরা, যার কারনে শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম শহীদ জাফর মুন্সীর জানাজা হয়নি শাহবাগে। এভাবে চলতে চলতে আসে দ্বিতীয় মহা-সম্মেলন। বিশিষ্ট দালাল দ্বিতীয় মাহা-সম্মেলনে ঘোষনা দেয় আগামী কাল থেকে সমাবেশ চলবে দুপুর তিনটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত। গনজাগরনকে ইভেন্টে বন্ধী করা ঘোষনা শুনে শাহবাগের সেই অংশটি পুনরায় জ্বলে উঠে। সিদ্ধান্ত হয় রাত দশটার পরে দালালদের শাহবাগ থেকে জুতার মালা পরিয়ে চিরদিনের জন্য বের করে দেয়া হবে।
এরই মাঝে খবর আসে “রাজীব ওরফে থাবা বাবার” মৃত্যুর খবর। তড়িগড়ি দালাল গ্রুপ দল বেঁধে ফিরে আসে এবং নতুন ঘোষনা দেয়। তবে একথা সত্য রাজীবের মৃত্যুর কারনেই দালালরা পুনরায় শাহবাগ ফিরে আসার সুযোগ পায়। এদিকে ভিতরে ভিতরে চলতে থাকে গনজাগরনকে হত্যার কুট চাল, তারই সফলতায় গনজাগরন থেকে রুপান্তর হয় গনজাগরন মঞ্চ, সফল হয় দালালদের কুট কৌশল। গনজাগরনকে বিতর্কিত করার জন্য যা যা করার প্রয়োজন দালালরা তা সফল ভাবেই তা শেষ করে। একদিকে চলতে থাকে দালালদের দালালী আর অন্যদিকে সেই সব তরুন প্রজন্ম যারা শাহবাগ এসেছে প্রানের টানে। তারা নিজেদের মাঝে তৈরী করতে থাকে সেতু বন্ধন, এবং দালালদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে বিভিন্ন ভাবে। সর্ব শেষ সবার হুশ হয় যখন একমাত্র ফেসবুক পেইজ ”আমজনতা” গ্রুপের সৃষ্টি শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ পেইজটিও যখন দালালদের দখলে চলে যায়। পেইজটি দখল হয়ে যাওয়ার পরে আমজনাতা গ্রুপের ছোট ভাই নাহিদ হাসান হিমুর মলিন মুখটার দিকে তাকাতে খুব কষ্ট লাগত। এভাবে চলতে চলতে সাধারন তরুন প্রজন্মের দালালদের উপর ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে “শহীদ রুমী ব্রিগেড” এর অনশন এর মাধ্যমে। “শহীদ রুমী ব্রিগেড” এর সদস্যদের অনশন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিতে থাকে দালালরা। যখন কোন হুমকিতে কাজ হয়নি তখন বিশিষ্ট ফেসবুক, ব্লগ ও ক্ষমতাশীন দলের দালাল সেলিব্রেটি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে “শহীদ রুমী ব্রিগেড” এর অনশন বিতর্কিত করার জন্য নিলয়ের চরিত্র হরনের চেষ্টা করে লেখা দেয়।
ফেসবুকে দুইটা গ্রুপ আলাদা আলাদা ভাবে আগামী ২৮ তারিখ শাহবাগে রাজাকারের বিচার দ্রুত শেষ করার দাবীতে মানববন্ধনের ডাক দিছে। এখন দালালরা তাদের ফেসবুকে চিৎকার করছে এই বলে যে, এটা গনজাগরন মঞ্চের কোন কর্ম সূচি নয়। এবং চিক্কু বামরা রাজাকারের টাকায় এটা করছে। এখন দালাদের কাছে প্রশ্ন শাহবাগ বা গনজাগরনকে হত্যা করে সৃষ্টি করা গনজাগরন মঞ্চ কি তাদের বাবার তালুক? তবে শুনে রাখ হে দাললরা ৫ই ফেব্রুয়ারী যেমন আমরা ছিলাম শাহবাগে ২৮ তারিখেও সেই আমরাই থাকব। রাজাকার ও দালাল কাউকেই কিন্তু এবার আর ছাড় দেয়া হবে না। অতএব “টাইগার বাম,মিল্লাত বাম, নতুন যোগ হওয়া চিক্কু বাম” এ সব বেঁচতে চাইলে বাসে বাসে গিয়ে হকারী করে বিক্রি কর।
মৃত শাহবাগ ডাকছে তোমায়, চলে এসো বন্ধু, এসো নতুন স্লোগান দেই। “ বাঁশের লাঠি তৈরী কর, রাজাকার ও দালালদের ক্ষতম কর”।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




